মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা এক রাত
আসসালামুআলাইকুম/আদাব🤝
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থান করছি ।
আমার নানা অনেক দিন ধরেই অসুস্থ। শরীরে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই কয়েক দিন আগে ঠিক হলো তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। নানার পাশে ছিলেন নানী খালামণি আরেক মামী যিনি তখন নয় মাসের গর্ভবতী। তাঁর সঙ্গে ছিল দুই ছোট্ট সন্তান। সেদিন সবাই একসাথে একটি সিএনজি নিয়ে হাসপাতালে যায়। পথটা ছিল লম্বা আর কষ্টকর কিন্তু সবাই অধৈর্য ধরে গেল কারণ নানাকে ডাক্তার দেখানো খুব জরুরি ছিল।
ডাক্তারের কাছে দেখানো শেষ হতে হতে রাত নেমে এলো। দিনের শেষে সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। আমি তখন মাঝামাঝি পরীক্ষার মধ্যে আছি তাই মনটা বারবার বই আর পড়াশোনার দিকে টানছিল। বোনেরাও থাকতে চাইল না। সবার ইচ্ছা ছিল যেভাবেই হোক রাতেই বাড়ি ফেরা দরকার। তাই রাত আটটার দিকে সবাই সিএনজিতে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
রাতের অন্ধকারে পথে চলতে চলতে হয়তো কেউই কল্পনা করতে পারেনি কী ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে সামনে। চারদিকে তখন নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে। দোকানপাট বেশিরভাগ বন্ধ। সড়কের বাতিগুলোও ম্লান আলো দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই ঘরে পৌঁছে যাবে। কিন্তু সেই ভরসার মুহূর্তেই ঘটে গেল অঘটন।
প্রায় রাত নটার দিকে হঠাৎ আমার মায়ের কাছে ফোন এলো। মায়ের কণ্ঠস্বর কেঁপে উঠলো ফোন ধরতেই। অপর প্রান্ত থেকে যে সংবাদ শোনা গেল তাতে আমাদের মাথায় যেন বাজ পড়লো।
সেই রাস্তায় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে। আরও দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো সিএনজির লাইটও তখন নষ্ট হয়ে যায়। চালক শর্ট রাস্তা দিয়ে ফেরার চেষ্টা করছিল। অথচ সেই রাস্তায় তখন ব্রিজের কাজ চলছিল। অন্ধকারে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি সোজা ব্রিজ থেকে নিচের খাদে গিয়ে পড়ে।
আমার মা খবর শুনে যেন পাগল হয়ে গেলেন। কান্নায় ভেঙে পড়লেন তবুও সাহস সঞ্চয় করে ছুটে গেলেন ঘটনাস্থলে। চারদিকে তখন আতঙ্কের ছাপ। মানুষের ভিড় জমে গেছে। কেউ চিৎকার করছে কেউ দৌড়াচ্ছে কেউ বলছে হয়তো কেউ বেঁচে নেই। আমার মায়ের চোখে তখন শুধু ভয় আর অশ্রু। মনে হচ্ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। খাদে পড়ে থাকা ভাঙা গাড়ি যেন মৃত্যুর খবর দিচ্ছিল।
কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো আল্লাহ মহান। তিনি অশেষ রহমতে সবাইকে প্রাণে বাঁচিয়ে দিলেন। যদিও সবাই গুরুতর আহত হয়েছে। কারো মাথায় আঘাত লেগেছে কারো শরীরে রক্তক্ষরণ হয়েছে এমনকি একজনের হাত পর্যন্ত ভেঙে গেছে। গর্ভবতী মামীও প্রচণ্ড ধাক্কা খেলেন তবুও তিনি আর তাঁর সন্তান দুজনেই বেঁচে গেলেন। এটি একেবারেই অলৌকিক ঘটনা ছাড়া আর কিছু নয়।
সেই রাতে আমাদের কারো চোখে ঘুম আসেনি। আমি বারবার মনে মনে ভাবছিলাম যদি আল্লাহর দয়া না থাকত তবে আজ আমি হয়তো আমার প্রিয়জনদের কাউকেই কাছে পেতাম না। মৃত্যু আমাদের এত কাছে এসেও আবার ফিরে গেল। সারারাত আমার চোখ থেকে অশ্রু থামছিল না। বুকের ভেতর শুধু ধকধক করছিল। মনে হচ্ছিল এখনও সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
পরের দিন সকালে চারপাশে কান্না আর কৃতজ্ঞতার মিশ্র অনুভূতি ছড়িয়ে পড়লো। সবাই বলছিল এটি আল্লাহর এক অদ্ভুত রহমত ছাড়া আর কিছু নয়। এত বড় দুর্ঘটনার পরও প্রাণে বেঁচে যাওয়া সম্ভব নয় যদি না আল্লাহ নিজে তাঁর বান্দাদের রক্ষা করেন।
এই অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়ে দিল জীবন আর মৃত্যু মানুষের হাতে নয়। মানুষ যতই পরিকল্পনা করুক শেষ পর্যন্ত সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাতেই ঘটে। তিনি চাইলে মৃত্যুর মুখ থেকেও ফিরিয়ে আনতে পারেন আর চাইলে সুস্থ শরীর থেকেও নিয়ে যেতে পারেন। আমরা কেবল তাঁর হাতে অসহায়।
আজও যখন সেই রাতের কথা মনে পড়ে তখন বুকটা কেঁপে ওঠে। চোখে ভেসে ওঠে সিএনজি খাদে পড়ার দৃশ্য। ভেসে ওঠে মায়ের কান্না আতঙ্কিত মানুষের চিৎকার আর আমাদের ভয়। মনে হয় সেদিন যদি আল্লাহর রহমত না থাকত তবে আমাদের পরিবার হয়তো চিরদিনের জন্য ভেঙে যেত।
সেই ভয়ঙ্কর রাতের শিক্ষা আজও আমার মনে গভীরভাবে গেঁথে আছে। জীবন আসলে খুব ভঙ্গুর। আমরা প্রায়ই ভুলে যাই যে আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। তিনি চাইলে রাতের অন্ধকারে আলো জ্বালাতে পারেন আবার চাইলে দিনের আলোতেও অন্ধকার নামিয়ে দিতে পারেন।
এই ঘটনার পর আমাদের পরিবার আরও বেশি কৃতজ্ঞ হয়েছে। প্রতিটি নামাজে প্রতিটি দোয়ায় আমরা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। তিনি না চাইলে কেউই আজ বেঁচে থাকত না। এখন প্রতিদিন নতুন করে বুঝি পরিবার আসলেই কত বড় আশীর্বাদ আর জীবন কতটা মূল্যবান।
এই অভিজ্ঞতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে বিপদের মুহূর্তে মানুষ আসলেই কতটা অসহায়। তখন টাকা গাড়ি নাম যশ কিছুই কাজে আসে না। কেবল আল্লাহর রহমত আর দয়া মানুষের জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়ায়।
আজও আমি সেই রাতের কথা লিখতে গিয়ে কেঁদে ফেলি। মনে হয় আবার যেন সেই ভয়ঙ্কর মুহূর্তে ফিরে গেছি। তবে একই সঙ্গে মনে কৃতজ্ঞতা জাগে যে আল্লাহ আমাদের এত বড় পরীক্ষা থেকে বাঁচিয়ে দিলেন। এই অভিজ্ঞতা একদিন হয়তো ভুলে যাবো না কখনো।
এতক্ষণ আমার পোষ্ট মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আজ এখানেই শেষ করছি, অন্য কোনদিন নতুন কিছু নিয়ে আপনাদের সামনে উন্মোচিত হব। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
ধন্যবাদ সকলকে✨💖
ফোনের বিবরণ
ক্যামেরা | Redmi note 9 |
---|---|
ক্যামেরা.মডেল | note9 |
কভার ফটো | পিক্সাবে। |
অবস্থান | সিরাজগঞ্জ- বাংলাদেশ। |
আমার পরিচয়
আমি শেলি। আমি বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুরে খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ে সি এস ই তে অধ্যায়নরত আছি। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে ভালোবাসি। নতুন কিছু শিখতে এবং জানতে ভালোলাগে।ঘুরতে আর খেতে খুব ভালোবাসি।অবসর সময় পেলেই ছবি আঁকি। এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে। 🌼💖🌼 |
---|
🎉 Congratulations!
Your post has been upvoted by the SteemX Team! 🚀
SteemX is a modern, user-friendly and powerful platform built for the Steem community.
🔗 Visit us: www.steemx.org
✅ Support our work — Vote for our witness: bountyking5
আপনার পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আসলে আল্লাহ মহান। তিনি যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন। সত্যি বিপদে না পড়লে জীবন আসলে কি বুঝা মুশকিল। ধন্যবাদ আপনাকে।
https://x.com/JannatulF57996/status/1964387892471746939
https://x.com/JannatulF57996/status/1964388915340513335