আমাদের আম গাছ

in Incredible India12 days ago

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। আর এই গরমে অনেক অনেক আম খাচ্ছেন। দিনে মোটামুটি আপনারা কটা করে আম খেতে পারেন? কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন। আমার তো এক একদিন সাতটাও হয়ে যায়। এটা একেবারেই ভালো কথা নয়। তবে আমার আম খেতে ভীষণ পরিমাণে ভালো লাগে।

1000260186.jpg

আমি যদিও একদিন বেশি খেলে, পরের দিন আবার আমই খাই না। আম নিয়ে আমার শখ সৌখিনতা আলাদা। কিছু কিছু আম পিস পিস করে কেটে কেটে খেতে ভালো লাগে। কোনটা আবার চাকু দিয়ে ফালি করে করে। আবার কোনটা একেবারে জুসের মতো করে আমের পিছনদিকে ছিদ্র করে নিয়ে। আবার কখনো কখনো পুরোপুরি আম ছিলে খেয়ে নিই। তবে হিমসাগর পিস করে কেটে দিলে, বরাবরই আমার ভালো লাগে।

1000260183.jpg

আমি যখন অনেক ছোট, আমাদের বাড়িতে বিরাট বড় আমের গাছ ছিল, আমার এখনো মনে পড়ে ছোটবেলায় ঝড় উঠলে আমি আমার দাদা দিদি দের সাথে বাগানে দৌড়তাম। আম কুড়ানোর জন্য। আর ঠাকুমা দাদু প্রচন্ড পরিমাণে বকাবকি করতো। আম কুড়িয়ে নিয়ে এসে কত যে আম পোড়া শরবত খাওয়া হয়েছে, সেই ছোটবেলাকার আনন্দগুলো এখন কিছুতেই আমি ফিরে পাবোনা। একটা অপূর্ব সুন্দর স্বপ্নের মত স্মৃতিগুলো আমার মনের ভিতরে গেথে আছে। আমাদের ছোট বেলায় কালবৈশাখীর দাপট ছিল প্রবল। এখন ঝড় হয় কিন্তু সেরকম দাপট দেখতে পারি না।

1000260182.jpg

তখন ঝড়ের রাতে কারেন্ট থাকত না। সারা রাত শো শো করে হাওয়া দিত। সারা পাড়া অন্ধকার হয়ে থাকতো। বৃষ্টির ওয়েদারে কি ঠান্ডা লাগতো! হেরিকেনের আলো জ্বালিয়ে ঠাকুমা আর দাদুর কাছে বসে পড়তাম গল্প শুনতে। সাথে থাকতো আমার সব দাদা দিদিরা। সেই স্মৃতিগুলো এতটাই সুখের, ওরকম সুখ হয়তো আর কখনো পাবোনা। আমার মনে আছে ছোটবেলায় আমার দিদিমণি অথবা মাস্টারমশাই পড়াতে আসলে। মা বাটিতে আম পিস করে কেটে দিত।

যখন আমাদের বাড়ির পাশে জেঠুদের জন্য বাড়ি তৈরি হলো তখন ওই আম গাছটা ওরা কেটে দিল। ছোটবেলা থেকে আম গাছ কাটা দেখলে আমার খুব মন খারাপ করে।। আমাদের পাশের বাড়িতে যখন আন্টিরা কলকাতায় চলে গেল আন্টিরা প্রোমোটারদের জায়গাটা বিক্রি করে দিয়েছিল। প্রোমোটারদের কাছ থেকেই মৌসুমী বৌদিরা জায়গাটা কিনেছে।

যখন প্রোমোটারদের আন্টিরা জায়গাটা দিয়েছে ,তখনই ওরা সাথে সাথে আম গাছটাকে কেটে দিল।। মৌসুমী বৌদি এখন শুনে খুব দুঃখ করে। আন্টিদের বাড়িতে অর্থাৎ মৌসুমী বৌদিরা এখন যে বাড়িতে থাকে, আমাদের পাশের বাড়ি, আম গাছটাতে কি পরিমান যে আম ধরতো, আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না। সারা পাড়ার লোকজন আম কুড়াতে আসতো। নিজের বাড়িতে একটা আম গাছ থাকা একেবারে রত্নের মতো। এ এক বিরাট সম্পত্তি।

1000260127.jpg

আমাদের বাড়িতে ওই বড় গাছটা চলে যাওয়ার পর, আবার মা শখ করে আমগাছ লাগায়। দুটোই আম্রপালি। মধুর মতো মিষ্টি। দুটোর মধ্যে একটা আম গাছ আবার কাঁটা পড়ে। অবশেষে এখন বাড়িতে একটা আম গাছ আছে। আর কিছু বছর আগে আমি মামার বাড়ি থেকে আসার সময় একটা কাঁচা মিঠা আমের গাছ এর চারা নিয়ে এসেছিলাম, সেটাও আছে। সে এখন বড় হয়েছে তবে এখনো আম হয়নি। সে কারণে আমি ওই গাছে ফল হওয়ার জন্য দীর্ঘ আগ্রহে বসে আছি । কাঁচা মিঠা আম শুধু শুধু খেতে আমার দারুন লাগে। অনেকে আবার ঝাল নুন দিয়ে মাখিয়ে খেতে পছন্দ করে।

ছোটবেলাকার কিছু স্মৃতি এভাবে আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করে নিতে পেরে বেশ ভালো লাগলো। আজকে এখানেই শেষ করছি। তবে সব সময় মাথায় রাখবেন যদি কখনো একটা গাছ কাটেন ,তার বদলে আরো দশটা গাছ লাগান। গাছ আমাদের বন্ধু। প্রকৃত বন্ধু।

Sort:  
Loading...
Loading...
 11 days ago 

একদমই তাই ছোটবেলাকার স্মৃতিগুলো আমরা কখনোই আর ফিরে পাব না তবে এখনকার বাচ্চাদের ছোটবেলাকার একদমই অন্যরকম আমাদের সাথে কোন মিল নেই। তোমার মত আমিও ছোটবেলায় ঝড় উঠলে আম কুড়োতে যেতাম তবে আমার মামার বাড়িতে কোন আমরা ছিল না আশেপাশে যাদের বাড়িতে আম গাছ ছিল সেই আম গাছের তলায় ছুটতাম আম কুড়ানোর জন্য। তবে আমাদের ছোটবেলায় কারেন্ট চলে গেলে হ্যারিকেনের আলো ছিল সাথে ছিল ঠান্ডা বাতাস এতেই আমরা ভীষণ খুশি ছিলাম কিন্তু এখনকার দিনে কারেন্ট চলে গেলে লাইটের আলো ,পাখা, এসি ছাড়া কেউ থাকতেই পারে না, মাঝে মাঝে মনে হয় সেই ছোট বেলায় ফিরে যেতে। ছোটবেলাতে চারিদিকেই কত গাছ কিন্তু এখনকার দিনে চারিদিকে তাকালে শুধু বাড়ি দেখা যায়। গাছের সংখ্যা একদমই কমে গেছে। যাই হোক তোমাদের গাছের আমগুলো তাড়াতাড়ি ফিরে ফেলো। আপনি সুন্দর স্মৃতিচারণ করার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।