কলকাতার পথে
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি আপনারা সকলেই সুস্থ আছেন। বেশ অনেকদিন ধরে আমি প্রচন্ড পরিমাণে ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি ।এ কারণে পোস্ট লিখতে টাইম এর হেরফের হচ্ছে। এখন যেমন আমার পরীক্ষা চলছে। এ কারণে আরো বেশি সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তো লেগেই আছে।আজকে আপনাদের সাথে কলকাতা যাওয়া নিয়েই লেখালেখি করছি।
একটা সময় যে জায়গাটা নিজের বাড়ির মতন করে তুলেছিলাম ,সেই জায়গাটা এখন একেবারে একটা নতুন জায়গা হয়ে গেছে আমার কাছে। প্রায় অনেকটা সময় পরে বলতে গেলে একটা বছর হয়ে যাবে, আমি কলকাতা উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
আগস্ট মাসের ২৯ তারিখে নিজের একটা কাজেই আমাকে কলকাতা যেতে হয়েছিল। অনেকদিন পরে কলকাতা যাচ্ছি ,এটার থেকেও বেশি মাথার মধ্যে কাজ করছিল ,যে জায়গায় যাচ্ছি ,সেটা নিয়ে। আসলে আমি আমার একটা গান রেকর্ডিং এর জন্য সেদিনকে কলকাতা গিয়েছিলাম। রেকর্ডিংটা যখন শেয়ার করা হবে, তখন আমি অবশ্যই সেটার লিংক পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করে নেব।
রেকর্ডিং যেখানে করতে হয়েছে ,সেটা দমদম চিড়িয়া মোড় অর্থাৎ আমার ইউনিভার্সিটি থেকে খুবই কাছে ইউনিভার্সিটি'র পরের স্টপেজ ,যদি আমি ডানলপ থেকে যাই। আমি ভেবেই অবাক হচ্ছিলাম এতদিন কলকাতায় থাকলাম একবারও এই রেকর্ডিং এর জায়গার ঠিকানা আমি পাইনি। আর এখন বাড়ি চলে এসেছি, আমাকে বাড়ি থেকে জার্নি করে রেকর্ডিং করতে যেতে হচ্ছে। ভগবানের কি লীলা।
সেদিন সকাল বেলায় সাড়ে ছটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে ,স্নান সেরে ,সাড়ে সাতটার পর বার হলাম বাড়ি থেকে। রওনা দিলাম কলকাতার উদ্দেশ্যে বাবার সাথে। গাড়িতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম কলকাতা। ডানলপ ক্রস করে যখন বরানগর পুলিশ স্টেশন ক্রস করছি ভেতরটা কেমন যেন খা খা করতে শুরু করল।
বারবার মনে হচ্ছিল একবার মেসের চারপাশটা গিয়ে ঘুরে আসি। পুরনো জায়গাগুলো চোখের সামনে ভাসছিল। আমাদের মেস বাড়িতে আমরা যে কজন মেয়ে থাকতাম, আমাদের সকলের হাসি ঠাট্টা গল্পগুলো কানে যেন মৌমাছির মতন ঘুরে বেড়াচ্ছিল। খুব মনে পড়ছিল আমার বোনের মতন দুই মেসমেটকে। একটা হল হাবিবা আর একজন হল মহিমা।
কিন্তু সেদিনকে সময় এতটাই কম ছিল যে ,গাড়ি ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো। আমার না ধরা জিনিস না ধরাতেই থেকে গেল। মনের মধ্যে চাপা একটা কষ্ট অনুভব করছিলাম। এর সাথে ফিল করতে পারছিলাম আরো অনেক অনুভূতি। একসাথে এরকম এত অনুভূতি আমি এর আগে কখনোই অনুভব করিনি।
একটা সময় এই জায়গাটাতে যখন আমার মা আমাকে রেখে যায় ,পরের দিন সকাল বেলায় কান্নাকাটি করতে করতে বাড়িতে ফিরে এসেছিলাম বাড়ির টানে ।আজকে এত বছর পর জায়গাটার সামনে দিয়ে যখন যাচ্ছি, তখন কেন যে এত মায়া কাজ করছে, তার সব কারণ আমি বুঝতে পারছিলাম।
আসলে একটা জায়গায় থাকতে থাকতে, তার চারিপাশের সাথে, মানুষজনের সাথে এবং যাদের সাথে আমরা বসবাস করছি, সকলের সাথে একটা মায়া পড়ে যায়।
যাইহোক বরানগর পাস করেই চলে আসে সিঁথি মোড় ।যেখান থেকে দমদম স্টেশন এর অটো ধরতাম ।সিথির মোড়ে বছরে দুবার মেলা বসে ।যেদিন যাচ্ছি সেদিন কেও দেখলাম ,ডানদিকে মেলা বসেছে। আমি হাবিবা কে জোর করে ওই মেলার বড় নাগরদোলায় তুলেছিলাম একবার। আর হাবিবা যেভাবে ভয় পেয়েছিল ,তা দেখার মতন ছিল।
সে নিয়ে কত হাসাহাসি করেছি একটা সময়। সবকিছু চোখের সামনে ভাসছিল। আর আমি বলে বোঝাতে পারবো না আমি ওদের দুজনকে কি পরিমাণ মিস করছিলাম। দিনগুলো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। ওরা সকলেই আমার থেকে অনেকটা দূরে। শুধুমাত্র ওদের সাথে যে ভালো সময় গুলো কাটিয়েছি, অথবা যে খারাপ সময় কাটিয়েছি, তা আমার মনে গেঁথে গেছে।
গাড়ি এগিয়ে চলতেই ,পড়ল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর মনে পড়লো শেষ দিনের কথা। যেদিনকে মাইগ্রেশন তুলতে গিয়েছিলাম। আমি নিজের একটা ভিডিও বানিয়ে, সেখানে বলেছিলাম - আজ থেকে এই ইউনিভার্সিটির সাথে আমার সমস্ত সম্পর্ক শেষ। আজকে আমরা ডিভোর্স নিচ্ছি। সম্পর্কের মধ্যে ডিভোর্স নিলেও যেমন একটা অন্তর্গত টান থেকেই যায়। সেদিনকে সেই টান ইউনিভার্সিটির সাথে অনুভব করলাম। কখনো কখনো জড় বস্তুকেও মানুষের মতো মনে হয়।
ইউনিভার্সিটিকে সেদিন মানুষের মতনই লাগছিল। দেড় দু'বছর আগে যার সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। তার সাথেও সেদিন একটা টান ,একটা মায়া ফিল করতে পারলাম। আর সেই সময় সত্যিই আমার চোখের কোণে জল চলে আসলো। সেটা আনন্দের ,কি দুঃখের, আমি জানিনা। তবে এসেছিল।
কলকাতা যাওয়ার জার্নি টাকে যে এভাবে বর্ণনা করতে পারব ,আমি নিজেই বুঝতে পারিনি। কিভাবে আপনাদের সকলের সামনে নিজের মনের কথাগুলো প্রকাশ করে ফেললাম , সত্যিই এইসব কথাগুলো বলতে পেরে মনটা হালকা হলো।
আজ এখানেই শেষ করছি। পরবর্তী পোস্টে বাকি কথা শেয়ার করব।