পাহাড়ি পোশাক পরা, সান্দাকফু দর্শন ও পাইন বন ঘুরে দেখা

in Incredible India25 days ago

নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? আজকে আবারো চলে এসেছি আপনাদের সাথে নতুন কিছু গল্প শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব আমার দার্জিলিং ভ্রমণের শেষ দিনের কিছু গল্প নিয়ে। নেপাল বর্ডার ও সান্দাকফু দর্শনের পাশাপাশি কিভাবে অপরিকল্পিতভাবে আমাদের পাহাড়ি পোশাক পরার ও পাইন বন ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছিল সেই সব গল্প আমি আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

1000254294.jpg

ছয় দিন ঘর ছাড়া থাকার পর ভীষণ পরিমাণে বাড়ির জন্য মন খারাপ করছিল। তাই আমাদের টিমের মধ্যে বোধহয় আমি একমাত্র ছিলাম যার দার্জিলিং ছেড়ে বাড়ি ফিরতে একদম কষ্ট হচ্ছিল না। আমার বাকি বন্ধুবান্ধবরা খুবই আফশোস করছিল যে তাদেরকে এই সুন্দর পাহাড় ছেড়ে আবার ফিরে যেতে হচ্ছে। তবে সত্যি কথা বলতে গেলে আমি একটু ঘরকুনো মানুষ, নিজের বাড়ি-ঘর, শহর ছেড়ে বেশিদিন অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে পারিনা। তাই দার্জিলিং থেকে ফেরার দিন আমি বাড়ি ফেরার জন্য খুবই আগ্রহী ছিলাম। তবে ছয় দিন যাদের সঙ্গে কাটালাম, যে সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করলাম সেই সব কিছুই আজীবন মনের মধ্যে থেকে যাবে।

আমরা সবাই সেই দিন খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলাম। তারপর সকালেই সকলে স্নান সেরে নিয়েছিলাম। এরপর নিজে নিজের সমস্ত জিনিসপত্র ভালোভাবে গুছিয়ে নিয়েছিলাম। আমাদের কলটাইম ছিল ৮ টা। আটটার মধ্যে আমাদের সকলকে ব্রেকফাস্ট রুমে চলে যেতে হতো। তারপর নটার মধ্যে আমাদের গাড়ির কাছে চলে যেতে বলা হয়েছিল। সেইমতো আমরা সকলে রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে আমাদের জিনিসপত্র নিয়ে আমরা হোটেল থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাছে পৌঁছে গিয়েছিলাম।

1000251941.jpg

তারপর যেভাবে ১০ জন করে দলে ভাগ করা ছিল সেই রকম ভাবেই আমরা দশজন গাড়িতে উঠে পড়েছিলাম। সমস্ত গাড়ি একসঙ্গে রওনা হওয়া সম্ভব ছিল না। তাই যে গাড়ি আগে ফুল হয়ে যাচ্ছিল সেই গাড়ি আগে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছিল। যেহেতু পাহাড়ি অঞ্চলে অনেক আঁকাবাঁকা পথ রয়েছে তাই মোশন সিকনেস থাকায় আমার এই ছয় দিন যথেষ্ট সমস্যাতেও পড়তে হয়েছে। তবে যেহেতু এটা কলেজ এক্সকার্সন ছিল এবং নিজের দায়িত্ব নিজেকেই রাখতে হত তাই আমি কাউকে কোন রকম বিরক্ত করিনি। তবে শেষের দিন যেহেতু অনেকটা পথ অতিক্রম করতে হতো, তাই আমি আর আমার এক বান্ধবী কোয়েল দুজনে ড্রাইভার এর পাশের ফ্রন্ট সিটে বসেছিলাম।

সত্যি কথা বলতে গেলে আমি তো পুরো অবাক হয়ে গেছিলাম যে ফ্রন্ট সিটে বসলে অস্বস্তি বোধ অনেক কম হয়। এগুলো মনের রোগ কিনা বলতে পারব না, তবে আসার পথে আমি অনেকটা রিলাক্সেই ছিলাম। আমাদের যিনি ড্রাইভার ছিলেন উনি ওইখানকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন। উনি বাংলা বলতে পারেন না তবে বাংলা বুঝতে পারেন। আমরা ওনার সাথে বিভিন্ন কথা বলতে বলতে আসছিলাম। চারপাশের পাইন বনগুলো এতটাই সুন্দর লাগছিল যেন মনে হচ্ছিল গাড়ি থেকে নেমে এক দৌড়ে পাইন বনটা ঘুরে আসি। তবে আমাদের কলেজ এর স্যারেরা প্রত্যেকটা গাড়ির ড্রাইভারদের কিছু নির্দেশাবলী দিয়ে দিয়েছিলেন যে স্টুডেন্টদের কোন কোন স্পটে নামাতে হবে। সেই সাথে বারবার করে বলে দিয়েছিলেন সেই স্পটগুলোর বাইরে যেন অন্য কোথাও গাড়ি দাঁড় করানো না হয়, কারণ তাহলে আমাদের ট্রেনের টাইম পেরিয়ে যাবে আর আমরা টেন মিস করব।

কথা প্রসঙ্গে আমি ওনাকে বলি, "চারপাশের পাইন বনটা খুব সুন্দর, আমাদের স্যারেরা আমাদের লামাহাট্টা নিয়ে গেল না। সেখানে গেলে আমরা পাইন বনে একটু ঘুরতে পারতাম।" এই কথা শুনে আমাদের ড্রাইভার কাকু বললেন, "তোমরা কি পাইন বন ঘুরতে চাও? যদি চাও তাহলে আমি তোমাদের 10 মিনিট সময় দেব। এই দশ মিনিটের মধ্যে তোমরা পাইন বনের কাছাকাছি ঘুরে আবার কিন্তু গাড়ির কাছে ফিরে আসবে। ১০ মিনিটের বেশি কিন্তু সময় আমি দেব না।" এই কথা শুনে আমরা তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর ড্রাইভার কাকু, জায়গা বুঝে এক জায়গায় গাড়ি থামালেন। আর আমরা সবাই এক দৌড়ে পাইন মনের মধ্যে চলে গেলাম। ড্রাইভার কাকু আগেই বলেছিলেন এই বনে কোন বন্য পশু কিংবা সাপের দেখা মেলে না। তাই আমরা নিশ্চিন্তে পাইন বন ঘুরে দেখছিলাম।

1000254290.jpg

এরপর আমাদের গাড়ি ধীরে ধীরে পৌঁছে গিয়েছিল নেপাল বর্ডারের কাছাকাছি। নেপাল বর্ডার ঘুরে দেখার আগে আরো একটি স্পটে গাড়িটি দাঁড় করানো হয়েছিল। তারপর ড্রাইভার কাকু আমাদের সামনে দেখালেন দূরের সান্দাকফু। আমরা সবাই দূর থেকেই সান্দাকফুকে দুই চোখ ভরে দেখলাম।

1000254286.jpg

এরপর আমাদের গাড়ি পৌঁছে গিয়েছিল নেপাল বর্ডারে। সেখানে প্রত্যেকটা স্টুডেন্টকে তাদের আইডি কার্ড দেখিয়ে তবেই ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছিল। তাই আমরা সকলেই আমাদের আইডি কার্ড সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলাম। এরপর নেপালের বর্ডার পেরিয়ে নেপালে প্রবেশ করি। সেখানে জিনিসপত্রের দাম অত্যাধিক ছিল। ওইখান থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে একটি পশুপতি মার্কেট আছে। অনেকে সেখানে গাড়ি ভাড়া করে ঘুরতে যাই। পশুপতি মার্কেটে জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক কম। তবে আমাদের যেহেতু নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল তাই ওই সময়ের মধ্যে আমরা পশুপতি মার্কেটে গিয়ে আবার ফিরে আসতে পারতাম না। তাই আমরা নেপাল বর্ডার পেরিয়ে আশপাশটা কিছুটা ঘুরে ছিলাম। তবে অত্যাধিক দাম হওয়ার ফলে সেখান থেকে আমরা কিছুই কিনিনি।

1000254292.jpg

ড্রাইভার কাকুর দেওয়া সময়ের মধ্যে আমরা আবার গাড়িতে ফিরে এসেছিলাম। এরপর আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থল ছিল টি গার্ডেন। টি গার্ডেনে যাওয়ার পথে আমরা নিজেদের মধ্যে গল্প করছিলাম যে, "অনেক জায়গাতে পাহাড়ি পোশাক থাকা সত্ত্বেও আমাদের পরা হলো না। আর আজকে ফিরে যাচ্ছি, মনটা খুব খারাপ লাগছে যে একবার পাহাড়ি পোশাক পরতে পারলাম না।" ড্রাইভার কাকু আমাদের এই আলোচনা খুব মন দিয়ে শুনছিল। তারপর উনি বললেন," তোমাদের কোন চিন্তা নেই, তোমরা কি পাহাড়ি পোশাক পরতে চাও?" আমরা তো এক পায়ে রাজি। তারপর টি গার্ডেন এ পৌঁছে উনি আমাদের একটি রুমে নিয়ে গেলেন। সেখানে পাহাড়ি পোশাক পরে ছবি তোলার জন্য পোশাক ভাড়া দেওয়া হয়। আমরা আমাদের পছন্দমত রংয়ের পোশাক বেছে নিয়েছিলাম। ওনারাই সমস্ত কিছু পরিয়ে রেডি করে দিয়েছিল।এক এক জনের ৫০ টাকা করে লেগেছিল। যদিও এখানকার পোশাক আমার খুব বেশি ভালো লাগেনি। তবে শেষমেশ যে পাহাড়ি পোশাক পরা হয়েছিল আমি তাতেই খুব খুশি ছিলাম।

1000254283.jpg

তবে এই টি গার্ডেনটা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিতভাবে ঘুরতে দেওয়া হয়। মানে টি গার্ডেনের মধ্যে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। বাইরে থেকে শুধুমাত্র দেখা যায়। কারণ অনেকে এই চা বাগানের মধ্যে ঢুকে চা পাতা তোলে বা গাছগুলোকে নষ্ট করে ফেলে। তাই ওনারা আর চা বাগানে পর্যটকদের ঢুকতে দেয় না। তাছাড়া সেখানে একটা কাউন্টার ছিল যেখানে তরতাজা পাতা চা বিক্রি হচ্ছিল। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের বাড়ির জন্য চা পাতা কিনেছিল।

এইভাবেই ড্রাইভার কাকুর জন্যই আমরা অপরিকল্পিতভাবে পাইন বন ঘুরতে পেরেছিলাম এবং পাহাড়ি পোশাক পরতে পেরেছিলাম। তারপর আরো অনেকগুলো স্পট আমরা ঘুরে ছিলাম। সেই সব গল্প না হয় অন্য কোন পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

Sort:  
 24 days ago 

আমিও তোমার মত বাড়ি ছেড়ে একদমই কোথাও যেতে চাই না সব সময় ঘরকুনো হয়েই বসে থাকি। দূরে কোথাও বেড়াতে গেলে সব সময় বাড়ির জন্য মন খারাপ করে। পাহাড়ে বেড়াতে গেলে পাহাড়ি পোশাক করতে বেশ ভালই লাগে। আমিও শুনেছি পাহাড়ে, পাহাড়ি পোশাক পরার জন্য পোশাক ভাড়া দেওয়া হয়। পাহাড়ে গিয়ে সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছো চারিদিকে ঘোরাঘুরি করে বেশ ভালোই লেগেছে। বান্ধবীদের সাথে সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছো সেই গল্প শেয়ার করেছ সুন্দর গল্প শেয়ার করার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 23 days ago 

তোমাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

Loading...

আসলে নিজের গ্রাম এবং শহর ছাড়া অন্য কোথাও থাকতে আমারও একদম মন চায় না ঠিক তেমন এটা আপনারও হয়েছে এবং নিজের বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও কোনরকম শান্তি পাওয়া যায় না তবে আপনাকে খুবই সুন্দর লাগছিল পাহাড়ির পোশাকে এবং কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দি করেছেন সেটা স্মৃতি হিসেবে রাখার জন্য আপনার এই 6 দিন কাটানো মুহূর্তগুলো আমাদের মাঝে তুলে ধরবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকবেন

 17 days ago 

ঠিকই বলেছেন দিদি, নিজের বাড়ি, নিজের পরিবেশ এ যে শান্তি তা আর কোথাও অনুভূত হয় না। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 21 days ago 

বাড়িতে থাকার মজাটাই অন্যরকম, হঠাৎ করে যখন আমরা বাড়ির থেকে কোথাও যাই প্রথমে খারাপ না লাগলে ও পরে কিন্তু আমাদের অনেক বেশি খারাপ লাগে। আপনার মত আমিও আপনার মত খুব বেশি দিন দূরে থাকতে পারিনা। আপনার মত আমারও খুব লাগে। তাইতো আপনি আবার ও বাড়িতে আসার জন্য চটপট করছিলেন। তবে আপনাকে পাহাড়ি পোশাক পরার পর বেশ সুন্দর লাগছিল। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপনার বান্ধবীর সাথে ঘুরতে যাওয়ার মুহূর্তটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 17 days ago 

সত্যিই দিদি, বাড়ির মতো শান্তিপূর্ণ জায়গা আর কোথাও নেই। যেখানেই যাই না কেন, শেষমেশ বাড়ির টানে বাড়িতেই ফিরতে হয়। তাই ঘুরতে গিয়েও বাড়ির জন্য খুব মন খারাপ করছিল।

 17 days ago 

মা ছাড়া যেমন বাড়ি শূন্য হয়ে যায় ঠিক তেমনি বাড়িছাড়া অন্য জায়গায় ভালো থাকাটা কখনোই সম্ভব হয় না। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো মেনে নিতে হয় যখন তাদের বিয়ে হয়ে যায় তখন শ্বশুর বাড়িতে নিজের বাড়ি মনে করেই বেঁচে থাকতে হয় বাকিটা জীবন। আর বিয়ের আগে কোথাও গেলে কখন বাড়িতে ফিরে আসব এই টেনশনে রাতে ঘুম হয় না বাড়িতে আসলেই মনে হয় শান্তি একটা না অনেকক্ষণ ঘুমানো যায় আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি।

 14 days ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য।