যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি। এটি একটি দীর্ঘদিনের পুরাতন প্রথা হলেও আধুনিক যুগেও এর প্রভাব মারাত্মকভাবে বিরাজমান। সমাজ যতই আধুনিক হোক না কেন, এই অভিশপ্ত প্রথা এখনো নারীদের জীবনের অন্যতম বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিয়ের সময় কনে পক্ষ থেকে পাত্রপক্ষকে দেওয়া টাকাপয়সা, গহনা, জমি, গাড়ি কিংবা অন্যান্য সম্পদের দাবিকেই সাধারণভাবে যৌতুক বলা হয়।

যৌতুক কেবল অর্থনৈতিক লেনদেন নয়; এটি নারীর প্রতি একটি অন্যায়, নিপীড়ন এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘনও বটে।যৌতুকের প্রথা ভারতীয় উপমহাদেশে বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। প্রাচীনকালে এটি ছিল এক ধরনের 'বিবাহ অনুদান'—কনের বাবা-মা কন্যার ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষার জন্য কিছু সম্পদ দিয়ে দিতেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এটি রূপ নিয়েছে এক ভয়াবহ সামাজিক চাপে। এখন এটি বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক পরিবারের জন্য।

বর্তমান সময়ে যৌতুকের ধরন আরও জটিল ও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। অনেক সময় কনে পক্ষের দেওয়া যৌতুক পাত্রপক্ষের প্রত্যাশা পূরণ না করলে কনেকে মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের হত্যা বা আত্মহত্যার কারণও হয়ে দাঁড়ায় যৌতুক।বিয়ের পরে যৌতুকের জন্য স্ত্রীর উপর মানসিক চাপ প্রয়োগ।শারীরিক নির্যাতন বা হুমকি।স্ত্রীর পরিবারের থেকে বারবার টাকা বা সম্পদ চাওয়া।

যৌতুক না পেলে তালাক দেওয়া বা দ্বিতীয় বিয়ে করা।পণের অভাবে বিয়ে ভেঙে দেওয়া।যৌতুক একটি বড় কারণ যার জন্য নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। শুধু শারীরিক নির্যাতন নয়, মানসিক নিপীড়নেও অনেক মেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।অনেক পরিবার কন্যার বিয়ের জন্য বড় অঙ্কের যৌতুক দিতে গিয়ে ঋণে ডুবে যায়। এতে দরিদ্র পরিবারের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে।

মেয়েদের পড়ালেখা বা কর্মজীবনে প্রবেশকে অনেক পরিবার যৌতুকের কারণে গুরুত্বহীন মনে করে। অনেকে শুধু 'বিয়ে দিতে হবে' ভেবে অল্প বয়সেই মেয়েকে পড়ালেখা থেকে সরিয়ে দেয়।যৌতুক প্রথা নারীকে একটি পণ্যরূপে উপস্থাপন করে, যা তার আত্মমর্যাদায় আঘাত হানে।যৌতুকের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। স্কুল, কলেজ, গণমাধ্যমে এ বিষয়ে শিক্ষাদান জরুরি।বাংলাদেশে "যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০" অনুসারে যৌতুক চাওয়া, দেওয়া ও নেওয়া সবই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।নারীশিক্ষা ও নারীর আত্মনির্ভরশীলতা যৌতুকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। নারী যদি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়, তবে সে নিজেকে আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।যৌতুকের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিবাহে যৌতুকবিহীন উদ্যোগ যেমন "সহজ বিয়ে" বা "পণের বিপক্ষে শপথ" জাতীয় কার্যক্রম আরও বিস্তার লাভ করতে হবে।

যৌতুক একটি ভয়ঙ্কর সামাজিক অভিশাপ, যা শুধুমাত্র নারীর নয়, পুরো সমাজের উন্নয়নের পথে বাধা। এটি প্রতিরোধে আইন, শিক্ষা, সচেতনতা এবং সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। একদিন সবাই যদি একযোগে ‘না’ বলে এই প্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তবে সেই সমাজে সত্যিকার অর্থেই নারী-পুরুষ সমান মর্যাদা পাবে।

আমার বাংলা ব্লগের ভাইয়া ও আপুদের সবাইকে ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তী কোন ব্লগে।

আল্লাহ্ হাফেজ

ক্যামেরা পরিচিতি

Device	Motorola g34 5g
Camera	52 MP
County	Bangladesh
Location	Rangpur, Bangladesh

আমার নাম মোঃ আবু বকর (সিদ্দিক) ।আমি একজন বাংলাদেশের নাগরিক।আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি এবং আমার মাতৃভাষা বাংলা।আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর কারমাইকেল কলেজ এর(IHC)ডিপার্টমেন্ট থেকে অনার্স করতেছি।আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করি। সবথেকে বড় পরিচয় আমি "আমার বাংলা ব্লগ"কমিউনিটির একজন সদস্য।আমি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে এই প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত হই। এই প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি।বিশেষ করে নতুন নতুন জায়গা ভ্রমণ করতে ভীষণ ভালো লাগে আমার।পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। আমার সব থেকে বড় ইচ্ছা আমি একজন উদ্যোক্তা হব।আমি মনে করি ধৈর্য,পরিশ্রম, বিশ্বস্ততা এগুলো সফল হতে সম্মুখ ভূমিকা পালন করে। ধন্যবাদ।

Vote@bangla.witness as witness

Or

Set@rme as your proxy

আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য সবাইকে অসংখ্য "ধন্যবাদ।