শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে প্রথম ডেটিং এ যাওয়া
নমস্কার বন্ধুরা। সকলে কেমন আছেন? আজকে চলে এসেছি আপনাদের সাথে আবারও নতুন কোন গল্প শেয়ার করার জন্য। আপনারা প্রতিদিন ধৈর্য্য সহকারে আমার পোস্ট পড়ে এত সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করেন তার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
আজকে আমি আপনাদের সাথে পরিচয় করাবো আমার হবু শ্বাশুড়ি মাকে। আচ্ছা আপনারা যারা বিবাহিত দিদিরা আছেন তারা বলুন তো, শশুর বাড়িতে কাকে আপনার 'head of the house ' অর্থাৎ বাড়ির প্রধান বলে মনে হয়? আপনাদের কি উত্তর হবে তা আমি জানিনা, তবে আমার দিক থেকে ভাবতে গেলে আমি কিন্তু মনে করি প্রত্যেক বাড়ির মহিলারাই অর্থাৎ মায়েরাই সেই বাড়ির প্রধান হয়। হ্যাঁ জানি, দুই একটি ব্যতিক্রমী তো রয়েছেই। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাড়ির মায়েরা যে সিদ্ধান্ত নেন সেটাই বাড়ির বাকি সদস্যরা মেনে চলার চেষ্টা করে। বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের মোটামুটি এই ধরনেরই একটি চিত্র দেখা যায়। আর ছেলেরা তাদের মায়ের একটু আদরেরই হয়। তাই ছেলের বউ কেমন হবে তা নিয়ে তাদের একটু হলেও খুঁতখুঁতে ব্যাপার থেকেই যাই। তাই আমার আর আমার হবু বরের সম্পর্কটা আদেও এগোনো যায় কিনা, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ঠিক করেছিলাম ওর মায়ের সাথে একবার দেখা করবো। আজ আপনাদের সাথে সেই দিনেরই কিছু স্মৃতি শেয়ার করব।
*আসলে, ছোটো থেকে পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার ফলে এই 'শ্বাশুড়ি' নামক ব্যক্তিটির প্রতি আমার এক ভীষণ ভয় ছিল। শ্বাশুড়ি মানেই আমার কাছে ছিল এক ভয়ংকর প্রাণী। তাই একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর ভেবেই রেখেছিলাম ছেলের আগে ছেলের মা কেমন সেটা বুঝতে হবে। যদিও কোনো মানুষকে কয়েকবার দেখে চেনা এত সহজ কাজ নয় সে আমি জানি। তবুও ১০০% না হোক, ১% তো আঁচ করা যাবে মানুষ টা কেমন। তাই যেদিন আমার হবু বর আমাকে প্রথমবার প্রস্তাব দিয়েছিল তারপরেও আমি বেশ অনেকটাই সময় নিয়েছিলাম তাকে উত্তর দেওয়ার জন্য। শেষমেশ যেদিন ভাবলাম একটা ফাইনাল ডিসিশন নিতে হবে, সেদিন ওকে বলেছিলাম, সেই মুহূর্তেই ওর মাকে ফোন করে যেন জিজ্ঞাসা করে যে আগামী দুই বছরের মধ্যে ওর বাড়ির লোক ওর বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে রাজি হবে কিনা। কারণ আমার আর আমার হবু বরের বয়সের পার্থক্য মোটামুটি এক বছরের। তাই আমার বাড়ি থেকে আমাকে দিয়ে দেবার প্রসঙ্গ তুললেও, অনেক সময় ছেলেদের একটু দেরিতে বিয়ে দেওয়া হয়। তাই তখন কোনরকম সমস্যার সম্মুখীন আমি হতে চাইনি। ভেবেছিলাম হয়তো ও ওর মাকে ফোন করে এমন কথা বলার সাহস পাবে না। আর আমিও এই সুযোগে তাকে না করে দেব। কারণ এই ২৩/২৪ বছর বয়সে এসে আমি বিয়ে নিয়ে আর কোনো জটিলতা চাইনি। কিন্তু না। দেখলাম তৎক্ষণাৎ ও ওর মাকে ফোন করে আমি যা যা জিজ্ঞাসা করতে বলেছিলাম তাই তাই জিজ্ঞাসা করল। কল লাউডে দেওয়া ছিল তাই আমি সবই শুনতে পারছিলাম। উক্ত প্রশ্নের উত্তরে ওর মা, খুব নম্রভাবেই উত্তর দিয়েছিল, "আমার কোন অসুবিধা নেই, কিন্তু সব আত্মীয়-স্বজনদের নিয়েই তো চলতে হয়, তাই বাবার সাথে একটু আলোচনা করে দেখতে হবে।"
সেদিন বুঝেছিলাম, ওর মায়ের সাথে ওর খুব ভালো বন্ডিং আছে। তারপর দুই এক দিন আমার সাথে ফোনে কথাও হয়েছিল ওর মায়ের । তাই ফাইনালি ঠিক করা হয় যে আমরা একদিন একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করব। আসলে আমাদের এবং ওর ফ্যামিলির কেউই এখনো জানে না যে ওদের ফ্যামিলির প্রথম সদস্য হিসেবে আমি কিন্তু ওর মায়ের সাথেই দেখা করেছিলাম। যাইহোক, সেইদিন যথাসময়ে আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম আমাদের কৃষ্ণনগরেরই একটি রেস্টুরেন্ট 'জোনাকি' তে। আমি সচরাচর খুব বেশি জিন্স পরি না, তবে সেই দিন ইচ্ছে করেই জিন্স পরেই গিয়েছিলাম। ওর মা পুরনো দিনের ভাবধারার মানুষ কিনা তা আমাকে যাচাই করে নিতে হবে না। 🤭 কি আশ্চর্য কথা ভাবুন! আগেকার দিনে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এসে মেয়েদের মাথার চুল থেকে পা পর্যন্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তবে মেয়েকে পছন্দ করত। আর আমি কিনা আমার শ্বাশুড়ি মায়েরই পরীক্ষা নিচ্ছি🤭।
তারপর সেখানে পৌঁছে আমরা ভিতরে চলে গেলাম। তারপর কিছু খাবার অর্ডার করেছিলাম। যেহেতু আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল দেখা করা, তাই আমরা বিশেষ কিছু ভারী খাবার অর্ডার করিনি। তারপর আমাদের মধ্যে বেশ কিছু কথোপকথন হয়েছিল। খুবই ক্যাজুয়াল কথাবার্তা। ওনার সাথে কথা বলে আমার মনে হয়েছিল মানুষটা খুবই সরল। মনে বিশেষ প্যাঁচ নেই। আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন মানে উনি আমার সাথেই আমার সম্বন্ধে কথাবার্তা বলছিলেন। আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে ওনার বিশেষ মাথাব্যথা ছিল না। এই ব্যাপারটা আমার বেশ ভালো লেগেছে। ওর কাকিমনির সঙ্গেও যেদিন দেখা করতে গিয়েছিলাম এই বিষয়টা আমি লক্ষ্য করেছি, ওরাও কিন্তু এই ফ্যামিলি নিয়ে আলোচনা করার বিশেষ পক্ষপাতী ছিল না। এই ছোটো ছোটো ব্যাপার গুলো বেশ ভালো লেগেছিল।
ওনার সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার পরেই আমাদের সম্পর্কটা বিয়ে পর্যন্ত গড়ানোর সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছিলাম। আসলে একটা বৈবাহিক সম্পর্ক সুন্দরভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য শ্বাশুড়ি মায়েদের ভূমিকা অনেক খানি থাকে। এই একটা মানুষই চাইলে তার ছেলের সংসারটা খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দিতে পারে, আবার কূটবুদ্ধি থাকলে এই একটা মানুষই পুরো সংসারটাকে ভেঙে দিতে পারে। তাই ওনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করাটা আমার ভীষণ প্রয়োজন ছিল। এবং এই প্রথম সাক্ষাতেই ওনাকে আমার বেশ ভালো লেগেছিল। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আমরা চলে গিয়েছিলাম একটি ব্যাগের দোকানে। আসলে আমি ব্যাগ খুব পছন্দ করি। তাই এই প্রথম দিনের স্মৃতিটাকে আরও বেশি স্মরণীয় করে রাখতে উনি আমাকে একটি ব্যাগ উপহার দিয়েছিলেন। আমিও ওনাকে একটা ব্যাগ উপহার দিয়েছিলাম।
এইভাবেই আমরা সেই বিকেল টা সুন্দর ভাবে কাটিয়েছিলাম। আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
বিয়ের আগে শাশুড়ি নিয়ে আতঙ্কিত হয় না এমন মেয়ে মনে হয় কমই আছে ।তবে আমার কাছে মনে হয় শাশুড়িরা একই রকম তাদের হবু বধু নিয়ে আতনকিত থাকে ।
তবে আপ্নার হবু শাশুড়ি মায়ের সম্পর্কে জেনে ভালো লাগলো ।
ভালো থাকবেন সবসময় ।