জীবনে প্রথমবার মা হওয়ার কিছু অনুভূতির স্মৃতি।।

in Incredible India3 days ago

হ্যালো বন্ধুরা,

1000156947.jpg

আসসালামু আলাইকুম সবার সুস্থ এবং ভালো আছেন, আমি আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালোই আছি। তবে প্রতিদিনই চেয়ে আজকের আবহাওয়াটা খুব ঠান্ডা এবং নীরবতা ছিল। দুপুর থেকে অল্প অল্প বৃষ্টি পড়ছে এবং এখনো পর্যন্ত অল্প অল্প বৃষ্টি পড়ছে তাই খুব ভালো লাগছে আজকের কোন গরম সহ্য করতে হয়নি, খুব ভালো কেটেছে দিনটা। আজকের পোস্টটা মনে হয় একটু বড় হতে পারে।

তবে আজ আমি আপনাদের সাথে আমার পুরনো কিছু স্মৃতি শেয়ার করব। সেটা হল প্রথমবার মা হওয়ার কিছু অনুভূতি।

আমার বিয়ে হয় 2018 সালের শেষের দিকে,বিয়ের দুই মাস পর এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। আবার ঠিক পরীক্ষার দু মাস পর আমার শাশুড়ি মারা যায়। শশুর বাড়ির ভিতরে পেয়েছিলাম শাশুড়িকে তাও কপালে আর সুখ সইলে না বিয়ের দুই মাস পর শাশুড়ি মারা যায়।

1000148695.jpg

যাইহোক যেমন তেমন বাকি দিনগুলো পার করি। এরপর ইন্টারে ভর্তি হলাম প্রথম ইয়ার গেল সেকেন্ড ইয়ারে শুনি আমি মা হতে চলেছি। মা হতে চলেছি কথাটা শুনে যতটা না শান্তি লাগছে তার চেয়ে খারাব লাগছে। আমি মায়ের কাছে থাকতে পারিনি , এবং তার সেবা যত্ন টুকু ঠিক মতন পাইনি। তবে এতে আমার মায়ের কোন দোষ ছিল না। সিক্রেট একটা পারিবারিক কারণে মায়ের কাছে যেতে পারিনি।

এরপর ভালো খারাপ মিলিয়ে দিনগুলো পার করি। পাঁচ মাস পর প্রেগনেন্সি চেকআপ করি তখন শুনি আমার ছেলে বাবু হবে। ছেলের বাবুর কথা শুনে মনে হলো আমার সব দুঃখ কষ্ট শেষ হয়ে গেল।

1000148738.jpg

যখন আমার প্রেগনেন্সির সাড়ে ছয় মাস তখন এদিকে আমার ইন্টার পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে। ইন্টার পরীক্ষা সব কাগজ পত্র আগেই জমা ছিল তাই পরীক্ষা দেওয়ার দিক থেকে আর পিছুটান ছিলনা। সিক্রেট ঝামেলাটুকু শেষ করে মা আমাকে নিয়ে গেল। এর আগে অনেকবার চেষ্টা করেছিল হয়নি।

বেশি সম্ভব হয়েছে আমার পরীক্ষার কারণে, আমি বলেছি যতই আমার যা কিছু হয়ে যাক আমি এই পরীক্ষা দিবই। তবে কিছু কিছু দিক থেকেই মানুষের সাহায্য পাওয়া যায়। মেয়ের প্রতি যে মায়ের এতটা সাহায্য এবং যত্নশীল সেটা মা ছাড়া আর কেউই করবে না। আমি বাবার বাড়িতে আসার পর চুল পরিমাণ কোন কাজ করতে হয়নি, উল্টো আমার মা জামা কাপড় থেকে আমার সমস্ত কাজ করে দিয়েছে। আর ওই বাড়িতে যখন ছিলাম রান্নাবান্না থেকে পালি আনা সমস্ত কিছু কাজ নিজের হাতে করতে হতো।

1000156948.jpg
1000148620.jpg

রান্নাবান্না করে সব কিছু গুছিয়ে নেওয়ার পরও এমন কি ভাত বেড়ে খেতে দিতাম । রাতে একটু শুয়ে বসে থাকলো খাওয়ার সময় হলে আমাকে ভাত বেড়ে দিতে হতো। সবকিছু গুছিয়ে রেখে তারপর শোতে যেতাম। আমি যার কাছে ছিলাম সে ছিল আমার খালা শাশুড়ি। সে আমাকে সাহায্য করবে কি উল্টো আমি যদি সাহায্য করতাম তার আরো ভালো হতো।

বাবার বাড়িতে গেলাম, ১৫ দিন পর আমার পরীক্ষা শুরু হল। প্রত্যেকদিন মা আমার সঙ্গে যেত আমি পরীক্ষার হলে থাকতাম আর মা বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতো। কথায় আছে না, মায়ের মতন আপন এ জগতে আর কেউ হয় না, সন্তানের পাশে দুঃখেও মা সুখেও মা।

আমি বাবার বাড়িতে আসার পর আমার স্বামীকে কেমন একটা পাশে পাইনি। সে ছিল তাদের বাড়িতে অনলাইন ব্যবসা নানান ধরনের চিন্তা ভাবনা নিয়ে। তেমন একটা আসতে পারিনি , আর আমার শ্বশুরবাড়ি আসতে নদীর খেয়া পারিয়ে আসতে হয়। মাঝের মতো আসত।

1000148616.jpg

যেতে যেতে আমার পরীক্ষা সবগুলোই শেষ হলো। আর হ্যাঁ আমি যখন এইচএস সি পরীক্ষা দি তখন ২০২১ সালের শেষের দিকে। আমার পরীক্ষা বৃহস্পতিবার দিন শেষ হলো এবং শুক্রবার রাত তিনটার সময় আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি।

অসুস্থ বলতে একলামশিয়া হয়, খুব ভয়ংকর ভাবে আমি অসুস্থ হয়েছিলাম। আমার সেই দিনের কষ্টর কথাগুলো মা যদি এখনো মনে করে অনেক কান্নাকাটি করে। আমার নাকি অনেক কষ্ট হয়েছিল তবে আমি কিছুই টের পাইনি অজ্ঞানের ভিতরে ছিলাম।

1000156949.jpg

রাত সাড়ে তিনটার সময় আমাকে বরিশাল হসপিটালে নিয়ে যায়। এদিকে আমার স্বামী আমার অসুস্থ কথা শুনে সে ছটফট করছে। তখন সে আসতেও পারছে না রাত তিনটার সময় তো খেয়া পারাপার হয় না। তখন শীতের পৌষ মাস।

বরিশাল যেতে যেতে সকাল আটটা বেজে যায়। এদিকে আমার সাহেবও হসপিটালে পৌঁছে যায় । শনিবার সকাল বারোটার সময় আমার ওটিতে নেয় এবং সিজার করে। আমাদের বংশের কারো সিজারে বাচ্চা হয়নি, আমার মা-বাবা ভয়ে ও খুব কান্নাকাটি করছে।

তবে এত কিছু যে আমার উপর দিয়ে চলেছে আমি কিছুই টের পাইনি বা বাবু হওয়ার তিন দিন পর আমার হুশ হয়েছে। জ্ঞান ফেরার পর দেখি মা আমার পাশে বসে আছে আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

আমি দুচোখ মিলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলি মা আমার কি হয়েছে আমি কোথায়। তখন মা আমার কথার উত্তরে বলে তোমার ছেলে বাবু হয়েছে এই যে, দেখো তোমার পাশে। সত্যি কথা বলতে আমি যে মা হয়েছি এবং আমার ছেলে হয়েছে এটা আমি কোনভাবেই মানতে এবং বুঝতে পারেনি।

তিনদিন আমার ছেলের প্রতি কোনো মায়া ভালোবাসা কোনটাই ছিল না। আমার কেমন জানি একটা ছাড়া ছাড়া ভাব ছিল। তবে এর কারণ হলো আমার অসুস্থতার কারণ।সন্তান হওয়ার পর মায়ের পাশে দেয় প্রথমে মা দেখে। সেই দেখাটা আমার আর হয়নি , এমন কি আমি কিছু কিছু স্মৃতি মনের দিক থেকে হারিয়েছি কিছুই মনে ছিল না। তারপর আস্তে আস্তে সব মনে হলো এবং ছেলে প্রতি ভালোবাসা টান বেড়ে গেল।

1000153321.jpg

হসপিটালে নয় দিন ছিলাম, তারপর বাড়িতে গেলাম। এরপর খুব ভালোভাবেই ছেলেকে নিয়ে দিনকাল কাটলো। মাশাল্লাহ,, আজ এখন আমার বাবাটার সাড়ে তিন বছর। সবাই আমার বাবাটার জন্য বেশি বেশি দোয়া করবেন। সৎ পথে চলতে পারে আর কুরআনের হাফেজ বানাতে পারি। সাহেব আর আমার ছেলেকে নিয়ে এই ইচ্ছাটা।।

যাইহোক বন্ধুরা, আজকের মত লেখা এখানেই শেষ করছি। জানিনা, আমার পোস্টটা পরে আপনাদের কেমন লাগবে। আর হ্যাঁ, আজকের পোস্টে যতগুলো ছবি দেখছেন সাহেবের ফোন দিয়ে ইমু এবং হোয়াটসঅ্যাপ থেকে আনা। আবার অন্য কোন পোস্টে আপনাদের সাথে দেখা হবে। (আল্লাহ হাফেজ)

Sort:  
Loading...
 yesterday 

প্রথম বার মা হওয়ার আনন্দের শক্তি এবং তার চেয়ে বেশি পুরনো দিনের দুঃখ গুলো ফুটে আসে আপনার বিয়ের দু মাস বাদে আপনার শাশুড়ি মারা যায় বিষয়টি শুনে সত্যি খারাপ লাগলো এবং শ্বশুর বাড়ি গিয়ে শাশুড়ির ভালোবাসা অল্প কিছু দিন পেয়েছেন এটা বুঝতে পারছি তবে প্রথম বার মা হওয়ার আনন্দ হচ্ছে তবে তার চেয়ে দুঃখটা আপনি বেশি পেয়েছেন আপনার পোস্ট পড়ে বুঝতে পারলাম এটা আমাদের ভাগ্যে থাকে কিছু কিছু সময় সেটা মেনে নিতে হয়।