বিয়েবাড়ি জিন্দাবাদ
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি এক হাস্যকর ঘটনা।
এই ঘটনাটা মার্চ মাসের ৫ তারিখের । সেদিন অনেক জায়গাতেই বৌভাতের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল। মোটামুটি তিন তারিখ নাগাদ বিয়ের ডেট ছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই একদিন পরে অর্থাৎ পাঁচ তারিখে বৌভাত হয়েছে। আমাদের নিমন্ত্রণ ছিল এক জায়গায়। আমার বাবার এবং সহেলিদের বাবার খুবই পরিচিত অর্থাৎ ওদের এক বন্ধুর ছেলের বৌভাতের অনুষ্ঠানে।
আমরা বেশ কিছুদিন আগে নিমন্ত্রণ যখন পাই তখন খুব মাতামাতি করছিলাম। আসলে বিয়ে বাড়ি মানেই খাওয়া দাওয়া। শীতকালে যদি বিয়ে বাড়ি না পাওয়া যায় মনটা খুব ভেঙে যায়। আমার গত বছরের কথা মনে আছে। আমি গুনে গুনে একটা বিয়ে বাড়ি পেয়েছিলাম। মাঝেমধ্যেই দেখতাম গোটা বিয়ের মাস জুড়ে আমার পরিচিত সবাই বিয়েবাড়ি খেতে যাচ্ছে। আর আমি বাড়িতে বসে ওদের ছবি দেখতাম। এ নিয়ে গত বছরে প্রচন্ড দুঃখ হয়েছিল। তবে এ বছরে যেভাবে বিয়ে বাড়ি পেয়েছি। আর এই আজব ঘটনাটা ঘটলো যেদিনকে। সেদিন থেকে আমার বিয়ে বাড়ির সাধ উঠে গেছে।।
আমরা সাধারণত বিয়ে বাড়ি গেলে সাড়ে আটটার মধ্যে পৌঁছে যাই। আমার মা একটা প্রচলিত কথা বারবার বলে থাকে,যাও ভোজনের আগে আর দরবারের শেষে। মা সবসময় বলে খাওয়া দাওয়ার জায়গাতেই সব সময় আগে যেতে হয়, আর সভা জাতীয় কোন জায়গায় সবথেকে শেষে যেতে হয়। খাওয়া দাওয়ার বিষয়টা নিয়ে আমিও মায়ের সাথে একমত। কোন একটা জায়গায় যেখানে এত বড় অনুষ্ঠান, একটু আগে করে যাওয়াই ভালো। না হলে স্বাভাবিকভাবে খুব ভিড় হয়ে যায়।
কিন্তু অন্যদিকে সহেলীদের বাবা-মা প্রত্যেক জায়গাতেই একটু দেরি করে যায়। মোটামুটি রাত যখন দশটা বাজে তখন ওরা বাড়ি থেকে বার হয়ে বিয়ে বাড়ি খেতে যায়। যেহেতু একই জায়গায় নিমন্ত্রণ। বন্ধুর ছেলের বিয়ে বলে কথা, দুজনেরই পরিচিত। তাই আমরা ঠিক করেছিলাম জেঠুরা আর আমরা সবাই একসাথে যাব। সেইমতো ওদের পাল্লায় পড়ে বার হতে বার হতে প্রচুর দেরি হয়ে গেল। সাড়ে নটায় বার হয়েছি বাড়ি থেকে। আর বিয়ে বাড়ি গিয়ে পৌঁছেছি দশটা নাগাদ। কি তারও আরো পরে।
বিয়ে বাড়িটা আমাদের বাড়ি থেকে বেশ অনেকটা দূরে এই ছিল। কৃষ্ণনগর শহরের বাইরে। একটু দূরে বিয়ে বাড়ি যখন একটু আগে আগে বেরোনোই উচিত ছিল। কিন্তু সুবীর জেঠুকে কে বদলায়। উনি রাত দশটা ছাড়া কিছুতেই বার হবেন না। তাও সেদিনকে আমরা কত বার ফোন করে একটু আগে বার করেছিলাম। সহেলি দিদি আর জেঠি অনেকক্ষণ আগে থেকেই রেডি হয়েছিল, কিন্তু জেঠু কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকায় বার হতে পাচ্ছিল না।
যাই হোক পৌঁছে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই দেখছি প্রচুর ভিড়। এতটা ভিড় রাস্তা থেকে না বুঝলেও লজের ভেতর প্রবেশ করে বুঝতে পারলাম। রাস্তার ধারেই লজ। মোটামুটি তিনতলা লজ। নিচতলাটা পুরো খাবার জায়গা করেছে। আর খাবার হল টার পাশে যে গলিটা রয়েছে, সেখানে মোটামুটি লাইন পড়ে গেছে খাওয়ার জন্য। আমিও জানলা দিয়ে দেখতে পেলাম মানুষজন খাচ্ছে। সুন্দর করে। আর এর সাথে টেবিল ধরার জন্য লোকজন গিয়ে টেবিলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে।
এই চিত্র দেখে আমি এবং আমরা সবাই বুঝতেই পারলাম কি হতে চলেছে। দোতলায় নতুন বর বউ ছিল। আমরা দোতলায় উঠে বউকে উপহার দিলাম। সেখানে গিয়ে সকলের সাথে কথোপকথন হলো। কিছু ছবিও তোলা হল। ওদিকে দোতলাতেই বেশ খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। একদিকে মোমোর স্টল, আরেক দিকে ফুচকার স্টল, আরেক দিকে পকোড়া। আবার মকটেলও করা হয়েছিল। আমরা সবাই গল্প করতে করতে ওই রাত তখন সাড়ে দশটা বাজে এসব খাওয়া-দাওয়া করছি।
আমরা ভাবছিলাম এসব খাওয়া দাওয়া করতে করতে, হয়তো নিচের জায়গাটা ফাঁকা হয়ে যাবে তখন গিয়ে খেতে বসব। এদিকে আমাদের খাওয়া দাওয়া হয়ে যাওয়ার পর যখন গিয়ে আমরা দেখছি তখনও দেখি লাইন দাঁড়িয়ে। লোকজনের কাছ থেকে শুনে বোঝা গেল টেবিল বুক করা আছে। যারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে আমন্ত্রিত লোকজন তাদেরকেও বুক করে রাখছে টেবিল যাতে ধরে রাখে তারা খাবার পর।
আমরা তো একদম হতবাক হয়ে গেলাম। সবাই স্বাভাবিকভাবেই জেঠুকে বকাবকি করছিল। মানুষজন এত পরিমানে নিমন্ত্রিত ছিল যে ধারণার বাইরে। এতগুলো মানুষকে আপ্যায়ন করা জটিল হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ছেলের বাবার। আমরা অত ভিড়ের মধ্যে না থাকতে পেরে, বাইরে বেরিয়ে আসলাম রাস্তায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম। ঘড়ির কাঁটা ঘুরতেই থাকলো ।দেখতে দেখতে সাড়ে এগারোটা বেজে গেল।
মাঝে ছেলের বাবা এসে একবার দেখা করে গেল আমাদের সাথে।। স্বাভাবিকভাবেই তিনিও বসতে দেয়ার মত জায়গা পাচ্ছিলেন না। আমরাও তাই তাকে কিছু বলে ছোট করিনি। আমাদের মত বাকিদেরও সেই অবস্থা ছিল। আসলে লোকজন যতটা নিমন্ত্রিত ছিল, লজ কিন্তু ততটা বড় ছিল না।। এর সাথেই খাবারের জায়গাটাও হয়তো ছোট ছিল বলে, এক একটা ব্যাচে বেশি জন খেতে বসতে পারছিল না।
আমরা রাত সাড়ে বারোটা অব্দি চুপচাপ এইভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। পরে শুনি তিন তলার ছাদে আবার খাবার জায়গা করা হয়েছে। এর পরের ঘটনাটা পরেরদিন বলব। আজকে এখানেই শেষ করছি। তবে সেদিনকে যা মজা হয়েছে, আর যে পরিমাণ অসুবিধা হয়েছে, তা সত্যি ভোলার নয়। সে সমস্ত কিছু কালকে আমি শেয়ার করব।
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 5/8) Get profit votes with @tipU :)
ঘটনাটার কিছুটা হলেও হয়তো আমি জানি। বিয়ে বাড়ি তে এরকম ঘটনা প্রায় শোনা যায়। কারণ যে পরিমানে মানুষ নিমন্ত্রিত থাকে সেই পরিমাণে আয়োজন না করলে এইরকম অবস্থায় সকলকে পড়তে হয়। কারণ এই মন্ত্রিত লোক অনেক হয়ে গেলে তাদের জায়গা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে আমিও একটা বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম সেইখানেতেও প্রায় রীতিমতো লাইন দিয়ে বসে খেতে হয়েছে। মনে হয় বিয়ে বাড়িতে এসেছি নাকি কোন কীর্তন তলায় খিচুড়ি খেতে গিয়েছি।
বিয়ে বাড়ি মানেই হচ্ছে আনন্দ করা খাওয়া-দাওয়া করা বিয়েবাড়ি যেহেতু আপনাদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে ছিল তাই আপনারা আগেই রওনা দিয়েছেন তবে সঠিক সময় আপনারা বিয়ে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছাতে পেরেছেন জানতে পেরে ভালো লাগলো খাওয়া-দাওয়া করেছেন আনন্দ করেছেন সবার সাথে সেই মুহূর্তগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।