২৫ হাজার ৭৫৩ জন চাকরিপ্রার্থীর চাকরি বাতিল
নমস্কার বন্ধুরা। আপনারা সকলে কেমন আছেন? আমি আজ মানসিকভাবে একেবারেই ভালো নেই। যদিও কারণটা একেবারেই ব্যক্তিগত নয়। গতকালই খবর পেয়েছিলাম আজকে বহু দিন ধরে চলতে থাকা একটা কেসের ফাইনাল রায় বেরোবে। আজ সেই ঘটনাটিই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
একটা সময় ছিল যখন প্রতিবছর SSC শিক্ষক নিয়োগ করত। শিক্ষিত মেধাবী ছাত্ররা পড়াশোনা করতে করতেই অর্থাৎ এম.এ বা এম.এস.সি করতে করতেই SSC র জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করত। এবং যারা সত্যিই মেধাবী ছিল তাদের এই চাকরি পাওয়া নিশ্চিত ছিল। তাই ছাত্রছাত্রীরা SSC পরীক্ষা দেওয়ার জন্য খুব ভালোভাবে প্রস্তুতিও নিত। যোগ্যরাই চাকরিটা পেত।
এরপর ২০১১ সালের পরে ২০১৬ সালে SSC নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করল। তাতে এতদিন ধরে অপেক্ষারত বহু ছেলে মেয়ে পরীক্ষা দিল। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে কোনরকম নিয়োগ কিন্তু হয়নি। এতগুলো বছরে চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা ঠিক কত হয়েছিল তা আপনারা বুঝতেই পারছেন। মেধাবী ছাত্রীরা রাত- দিন এক করে পড়াশোনা করে পরীক্ষাটা দিল। তারপর মাঝে কেটে গেল আরও দুটো বছর। অবশেষে ২০১৮ সালে সেই পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোলো। তবে এইবার পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতেই যোগ্য মেধাবী বহু ছাত্র ছাত্রীদের চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে গেল। কারণ গোটা লিস্টে তারা নিজেদের নাম কোথাও খুঁজে পেল না, অথচ তারা নিশ্চিত ছিল যে তারা চাকরিটা পাবে কারণ তাদের পরীক্ষা যথেষ্ট ভালো হয়েছিল।
প্রায় ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের নাম সেই লিস্টে প্রকাশ পেল। বহু অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরিটা পেলেও বহু যোগ্য প্রার্থীরা কিন্তু এই চাকরিটা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।
এরপর একদল যোগ্যপ্রার্থী যারা চাকরিটা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল তারা ২০১৬ সালের SSC পরীক্ষার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলল রাজ্যের বিচার ব্যবস্থার কাছে। সেই কেস চলছিল দীর্ঘ এতগুলো বছর ধরে। তার মাঝে এতগুলো বছর যোগ্য অযোগ্য ২৫ হাজার ৭৫৩ জন প্রার্থী কিন্তু বিভিন্ন স্কুলে চাকরিতে যুক্ত হয়ে রীতিমতো চাকরি করছিলেন। অন্যদিকে যোগ্য চাকরিপ্রার্থী যারা চাকরিটা পাননি তারা কতটা কষ্ট বুকে চাপা রেখে সঠিক বিচারের আশায় ছিলেন, তাই আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
গত ছয় মাস আগে হাইকোর্ট তার রায়ে এই ২৫ হাজার ৭৫৩ জন চাকরি প্রার্থীর যে প্যানেল সেটা পুরোপুরি বাতিল বলে ঘোষণা করে দেয়। তখন থেকেই এই এত সংখ্যক চাকরিপ্রার্থীর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে থাকে। একবার ভাবুন তো যারা যারা চাকরিটা পেয়েছিল তাদের প্রত্যেকেই কি অবৈধভাবে চাকরিটা পেয়েছিল!
Online থেকে পাওয়া একটি তথ্যের স্ক্রিনশট দিলাম |
---|
এরপর তারা সুপ্রিম কোর্টের সহায় হলো। এই ছয় মাস ধরে চলল তার বিভিন্ন বিচারীকরণ প্রক্রিয়া। তারপর আজ সুপ্রিম কোর্টের ফাইনাল রায়ের এই ২৫ হাজার ৭৫৩ জন চাকরি প্রার্থীর প্যানেল বাতিল বলে ঘোষণা করে দিল। মানে যারা গোটা ছয় বছর ধরে চাকরিটা করছে তারা আজ হঠাৎ করে জানতে পারলো তাদের আর চাকরিটা নেই, আগামীকাল থেকে তারা আর তাদের স্কুলে যেতে পারবেনা। এক কথায় তারা বেকার।
টিভির ক্রিন থেকে তোলা একটি ফটো |
---|
সুপ্রিম কোর্ট এটাও জানিয়েছে আগামী তিন মাসের মধ্যে এই চাকরিপ্রার্থীদের আবারো পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষায় যদি তারা উত্তীর্ণ হতে পারে তবে তাদের চাকরি বহাল থাকবে। এবার একবার ভাবুন তো, এক বছর আগে আপনি যদি একটা বই পড়ে থাকেন তাহলে আজকের দিনেও কি আপনার সেই বইটি সম্পর্কে সমস্ত তথ্য মনে থাকবে? আর এটা তো ১০ বছরের ঘটনা।দশ বছর আগে যে চাকরি প্রার্থী টা দিনরাত এক করে পড়াশোনা করে , পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিটা পেয়েছিল তার পক্ষে কি আবার পুনরায় নতুন করে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে পরীক্ষায় পাশ করা সম্ভব হবে! হ্যাঁ, হয়তো কিছুজনের পক্ষে সম্ভব হবে। কিন্তু সকলের পক্ষে সম্ভব হবে না। এই আমিই ধরুন ২০১৫ সালে মাধ্যমিকে একটা ভালো নাম্বার পেয়ে পাস করেছিলাম। এখন আমাকে যদি তিন মাসের সময় দিয়ে বলা হয় আবার নতুন করে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে সেই একই নাম্বার পেতে তাহলে আমার পক্ষে কি সেই একই নাম্বার পাওয়া সম্ভব হবে! উত্তরে আমি বলব, না হবে না। কারণ পরিস্থিতি বদলেছে, সময় বদলেছে, পারিপার্শ্বিক চাপ বদলেছে--- এত কিছুর মাঝে আবার নতুন করে সেই বিষয়গুলোর উপরে কন্সেন্ট্রেশন আনা এতটাও সহজ কাজ নয়।
আজ সারাদিন খবরের চ্যানেল খুললে হাজার হাজার চাকরি প্রার্থীর হাহাকার শোনা যাচ্ছে। তাদের চোখের জল দেখে নিজের চোখের জল ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কেউ কেউ বহু চাকরি জয়েন না করে অনেক ভালবেসে এই প্রফেশনের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। আজ হঠাৎ করে এত বছর পর চাকরি হারিয়ে তারা দিশেহারা। তারা প্রত্যেকেই চিৎকার করে , হাহাকার করে বলছে---" আমার রেজাল্ট দেখুন, আমার একাডেমিক ক্যারিয়ার একবার খুঁটিয়ে দেখুন", কেউ কেউ বলছে--- "আমি আমার সময়কার কলেজ টপার, পি.এইচ.ডি হোল্ডার, গোল্ড মেডেলিস্ট---- এত কিছুর পরেও আমাদের প্রমাণ দিতে হবে আমরা যোগ্য নাকি অযোগ্য।"
আজ এতটাই খারাপ লাগছে এই ঘটনাগুলো দেখে যে নিজের মনের কথাগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার না করে থাকতে পারলাম না। আরো অনেক কথা মনের মধ্যে রয়ে গেল যেগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারলাম না।
আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোন লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব।
সবাই আসলে একটা ভালো চাকরির জন্য চেষ্টা করে কিন্তু যেখানে এসএসসি পরীক্ষার্থীর জন্য চাকরির বরাদ্দ ছিল সেখানে এখন এমবিবিএস এবং তার উপরেও চাকরি হয় না যেটা জানতে পেরে আসলে অনেক বেশি খারাপ লাগলো পড়াশোনা করেও যখন ভালো একটা চাকরি পাওয়া যায় না তখন কিন্তু নিজের পরিবারের কাছেও তেমন একটা মূল্যায়ন পাওয়া যায় না। তখন শুধুমাত্র নিজের চোখের পানি নিজেকেই বুঝতে হয় যাইহোক অসংখ্য ধন্যবাদ বিষয়টা আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন।