শুভর জন্মদিন উপলক্ষ্যে সারপ্রাইজ
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি ,আরো একটি জন্মদিন এর গল্প।
আসলে আমাদের পাশে অনেকগুলো বাড়ি থাকলেও সব থেকে ভালো সম্পর্ক মৌসুমী বৌদিদের বাড়ির সাথে আর পাশের বাড়ির কাকিমা অর্থাৎ শুভদের বাড়ির সাথে। আপনারা আমার অনেক ছবিতে এবং গল্পেও এই দুটো বাড়ির গল্প অনেক শুনেছেন। যেহেতু মৌসুমী বৌদি এই প্লাটফর্মে ই রয়েছে ,তাই আপনারা ওকে চেনেন। তবে আমার পাশের বাড়িতে আমাদের একটা ভাইও রয়েছে।
আমার আর মৌসুমী বৌদির কোনরকম উদ্যোগে শুভ সবসময় সঙ্গ দেয়। সেটা শীতকালে ফিস্ট করার কথা হোক অথবা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা হোক। আমি আর মৌসুমী বৌদি নানান রকম প্ল্যান করতে থাকলে ও আমাদের সাথে প্ল্যানে হেল্প করে। আর বাড়ির লোকজনকে রাজি করাতে হেল্প করে।
সত্যি বলতে শুভর মতো ছেলে আমি সত্যিই এখনো অব্দি একটাও দেখিনি। মেয়ে মানুষের মতো বাড়ির সব কাজ করে। ছোটবেলা থেকে ওকে দেখে এসেছি, বাড়ির উঠোন মেজে বারান্দা ঝাঁট দিতে। এমনকি আমার মা ওকে দেখিয়ে আমাকে বলে ,কিছু শেখ ওর কাছ থেকে। ছেলেটা এত ঘরোয়া। আর এত ভালো ছেলে। সত্যিই আজকালকার দিনে এরকম ছেলে পাওয়া যায় না।।
আমি ছোটবেলা থেকে শুভ আর সাথীর সাথে বড় হয়েছি ।সাথী হল ওর দিদি । সাথী বিয়ে হয়ে যাবার পর থেকে ও এখন বাড়িতে একা। তবে ওর আমার সাথে আর মৌসুমী বৌদির সাথে খুব ভাব। মোটামুটি আমাদের সাথে আড্ডা দেওয়া, গল্প করা ওর লেগেই থাকে। এই বছরে আমার জন্মদিনে ওরা সবাই মিলে আমাকে দুর্দান্ত একটা সারপ্রাইজ দিয়েছিল রাত দুপুর বেলায়। আমি কল্পনাও করতে পারিনি সেটা। তবে আমারও ইচ্ছা ছিল এরকম ভাবে কিছু করার।
তবে আমার এত এত জন্মদিন মনে থাকে না। মৌসুমী বৌদি শুভর জন্মদিনের আগের দিন আমাকে বলল ,আগামীকাল কিন্তু শুভর জন্মদিন আছে। চলো আমরা শুভকে একটা সারপ্রাইজ দিই। আমি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম। সেই মতো ২৬ শে মার্চ আমি স্কুলের থেকে ফেরার পথে কেক কিনে নিয়ে আসলাম। সত্যি বলতে সব সময় যে উপহার দিতে হবে এমন কোন মানে নেই। একটা সেলিব্রেশন করেও একটা মানুষকে আনন্দ দেওয়া যায়।
প্ল্যান মাফিক আমি আর বৌদি পুরোপুরি রেডি ছিলাম । কিন্তু কিভাবে সারপ্রাইজ দেব, সেটা বুঝতে পারছিলাম না। অবশেষে আমার মাথা থেকে বুদ্ধি বের হলো, আমাদের বাড়ির ছাদেই কেক সাজিয়ে রেডি করে রাখি। যেহেতু বাড়িতে কাজ চলছে, আর ও মাঝে মাঝে আসছে ।তাই কোনভাবে ওকে বাড়িতে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
আমাদের প্ল্যানে সঙ্গ দিল আমার মা। আমি আর বৌদি একদম ছাদের মাথায় উঠে গেলাম। আমাদের যে মেন ছাদ, তার ওপরেও একটা ছোট মত ছাদ আছে।। সেই ছাদের উপর উঠে কেক টাকে সাজিয়ে সুন্দর করে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখলাম।
আর ওদিকে আমার মা বিশু কাকাকে অর্থাৎ শুভর বাবা-মাকে ফোন করে বলল ,তোমরা একটু শিগগিরই আসো শুভর সাথে, আমাদের এই ঘরের রংটা এতটা বাজে হয়েছে, ঈশার বাবা কিছুতেই শুনছে না। এই রংটাকে বদলাতেই হবে।। তোমরা একটু দেখে যাও তো।
বাড়িতে কাজ চললে স্বাভাবিকভাবেই একটু মানুষজনের মতামতের প্রয়োজন। আমরা তিন বাড়ির লোকজনই একে অপরের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে থাকি। অর্থাৎ কোন কাজ করলে ওদেরকে একবার হলেও ডেকে দেখাই যে কাজটা ঠিক হয়েছে কিনা। ঠিক সেম জিনিস ওরাও করে।
কিছুদিন আগে যেমন মৌসুমী বৌদিদের তুলসী মঞ্চটা তৈরি করার সময় আমার কাছ থেকে সাজেশন নিয়েছিল। আবার শুভদের রান্নাঘর তৈরি করার সময় ওরাও আমাদের কাছ থেকে সাজেশন নিয়েছিল। তিন বাড়ির মধ্যে এই সম্পর্কটা বেশ ভালই রয়েছে।
যাইহোক মা যেহেতু ডেকেছে, ওদের আসতেই হবে। আমি আর বৌদি ছাদের ওপরে চলে গিয়েছিলাম। অন্ধকারে আমাদের ছাদে যেতে হয়েছিল। কারণ আমরা যদি টর্চ জ্বালিয়ে যেতাম ,তাহলে টর্চের আলো ওদের বাড়ি অব্দি পৌঁছলে ওরা বুঝে যেত ,যে ছাদের উপর কিছু একটা হচ্ছে। বৌদি একদম ওপরে উঠতে খুব ভয় পাচ্ছিল। তাও ওকে জোর জবরদস্তি একদম ওপরের ছাদে তুললাম।। ওখানে গিয়ে কেকটেক সাজিয়ে চুপচাপ ওয়েট করছি ।দেখলাম আস্তে আস্তে বিশু কাকা আর কাকিমা আমাদের বাড়িতে ঢুকলো, দরজা খুলে।
তারপর দেখলাম শুভ গামছা পড়ে ঘুরঘুর করছিল, মা ডেকেছে বলে আবার একটা ফুল প্যান্ট পড়ে বেরিয়ে আসলো। আমি আর মৌসুমী বৌদি হাসাহাসি করছিলাম যে ওর গায়ে একদম জামা নেই। খালি গায়ে ছবি তুলব ওর। এসব বলতে বলতে একটু পরেই মা ওদের সবাইকে নিয়ে ছাদেও চলে আসলো। মাও বুঝতে পারিনি আমরা একদম উপরের ছাদটাই এসব করব।
ছাদে এসে ওরা কাউকে কিছু দেখতে পাচ্ছে না।। কিন্তু হালকা মোমবাতির আলোটা বুঝতে পেরে, যখনই উপর দিকে তাকাল ,তখন দেখে কেকের সামনে আমি আর মৌসুমী বৌদি দাঁড়িয়ে আছি। আর আমরাও বলে উঠলাম হ্যাপি বার্থডে । শুভ তো খুব আনন্দ পেল। সব থেকে বেশি আনন্দ পেল ওর মা।
ওদিকে অন্য বাড়ির ছাদ থেকে কিছু বাচ্চারা জোরে জোরে হ্যাপি বার্থডে শুভ দাদা বলে চেঁচিয়ে যাচ্ছিল। আসলে গরমের সময় বেশিরভাগ মানুষজন ছাদে ঘোরাঘুরি করে বিকেলের পর। তাই প্রায় সবার বাড়ির ছাদে লোকজন থাকে। ও যখন কেক কাটছিল ,দূর থেকে অন্য বাড়ির ছাদ থেকে লোকজনরা ওকে উইশ করছিল। বিষয়টা ওর কাছেও বেশ বড় একটা প্রাপ্তি।
বলতে গেলে ওর জন্মদিন সেলিব্রেশানে শুধু আমরা এ কজন উপস্থিত ছিলাম না। উপস্থিত ছিল আশে পাশের বাড়ির সকলে ।কিন্তু ছাদের উপর থেকে। সেদিনকে হয়তো তিরিশ মিনিট সময় এর মধ্যেই সেলিব্রেশন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু যেটুকু আমরা সময় কাটিয়েছি সেটা সত্যিই ভোলার নয়। শুভ তো কখনোই ভুলতে পারবে না যে ওর জন্মদিন একদম ছাদের ওপর ,খোলা আকাশের নিচে এইভাবে সেলিব্রেট করা হয়েছিল। ও নিজেও অনেক আনন্দ পেয়েছে।
আর জন্মদিনে ওকে এটুকু আনন্দ দিতে পেরে আমি আর বৌদিও খুব খুশি হয়েছি। পরের দিন ওর জন্য আমি জুডিও থেকে একটা টি শার্ট এনে ওকে গিফট করেছিলাম। সেটাও আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। এরকম ছোটখাটো আনন্দ গুলো ভাগ করে নিতে পারলে আমাদের জীবনটা কতটা সুন্দর হয়ে যায়।
আজকে এখানেই শেষ করছি। সকলে সুস্থ থাকবেন।
@tipu curate
Holisss...
--
This is a manual curation from the @tipU Curation Project.
Upvoted 👌 (Mana: 2/7) Get profit votes with @tipU :)
আপনাদের সমস্ত প্লেনে যেহেতু উনি আপনাদেরকে সাহায্য করে থাকে তাই আপনারাও প্ল্যান করে উনাকে অনেক বেশি সারপ্রাইজ দিয়েছেন সবাই মিলে উনার জন্মদিন পালন করেছেন এবং উনার সাথে খোলা আকাশের নিচে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছেন যেটা জানতে পেরে আসলে ভালো লাগলো অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।