শিখন নকশা প্রস্তুত করার পদ্ধতি || আমার ফাইনাল টিচিং এর Learning Design
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি আমার বিএড এর টিচিং ট্রেনিং এর যে আমি কোর্স করছি। তার থার্ড সেমিস্টারের একটি প্রজেক্ট এর বিষয়ে।
থার্ড সেমিস্টারে প্রজেক্ট এর সংখ্যা সব থেকে বেশি। এই সেমিস্টারের চাপ অত্যাধিক, আমি সত্যি ভাবতে পারিনি এত অত্যাধিক চাপ আমাকে নিতে হবে ।আমি যদি সত্যিই এই ব্যাপারটা আগে থেকে বুঝতে পারতাম, তাহলে আমি কাজগুলো নিজে না করে, অন্য কাউকে দিয়ে করাতাম ।বলতে গেলে ঘুম ,খাওয়া-দাওয়া সবকিছুই মাথায় উঠেছে।
এই সেমিষ্টারে আমাদের যা যা করতে হচ্ছে - |
---|
১. ৬০ টা LD ( মিনিয়েচার বোর্ড ওয়ার্ক ,চার্ট,ছবি,মডেল)
২. দুটো এক্টিভিটি ( school based and community based)
৩. একটা প্রাক্টিকাম
৪. ফাইনাল টিচিং এর জন্য ১টা LD, চার্ট , মডেল
মোটামুটি প্রত্যেক LD তে চার থেকে পাঁচটা করে পৃষ্ঠা লাগে। সব প্রজেক্ট মিলিয়ে ৩০০ পৃষ্ঠা মত লেখা। এর সাথে হাতের কাজ তো রয়েছেই।
- আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি আমার ফাইলান টিচিং এর LD এর খাতা ,চার্ট,মডেল।
- শ্রেণী - ষষ্ঠ
বিষয় - বাংলা
একক - কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা "ভরদুপুরে"
প্রথমেই বলি LD হলো লার্নিং ডিজাইন অর্থাৎ শিখন নকশা। এই টিচিং করছে একটা বাচ্চাকে কিভাবে পড়াতে হবে সেটার পুরোপুরি গাইড করা হয়।। শিক্ষার্থীকে কোন বিষয়ে এর ওপর পড়াতে গেলে কি কি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেয়া উচিত সেগুলো শেখানো হয়। লার্নিং ডিজাইন আমাদের সেই শিক্ষা প্রদান করে।
যে বিষয়বস্তুর ওপর আমি পড়াচ্ছি, তার ওপর যদি আমরা একটা ছক করে নিই যে কি কি ধাপে ধাপে আমি বাচ্চাদের পড়াবো এতে পড়াই যেমন একটা শৃঙ্খলা বজায় থাকে তেমনি শিক্ষার্থীদের ফিডব্যাক বুঝতে সুবিধা হয়। এ কারণেই এই কোর্সে লার্নিং ডিজাইন শেখানো হয়।
আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন আমি কিভাবে লার্নিং ডিজাইন এর প্রথম পৃষ্ঠা রেডি করেছি। প্রথমেই লিখেছি শিখন নকশা, তারপরেই কোন স্কুলে আমি পড়াচ্ছি, কোন ক্লাসে আমি পড়াচ্ছি, সময়সীমা, বয়স, এবং নিজের নাম উল্লেখ করেছি। এবং অপরদিকে যে বিষয়ে আমি পড়াচ্ছি, এবং যে টেক্সটা আমি পড়াচ্ছি, তা উল্লেখ করেছি।
তারপর এখানে লেখা হয়েছে এই শিখন নকশার উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য। এই উদ্দেশ্য লক্ষ্যকে টোটাল ৬ ভাগে ভাগ করা হয়।
প্রথমত, স্মরণমূলক - অর্থাৎ শিখন নকশার প্রথম উদ্দেশ্যই হল বিষয়টিকে শিক্ষার্থীদের স্মরণমূলক করে তোলা। বিষয় পড়ানোর পরে শিক্ষার্থীরা যেন স্মরণ করে বলতে পারে।
দ্বিতীয়ত, অনুধাবনমূলক- শিক্ষার্থীরা বিষয়টি সম্পর্কে যাতে উপলব্ধি করতে পারে এবং বিষয়টি উপলব্ধি করে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা বা কোন বিষয়ে তুলনা করতে পারে সেটা, এই শিখন নকশার অপর উদ্দেশ্য।
তৃতীয়ত, প্রয়োগমূলক - বিষয়টি পড়ার পরে তারা যেন বিষয়টির থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান অন্য কিছুতে ব্যবহার করতে পারে সেই দক্ষতা গড়ে তোলা এই নকশার উদ্দেশ্য।।
চতুর্থ, বিশ্লেষণমূলক - ছাত্রছাত্রীরা যেন বিষয়টি পড়ার পরে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়।
পঞ্চম, মূল্যায়নমূলক - ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যেন বিচার ক্ষমতা সমালোচনা করার ক্ষমতা এবং পর্যালোচনা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ষষ্ঠ , সৃজনমূলক - বিষয়টি পড়ে, সে জাতীয় কোন রচনা সৃজন করার মতন শক্তি যাতে তাদের তৈরি হয়। অথবা অন্য কিছু পরিকল্পনা করার মত দক্ষতা যাতে তাদের তৈরি হয়, এটি এই লারনিং ডিজাইনের অপর একটি উদ্দেশ্য।
এবার লক্ষ্য উদ্দেশ্য হয়ে যাওয়ার পর, শিক্ষার্থীকে আমরা কি পড়াচ্ছি অর্থাৎ পাঠ ঘোষণার ধাপ আসে। সব সময় শেখানো হয় যে বাচ্চাদের পড়াতে গেলে প্রথমে জানা থেকে অজানাতে যেতে হয়, যেতে হয় সহজ থেকে কঠিন এ। তাই যে বিষয় নিয়ে আমরা পড়াচ্ছি সেই বিষয় সংক্রান্ত প্রশ্ন তাদের সাথে আলোচনা করতে হয়। যেমন আমি এখানে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা "ভরদুপুরে "কবিতাটি নিয়ে পড়িয়েছি।
তাই পড়ানো শুরুতেই, আমি তাদের জিজ্ঞেস করেছি, এমন কিছু প্রশ্ন যাতে তারা নিজেরাই টেক্সটের নামটা বলে দিতে পারে। ছবিতে পাঠ ঘোষণার আগের ছকটা দেখলে আপনারা বুঝতে পারবেন।
এর সাথেই আমি বিষয়টি পড়ানোর জন্য কি কি মেটেরিয়াল ব্যবহার করছি সেগুলো ছকের মধ্যে লিখতে হয়।। আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন বিশেষ উপকরণের জায়গায় আমি মডেল এবং চার্টের উল্লেখ করেছি।
এই শিখন কৌশলে পাঁচটা ধাপ থাকে। অর্থাৎ বিষয়টি আমি পাঁচটি ধাপে পরিয়ে থাকি। প্রথম ধাপে কবি পরিচিতির চার্ট দেখানো হয়। দ্বিতীয় ধাপে থাকে সরব পাঠ অর্থাৎ এখানে ছাত্রছাত্রীদের রিডিং পড়ানো হয়। তৃতীয় ধাপে জটিল শব্দ গুলি কে নিয়ে আলোচনা করা হয় অর্থাৎ শব্দার্থ আলোচনা করা হয়।
চতুর্থ পৃষ্ঠাতে চতুর্থ শিখন কৌশলে প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি থাকে। বিষয়টি নিয়ে আমরা যা যা পড়লাম সে সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর আলোচনা করা হয়।। এবং পড়ানোর সময় এক্সট্রা কোন মেটিরিয়াল অর্থাৎ যেমন মডেল আমি এখানে ব্যবহার করেছি, সেই ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। যেটাকে শিক্ষা সহায়ক উপাদান বলা হচ্ছে।
এরপর পুরো বিষয়টি পড়ানো হয়ে গেলে সেই টেক্সট থেকে কোশ্চেন করা হয়। এই জায়গায় এসে বোঝা যায় ছাত্ররা কতটা শিখতে পেরেছে অথবা বুঝতে পেরেছে। এই ধাপে এসে একটি ছাত্রর মূল্যায়ন করা হয়।
পঞ্চম পৃষ্ঠাতে দুর্বলতা নির্ণয় পয়েন্ট করা আছে। মূল্যায়ন করার পর যদি কোন ছাত্র-ছাত্রীর বিষয় সম্পর্কিত কোনো রকম সমস্যা বা দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায় তাহলে পাঠ কিন্তু পুনরায় শুরু করতে হবে। এই কারণেই লেখা আছে প্রয়োজনীয় সংশোধনী পাঠের আয়োজন করতে হবে,যদি কোনরকম দুর্বলতা চোখে পড়ে। শুধুমাত্র মূল্যায়ন করার পরেই এটা করা সম্ভব । তাই প্রত্যেকটি বিষয়ে পড়ানো হয়ে যাওয়ার পর মূল্যায়ন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আমার তিন মাস এর ট্রেনিং চলেছিল কৃষ্ণনগর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এ, কিন্তু ফাইনাল টিচিং দেওয়া হয়েছিল শক্তিনগর হাই স্কুলে। ফাইনাল টিচিং এর পরীক্ষা আজকেই ছিল। খুব সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিতে পেরেছি, সেই সংক্রান্ত পোস্ট নিয়ে অন্য কোনদিন কথা বলবো।
আশা করছি আমার আজকের পোস্ট আপনাদের সকলের ভালো লেগেছে। একটি বিষয়ের উপর কিভাবে লার্নিং ডিজাইন তৈরি করতে হয়, সেটা আজকে আমার পোষ্টের মাধ্যমে হয়তো আপনারা জানতে পারবেন। বিষয়টি করে আমিও অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। যদিও এই কাজগুলো ভীষণই বিরক্তিকর ব্যাপার। সবসময় একটা লার্নিং ডিজাইন ধরে পড়ানো সম্ভব নয়। তবুও এই কোর্স করতে গিয়ে বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরে ভালো লাগছে, তাই আপনাদের সামনেও তুলে ধরতে পারলাম। আজকে এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকবেন।