"গল্পটা আমার ছোটদির (বর্তমান পরিস্থিতির একজন প্রকৃত যোদ্ধার)" পার্ট-১
প্রিয়,
পাঠকগণ,
আশাকরি আপনারা সবাই সাবধানে আছেন, সুস্থ আছেন।
আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার ছোটদির কথা শেয়ার করবো। আমার আগের অনেক পোস্টে আপনারা ওর কথা কমবেশী শুনেছেন। তবে আজ শুধু ওর কথাই বলবো।
ওর সম্পর্কে কথা বলার এর থেকে ভালো সময় বোধহয় আর নেই। বর্তমান পরিস্থতিতে আমার দিদি বা দিদির মতন যাঁরা নার্সিং প্রফেশনে যুক্ত আছেন, তাদের প্রত্যেককে আমি কুর্নিশ জানাই।
ওদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ অনেকেই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসছেন। এই কঠিন সময়ে ওরা নিজেদের জীবনের কথা না ভেবে,পরিবারের কথা না ভেবে,নিজেদের কাজ করে চলেছে।
আসলে ছোটদির কথা বলতে গেলে অনেক আগে থেকে শুরু করতে হবে। আগেও আমি জানিয়েছি আমি আমার ছোটদির থেকেও ৯ বছরের ছোট। তাই বোনের থেকেও বেশী যেন আমি ওর সন্তান তুল্য। আমার স্মৃতিতে প্রথম যেটা মনে পড়ে দিদির সাথে স্কুল যাওয়া।
দিদির তখন ক্লাস ইলেভেন আর আমি ভর্তি হলাম ক্লাস ফাইভে। দিদির সাইকেলে চড়ে স্কুল যেতাম। নতুন নতুন অত বড়ো স্কুলে ভীষণ ভয় লাগতো আমার,বাথরুম পেলেও ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে সোজা দিদির ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। দিদি ক্লাস থেকে বেরিয়ে আমায় বাথরুম নিয়ে যেত। এমন বহুবার হয়েছে।
যাইহোক, এরপর দিদি কলেজে ভর্তি হলো, আর আমারও ভয় কেটে গেলো আস্তে আস্তে। দিদির জন্য আমার প্রথম নাচের ক্লাসে ভর্তি হওয়া, মায়ের সাথে প্রায় জোড় করেই আমায় ভর্তি করেছিল। আসলে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে নাচ শেখাটা তখন একটু বিলাসিতাই বটে। আমার মনে পড়ে স্কুল সেরে যখন আমি সোজা নাচের ওখানে যেতাম, দিদি আমার জন্য ডিম টোস্ট করে পাঠাতো মায়ের হাত দিয়ে।বিশ্বাস করুণ এখনো পর্যন্ত অনেক ডিম টোস্ট খেয়েছি, কিন্তু সেই স্বাদ যেন ভোলবার নয়।
নাচটা মোটামুটি ভালোই করতাম, কিন্তু পরে যাতায়াতের অসুবিধার জন্যে continue করা সম্ভব হয়নি। তবুও আমার জীবনে নাচের ওইটুকু স্মৃতি জমা হয়ে আছে শুধুমাত্র ছোটদির জন্য।
এরপর আসি দিদির নার্সিং পড়তে যাওয়ার কথায়।বি.এ. ফার্স্ট ইয়ার পড়তে পড়তে দিদি নার্সিং ফর্ম ফিলআপ করে, বাড়ির কাউকে না জানিয়ে। ও ভেবেছিল চান্স পাবে না, তাই আর বলেনি, কিন্তু কপাল গুনে চান্স পেয়ে গেল। আর সেদিন থেকে আমাদের ভাগ্য খুলে গেলো বলতে পারেন।
দিদি ওর বান্ধবীর সাথে -
একজন নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে শুধুমাত্র তার মেধার জোরে সরকারি নার্সিং কলেজে পড়ার সুযোগ পেলো, এটা যে কতটা আনন্দের সেটা বোধহয় আমরা প্রথম উপলব্ধি করলাম।আমরা বলতে আমি আমার বাবা,মা, আর দিদিদের কথা বলছি।
আমি তখন এগুলো বোঝার জন্য বড্ড ছোটো। আমার কাছে বিষয়টি তখন অন্য আনন্দের। দিদি হোস্টেল চলে আসবে, আমায় শাসন করার একটা লোক কমলো,এটা ভেবেই খুশী।তবে তা শুরুতে,পরে আমিও খুব মিস করতাম দিদিকে। ওর সঙ্গে দেখা করতে ওর হোস্টেলে যাওয়া, সেই প্রথম আমার কলকাতা দেখা।
এরপর দিদি মাঝে মাঝে বাড়ি আসতো। বাড়ি এলেই মা ভালো ভালো রান্না করতো। বেশ মজা হতো আমার। আমার একটা জন্মদিনের কথা মনে পড়ে, গ্রামের দিকে তখন জন্মদিন পালনের এতো চলন ছিলো না। যারা একটু অর্থশালী তাদের বাড়িতেই জন্মদিন পালিত হত, এমন জন্মদিনে গিয়েছি বহুবার, ইচ্ছে হতো আমারও জন্মদিন হোক। তবে মায়ের শিক্ষাতে বুঝে গিয়েছিলাম ওই বিলাসিতা আমাদের জন্য নয়।
এমন অবস্থায় হটাৎ আমার জন্মদিনে একটা বড়ো কেক আনলো ছোটদি।শিয়ালদা থেকে মছলন্দপুর। ট্রেনে প্রচুর ভিড়, অনেক কষ্ট করে কেকটা এনেছিল।সেদিনের মত খুশী বোধহয় কোনো জন্মদিনে হইনি।বলতে পারেন জীবনে প্রথমবার জন্মদিনের স্বপ্নপূরণ।
হোস্টেলের রুমে ছোটদি - (হায়দ্রাবাদ)
দিদির আমাকে নিয়ে স্বপ্ন ছিলো অনেক, ওর সব কষ্টের বিনিময়ে চেয়েছিল আমি যেন ভালোভাবে পড়াশুনা করি। তখন করতামও, রেজাল্ট ও ভালো হতো প্রতিবার। কিন্তু কি করে যেন স্বপ্নপূরণ করতে পারলাম না কোনোদিন।
যাইহোক, আগেও বলেছি আপনাদের আমার দুই দিদি। বড়দি আর ছোটদির বয়েসের ডিফারেন্স বেশি নয়।ওদের বন্ডিং বরাবর খুব ভালো ছিলো। দিদি যখন চাকরি সূত্রে হায়দ্রাবাদ গিয়েছিল, তখন ওকে ভীষণ মিস করতাম আমি। বেশ অনেকটা বড় হয়েছি তখন। তারপর ও গেলো বাংলাদেশ।আমাদের কলকাতা অ্যাপোলো হসপিটালে তখন ও চাকরি করত, আর ওখান থেকেই কয়েকজনকে ওরা বাংলাদেশ পাঠায়। তাদের মধ্যে দিদিও একজন।
বাংলাদেশ থেকে ছুটিতে এসেছিল -(সাথে বাবা ও মা)
এই প্রথম দেশের বাইরে।শুধুমাত্র আমাদের পরিবারকে একটু ভালো রাখার জন্য লড়াইটা অনেক কম বয়েস থেকে লড়ে চলেছে আমার ছোটদি।বাংলাদেশে গিয়ে ছোটদি মায়ের স্বপ্নপূরণ করেছে। মায়ের দেশ দেখেছে, তার আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করেছে, আর সবথেকে ভালো যেটা করেছে আমাদের সবাইকে বাংলাদেশের ইলিশমাছ এনে খাইয়েছে।বিশ্বাস করুন ওই মাছ দেখে মায়ের মুখের হাসিটা আজও চোখে ভাসে। যেন ছোট্টবেলা ফিরে পেয়েছিল সেদিন। খুব খুশি হয়েছিল মা।
ছোটদি বাংলাদেশে থাকাকালীন বড়দির বিয়ে হয়ে যায়। যখন সরকারি চাকরি পেয়ে দেশে ফিরলো তখন বাড়িতে দিদি নেই। তাই কখন যেন আস্তে আস্তে আমার আর ছোটদির সম্পর্কটা বন্ধুত্বে পরিণত হলো।
মায়ের সাথে ওর সম্পর্ক বরাবর আলাদা ছিলো। দুজনে একসাথে যে কত সিনেমা দেখেছে তার ঠিক নেই, আর মিষ্টি খাওয়ার কথা তো বাদই দিলাম।দুজনেই মিষ্টি ভালোবাসে।যেদিনই সিনেমা দেখতে আসতো, বাড়ি ফেরার সময় মিষ্টির দোকানে বসে মিষ্টি খাওয়া চাই ই চাই।মা আমাকে বলে আসতো কাজে যাচ্ছি,ফেরার সময় দিদিকে নিয়ে ফিরবো অথচ দুজন মিলে এই কাজ করতো।
যাইহোক, দিদিকে নিয়ে লেখাটা একটা পোস্টে শেষ করা সম্ভব হলো না।সত্যি বলতে আমাদের জীবনের অনেক মুহুর্তের কথা বলতে চাই আপনাদের। তাই অনুরোধ করবো একটু ধৈর্য্য নিয়ে পড়বেন। আজকের লেখাটা শেষ করছি, কাল এখান থেকেই শুরু করব।
আপনারা প্রত্যেকে ভালো থাকুন,সাবধানে থাকুন, সুস্থ থাকুন এই কামনা করি।শুভরাত্রি।
Hat's off to your sister... stay safe and healthy
Tomar boner jnno suvessa o valobasa roilo didi.
@actnearn Thank you for your support 🙏.
sonman and valobasa roilo tar jnno .