School Based Activity - Mid - day meal
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন ।গতকাল আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করেছিলাম একটি এক্টিভিটির কথা। আমি জানিয়েছিলাম তৃতীয় সেমিস্টারের একজন বিএড এর স্টুডেন্ট হিসাবে স্কুলে আমাদের টিচিং ট্রেনিং পড়েছে প্রায় তিন মাসের জন্য। এই তিন মাস জুড়ে পড়ানোর পাশাপাশি যা যা আমরা করছি, সমস্ত কিছুর ওপরেই আমাদের প্রজেক্ট আছে ।
গতকালকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম মর্নিং অ্যাসেম্বলির ওপর একটি অ্যাক্টিভিটি ,আজকে আমি যে এক্টিভিটিটা শেয়ার করব ,তার নাম হলো - মিড ডে মিল। এটা আমার সেকেন্ড একটিভিটি।
মিড- ডে মিল
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পুষ্টির জন্য ভারত সরকার বিদ্যালয়ে দুপুর বেলায় একটা আহারের ব্যবস্থা চালু করেন। এটাকেই মিড ডে মিল বলা হয়। তামিলনাড়ু ছিল ভারতের প্রথম রাজ্য যেখানে এই স্কিমটা প্রথম চালু হয়েছিল । ১৯৬২ থেকে ৬৩ সালে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রত্যেকটা স্কুলে এই ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছিল। এমনকি ব্রিটিশ রাজত্বেও ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাস কর্পোরেশন মিড ডে মিল ব্যবস্থার চালু করেছিলেন।
খাদ্য এর অধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার। জীবনে বেঁচে থাকতে হলে একটা মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। তাই খাদ্যের বিষয়বস্তুকে মাথায় রেখে ২০০১ সালে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে প্রত্যেকটা স্কুলে মিড- ডে মিল ব্যবস্থা শুরু হয়ে যায়।
মিড ডে মিল ব্যবস্থার কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে । প্রত্যেকটা উদ্দেশ্যই আমার মনে হয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন শিশুদের অপুষ্টি দূর করা এর সব থেকে বড় উদ্দেশ্য। সমাজে যারা বঞ্চিত ,যারা পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় তাদের শিশুরা যাতে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে ,তার ব্যবস্থা করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। বাচ্চারা স্কুলে খাবার পাচ্ছে জানলে, অন্তত বিদ্যালয় মুখী হয়ে উঠবে, এতে বাচ্চারা শিক্ষা জ্ঞান অর্জন করতে পারবে এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এটাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি বৃদ্ধি করা ,অপুষ্টি এবং অনাহারে শিশুদের যাতে শিক্ষাতে ব্যাঘাত না ঘটে ,সেদিকেও খেয়াল রাখা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
কিভাবে আমি এই কাজটা সম্পূর্ণ করেছি |
---|
যেহেতু তিনটে অ্যাক্টিভিটি করতে হয়েছে, প্রথম অ্যাক্টিভিটি টা কিভাবে করেছিলাম, গতকালকে জানিয়েছিলাম ।আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করি কিভাবে আমি মিড ডে মিলের অ্যাক্টিভিটি টা কমপ্লিট করেছি।
প্রথমত প্রধানা শিক্ষিকা প্রত্যুষা দে ম্যাম এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নিয়েছিলাম কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য ।সেই মতো একটা দিনও নির্বাচন করা হয়েছিল। সেদিন বলে শুধু নয় আমরা প্রত্যেকদিনই খেয়াল করতাম সবটা । HM এর রুমের বাইরে যেখানে স্কুলের দারোয়ান কাকুদের রুম ছিল, সেখানে একটা ব্ল্যাকবোর্ডে টিফিনের অর্থাৎ মিড ডে মিলের মেনু লেখা থাকতো।
মিড ডে মিল সাধারণত ক্লাস থ্রি থেকে ক্লাস এইট এর বাচ্চাদের দেওয়া হয়। এবং প্রত্যেক দিন মিড ডে মিল কতজন করে খাবে ,সেটাও অর্থাৎ তার সংখ্যাও বোর্ডে লিখে রাখা হতো।
টিফিনের আগেই আমরা স্কুলের রান্নাঘরে গিয়ে মাসিরা কিভাবে রান্না করছে ,সেটা দেখেছিলাম। আমরা লক্ষ্য করেছি মাসিরা আমাদের স্কুলেরই গাছের অনেক জিনিস ব্যবহার করে। গাছের সবজি ব্যবহার করে। আমাদের স্কুলে আলাদা করে গার্ডেন রয়েছে, শাক সবজির ।সেখান থেকেই তারা শাকসবজি ব্যবহার করতে পারে। তরকারিতে খুব অল্প তেল এবং মসলা ব্যবহার করা হয়।। মাসিরা কতটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেইনটেইন করে রান্না করছে, সেটাও আমরা সকলে লক্ষ্য করেছি।
টিফিনের ঘন্টা পড়ার সাথে সাথে অর্থাৎ ১২.৫৫ মিনিটে সকলে যখন মিড ডে মিলের জায়গায় চলে আসতো ।তখন তাদেরকে আমরা লাইন করে দাঁড় করাতাম। সেদিনও আমরা তাই করেছিলাম। তারপর সকলকে খাবার নিতে সাহায্য করেছি। সবাই ঠিকঠাক ভাবে খাবার নিতে পারছে কিনা, সেটা খেয়াল রেখেছি এবং তারপর আমাদের বিদ্যালয়ের খেতে বসার সুন্দরভাবে জায়গা করে দেওয়া আছে, সিমেন্ট দিয়ে বাধানো টেবিল এ ওরা সুন্দর করে বসে খাবার খেতে পারে।
তাই সেখানে যাতে গিয়ে ওরা কোনরকম ধাক্কাধাক্কি না করে ,সেটা আমরা খেয়াল রাখতাম। মাসিরা ঠিকঠাক ভাবে বাচ্চাদেরকে পরিবেশন করছে কিনা ,সেটাও আমরা দেখতাম। এরপরে খাওয়া-দাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে আমরা লক্ষ্য করতাম শিক্ষার্থীরা ঠিকঠাকভাবে নিজেদের উচ্ছিষ্ট খাদ্যবস্তু ডাস্টবিনে ফেলছে কিনা এবং যে থালা তারা নিয়ে আসতো ,সেটা পরিষ্কার করে ধুয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখছে কিনা।
এই ভাবেই আমাদের কাজটা সম্পূর্ণ হয়েছে। এবং সবশেষে আমরা প্রজেক্ট এর খাতাতে যা যা করেছি সেটা লিখতে পেরেছি। ২০০১ সালের পর থেকে প্রতিটি স্কুলে শিশুকে এইভাবে মিড ডে মিল দেওয়ার কারণে অনেক সুবিধা হয়েছে ।এতে অবশ্যই শিশুদের উপস্থিতি বাড়ছে স্কুলে আর শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির সমস্যার সমাধানও হয়ে যাচ্ছে। তাই বলতে পারি বিদ্যালয় এ মিড- ডে মিল সত্যি গুরুত্বপূর্ণ।
এবার আসি আমার কথায়। ছোটবেলায় যখন স্কুলে পড়তাম ,তখন সত্যিই আমিও মিড ডে মিল খেতাম ।আজকালকার অনেক বাচ্চাকে দেখেছি মিড ডে মিল খেতে চায় না। অথবা বাড়ি থেকে নিষেধ করা হয় ।হতে পারে সেটার কোনো কারণ রয়েছে।
তবে আমাদের স্কুলে কিন্তু সত্যিই অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে মিড ডে মিলের আয়োজন করা হয় ।মাসিরা খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেইনটেন করে রান্না করে থাকেন এবং খুব আদর যত্ন সহকারেই পরিবেশন করা হয় প্রত্যেক বাচ্চাকে।। সবকিছুই আমাদের বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা যিনি আছেন ,তার সহযোগিতা এবং তার তত্ত্বাবধানে ঠিকঠাকভাবে চলে আসছে।
এমনকি আমি কখনোই স্কুলের খাবার বাদ দিতাম না । ছোটবেলায় মিড ডে মিলের আলু সোয়াবিনের তরকারি টার কথা এখনো আমার মনে পড়ে।। এই টিচিং পিরিয়ডেও আমাদের খাওয়ার পারমিশন ছিল ।তাই আমরাও মিড ডে মিল খেয়েছি ,আমরা যে কজন ট্রেনি টিচার উপস্থিত ছিলাম। আমরা সবাই মিড ডে মিল খেতাম। আজকের কথায় যদি বলি, আজকে আমডাল করা হয়েছিল। বিদ্যালয় এর গাছের আম দিয়ে আম ডাল সত্যিই অসাধারণ খেতেছিল।
স্কুলের আর একটা দিক টিফিনের রয়েছে ।সেটা হল যারা মিড ডে মিল খেতে পারছে না অর্থাৎ ক্লাস নাইন থেকে টুয়েলভ এর মেয়েদের জন্য আলাদা করে টিফিনের ব্যবস্থা করা হয়। প্রত্যেকদিন নানান রকম ভাবে টিফিন আসে, যেমন ঝাল মুড়ি, বিস্কুট কেক, আলু কাবলি , লাড্ডু কলা , ঘুগনি এরকম নানান ধরনের টিফিন নিয়ে আসা হয় বাইরে থেকে।
(ক্লাস নাইন থেকে টুয়েলভ এর শিক্ষার্থীদের জন্য বাইরে থেকে যে খাবার আনা হতো, সেখান থেকেই একদিন ঘুগনি খেয়েছিলাম। উপরের ছবিটি সেই দিনের) |
---|
এই ব্যাপারটা আমরাও পেয়েছিলাম। এখনো যে স্কুলে এই বিষয়টি বজায় আছে ,এটা দেখে সত্যিই ভালো লাগে ।কারণ আমি খেয়াল করে দেখেছি সব স্কুলে কিন্তু এরকম হয়না। যদিও এটা সরকারি স্কুল। তবে অন্যান্য সরকারি স্কুলে এরকম ব্যবস্থা আছে কিনা আমি জানিনা। আমার ভাই ঈশান দিয়ে স্কুলে যেমন এতটা সুব্যবস্থা নেই।
আসলে পুরোপুরি স্কুলের দায়িত্ব থাকে একজন প্রধান শিক্ষিকা বা শিক্ষকের উপর।তিনি কিভাবে স্কুলটাকে সাজিয়ে তুলবেন এবং স্কুলের সমস্ত সুব্যবস্থা নিজে দায়িত্বে পালন করবেন ,তা তার একেবারে নিজের ইচ্ছা। তবে একজন ভালো প্রধান শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের জন্য এই ভালো আয়োজনগুলো করা সম্ভব। তাই বলতে পারি আমি এই স্কুলের ছাত্রী হিসেবে অনেক গর্ববোধ করি।
আজ এখানেই শেষ করছি। আশা করছি আমার সেকেন্ড একটিভিটি আপনাদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি। পরের দিন তৃতীয় এক্টিভিটি নিয়ে কথা বলব।
Congratulations! This post has been upvoted through steemcurator08. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags.
Your experience and analysis of this activity is truly remarkable. Your observation, participation and memories of the Mid-Day Meal project are all very informative and heartwarming. You have beautifully highlighted how important Mid-Day Meal is in the development of children's nutrition and education. 🙂
ভারত সরকার বাচ্চাদের খাবার দাবারের কথা চিন্তা করে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন স্কুলে যেটা জানতে পেরে আসলে বেশ ভালই লাগলো সেইসাথে আপনি লিখেছেন অনেক বাচ্চারা এই খাবার খেতে চায় না অথবা তাদের পরিবার থেকে বারণ করা হয়েছে হয়তোবা কোন সমস্যা হয়েছে যাইহোক অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার স্কুলের দ্বিতীয় দিনের একটিভিটি আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন।