চুষি পিঠে রেসিপি
নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন ?আশা করছি সকলেই খুব ভালো আছেন। আজকে আবারো নতুন একটা রেসিপি নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে। আশা করছি সকলেরই ভালো লাগবে।
শীতকাল চলে গেছে প্রায় অনেকদিন হয়ে গেছে। কিন্তু শীতের রেসিপি গুলো আমার এখনো দেওয়া হয়ে ওঠেনি। শীতকালে সকলেই বিভিন্ন রকমের রেসিপি তৈরি করেন। আমিও বিভিন্ন রকমের রেসিপি তৈরি করেছিলাম আস্তে আস্তে সব কিছুই আপনাদের মাঝে শেয়ার করে নেব। তবে এখন শুধু শীতকাল বলেই নয়, সমস্ত কিছুই চাইলে বারোমাস তৈরি করে খাওয়া যায়। শীতকালে শীতের জিনিস খেতে হয় তো একটু ভালো লাগবে। কিন্তু আমার মনে হয় শীত ঘুরে আসতে অনেক টাই সময় লাগে। তাই আমরা চাইলে বাড়িতে অবশ্যই ১২ মাসে যে কোন রেসিপি চাইলেই তৈরি করে খেতে পারি। আজকে শেয়ার করব আমার একটা পছন্দের রেসিপি। বহুদিন ধরেই সকলের মুখে শুনে আসছি। কিন্তু কিভাবে তৈরি করে সেটা কোনদিনই জানতাম না।
ভিডিও লিংক
আমার মতে সমস্ত বাঙালিরা সমস্ত রেসিপি তৈরি করতে যেমন পটু তেমনি খেতেও তারা ভীষণ পছন্দ করে। সেদিন হঠাৎ বাপের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার পর মায়ের কাছে বায়না করেছিলাম চুষি পিঠে খাব। কিন্তু মা আমাদের কিভাবে তৈরি করতে হয় সমস্ত কিছুই বুঝিয়ে দিল ।এরপর আমি মায়ের মুখের কথা শুনে নিজে নিজে রেসিপিটি প্রথমবার তৈরি করেছিলাম। তবে রেসিপিটি খেতে যতটা সহজ বানাতে ঠিক ততটাই কঠিন ।আসলে খুব ছোট ছোট আকৃতি করে বানাতে হয়। তাই অনেকটা সময় লেগে যায়। যেদিন রেসিপিটি তৈরি করেছিলাম সেই দিন কেই মনে মনে ভাবছিলাম গ্রামের মানুষজন পৌষ পার্বণের সময় বিভিন্ন রকমের পিঠে ,পুলি থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু কিভাবে একা হাতে তৈরি করে। এছাড়াও আগেকার দিনে মা ঠাকুমা সমস্ত কিছু পৌষ পার্বণের দিন দুপুরবেলায় খাওয়া-দাওয়ার পরেই বসে পড়তো সমস্ত পিঠে পুলি বানানোর জন্য। কিন্তু এখন আর আমার চোখে সেই সব দিনগুলো চোখে পড়ে না। হয়তো সকলেই বানাই। কিন্তু আগে কার দিনের মানুষের মতো অত পারে না।
যাইহোক চলুন তাহলে শুরু করি কিভাবে চুষি পিঠের রেসিপি তৈরি করা হয়।
নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | আতপ চালের গুঁড়ো | ৩০০ গ্ৰাম |
২ | লবণ | সামান্য |
৩ | দুধ | ৭৫০গ্ৰাম |
৪ | চিনি | দেড় কাপ |
৫ | এলাচ | ২ টো |
প্রথম ধাপ
প্রথমেই আমি গ্যাস অন করে কড়াই বসিয়ে দিয়েছি। কড়াইতে পরিমাণ মতো জল দিয়েছি। জল দেওয়ার পর সামান্য লবণ অ্যাড করে দিয়েছি। এরপর কড়াইয়ের জল ফুটে উঠলে কড়াইতে পরিমাণ মতো আতপ চালের গুঁড়ো দিয়ে দিতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ
আতপ চালের গুঁড়ো দেওয়ার পর ভালো করে নাড়াচাড়া করতে হবে ।যাতে গুঁড়ো কড়াইতে লেগে না যায়। খানিকক্ষণ কড়াইতে নাড়ার পর নামিয়ে নিতে হবে একটা পাত্রে। কিছুক্ষণ ঠান্ডা করার জন্য রেখে দিতে হবে ।ঠান্ডা হয়ে গেলে সামান্য জল দিয়ে চালের গুঁড়োর ময়দাটা ভালো করে মেখে নিতে হবে। ময়দাটা একটু শক্ত করে মাখতে হবে।
তৃতীয় ধাপ
মাখা হয়ে গেলে খানিকক্ষণ রেখে এরপরে একটা রুটি বেলার চাকতি নিয়েছিলাম। ওর উপরে হাতের সাহায্যে লম্বা লম্বা করে এরপর সরু সরু আকৃতি করে তৈরি করে নিয়েছিলাম। কিভাবে তৈরি করেছি দেখতে হলে ভিডিও লিংক দেওয়া থাকলো অবশ্যই দেখে নিতে পারেন।
চতুর্থ ধাপ
এরপর চুষি গুলো খানিকক্ষণ রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। শুকিয়ে নিলে জিনিসটা ভেঙে যায় না কিংবা একটার সাথে একটা লেগেও যায় না।
পঞ্চম ধাপ
এবারে গ্যাস অন করে কড়াই বসিয়ে দিয়েছিলাম ।কড়াইতে পরিমাণ মতো দুধ দিয়েছি। এখানে আমি গরুর দুধ ব্যবহার করেছি। দুধ খুব ভালো করে ফুটিয়ে ঘন করে নিতে হবে ।ঘন করে নেওয়ার খানিকক্ষণ পর দুধের মধ্যে এলাচ দিয়ে দিয়েছি। এলাচ দিলে যে কোন জিনিসের গন্ধ দ্বিগুণ বেড়ে যায়, খুব সুন্দর একটা সুগন্ধ বেরোয়।
ষষ্ঠ ধাপ
এরপর ফুটন্ত দুধের মধ্যে পরিমান মত চিনি অ্যাড করে দিয়েছিলাম ।আর সামান্য লবণ অ্যাড করেছি। পায়েস কিম্বা পিঠে যে কোন জিনিস খুবই মিষ্টি প্রকৃতির হয়। কিন্তু এর মধ্যে যদি সামান্য লবণ দেওয়া হয় তাহলে খেতে আরো ভালো লাগে।
সপ্তম ধাপ
সমস্ত কিছু দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নেওয়ার পর তৈরি করে রাখা চুষি পিঠে গুলো আস্তে আস্তে দুধের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। দেওয়ার পর হালকা করে নাড়াচাড়া করতে হবে ।যাতে ভেঙে না যায় ।এইভাবেই খানিকক্ষণ ফুটিয়ে নিতে হবে।
তৈরি
এইভাবেই খানিকক্ষণ ফুটিয়ে কিছুক্ষণ ঠান্ডা করে নামিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে চুষি পিঠে।
আমি এই প্রথমবার নিজের হাতে চুষি পিঠে বানিয়েছিলাম ।আপনারা চাইলে একই পদ্ধতিতে চুষি পিঠে বাড়িতে তৈরি করে বাড়ির সকলকে খাওয়াতে পারেন। বিশেষ কিছু উপকরণ লাগেনা। কিন্তু বানানোর জন্য সময় একটু লাগে। কিন্তু খেতে ভীষণ সুস্বাদু হয়। আমি অনেকটাই তৈরি করেছিলাম। আপনারা চাইলে আপনাদের পরিমাণ অনুযায়ী তৈরি করতে পারেন। আসলে প্রথমবার তৈরি করে সকলকে খাইয়ে ছিলাম। তাই একটু বেশি পরিমাণেই তৈরি করেছিলাম। আশা করি রেসিপিটি সকলেরই পছন্দ হবে ।ভিডিওর লিংক দেওয়া থাকলো আপনারা চাইলে দেখতে পারেন।
আজ এখানেই শেষ করছি। আবার নতুন কোন রেসিপি নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।