প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরার প্রভাবে অতিষ্ঠ জনজীবন।

in আমার বাংলা ব্লগlast year (edited)



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ শুক্রবার। ২৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।


desert-279862_1280.jpg

Source



সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমরা প্রতি বছর বিভিন্ন প্রকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সংগ্রাম করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। আমাদের দেশের ছয়টি ঋতুর প্রায় প্রতিটি ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হওয়া মানেই জনমানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাওয়া। সুপ্রিয় বন্ধুগণ, বর্তমান সময়ে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরা'র সম্মুখীন হয়েছি। প্রত্যেক বছরই আমাদের দেশের গ্রীষ্ম ঋতুতে খরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব কিছুটা দেখা যায়। তবে এই বছর খরা প্রাকৃতিক দুর্যোগটি অতীতের সকল রেকর্ডই ব্রেক করে দিয়েছে। একই সাথে আমার ৩০ বছর বয়সে এই প্রথম খরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মারাত্মক প্রভাবের সম্মুখীন হয়েছি। আসলে খরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব যে এতো মারাত্মক হয়, সেটা এর আগে আমার জানা ছিল না।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরার প্রভাবে মানুষ সহ সকল পশু পাখির জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রত্যেকদিন অসহনীয় গরম এবং সূর্যের প্রখর তাপে ইতিমধ্যেই মাটির রস একেবারেই শুকিয়ে গেছে। ছোট-বড় অনেক গাছপালা বিশেষ করে যে সমস্ত গাছপালা গুলো উঁচু স্থানে রয়েছে সেই সমস্ত গাছপালা গুলো দিন দিন নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। খরার প্রভাবে এভাবে যদি গাছপালা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আমাদের আগামী দিনে আরও মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হবে। যাহোক বর্তমান সময়ে খরার প্রভাবে আমরা প্রতিদিন অসহ্যনীয় সূর্যের তাপ এবং প্রচন্ড গরম অনুভব করছি। প্রতিদিনের সূর্যের প্রখর তাপ এবং প্রচন্ড গরমের কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা চরম আকারে ব্যাহত হচ্ছে।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, প্রচন্ড এই তাপদহের মাঝে টিউবওয়েলের বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি আমাদের শরীরকে সতেজ রাখতে সহায়তা করছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের মেহেরপুর জেলার প্রায় অধিকাংশ টিউবওয়েল পানি শূন্য হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরার প্রভাবে মাটির নিচের পানির স্তর এতটাই নিচে নেমে গেছে যে, টিউবওয়েল চেপে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পাচ্ছি না। বৈদ্যুতিক মোটর ব্যবহার করে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে আমাদের এলাকায়। কিন্তু সেটাও অপর্যাপ্ত পরিমাণ। আর এমন যদি আগামী কয়েক দিন চলতে থাকে তাহলে আমাদের এলাকার অনেক মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়ে যাবে। আবার যে সমস্ত নলকূপ গুলো তুলনামূলক উঁচু স্থানে অবস্থিত সেই সমস্ত নলকূপ দিয়ে কোনভাবেই বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরার প্রভাবে যদি বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট তৈরি হয় তাহলে সেটা মোকাবেলা করা সত্যিই অসম্ভব হয়ে যাবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে আমাদের এলাকার মাঠের ফসলের উপর। আমার পুকুর পাড়ে লাউ, ঝিঙ্গা, শসা, করলা এবং বেগুনের গাছ লাগিয়েছিলাম। প্রচন্ড তাপদাহের কারণে সমস্ত গাছগুলো মনে হচ্ছে যেন পুড়ে গেছে। ঠিক এরকম ভাবে অনেক চাষির সবজি ফসল প্রচন্ড তাপদহের কারণে বিনষ্ট হয়ে গেছে। একই সাথে যে সমস্ত ধানের জমিগুলো তুলনামূলক উঁচু স্থানে অবস্থিত সেই সমস্ত ধানের ক্ষেতগুলো চিটা পড়ে যাচ্ছে। যেটা কৃষকদের জন্য অপূরনীয় একটি ক্ষতি। শুধু এখানেই শেষ নয়, আমার মতো যারা মাছের চাষ করে তাদের সকলের পুকুরে পানির চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে আমার সাতটি পুকুর রয়েছে। সাতটি পুকুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মাছ।

প্রচন্ড তাপদহের কারণে পুকুরের পানি অনায়াসেই শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকদিন দিনের বেলা কিংবা রাতের বেলায় এক একটি পুকুরে আমি বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে পানি সরবরাহ করে যাচ্ছি। তারপরেও আমার প্রায় প্রতিটি পুকুর থেকে প্রত্যেকদিন বেশ কয়েকটা করে মাছ মরে যাচ্ছে। যেখানে মাছগুলো বড় হওয়ার কথা, সেখানে মাছগুলো বর্তমান সময়ে টিকিয়ে বা বাঁচিয়ে রাখায় কঠিন হয়ে গেছে। আবার এমন পরিস্থিতিতে পুকুরে জাল নামিয়ে যদি বড় মাছগুলো ধরা যায় তাহলে বাকি ছোট মাছগুলো তাপদহের প্রভাবে এমনিতেই মরে যাবে। সব মিলিয়ে আমার মতো মাছ চাষিরাও বর্তমান সময়ে অত্যন্ত সংকট ও দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে। এমন অবস্থা যদি চলমান থাকে তাহলে খুব দ্রুত পুকুরের পানি শুকিয়ে যাবে এবং সকল মাছ চাষিরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। যেটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরার প্রভাবে আমাদের দেশের নিম্ন আয়ের মানুষেরা সব থেকে বেশি কষ্টের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে যারা দিন আনে দিন খায়-- এমন মানুষগুলো তাদের প্রতিদিনের উপার্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যার কারণে তাদের জীবনে অনাকাঙ্খিত দুর্ভোগ নেমে এসেছে। আবার আমাদের পরিবারের বা সমাজের ছোট শিশু এবং বয়স্ক যারা আছে, তারা খুব সহজে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। আর এরকম দুর্যোগের মাঝে রোগের সাথে সংগ্রাম করা আমাদের জন্য আরো বেশি কঠিন হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরার প্রভাবে আমাদের জনজীবন সম্পূর্ণরূপে টালমাটাল অবস্থা। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরার প্রভাব যদি আগামী দিনেও এরকম অব্যাহত থাকে তাহলে হয়তো খুব দ্রুত আমরা সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়বো। তাই আমি বিশ্বাস করি, বর্তমান সময়ের এই কঠিন প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে মহান সৃষ্টিকর্তায় আমাদেরকে হেফাজত করতে পারে। তাই আমাদের সকলের উচিত মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট ক্ষমা চাওয়া এবং এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফরিয়াদ করা।



আমার পরিচয়।

IMG_20220709_132030_108.jpg



আমার নাম মোহাঃ নাজিবুল ইসলাম (বিদ্যুৎ)। আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমি অতিশয় ক্ষুদ্র জ্ঞানের একজন মানুষ। আমি মেহেরপুর জেলার ছোট্ট একটি গ্রামে বসবাস করি। আমি ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে কাজ শুরু করার মধ্য দিয়ে আমার স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে যাত্রা শুরু হয়। আমার স্টিমিট আইডি নাম (#bidyut01). প্রথম প্রথম স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ কিছুই পারতাম না। কিন্তু আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সম্মানিত ফাউন্ডার, এডমিন এবং মডারেটরদের সার্বিক সহযোগিতায় খুব সহজেই স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ গুলো সম্পর্কে জানতে পারি ও শিখতে পারি। এরপর থেকে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কে আমার এলাকাতে আমি ব্যাপকভাবে প্রচার করি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে আমার এলাকার অনেকেই এখন আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সদস্য। যাহোক, এখন আমার মাতৃভাষায় লেখালেখি করতে আমার খুবই ভালো লাগে। যদিও আমার প্রধান পেশা শিক্ষকতা এবং পাশাপাশি মাছের চাষাবাদ করা। আমার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৮ জন। আমার পরিবারের প্রধান হলো আমার বাবা ও মা। আমার পছন্দের কাজ সমূহ হলো-ছবি অঙ্কন করা, যেকোনো জিনিসের অরিগ্যামি তৈরি করা, বিভিন্ন প্রকারের রেসিপি তৈরি করা, কবিতা লেখা, ভ্রমণ করা ও ফটোগ্রাফি করা। আর একটু সময় সুযোগ পেলেই পুরনো দিনের মুভি গুলো দেখতে আমি খুবই পছন্দ করি।

১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।



Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 last year 

সূর্যের তাপ দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে। আর গরম বেড়ে যাচ্ছে। জনজীবন অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই গরমে সবাই খুবই কষ্টে জীবন পার করছে। ভাইয়া আপনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো তুলে ধরেছেন। ভালো লাগলো পোস্ট পড়ে।

 last year 

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বিষয়টা আমি দেখেছি যে আমাদের মেহেরপুর জেলার ৭৫ পার্সেন্ট টিউবওয়েল এখন পানি শূন্য হয়ে গিয়েছে। এটা সত্যি আমাদের সকলের জন্য খারাপ একটা বিষয়। আর কিছুদিন যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে যাবে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে।

 last year 

প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। একদিকে যেমন জলচ্ছাস বন্যা ঘূর্ণিঝড় আবার খরা। বর্তমান সময়ে যে দুর্যোগ চলছে এটা হচ্ছে খরা প্রবণতা। গরমের তাপ অত্যাধিক বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই। তবে সত্যিই সময়টা মানুষের জনজীবন খুবই অস্বস্তিকর অবস্থায়। একটা বিষয় অবাক হলাম ৭৫% টিউবয়েলে এ পানি নেই, তার মানে মেহেরপুর জেলায় এখন বর্তমানে পানি শূন্যতে চলছে। তবে আশা করছি এই দুর্যোগ থেকে খুব শীঘ্রই আমরা পরিত্রাণ পাবো।

 last year 

প্রাকৃতিক দুর্যোগ নানা ভাবেই হয়ে থাকে।কখনো প্রবল বৃষ্টির মাধ্যমে বন্যা,ভূমিকম্প,জ্বলোচ্ছাস, খরা নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগই হয়ে থাকে।কিন্তু বর্তমানে খরা শুরু হয়েছে।প্রচন্ড তাপদাহে সাধারণ মানুষগুলো অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে।কোথাও এক ফোঁটা বৃষ্টি নেই।মানুষ এই গরমে নানা রকমের অসুখে ভুগছে।বিশেষ করে বাচ্চারা খুব বেশি কষ্ট পাচ্ছে।আমাদের সকলের উচিত মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা চাওয়া।আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিবেন।বৃষ্টি দিয়ে পৃথিবীতে শীতলতা দান করবেন,আমিন।

 last year 

বর্তমান যে দিনকাল চলছে এই মুহূর্তে আমাদের জনজীবনের দুর্যোগ বয়ে এসেছে। তবে এই মুহূর্তে আমাদের সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে সুস্থ থাকার জন্য। কারণ আশেপাশে অনেক মানুষ গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। একদিকে পানির অভাব দেখা দিয়েছে পাশাপাশি ফসলের ক্ষতির সৃষ্টি হয়েছে। সুন্দর একটি সচেতন মূলক পোস্ট শেয়ার করেছো দেখে ভালো লাগলো।

 last year 

শুধু মেহেরপুর না পুরো বাংলাদেশের অবস্থায় এইরকম ভাই। টিউবওয়েলে পানি নেই। বৈদ‍্যুতিক পাম্প বা মোটরই ভরসা এখন। পাশাপাশি মাঠে থাকা বিভিন্ন শাক সবজির গাছ শুকিয়ে গেছে যেমনটা বললেন আপনি। পাশাপাশি পুকুরের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে যেটা মাছ চাষের জন্য হুমকিস্বরুপ। সত্যি অবস্থা টা বেশ ভয়াবহ রুপ ধারণ করছে।

 last year 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া এই বছর খরা প্রাকৃতিক দুর্যোগটি অতীতের সকল রেকর্ডই ব্রেক করে দিয়েছে। আমি ছোট থেকে এতদিন বড় হয়েছি কিন্তু কোনদিন খরার সম্মুখীন হয়নি ।এই প্রথম খরার সম্মুখীন হলাম। আসলে চারদিক ধুধু করছে প্রায় মানুষের বাড়িতে পানি নেই। ভাইয়া মূল্যবান সময় পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।