তেলা কচুর লতি দিয়ে পুঁটি মাছের রেসিপি

in Incredible India19 hours ago

নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন ?আশা করছি সকলেই ভালো আছেন ।আজকে আবারো নতুন একটা পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে আশা করছি সকলেরই ভালো লাগবে।

IMG_20250702_160128.jpg

আজকে আপনাদের মাঝে শেয়ার করব তেলা কচুর শাক দিয়ে পুঁটি মাছের রেসিপি। এই রেসিপিটি গ্রামবাংলায় ভীষণ প্রিয় একটা রেসিপি। আমাদের শহরাঞ্চলে অনেক গাছই আমরা দেখতে পাই না ।কিন্তু গ্রাম বাংলাতে বিভিন্ন রকমের লতানো গাছপালা দেখতে পাওয়া যায়। তেলা কচু গাছ গ্রাম বাংলাতে প্রায় বাড়ির আশেপাশে লতিয়ে যেখানে সেখানেই জন্মাতে দেখা যায়। অনেকেই বন-জঙ্গল হিসেবে ছিড়ে ফেলে দেয় ।আবার অনেকেই সবজি হিসেবে খায়। এই তেলা কচুর ফল সব পাখিতেই খাই। বিশেষ করে টিয়া পাখিকে এই তেলা কচুর ফল খাওয়ানো হয়। ফলটি কাঁচা অবস্থায় সবুজ আর পাকলে লাল রঙের হয়। তেলা কচুর পাতা ভেষজ এক রকমের উদ্ভিদ। যা বিভিন্ন রকম রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যেমন -জ্বর ,কুষ্ঠ ,ত্বক আরো বিভিন্ন রকম সমস্যা জনিত রোগের কাজে ব্যবহার করা হয়।

এছাড়া তেলা কচু পাতার রস খেলে ডায়াবেটিস রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়াও ছোট মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ উপকারী।তেলা কচুর পাতা,ফল, ডাটা, ফুল সব কিছুই উপকারী। জন্ডিস হলে তেলা কচুর মূল ছেঁচে রস তৈরি করে খেলে তাতেই জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।তেলা কচুর পাতার রস খেলে সর্দি -কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। হাই প্রেসার এর রোগীদের যখন হঠাৎ করে মাথা ঘুরে ওঠে। তখন তেলা কচুর পাতা ছেঁচে মাথায় রস লাগালে সাথে সাথে মাথা ঘোরা বন্ধ হয়ে যায়। এইরকম প্রচুর সমস্যার সমাধান হয় তেলা কচুর গাছ থেকে। আমরা ছোটবেলায় তেলা কচুর ফল নিয়ে আমরা রান্নাবাটি খেলা করতাম। তখন এত গুনাগুন সম্পর্কে কিছু জানতাম না। ছোটবেলায় আমরা তেলা কচুর শাক রান্না করে খেতাম।

চলুন তাহলে শুরু করি গ্ৰাম বাংলার একটি সুস্বাদু জনপ্রিয় রেসিপি তেলা কচুর লতি দিয়ে পুঁটি মাছের রেসিপি:-

উপকরণ
নংসামগ্রীপরিমাণ
তেলা কচুর লতিপরিমাণ মতো
পুঁটি মাছ৪০০ গ্ৰাম
আলু২ টো
সরষের তেল৫০ গ্ৰাম
গোটা রসুন১ টা
কাঁচা লঙ্কা১০ টা
গোটা জিরে১ চামচ
কালো জিরে১ চামচ
মৌরিসামান্য
১০রাঁধুনিপরিমাণ মতো
১১লবণদেড় চামচ
১২হলুদহাফ চামচ
১৩শুকনো লঙ্কা২ টো
১৪ভাজা জিরের গুঁড়ো১ চামচ

IMG_20250625_163310.jpg

প্রথম ধাপ

প্রথমেই বাড়ির পাশ থেকে বেশ অনেকটাই তেলা কচুর ডগার অংশ টা তুলে নিয়েছিলাম। যে কোনো লতানো গাছের শুড় বার হয়।অন্য গাছকে বা শক্ত জিনিস কে অবলম্বন করে ওঠার জন্য।সেই শুড় গুলো বাদ দিয়ে ফেলে দিতে হবে। খুব ভালো করে বেছে নেওয়ার পর সাইজ করে কেটে নিতে হবে কেটে খুব ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর আমি পরিমাণ মতো আলু নিয়ে নিয়েছিলাম ।আলু গুলো কে সাইজ করে কেটে নিয়েছি। পুঁটি মাছ গুলো ভালো করে কেটে ধুয়ে লবণ, হলুদ মাখিয়ে রেখে দিয়েছি। আর সমস্ত মসলা রেডি করে নিয়েছিলাম। রসুন থেঁতো করে, কাঁচা লঙ্কা চিরে এছাড়া শুকনো লঙ্কা, গোটা জিরে, মৌরি, কালো জিরে, রাঁধুনি রেডি করে নিয়েছিলাম।

IMG_20250625_163445.jpg

দ্বিতীয় ধাপ

এরপর গ্যাস অন করে একটা কড়াই বসিয়ে দিয়েছিলাম। কড়াই গরম হলে কড়াইতে পরিমাণ মতো সরিষার তেল দিয়ে দিয়েছি। তেল গরম হলে তেলের মধ্যে কেটে রাখা আলু গুলো খুব ভালো করে ভেজে তুলে নিয়েছিলাম।

IMG_20250625_163711.jpg

তৃতীয় ধাপ

এবারে ওই গরম তেলের মধ্যেই পুঁটি মাছ গুলো কড়া করে ভেজে নিতে হবে। সমস্ত মাছ ভাজা হয়ে গেলে একটা পাত্রে তুলে রেখে দিয়েছিলাম।

IMG_20250625_163936.jpg

চতুর্থ ধাপ

এরপর ওই তেলের মধ্যে আরো খানিকটা তেল এড করে দিয়েছিলাম। ওই গরম তেলের মধ্যেই সামান্য পরিমাণে রাঁধুনি, কালো জিরে, মৌরি আর দুটো শুকনো লঙ্কা দিয়ে দিয়েছি। ওগুলো খুব ভালো করে ভেজে নেওয়ার পর থেঁতো করে রাখা কয়েকটা রসুন আর চিরে রাখা কাঁচালঙ্কা গুলো দিয়ে খুব ভালো করে নাড়াচাড়া করে নিতে হবে। লাল লাল করে ভেজে নিতে হবে।

IMG_20250625_164100.jpg

পঞ্চম ধাপ

এবারে কেটে রাখা তেলা কচুর লতি গুলো কড়াইতে দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে। নাড়াচাড়া করার পর পরিমাণ মতো লবণ আর হলুদ অ্যাড করে দিয়েছিলাম। খানিকক্ষণ ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। কারণ তেলা কচুর পাতা থেকে জল বের হবে।

IMG_20250625_164140.jpg

ষষ্ঠ ধাপ

খানিকক্ষণ পরে ঢাকনা খুলে দেখা যাবে যখন তেলা কচুর শাকের জল শুকিয়ে এসেছে ।তখন ভেজে রাখা আলুগুলো কড়াইতে দিয়ে শাকের সাথে মিশিয়ে নাড়াচাড়া করে নিতে হবে।

IMG_20250625_165019.jpg

সপ্তম ধাপ

খানিকক্ষণ নাড়াচাড়া করার পর আবারো পরিমাণ মতো জল দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে খানিকক্ষণের জন্য।

IMG_20250625_165137.jpg

অষ্টম ধাপ

এবারে তরকারি ঝোল যখন ফুটে উঠবে ।তখন ভেজে রাখা পুঁটি মাছগুলো কড়াইতে দিয়ে দিতে হবে। একটু নাড়াচাড়া করে আবারো পাঁচ মিনিটের জন্য ঢেকে রাখতে হবে।

IMG_20250625_165234.jpg

শেষ ধাপ

এরপর ঢাকনা খুলে এক চামচ ভাজা জিরের গুঁড়ো দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে।

IMG-20250624-WA0067.jpg

তৈরী

তরকারির ঝোল পরিমাণ মতো রেখে কড়াই থেকে নামিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে অতি সুস্বাদু তেলা কচুর লতি দিয়ে পুঁটি মাছের রেসিপি।

IMG-20250624-WA0068.jpg

রেসিপিটি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ।গরম ভাতের সাথে খেতে খুবই ভালো লাগে। জিরের গুঁড়ো দিলে তরকারির স্বাদ একটু অন্যরকম লাগে। আপনারা চাইলে গরম মসলা দিতে পারেন। আমি প্রথমবার এই রেসিপিটি খেয়ে খুবই ভালো লেগেছিল। তাই এই রেসিপিটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করে নিলাম। এই রেসিপিটি আমার ছোট বোন আমাকে শিখিয়েছিল ও খুব সুন্দর এই রেসিপিটি তৈরি করতে পারে ।এর আগে কখনোই আমি এই রেসিপি সম্পর্কে জানতাম না। আমি এই প্রথমবার রেসিপিটি তৈরী করেছিলেন। সমস্ত উপকরণ আমি আমার প্রয়োজন মতো ব্যবহার করেছি। আপনারা আপনাদের প্রয়োজন মত সমস্ত কিছু ব্যবহার করবেন। তরকারির ঝোলের পরিমাণ আপনারা আপনাদের পরিমাণ মতো রাখবেন। আমি তরকারি একদমই শুকনো শুকনো করেছিলাম


আজ এই পর্যন্তই। আবার নতুন কোন রেসিপি নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে।

Sort:  
 14 hours ago 

পুটি মাছ খেতে খুব ভালো লাগে আমার কাছে ।তবে তেলাকুচা দিয়ে কখনো খাই নাই ।আসলো তেলাকুচা যে খাওয়া যায় এটাই জানতাম না আমি।ইদানীং জেনেছি যে এটা খাওয়া যায় ।ছোট বেলায় খেলতাম এগুলো দিয়ে।
তবে আপনি যেভাবে ধাপে ধাপে এই রেসেপিটা শেয়ার করেছেন তাতে মনে হচ্ছে খেগে ভালোই লাগবে ।
চমৎকার এই রেসেপি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।

Loading...

SPOT-LIGHT TEAM: Your post has been voted from the steemcurator07 account.

Thank you for your valuable efforts! Keep posting high-quality content for a chance to receive more support from our curation team.

1000006093.png

 3 hours ago 

Thank you 🙏