মানুষ একটি সামাজিক প্রাণী। একা থাকার জন্য নয়, বরং অন্যদের সঙ্গে মিশে থাকার জন্যই যেন তার জন্ম। কিন্তু বর্তমান যুগে আমরা ক্রমশ একাকীত্বের এক অদৃশ্য দেয়ালের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়ছি। প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি আমাদের যোগাযোগ সহজ করলেও, হৃদয়ের সংযোগ যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। এই একাকীত্ব শুধু শারীরিক নয়, মানসিকও। এর সঙ্গে যখন যুক্ত হয় টেনশন বা মানসিক চাপ, তখন তা হয়ে ওঠে বিষের মতো ধীরে ধীরে ক্ষয় করে দেয় আমাদের ভেতরটা।

একাকীত্বে মানুষ নিজেকে মূল্যহীন মনে করতে শুরু করে। চারপাশে হাজারো মানুষ থাকলেও যখন কেউ নিজের কথা শোনে না, তখন মনে হয় কেউ নেই। এই অনুভব থেকে জন্ম নেয় হতাশা, নিজের প্রতি আস্থাহীনতা এবং ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসের পতন। সেই সঙ্গে জীবনের ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়েও যখন টেনশন ঘিরে ধরে, তখন তা যেন চেপে বসে বুকের ওপর পাথরের মতো।টেনশন কখনো চাকরির অনিশ্চয়তা, কখনো পারিবারিক অশান্তি, আবার কখনো ভবিষ্যতের চিন্তা থেকে আসে। টেনশনের প্রভাবে ঘুম কমে যায়, মন খারাপ থাকে, সিদ্ধান্ত নিতে কষ্ট হয়, এমনকি শরীরেও নানান রোগ বাসা বাঁধে। আর যদি এর সঙ্গে একাকীত্ব মিলে যায়, তাহলে তা যেন এক নীরব ঘাতকের মতো কাজ করে।

এই দুই অনুভূতির কারণে অনেক মানুষ জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। প্রিয় কাজ, প্রিয় মানুষ, এমনকি নিজের অস্তিত্বও তখন প্রশ্নের মুখে পড়ে। মানুষ তখন নিজের মধ্যেই হারিয়ে যেতে থাকে, এবং কেউ না থাকলে সেই হারিয়ে যাওয়া আর ফেরে না।এই কারণে, সময় থাকতেই আমাদের উচিত একাকীত্ব ও টেনশন থেকে নিজেকে বের করে আনা। কাউকে মন খুলে বলার সুযোগ তৈরি করা, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম করা এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলিং নেওয়া খুবই দরকারি। কারণ একাকীত্ব আর টেনশন যদি মাথায় জায়গা করে নেয়, তবে তা শুধু মনের ক্ষয় নয়, শরীর ও জীবনের সর্বনাশ ডেকে আনে।

মানুষের জীবন খুবই মূল্যবান। একাকীত্ব ও টেনশন তা কেড়ে নেওয়ার আগেই আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। ভালোবাসা, সাহচর্য আর সহানুভূতির মাধ্যমেই আমরা এই বিষাক্ত অনুভূতিকে প্রতিরোধ করতে পারি।তাহলে আমরা সুন্দর একটি জীবন পাবো এবং শান্তিতে বসবাস করতে পারব এই সুন্দর পৃথিবীর মাঝে।