কৃতজ্ঞতার গল্প হারিয়ে গেছে কোথায়?

🥰.. আসসালামুয়ালাইকুম ...🥰

প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনদের জন্য আদাব ও ভালোবাসা 💗🙏। আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্নেহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি, মহান আল্লাহর রহমতে এবং একে অপরের ভালোবাসায় আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও বেশ ভালো আছি।আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন সদস্য,এই প্ল্যাটফর্মের সাথে আমার যাত্রা প্রায় এক বছর ধরে। সত্যি বলতে, এখানে আসতে পেরে আমার মনে হচ্ছে ! যেন নিজের আর একটি নতুন পরিবার খুঁজে পেয়েছি। প্রতিটি লেখা, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি বন্ধুত্ব আমাকে দিয়েছে আনন্দ, ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায়ের স্বাদ।আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো " কিছু মানুষের মাঝে যখন কৃতজ্ঞতা হারিয়ে যায়" ।আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক অনেক ভালো লাগবে। চলুন এবার শুরু করা যাক।

জীবনে অনেক সময় আমরা শুনি“এই মানুষগুলো কোনো কৃতজ্ঞতা বোঝে না।” কেউ হয়তো একটি উপকার করলো, আরেকজন তা একেবারেই অগ্রাহ্য করে চলে গেল। আমরা অনেক সময় বলি, “মানুষ এত অকৃতজ্ঞ কেন?” কেউ দুঃসময়ে পাশে দাঁড়ালেও কিছু মানুষ সুসময়ে তাকে মনে রাখে না। যারা নিজের ভালোটা চায়, তারা অন্যের উপকার ভুলে যেতে পারে।এমন বাস্তবতা প্রায়শই আমাদের চোখে পড়ে। কিন্তু একটু ভাবুন, আপনি মানুষের মাঝে কৃতজ্ঞতা খুঁজছেন।কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই মানুষের কাছ থেকে আপনি কৃতজ্ঞতা খুঁজছেন কেন?

যেখানে কিছু কিছু মানুষ তার নিজের স্রষ্টার কাছেই ঠিকমতো কৃতজ্ঞ হয় না।যিনি স্রষ্টা তাকে জীবন দিয়েছেন, প্রতিনিয়ত তার জন্য বাতাস, আলো, পানি, আহার, আশ্রয় দিয়েছেন।তার প্রতিও সে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ হতে জানে না। তাহলে সে কীভাবে মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ হবে?

আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন—
"إِنَّ ٱلْإِنسَـٰنَ لِرَبِّهِۦ لَكَنُودٌ"
অর্থাৎ—"নিশ্চয়ই মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ।" (সূরা আল-আদিয়াত: ৬)

এই একটি বাক্যেই আমাদের অনেক প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে। আমরা প্রতিদিন অসংখ্য নেয়ামত পাই।জীবন, নিঃশ্বাস, ভালোবাসা, সুযোগ, সুস্থতা,এসব কেবল প্রাপ্য নয়, একেকটি মহান দান। অথচ আমরা এই দাতার প্রতি ধন্যবাদ জানাতে জানি না। আমাদের জিভে "আলহামদুলিল্লাহ" বা "ধন্যবাদ প্রভু" শব্দগুলো কদাচিতই উঠে আসে হৃদয় থেকে।আসলে কৃতজ্ঞতা শুধুই কোনো ধর্মীয় গুণ নয়, এটি মানবতার অন্যতম ভিত্তি। শুধু ইসলাম নয়, হিন্দুধর্মেও কৃতজ্ঞতা এক গুরুত্বপূর্ণ দর্শন। সেখানে বলা হয়েছে।জীবন মানেই ঋণে আবদ্ধ হওয়া। পিতা-মাতার ঋণ, গুরুর ঋণ, দেবতাদের ঋণ, প্রকৃতির ঋণ।এই সব ঋণ থেকেই জন্ম নেয় এক গভীর দায়বদ্ধতা। আর এই দায়বোধই মানুষকে কৃতজ্ঞ করে তোলে।

কিন্তু বর্তমান সমাজে দাঁড়িয়ে দেখা যায়।এই বোধ অনেকটাই মুছে গেছে। মানুষ শুধু চায়, কিন্তু দিতে চায় না। মুখে “ধন্যবাদ” বলাটাও যেন কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। অথচ কৃতজ্ঞতা এমন একটি গুণ, যা কাউকে দিলে তা কখনো কমে না। বরং যার হৃদয়ে কৃতজ্ঞতা আছে, তার মুখে থাকে সৌন্দর্য, আচরণে ভদ্রতা, জীবনে প্রশান্তি।আমরা আজ সম্পর্ক হারাচ্ছি। বাবা-মা, শিক্ষক, বন্ধু, প্রতিবেশী।কেউ যেন আর কারো উপকার মনে রাখছে না। কিন্তু যদি হৃদয়ে সামান্য কৃতজ্ঞতাও থাকত, তাহলে একটি “ধন্যবাদ” অনেক ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগিয়ে দিত।

সমাজে কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা নিঃশব্দে কাজ করে যান। কেউ রাস্তাঘাট পরিষ্কার করেন, কেউ গরিবদের বিনামূল্যে পড়ান, কেউ অসুস্থ মানুষের পাশে থাকেন, আবার কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রক্তদান করেন। তাঁরা প্রতিদিন কিছু না কিছু সমাজকে দান করছেন। কিন্তু এই সমাজ কি তাঁদের সেই কাজের প্রতি কৃতজ্ঞ?বেদনাদায়ক হলেও সত্য, সমাজ আজ তাঁদের শ্রদ্ধা নয়, সন্দেহ দিয়ে দেখছে। প্রশ্ন তোলে“সে বিনা স্বার্থে কাজ করছে কেন?”, “অবশ্যই এর পেছনে কোনো স্বার্থ আছে।” যেন ভালো কাজ করা একটি অপরাধে পরিণত হয়েছে। অথচ এক সমাজের ভিত গড়ে ওঠে ভালো কাজ আর সহযোগিতার ভিত্তিতে। যেখানে যারা এগিয়ে আসে, তাদের মূল্য দেওয়াই তো উচিত।

কিন্তু এই কৃতজ্ঞতার অভাবই ধীরে ধীরে সমাজকে ভাঙছে। মানুষ যখন দেখে, ভালো কাজ করেও সম্মান পায় না, বরং অপমান সহ্য করতে হয়, তখন নতুন কেউ আর সেই পথে হাঁটতে চায় না। তখন সমাজ হারায় তার প্রকৃত কর্মী, এবং ভরে ওঠে নির্লিপ্ত, আত্মকেন্দ্রিক মানুষের ভিড়ে। একসময় এই অভাব সমাজের মমতা, সৌহার্দ্য ও মূল্যবোধকে গ্রাস করে।সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হলো।এই কৃতজ্ঞতার অভাব শুধু মানুষের প্রতিই নয়, স্রষ্টার প্রতিও। মানুষ ভুলে যায় সে কতটা সীমিত, কতটা নির্ভরশীল। সে ভাবে, যা কিছু সে অর্জন করেছে, তা শুধু তার শ্রম আর বুদ্ধির ফল। তখন তার ভিতরে জন্ম নেয় অহংকার, অভিযোগ আর চিরন্তন এক অসন্তুষ্টি।তবু এখনো কিছু আশার আলো রয়েছে। এমন মানুষ এখনো আছেন, যারা নিঃস্বার্থভাবে, নিঃশব্দে সমাজের জন্য কাজ করে চলেছেন। তাঁরা কৃতিত্বের আশায় নয়, মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই এগিয়ে আসেন। এই মানুষগুলোর জন্যই এখনো সমাজে কিছুটা আলোর রেখা দেখা যায়। তারা কৃতজ্ঞতার যোগ্য।

যদি আমরা তাদের সম্মান করি, তাদের কাজকে স্বীকৃতি দিই, তাদের পাশে দাঁড়াই।তবে সমাজে আবারও ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, মমতা ও সৌহার্দ্য ফিরে আসবে।স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ হলে আমরা তার সৃষ্টির প্রতিও কৃতজ্ঞ হতে শিখি। এই শিক্ষাই সমাজকে পরিবারে রূপ দেয়। যেখানে কেউ উপকার করলে তাকে প্রশ্ন নয়, ধন্যবাদ জানানো হয়। যেখানে সম্পর্ক কৃতজ্ঞতার বন্ধনে গড়ে ওঠে ।সেখানে ভালোবাসা বাঁচে, মানুষ বাঁচে।

কৃতজ্ঞতা-শুধু একটি শব্দ নয়, এটি একটি জীবনের দর্শন।

এই ছিল আজকের ব্লগ । আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।কার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মন্তব্য করে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ।

আমার নাম মোছাঃ সামছুন্ নাহার সুইটি । আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক । আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি । আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছি । আমি গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই । এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি ।আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে নতুন নতুন ফটোগ্রাফি করতে ও ইউনিক রেসিপি এবং নতুন নতুন ইউনিক ডাই তৈরি করতে বেশ পছন্দ করি । আর স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।