পশ্চিমবঙ্গে বাতিল হল ছাব্বিশ হাজার চাকরি
এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গের এস.এস.সি.এর প্যানেল বাতিল হল। গত ২০১৭ সালের পরীক্ষার্থীরা যারা ২০১৯ সালে এস.এস.সি পরীক্ষার মাধ্যমে যারা চাকরিতে যোগদান করেছিলেন তাদের যোগ্যতা যাচাইয়ের নথী নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ করা হয়েছিল। এই অভিযোগ করেছিলেন সেই সকল প্রার্থী যারা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে প্রার্থী হিসেবে চাকরি দেওয়া হয়নি। ২০১৯ সাল থেকে তাদের এই লড়াই চলছিল। এত বছর ধরে তারা সঠিক বিচার পাওয়ার জন্য গাছ তলায় বসে ধরনা দিয়েছেন।
আপাত দৃষ্টিতে চাকরি চলে যাওয়া প্রার্থীদের জন্য সমবেদনা থাকলেও এখানে অনেক প্রার্থী আছেন যারা বিপথে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। ভালো তো একজনের জন্য ১০ জনকে তার শাস্তি পেতে হচ্ছে। এই শাস্তি কে বলছে সেই সকল মানুষদের তা নয় তাদের সঙ্গে জুড়ে থাকা প্রত্যেকটি মানুষেরই জন্য এই শাস্তি। কারণ কর্মসংস্থান না থাকলে একটি পরিবার সম্পূর্ণভাবে ভেঙে যায় আর্থিক অনটনে।
কিন্তু অনেক ভেবে দেখতে গেলে বলা যায় যে চাকরি বাতিলের এই সিদ্ধান্তটি একটি দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষা হয়ে দাঁড়াবে সকল মানুষের কাছে। এবং এই পরিস্থিতির জন্য যে বা যারা দায়ী তারা সকলেই নিজেদের কৃতকার্যের ফল ভোগ করবে। শিক্ষা, কর্ম ,স্বাস্থ্য এই সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা অবলম্বন না করলে এমনই পরিস্থিতি হবে আগামী সময়েও। এবং যেকোনো দেশের শিক্ষা কর্ম ও স্বাস্থ্য এর সমগ্র দায়িত্ব থাকে দেশ বা রাজ্যের সরকারের ওপর আর সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালিত না হলে সম্মুখীন হতে হয় এমন দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির।
কোন একটি ঘটনার জন্য যেমন একজন হাসে তেমন অপরজনকে কাঁদতে হয়। যখন এসএসসির প্যানেল বেরিয়েছিল সেই প্যানেলে যাদের যোগ্যতা থাকা সত্বেও নাম আসেনি বা চাকরিতে যোগদান করতে পারেনি তারা দীর্ঘ সময় ধরে চোখের জল ফেলেছিল। আর আজ থেকে বিপরীত ঘটনা ঘটতে চলেছে যারা অযোগ্য হওয়ার সত্বেও ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে চাকরিতে যোগদান করেছিল তাদের আজ থেকে চোখের জল ফেলা শুরু হলো। এর মধ্যে তবে যারা যোগ্য প্রার্থী তারা আরেকটি সুযোগ পাচ্ছে আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন পরীক্ষায় যোগদান দিয়ে নিজেদের যোগ্যতা যাচাইয়ের।
এতদিন প্রবাদেই শুনেছিলাম
অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা তারে যেন তৃণ সমদয়ে।
আজ সেই অনলাইনের প্রতিবাদে যারা মুখর হয়েছিলেন তাদের জয় ঘটেছে। আজ সত্যি করে সত্যের জয় ঘটেছে যা প্রমাণ করে দিয়েছে, সত্য কখনো লুকানো যায় না। ঘটনাটি বেদনাদায়ক হলেও এরকম একটি বড় ঝড় এর প্রয়োজন ছিল না হলে আগামী প্রজন্ম হয়তো নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলত এই দুর্নীতির মধ্যে ভিড়ে।
এ যেন আমাদের লজ্জা। এমন রাজ্যে আমরা বসবাস করি যেখানে কর্মসংস্থানেও ঘটছে দুর্নীতি। মানুষ আর কত নিজেকে ছোট করবে সেই জানে। অন্যের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে তা ভোগ করা খুব সহজ বিষয় নয়। তাই আজ তা প্রমাণও হয়ে গেল।