মধুমিতার জন্মদিন উপলক্ষে আমরা

in Incredible India5 days ago

নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আজকের পোস্ট দেখেই বুঝতে পারছেন আশা করি, যে কোন একটা জন্মদিনের পোস্ট নিয়ে আজকে আমি লিখতে চলেছি। একদম ঠিক, আসলে 12 ই মার্চ আমার খুব কাছের বান্ধবী মধুমিতার জন্মদিন ছিল।

20250402_224409.jpg

ছোটবেলা থেকে আমাদের একটা গ্রুপ আছে। আমাদের গ্রুপ অর্থাৎ আমি, মধুমিতা, পর্ণবী , অহনা, অনামিকা, কৌশিক, আর আমার পার্টনার। আমাদের সকলেরই একসাথে বড় হয়ে ওঠা। একই ব্যাচ। নানান ঝগড়াঝাঁটি, তারপরেও অটুট বন্ধুত্ব। বলতে গেলে সবাই সবার আপস এন্ড ডাউন দেখেই বড় হয়েছি। তারপরে রিলেশনশিপ, ব্রেকআপ, কান্নাকাটি, ক্যারিয়ার নিয়ে স্ট্রেস, বাড়ির ঝামেলা এসব তো লেগেই থাকে। আর সবকিছুর মধ্যে একটাই সলিউশন থাকে, বন্ধুদের সাথে সময় কাটিয়ে একটু আলোচনা করা। গ্রুপটা এতটাই ভালো যে, কারোর কোন সমস্যা হলে রাত দুপুরে ফোন করলেও সাড়া পাওয়া যায়। এটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

20250401_184230.jpg

যাই হোক বর্তমানে সকলে যে যার কাজে ব্যস্ত থাকে, সবাই প্রায় চাকরি করছে। এ কারণে সকলের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না সব সময় দেখা করার। কারোর আজ হয়,তো কারোর হয় না। সকলকে এক জায়গায় জড়ো করা একটা বড় মুশকিল ব্যাপার। এই যেমন মধুমিতার জন্মদিনেও আমরা এক জায়গায় জড়ো হতে পারিনি। তেমনই অহনার জন্মদিনেও হতে পারলাম না। অবশেষে সবারই মনটা খারাপ করছিল। অনেকদিন দেখা হয়নি, তাই জমে থাকা প্রচুর গল্প ছিল সবার।

20250401_200022.jpg

তাই গতকাল অর্থাৎ ফার্স্ট এপ্রিল আমরা ঠিক করেছিলাম দেখা করব মধুমিতার বাড়িতে। সন্ধ্যার দিকে সময় বার করে আমরা কিছু জন অ্যাটেন্ড করতে পারলাম।। যাদের আপনারা ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন। বাকি দুজন কাজের ব্যস্ততার কারণে শহরের বাইরে থাকায় আসতে পারেনি। যেহেতু মধুমিতার জন্মদিনের পরেই যাচ্ছি, তাই ওর জন্য একটা কেক কিনে নিয়েছিলাম। আর একটা গিফট।

20250401_183931.jpg

প্রথমেই আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনামিকার স্কুটিতে করে কেকের দোকানে পৌঁছে গেলাম। ক্রিমজ থেকে একটা দারুণ কেক নিয়ে নিলাম। তারপর চলে গেলাম ব্যাগের দোকানে। সেখানে গিয়ে একটা পছন্দ মতো ব্যাগ কিনে নিলাম।

20250401_184018.jpg

ওই সময় আমার শরীরটা এত খারাপ করতে শুরু করলো যে, ওদেরকে দোকানে ফেলে রেখে ই আমি আমার বাবার বন্ধুর দোকানে চলে গেলাম। বুঝতে পারলাম প্রেসারটা ফল্ট করছে। শরীর যেহেতু ভালো নেই। সারাদিন গতকাল বিছানা থেকে উঠতে পারিনি। তারপরেও শুধুমাত্র এই পাগল গুলোর জন্য রাজি হয়েছিলাম সন্ধ্যাবেলায় সময় দিতে।

আমার এত মাথা ঘুরছিল আর গা হাত পা কাপছিল যে জেঠুর দোকানে আমাকে বসতে হলো। জেঠি সাথে সাথে আমাকে একটা ors খাইয়ে দিল। আর এর সাথে কি একটা ওষুধ। গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। এই ব্যাপারটা আমার প্রায়শই হয়। সবসময় প্রেসার লো থাকে। ব্যাপারটাতে আমি অভ্যস্ত। কিন্তু একটা ভালো ডাক্তার দেখাতেই হবে। যাই হোক ওখানে মোটামুটি এইসব করতে গিয়েই ১৫-২০ মিনিট চলে গেল। ওরাও ভয়ের চোটে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে দেখে আমার সত্যিই শরীরটা খারাপ করছে। তাই ওরাও হুটোপাটা না করে আমাকে কিছুটা সময় দিলো ওখানে রেস্ট নেওয়ার।

কিছুক্ষণ পরে যখন শরীরটা একটু ভালো লাগলো তখন আবার স্কুটির পিছনে চেপে পৌঁছে গেলাম মধুমিতাদের বাড়ি।। ওদের বাড়ি আমার বাড়ি থেকে বেশ কাছে। শুধুমাত্র জিনিসপত্র কেনার জন্যই মার্কেটে যেতে হয়েছিল। আমি বলেছিলাম বন্ধুদের যাতে ওরা কিনে নেয়, কিন্তু ওরা আমাকে ছাড়া কোন জিনিস কিনতে চাইছিল না। যাইহোক অবশেষে মধুমিতার বাড়িতে পৌঁছে গিয়ে দেখি, মধুমিতা আর ওর বাবা বাড়িতে আছে। মধুমিতাকে আগে থেকে জানানো ছিল যে আমরা যাব, তবে এসব জিনিসপত্র নিয়ে যাব ও বুঝতে পারেনি। কারণ ওর জন্মদিন অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে। তাই ও আইডিয়া করতে পারেনি।

20250401_200757.jpg

যাওয়ার সাথে সাথে পাঁচ মিনিট বসেই কেকটা কেটে ফেললাম। সবকিছু দেখে মেয়ের তো খুব আনন্দ। মোটামুটি তিন বছর হতে চলল কাকিমা মারা গেছেন। তারপর থেকেই আমরা চেষ্টা করি ওর জন্মদিনটাকে একটু সেলিব্রেট করার । কাকিমা থাকতেও আমরা গিয়ে ওর জন্মদিন সেলিব্রেট করতাম। ওদের বাড়িতে গেলে কাকিমার কথা খুব মনে পড়ে।

20250401_185506.jpg

কেক কাটার সাথে নানান রকম গল্প শুরু হয়ে গিয়েছিল তার সাথে আমরা ছবিও তুলছিলাম। ওদের হাতে এক বান্ডিল গোলাপ দেখেছি। আমি যখন অসুস্থ হয়ে জেঠুর দোকানে বসে ছিলাম, তখনই যে ফুলটা কেনা হয়েছে সেটা বুঝলাম। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম হয়তো ওই গোলাপের বান্ডিলটা মধুমিতার জন্য। পরে দেখি অনামিকা ওই বান্ডিল থেকে দুটো গোলাপ বার করে নিয়ে মধুমিতার হাতে দিলো।

আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, গোলাপের বান্ডিল তোর জন্য কিনেছে তোর বর। আমি শুনে বেশ খুশি হয়ে গেলাম, আমার ভদ্রলোক পুরো গোলাপের বান্ডিলটা আমার হাতে তুলে দিল। আমি ফুল কতটা ভালবাসি ,সেটা সবাই জানে ।কিন্তু এটা আমার কাছে একটা সারপ্রাইজ ছিল। আসলে চোখের সামনে অত বড় গোলাপের বান্ডিল দেখলে ,যে কোন মেয়েই আহ্লাদে আটখানা হয়ে যায়।

তবে আমি কিন্তু পুরো গোলাপের বান্ডিল বাড়িতে আনিনি। আমি জানি মধুমিতা আমার মতনই ফুল ভালোবাসে। তাই যেহেতু ওকে দুটো ফুল দেওয়া হয়েছিল ,ওর মন একটু খারাপ হতে পারে, এ কারণে গোলাপের বান্ডিল থেকে আরো কিছু গোলাপ খুলে নিয়ে ওকে দিয়ে এসেছি।

20250402_224446.jpg

সব মিলিয়ে আমরা গতকাল অনেক আড্ডা মেরেছি ,অনেক গল্প করেছি। তবে এর সাথে বাকিদেরকে মিসও করছিলাম। জানিনা কবে সবাই মিলে একসাথে হওয়া হবে। পরপর সবকটার জন্মদিন যাচ্ছে, আমরা সবাই মিলে প্ল্যান করেছি ওদের কাছ থেকে ট্রিট নেব।

সবশেষে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে চাই আমাদের এই বন্ধুত্ব সুস্থ থাকুক। আজ এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকবেন।

Sort:  
Loading...
Loading...

Congratulations! This post has been upvoted through steemcurator08. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags.


abril2025.jpg

Curated by : mohammadfaisal