রতী - স্বরচিত কবিতা || নিজস্ব বক্তব্য
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি আমার লেখা আরো একটি কবিতা। কবিতাটার নাম দিয়েছি রতী ।
সাথে আছে মেঘলা আকাশের ফটোগ্রাফি। ফটোগ্রাফির মধ্যে রয়েছি আমি, আমার প্রিয় করবী আর কুন্দ গাছ। উঁকি দিচ্ছে অপরাজিতা। আর ফটোগ্রাফি টা করেছে আমার ছোট্ট ভাই ঈশান।
প্রত্যেকবারই যখনই কবিতা লিখি কোন একটা ফটোগ্রাফিকে কেন্দ্র করেই আমি কবিতা লিখতে থাকি।। কিন্তু কিছু কিছু কবিতা আবার ভিতরের কিছু কথা থেকে জন্ম নেয়। যে কথাগুলো একেবারে অব্যক্ত কোনোভাবেই কাউকে প্রকাশ করা যায় না যে কথাগুলো একেবারেই নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতি। সেগুলোর উপর ভাগ বসানোর কারোর অধিকার আমি কাউকে দিতে পারি না। যেই অনুভূতিগুলো শুধুই আমার। ঠিক সেই অনুভূতি গুলো নিয়ে মাঝেমধ্যে কবিতা লিখি। রতী সেরকমই একটা কবিতা।
রতী |
---|
সবাই তোমায় কত ভালোবাসে।
কত ভালোবেসে যায় কনক লতার ফুল।
তোমায় ভালোবেসেই
সন্ধ্যে পুজো দিতে শিখে নেয়
আমার ছোট্টো মেয়ে রতী ।
শিখে নেয় চন্দন বাটা ।
ধূপের গন্ধ ,যেমন করে ভরিয়ে দেয় বাড়ি।
যেমন করে ধুনোর ধোঁয়ায়
জড়িয়ে ধরে কর্পূরের আর্তনাদ ,
আর,তোমার সাথে আমার করায় আড়ি।
তুমি দাবানলে আগুন পোহাও রোজ ।
আগুন জ্বালাও ভিজে পাতাদের নিয়ে।
তোমার মনে নিভে যাওয়ার ভয় থাকে না ।
ভয় থাকে না দুখ তারাদের নিয়ে।
বৃষ্টি ঝড়ায় ঝোড়ো বাতাসের ডাক।
বৃষ্টি ঝড়ায় গোটা বিশ্বের সুখ।
আগুন জ্বলে কচি পাতাদের মাঝে ,
চাঁদোয়া ঢাকে আগুন শিখার মুখ।
আমার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা এবং একেবারেই নিজস্ব অনুভূতি আমি কখনোই আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই না। কারন সেটা একেবারেই নিজস্ব। কিন্তু কবিতার উদ্দেশ্য রয়েছে । যে উদ্দেশ্যে কবিতাটি একটা রূপ পেয়েছে। কবিতার প্রত্যেকটি কথা এবং কবিতার নামকরণ যে উদ্দেশ্যের কারণে তা আপনাদের সাথে শেয়ার করা যেতেই পারে।।
এখানে আমার একটি চিন্তাধারা রয়েছে। আমার মনে হয় ,আমাদের এই নারী সমাজ পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ার পর থেকেই শুধুমাত্র নিজেকে অর্পণ করে এসেছে। অর্পণ করে এসেছে পুরুষের কাছে। পুজোর সময় যেভাবে ভগবানের চরণে অনেক কিছু নিবেদন করতে হয়।। এই পৃথিবীর প্রত্যেকটা নারী যেন নিজেকে নিবেদন করে রেখেছে এই পৃথিবীর কাছে। যেন পুরুষ আছে বলেই নারী আছে। পুরুষের জন্য নারী আছে। আর নারীর জন্য?
আমি বহু গল্প পড়েছি। হিন্দু পুরাণে কামদেবের ভস্ম হয়ে যাওয়ার চিত্র আমার চোখের সামনে কল্পনার মত ভেসেছে। ওই যে বললাম, পুরুষের জন্য নারী ছিল। নারী আছে। আর নারীর জন্য? শুধুমাত্র এই পৃথিবীর কল্যাণে শিব এবং পার্বতীর পুনরায় মিলনের প্রবল প্রত্যাশায় এই জগতের পুনরুদ্ধারে নিজের স্ত্রী রতি কে ছেড়ে কাম দেব তপস্যারত শিবের সামনে এসেছিল।
তারপরের মর্মান্তিক ঘটনা আমরা সবাই জানি। কামদেব ভস্ম হয়ে গিয়েছিল মহাদেবের দৃষ্টিতে। এই অবস্থায় রতির অভিমান , রতির রাগ, জেদ, কষ্ট যন্ত্রণা কি প্রবল হয়ে দাঁড়াতে পারে। তা একবারও ভেবে দেখেছেন কেউ।??
**যার জন্য এই রাগ, সে কিন্তু ফিরেও একবারও স্ত্রীর কথা ভাবেনি। রামায়ণে লক্ষণের কথা বারে বারে মনে পড়ে। কিভাবে নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে দাদার সাথে চলে গেলেন বনে। দাদার প্রতি শ্রদ্ধা কর্তব্য, এ তো অবশ্যই আছে। আর স্ত্রী? তার কর্তব্য কি শুধুই অপেক্ষা করা? স্বামীর কর্তব্যের আগুনে জ্বলতে থাকা???সেদিন কামদেবের সাথে স্বয়ং রতিও ভস্ম হয়ে গিয়েছিল। নিজের শখ আহ্লাদ সম্পত্তি ভালোবাসা হারিয়ে নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল।
প্রতি পদক্ষেপে প্রতি জায়গায় প্রত্যেকটি নারীর এই যে আত্মদান। এর মূল্য কজন দিয়েছে!!? আমি তো শুধুমাত্র রতির কথা বললাম। রামায়ণে লক্ষণের স্ত্রী উর্মিলার কথা বললাম। আপনারা এক এক করে ভাবতে থাকুন। ভাবতে থাকুন সীতার কথা, পার্বতীর কথা, কৌশল্যার কথা, মন্দদরীর কথা, দ্রৌপদীর কথা, গান্ধারীর কথা.... আরো কত কত নারী শক্তির কথা। তারপরে ভাবুন আপনার আশেপাশের প্রত্যেকটি মায়েদের কথা, প্রত্যেকটি মেয়ের কথা, নিজের কথা।
আপনারা ভেবে একবার দেখুন তো। এই জগতে আপনারা কি শুধুমাত্র নিজেদের নিবেদন করতে এসেছেন? শুধুমাত্র পুরুষের কাছে নিবেদন? তার ভালো থাকা, তাদের ভালো রাখা, একি শুধু আপনারই কর্তব্য।? কর্তব্য কি তাদের নেই? আপনার কি নিজের প্রতি কর্তব্য নেই?
পুরা কাল থেকে হয়ে আসা নারীদের প্রতি ত্যাগে এখনো আগুন জ্বলছে। কামদেব হয়তো আবার নিজের স্বরূপ ফিরে পেয়েছিল মহাদেবের বরদানে। কিন্তু যে যন্ত্রণার আগুন জ্বলতে শুরু করেছে রতির মনের প্রত্যেকটা অংশ এ। তা কিন্তু এখনও নেভেনি। প্রত্যেকটা নারী শরীরে এই আগুন প্রজ্জ্বলন্ত।
কি অদ্ভুত ধৈর্যশীল নারী! কি অদ্ভুত তার শক্তি! কি অদ্ভুত তার ত্যাগ! কিন্তু এসব কিছুর মর্যাদা পুরুষ দিতে সক্ষম নয়।। কবিতার প্রথম চারটি লাইন পড়ে দেখুন। কবিতায় তুমি বলতে ' পুরুষ ' । পুরুষের জন্য নারী সবকিছু শিখে নেয়। সবকিছু গুছিয়ে নেয়। সব কিছু করতে সক্ষম হয়ে যায়।
কবিতার শেষে শুধু একটা কথাই বলতে চাই। একেবারে ব্যক্তিগত কিছু অনুভূতি। সেখান থেকেই কিছু লেখা। তাই কেউ নিজেদের মনে নেবেন না। শুধু একবার ভেবে দেখবেন যেভাবে আমি বিষয়টিকে দেখতে চেয়েছি। সবশেষে সকলকে রিকোয়েস্ট করব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা দুটি ছোট গল্প পড়ার জন্য - 'শাস্তি'ও 'স্ত্রীর পত্র'।আর এর সাথেই আশাপূর্ণা দেবীর লেখা উপন্যাস - 'ছোটদের প্রথম প্রতিশ্রুতি'। খুব ভালো হয় যদি বাকি অংশগুলোও আপনারা করতে পারেন।
আজ এখানে শেষ করছি। সকলে ভাল থাকবেন। কবিতা পড়ে আপনাদের কি মনে হলো,কমেন্টের মাধ্যমে লিখলে, খুব খুশি হব।