এগ ফিস রোল রেসিপি
নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই ভালো আছেন। আজকে আবারো নতুন একটা রেসিপি নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে।
আজকে আপনাদের মাঝে শেয়ার করব এগ ফিস রোলের রেসিপি। এর আগে ডিম দিয়ে বিভিন্ন রকমের রেসিপি তৈরি করেছি সবকিছুই আপনাদের মাঝে শেয়ার করে নিয়েছি ।কিন্তু আমার কাছে এই রেসিপিটি একদমই অন্যরকম। এর আগে কখনোই বাড়িতে তৈরি করে খাওয়া হয়নি। এর আগে অনেক পোস্টেই আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করেছিলাম আমার বর যেকোন মুখরোচক খাবার খেতে খুবই পছন্দ করে। যখন যা বায়না করে তখন সেটাই তাকে বানিয়ে দিতে হয়। সেদিন শাশুড়ি মা গ্রামের বাড়ি থেকে বাড়ি ফিরে এসেছিল। আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটা ছোট্ট পুকুর রয়েছে ।সেখানে বিভিন্ন রকমের মাছ চাষ করা হয়। সেদিন সকাল বেলায় পুকুরের মাছ ধরা হয়েছিল। সেই জালেই হঠাৎ করে একটা ব্লাড কার্প মাছ ধরা পড়েছিল। এই মাছের নাম আমি এই প্রথমবার শুনলাম। সেই মস্ত বড় মাছটি ঠাকুমা শাশুড়ি কেটে ধুয়ে শাশুড়ি মাকে দিয়ে বাড়ির জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিল।
ভিডিও লিংক
পুকুরের মাছ বলে মামার বাড়িতে এছাড়াও আশেপাশে সকলকে মাছ দিয়েছিলাম। তবুও আমাদের অনেকটাই মাছ ছিল। মাছ দেখে বরের বায়না শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেই দিন কে মাছের কোন একটা রেসিপি তৈরি করে খাওয়ানোর। যেমনি বলা তার তেমনি কাজ। এর পরেই নিজের মন থেকে বের করে ফেলল কি পদ্ধতিতে মাছের রেসিপি তৈরি করা যায়। এরপরেই আমার বোন আর আমার বর দুজনে মিলেই সমস্ত কিছু জোগাড় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সমস্ত কিছু জোগাড় করে নিয়েই আমরা শুরু করে দিয়েছিলাম এগ ফিস রোল বানানোর জন্য। তবে বাইরে কোন রকম উপকরণ ব্যবহার করিনি। ঘরে রোজ যেগুলো দিয়ে রান্না বান্না করি, সেই সব মশলাপাতি দিয়েই ঝটপট শুরু করেছিলাম এগ ফিস রোল রেসিপি। প্রথমে ভাবছিলাম হয়তো করে উঠতে পারব না।
কিন্তু যে কোন রেসিপি তৈরি করা শুরু করলে সেটা ঝটপট করা হয়ে যায়। তবে চলুন শুরু করি আজকে এগ ফিস রোল রেসিপি।
নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | সাদা ময়দা | ৫০০ গ্ৰাম |
২ | চিনি | হাফ চামচ |
৩ | লবণ | সামান্য |
৪ | সাদা তেল | ২ চামচ |
প্রথম ধাপ
প্রথমেই এগ ফিস রোল বানানোর জন্য পরিমাণ মতো সাদা ময়দা নিয়ে নিয়েছিলাম ।ময়দা তে সামান্য পরিমাণে লবণ, চিনি ,সাদা তেল দিয়ে ভালো করে মসকে নিতে হবে। খানিকক্ষণ সবকিছু মসকে মিশিয়ে নেওয়ার পর জল দিয়ে মেখে নিতে হবে ।ঠিক যেভাবে লুচির ময়দা মাখা হয়। এইভাবে মেখে খানিকক্ষণ ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে।
নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | ব্লাড কার্প মাছ | ২৫০ গ্ৰাম |
২ | পেঁয়াজ | ৪ টে |
৩ | ছোট সাইজের গোটা রসুন | ১ টা |
৪ | কাঁচা লঙ্কা | ৫ টা |
৫ | আদা বাটা | হাফ চামচ |
৬ | জিরে গুঁড়ো | হাফ চামচ |
৭ | মিট মসলা | হাফ চামচ |
৮ | সরিষার তেল | ২৫ গ্ৰাম |
৯ | লবণ | ১ চামচ |
১০ | হলুদ | হাফ চামচ |
১১ | সাদা তেল | পরিমাণ মতো |
১২ | ডিম | ৬ টা |
১৩ | টমেটো সস | পরিমাণ মতো |
দ্বিতীয় ধাপ
এরপর আমি পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা ,রসুন সমস্ত কিছু গুছিয়ে নিয়েছিলাম ।মাছগুলো ছোট ছোট সাইজ করে কেটে নিতে হবে ।
তৃতীয় ধাপ
সমস্ত কিছু রেডি করে নেওয়ার পর ময়দার লেচি কেটে নিতে হবে ।কেটে নেওয়ার পর রুটির মত করে গোল করে বেলে নিতে হবে। আমি এখানে ময়দা দিয়ে বেলে ছিলাম ।কারণ ময়দা দিয়ে বেললে রুটির আকৃতি টা সুন্দর হয়। তবে আপনারা চাইলে সাদা তেল দিয়ে বেলে নিতে পারেন।
চতুর্থ ধাপ
এবারে গ্যাস অন করে একটা কড়াই বসিয়ে দিয়েছিলাম ।কড়াই গরম হলে কড়াইতে পরিমাণ মতো সরিষার তেল দিয়ে দিতে হবে। তেল গরম হলে তেলের মধ্যে টুকরো করে রাখা মাছগুলো দিয়ে ভালো করে ভাজতে হবে। ভালো করে ভাজা হয়ে গেলে ওর মধ্যেই লবণ, হলুদ অ্যাড করে দিতে হবে।
পঞ্চম ধাপ
এরপর কোচানো পেঁয়াজ গুলো দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে ।খানিকক্ষণ পর কোচানো রসুন ,কাঁচা লঙ্কা দিয়ে নাড়তে হবে ।এইভাবে খানিকক্ষণ নাড়ার পর আদা বাটা ,জিড়ের গুঁড়ো দিয়ে আরো ভালোভাবে নেড়ে নিতে হবে। শেষে সামান্য মিট মসলা দিয়ে নাড়াচাড়া করে নামিয়ে রেখে দিতে হবে।
ষষ্ঠ ধাপ
এরপর গ্যাসে একটা ফ্রাই প্যান বসিয়ে দিয়েছি। প্যান গরম হলে ওর উপরে বেলে রাখা রুটি গুলো দুই পিঠ হালকা করে সেঁকে নিতে হবে। সমস্ত রুটি, প্রথমে সেঁকে নিয়ে এরপর ওই প্যানের উপরেই সাদা তেল দিয়ে দুই পিঠ ভালো করে ভেজে নিতে হবে। ভাজা হয়ে গেলেই আমি একটা করে ডিম নিয়েছি সেটা ভেঙে ওর মধ্যে সামান্য লবণ দিয়ে ডিমটা ভালো করে ঘেটে নিতে হবে। নেওয়া হয়ে গেলে ওই প্যানের উপরে ঢেলে দিতে হবে। ডিম দেওয়ার সাথে সাথে ভেজে নেওয়া রুটিটা চাপা দিয়ে দিতে হবে ।দিয়ে দুই পিঠ ভালো করে সেঁকে নিতে হবে।
সপ্তম ধাপ
আমি এখানে দুই রকম পদ্ধতিতে ডিম দেওয়া দেখিয়েছি, ভিডিও লিংক দেওয়া থাকছে ।আপনারা চাইলে দেখে নিতে পারেন।
অষ্টম ধাপ
এরপর ঠিক একই রকম পদ্ধতিতে সমস্ত রুটি ডিম দিয়ে তৈরি করা হয়ে গেলে একটা পাত্রের উপর রেখে প্রথমেই তৈরি করে রাখা মাছের পুরটা ওই রুটির উপর লম্বা করে দিয়ে দিতে হবে।
নবম ধাপ
মাছের পুর রুটির উপর দেওয়ার পর ওর ওপরে কুচিয়ে রাখা পেঁয়াজ ছিটিয়ে দিতে হবে। পেঁয়াজ দেওয়ার পর টমেটোর সস দিয়ে দিতে হবে পরিমাণ মতো। আমি এখানে স্যালাড হিসেবে শুধু পেঁয়াজ ব্যবহার করেছিলাম ।আপনারা চাইলে ধনেপাতা বা আরো অন্যান্য কিছু ব্যবহার করতে পারেন ।
তৈরি
এভাবেই সমস্ত কিছু দেওয়ার পর এগ রোলের আকৃতি করে মুড়িয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে এগ ফিস রোল। আপনারা নিজেরা ও তৈরি করে খান এবং বাড়ির সকলকে তৈরি করে খাওয়ান ।আশা করি রেসিপিটি সকলের ভালো লাগবে।
আমি এই প্রথমবার বাড়িতে এত সুস্বাদু একটি রেসিপি তৈরি করেছিলাম। রেসিপিটি আমাদের বাড়ির সকলেরই খেয়ে খুব পছন্দ হয়েছে। তবে মাছটা আপনারা আপনাদের ইচ্ছামত দিতে পারেন ।যেহেতু পুকুরের মাছ ।তাই সেদিন আমরা ব্লাড কার্প মাছ দিয়েই এগ ফিস রোল তৈরি করেছিলাম। আমি শুধুমাত্র মাছের পুর তৈরি করার সময় লবণ আর তেলের পরিমাণ উল্লেখ করেছি। এছাড়া যা লবণ ,তেল লাগবে। আপনারা আপনাদের পরিমান মত ব্যবহার করবেন। আমি যেহেতু ছয় টা রোল তৈরি করেছিলাম। তাই আমি ছয় টা ডিম ব্যবহার করেছি ।আপনারা আপনাদের পরিমাণ মতো সবকিছু জিনিস ব্যবহার করবে। ছোট থেকে বড় আশা করি সকলেরই রেসিপিটি খুব ভালো লাগবে ।অবশ্যই সকলকে বাড়িতে তৈরি করে খাওয়ান ।আমি ঘরোয়া উপায়ে এই রকম রেসিপি সবসময় বাড়িতে তৈরি করে খেয়ে থাকি ।কারণ বাইরের খাবার আমার একদম অপছন্দ ।আমি মনে করি ঘরে তৈরি করে যে কোন খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। ভিডিও লিংক দেওয়া থাকলো আপনারা চাইলে দেখতে পারেন।
আজ এখানেই শেষ করছি। আবার নতুন কোন রেসিপি নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।
Congratulations, your post is upvoted by CCS curation trail from CCS - A community by witness visionaer3003.
Vote for visionaer3003 as witness.
আমি চিকেন রোল খেতে অনেক বেশি পছন্দ করি তবে মাঝে মাঝে নিজে তৈরি করে খাওয়া হয়ে থাকে আজকে আপনি আমাদের সাথে চমৎকার ভাবে এই রোল তৈরি করার পদ্ধতি শেয়ার করেছেন যেটা দেখতেই তো অনেক বেশি লোক উনিও দেখাচ্ছে খেতেও নিশ্চয়ই অনেক বেশি মজা হয়েছে যাইহোক অসংখ্য ধন্যবাদ রোল তৈরি করার পদ্ধতি আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন।
এগ ফিস রোল রেসিপি এটা আমার কাছে একদম নতুন এবং এর নাম আমি আগে শুনেছি বলেও আমার মনে হয় না। তবে আপনাদের রেসিপি গুলো দেখে সেটা আমার কাছে সব সময় ভালো লাগে। আপনি রেসিপিটা আপনার বাসায় প্রথম তৈরি করেছেন এবং সবাইকে সেটা ভালো বলেছে। অবশ্যই ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে খেতে এটা সুস্বাদু হয়েছে। যাই হোক প্রত্যেকটি ধাপ অনুযায়ী আপনি আমাদের মাঝে উল্লেখ করেছেন যেটা সহজেই আমরা বুঝতে পারি তার পাশাপাশি এটা আমরা নিজেদের বাসাতেও তৈরি করতে পারি। ভালো লাগলো আপনার আজকের এই এগ ফিস রোল রেসিপি দেখে।