বান্ধবীর সাথে মায়াপুর ঘুরতে যাওয়া

in Incredible India16 days ago

নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? আজকে চলে এসেছি আপনাদের সাথে নতুন কিছু শেয়ার করার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।

গত চার-পাঁচ বছর ধরে আমি বছরের এই সময়টাই অর্থাৎ রথের আগে আগে মায়াপুর ঘুরতে যেতাম। মায়াপুর জায়গাটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। তাছাড়া মায়াপুরের ইস্কন মন্দির যেকোনো দর্শনার্থীদের কাছে খুব পছন্দের জায়গা। এই শ্রীধাম বা মায়াপুরের ইস্কন মন্দির বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম মন্দিরগুলির একটি। মায়াপুরের এই ইসকন মন্দির তৈরীর ইতিহাস নিয়ে আপনাদের সাথে একটি পোস্টে গল্প করেছিলাম তাই আজ আর এই মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত কিছু বললাম না। যখন কলেজে পড়তাম তখন একবার আমার এক বান্ধবী ও তার ভাইয়ের সাথে মায়াপুর ঘুরতে গিয়েছিলাম। আজ আমি আপনাদের সাথে সেই স্মৃতিই শেয়ার করব।

1000273633.jpg
প্রথমে ঠিক হয়েছিল আমি আর আমার ওই বান্ধবীই ঘুরতে যাবো। মায়াপুর যাওয়া খুব সহজ। আমাদের এখানকার বাসস্ট্যান্ড থেকে মায়াপুরে যাওয়ার বাসে উঠে পড়লেই এক বাসে সোজা মায়াপুর পৌঁছে যাওয়া যায়। তাই দুই জন মিলে যাওয়া কোনো কঠিন বিষয় ছিল না। তবে আমরা যেহেতু তখন অনেকটাই ছোটো ছিলাম তাই বাড়ি থেকে একা ছাড়তে চাইনি। তাই বলে ঘুরতে যাওয়া তো ক্যান্সেল করা যাবে না। অতএব আমাদের সঙ্গী হল আমাদের ভাই গণেশ। দিনটা ছিল রথের আগের দিন। আকাশটা কখনো খুব রৌদ্রজ্জ্বল হচ্ছে আবার কখনো মেঘলা হচ্ছে। তাই সঙ্গে ছাতা নিয়ে নিয়েছিলাম। আমি সময় মত বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমার বান্ধবী ও কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ভাইয়ের সাথে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে গিয়েছিল।

1000273641.jpg

তারপর ঘন্টা খানিকের মধ্যে আমরা মায়াপুর পৌঁছে গিয়েছিলাম। যখন আমরা পৌঁছায় তখন আকাশ বেশ রৌদ্রজ্জ্বল ছিল। আমরা সেখানে পৌঁছেই প্রথমে গীতা ভবনের টিকিট কেটে নিয়েছিলাম। এখানে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য বিভিন্ন রকমের, মানে বিভিন্ন দামের মধ্যে টিকিট কিনতে পাওয়া যায়। টিকিটের মূল্য অনুযায়ী খাবারের ধরন পরিবর্তন হয়। ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা পর্যন্ত এই টিকিট রয়েছে। আমরা অন্য কোন টিকিট সেই সময় পাইনি, তাই গীতা ভবনের টিকিট টাই পেয়েছিলাম। যাই হোক টিকিট কেটে আমরা মন্দিরের চত্বরটা ঘুরে দেখছিলাম।

1000273637.jpg

এরপর হঠাৎ করে বৃষ্টি নামে। আমরা ঘুরতে এসে বেশিরভাগ সময়টাই বৃষ্টির জন্য ঘুরতে পারিনি। তাই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি থামার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। যেহেতু খুব জোরে বৃষ্টি পড়ছিল তাই ছাতা নিয়েও ঘোরাঘুরি করার কোনো উপায় ছিল না। তার ওপরে আমার বান্ধবী একটা লং ড্রেস পরে গিয়েছিল। যার ফলে বৃষ্টি কমার পরে যখন আমরা ঘুরছিলাম তখন ওর জামা পুরো কাদায় ভরে গিয়েছিল। এই নিয়ে আমরা খুব হাসাহাসি করেছিলাম। এত সুন্দর একটা জামা পরে গিয়ে কাদায় ভরে যাওয়ার জন্য বান্ধবীও খুব দুঃখ পেয়েছিল।

1000273635.jpg

এরপর ঘুরতে ঘুরতে যেহেতু দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল তাই আমরা হাঁটতে হাঁটতে গীতা ভবনে পৌঁছে গিয়েছিলাম। এই গীতা ভবনটা বেশ অনেকটাই দূরে ছিল। প্রথমে তো চিনতেই পারছিলাম না। তারপর অনেক কষ্টে খুঁজে পেয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি এক বিশাল হল ঘরে ইতিমধ্যে খাবার খাওয়ার জন্য শালপাতার থালা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে গেট খোলার পর একে একে সবাই গিয়ে লাইন দিয়ে সেখানে বসে পড়ে। তারপর এক এক করে সমস্ত খাবার ওরা দিয়ে যায়। এই খাবার দেওয়ার টেকনিক টা দেখতে বেশ ভালো লাগে। এক হলঘর মানুষকে খাবার সার্ভ করা খুব সহজ কাজ নয়।। তবে এখানকার মানুষগুলো এত দ্রুতগতিতে এই কাজ করে যে সেটাই একটা দেখার মত বিষয়।

1000273639.jpg

খাবার খেয়ে মন্দিরের অন্য দিকগুলো ঘুরে দেখছি, এমন সময় ঘটল মহাবিপদ। হঠাৎ দেখি আমার জুতোটা ছিড়ে গেছে। মহা সংকটে পড়লাম। কারণ মন্দিরের সীমানার মধ্যে তো কোনো জুতো সারানোর দোকান পাওয়া সম্ভব নয়। কি করা যায় এই নিয়ে সবাই ভাবতে লাগলাম। কারণ খালি পায়ে তো ঘোরা সম্ভব নয়। অবশেষে আমাদের গণেশ ভাই বলে উঠলো," দাঁড়াও পিংকি দি, আমি একটা টেকনিক আবিষ্কার করেছি। আমার কাছে সেলোটেপ আছে। তোমার জুতোটা দাও আমি এখনই মেরামত করে দিচ্ছি।" এই বলে ও ওর ব্যাগ থেকে একটা সেলোটেপ বের করে। এরপর জুতোটা কে ভালো করে সেলোটেপ দিয়ে জড়িয়ে দেয়। এই ভাবেই আমার জুতোটা ঠিক হয়। ওই অবস্থায় আমি সারাদিন ঘুরেছি। জুতো ঠিকঠাকই ছিল।

1000273631.jpg

এরপর আরো খানিকটা ঘোরাফেরা করার পর আমরা বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। এইভাবেই দিনটা কেটেছিল। আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

Sort:  
Loading...

SPOT-LIGHT TEAM: Your post has been voted from the steemcurator07 account.

Thank you for your valuable efforts! Keep posting high-quality content for a chance to receive more support from our curation team.

1000006093.png