প্রকৃতির কোলে সোনালী ফসল, কৃষকদের পরিশ্রমের পুরস্কার
আমি @riyadx2 বাংলাদেশ থেকে
শুক্রবার, ২৩ ই মে ২০২৫ ইং
বাংলার মাটিতে ঋতুর পালাবদল যেন এক বিশাল ক্যানভাসে আঁকা শিল্পকর্ম। কখনো নীল আকাশের নিচে সবুজ পাতায় সেজে ওঠে ধানের চারা, আবার কখনো তা রূপ নেয় সোনালী স্বপ্নে। শীতের মৌসুম পেরিয়ে যখন বসন্ত তার কোমল পরশে প্রকৃতিকে জাগিয়ে তোলে, তখন ধানক্ষেতগুলোও হয়ে ওঠে জীবন্ত সোনার সমুদ্র। মাঠের পর মাঠ জুড়ে দুলতে থাকা ধানের শীষ যেন প্রকৃতির ছন্দে গাওয়া কোনো অদৃশ্য সুর, যার প্রতিটি দোল কৃষকের অন্তরের গহীন থেকে উৎসারিত আনন্দের ধ্বনি। সেই আনন্দ শুধু দৃষ্টিতে নয়, হৃদয়ের গভীরেও ছড়িয়ে পড়ে, কারণ এই ধান কৃষকের মনের মতোই পরিপক্ব, তার স্বপ্নের মতোই উজ্জ্বল।
কিন্তু এই সোনালী দৃশ্যের পেছনে রয়েছে এক বিশাল পরিশ্রমের ইতিহাস, যা সহজে চোখে পড়ে না। প্রতিটি ধানের শীষ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর আগে বহু দিনের পরিশ্রম, অবিরাম শ্রম, আর অক্লান্ত ধৈর্য প্রয়োজন হয়। কৃষক দিনের আলো ফোটার আগেই ঘর ছেড়ে বের হন, কোমরে গামছা বেঁধে শুরু করেন মাটির সঙ্গে তার নিবিড় বন্ধন। সেচের কাজ, আগাছা পরিষ্কার, পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ, সময়মতো সার দেওয়া এই প্রতিটি ধাপ যেন একটি যুদ্ধ, যেখানে প্রতিদিন প্রকৃতির অনিশ্চয়তার সঙ্গে টিকে থাকার লড়াই চলে। কখনো খরার প্রকোপ, কখনো অতিবৃষ্টির ভয়, আবার কখনো রোগবালাইয়ের আক্রমণ সবকিছুর মাঝেই তিনি নিজের স্থিরতা ও নির্ভরতার পরিচয় দিয়ে যান।
ধান যখন পরিপূর্ণ হয় এবং কৃষক তখন পথ ধরে খালি পায়ে হাঁটে ধান কাটতে, তখন তার মুখে ঝিলমিল করে আনন্দের এক অনন্য প্রকাশ। এটি কেবল ফসল তোলার মুহূর্ত নয়, এটি যেন একটি পরিপূর্ণ আবেগের উৎসব। ফসল ঘরে ওঠার মানে শুধু খাদ্য মজুত নয় সন্তানদের স্কুলের ফি দেওয়া, মেয়ের জন্য একটি নতুন শাড়ি কেনা, কিংবা মায়ের জন্য ওষুধের জোগাড়। এই ছোট ছোট ইচ্ছাগুলো পূরণের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে কৃষকের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ধানগোলায় যখন শস্য জমে, তখন কৃষকের মনে হয় তার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে, তার জীবনের কঠোর পরিশ্রম একটি অর্থবহ পরিণতি পেয়েছে।
গ্রামের ধানক্ষেতের সৌন্দর্য শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, এটি এক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। বাংলার সাহিত্য, গান, চিত্রকলায় বারবার ফিরে আসে ধানক্ষেতের কথা, কারণ এটি শুধুমাত্র শস্যক্ষেত্র নয়, এটি জাতির শিকড়। এক একটি শীষে জমে থাকে শত শত বছরের ইতিহাস, সংগ্রাম আর সাহসিকতার নিদর্শন। অথচ এই নিঃশব্দ সৃষ্টিকর্তারা আমাদের কৃষকেরা প্রায়ই থেকে যান আড়ালে। তারা মিডিয়ার আলোচনার কেন্দ্রে আসেন না, আধুনিক শহুরে সমাজে তাদের পরিচয় থাকে অস্পষ্ট। কিন্তু তাদের অবদান ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। তাদের হাতেই গড়ে ওঠে জাতির খাদ্যভান্ডার, তাদের ঘামে পুষ্ট হয় দেশের অর্থনীতি।
এই সোনালী ধান আমাদের শেখায় প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, পরিশ্রমের প্রতি আস্থা, এবং জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আধুনিকতার দৌড়ে আমরা প্রায়ই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, কৃষির গুরুত্ব এবং মাটির সঙ্গে সম্পর্ক ভুলে যাই। কিন্তু ধানক্ষেতের এই সোনালী দৃশ্য আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় মানুষ যখন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করে, তখন সৃষ্টি হয় এক অনন্য সৌন্দর্য, এক চিরন্তন বন্ধন। ধান শুধু খাদ্য নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, পরিচয় ও আত্মার অংশ।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমরা যদি এই সোনালী ফসলকে কেবল অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে দেখি, তবে আমরা হারিয়ে ফেলবো তার অন্তর্নিহিত মানে। এটি আমাদের কাছে শুধু খাদ্য নয়, এটি শিখায় মানবতা, শিখায় পরিশ্রমের মূল্য।
Device | iPhone 11 |
---|---|
Camera | 11+11 MP |
County | Bangladesh |
Location | Rangpur, Bangladesh |
Vote@bangla.witness as witness
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Daily task
Link
https://x.com/Riyadx2P/status/1925940216533045377?t=JHNhGoRQ499Yi1wErWSlDA&s=19
https://x.com/Riyadx2P/status/1925940216533045377?t=FG7D8MB_eSpOrcjZWgEYDw&s=19
Screenshot
মাঠ জুড়ে যেন কৃষকের ফসল ফলে নেই ফলে আছে কৃষকের হাসি। সত্যি কী সুন্দর কী চমৎকার সুন্দর দৃশ্য। কৃষকের কষ্টের এই জিনিস দেখতেও ভালো লাগে। সুন্দর ছিল আপনার পোস্ট টা ভাই। ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।