গরমে দুরবস্থা।
কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
ছোটবেলায় আমার মনে পড়ে না গরমের কারণে এতটাও দুরবস্থা আমার কখনো হয়েছিল কিনা। মানুষের সানস্ট্রোক হওয়ার ঘটনা এবং গরমে শরীর খারাপ হওয়ার ঘটনা আগে অনেক কম শোনা যেত। তবে বর্তমান সময়ে গরমের যে অত্যাচার বেড়েছে সেটা আর সহ্য করার মতো নয়। ফ্যানের বাতাস যেন এত গরম যে মনে হচ্ছে গরমে ছ্যাকা দিচ্ছে। ঘরের মধ্যে থাকলে মনে হচ্ছে মাইক্রোওভেনের মধ্যে ঢুকে আছি আর চারিদিক থেকে গরম তাপ দিচ্ছে। ঘরের বাইরে থাকলে মনে হচ্ছে লু বয়ে চলেছে। গা পুরো জ্বলে যাচ্ছে। সকালবলা কোনরকমে হালকা পাতলা কিছু সকালের খাবার খেতে পারলেও দুপুরবেলা যেন খিদে টাই পায় না। কারণ জল খেতে খেতে পেট অনেক বেশি ভরে যাচ্ছে। এবং জল খেয়ে এত কষ্ট হচ্ছে যে পেটে আর বাকি এক ফোটা জায়গাও থাকছে না দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। এত জল খাওয়া সত্ত্বেও মনে হচ্ছে গলা বুক শুকিয়ে যাচ্ছে আরো জল খেতে পারলে ভালো হয়। সকালে রান্না দুপুর পর্যন্ত ভালো থাকছে না আবার দুপুরের রান্না রাত পর্যন্ত রাখলে তা আর খাওয়ার যোগ্য থাকছে না। গরমে শুধু মানুষ নয় ভাত ঘেমে গলে জল হয়ে যাচ্ছে।
ভরদুপুরে দু'ঘণ্টার মধ্যে চার লিটার জল খাওয়া সত্ত্বেও বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না, কারণ জল সব ঘামের মাধ্যমেই বেরিয়ে যাচ্ছে। গরম আসলে আমাদের ওজন কমানোর একটি উত্তম সময়। কারণ এই সময় আমাদের রিচ কোন খাবার খাওয়ার রুচি একদম থাকে না বরঞ্চ জল খেয়েই পুরো দিনটা কেটে যায়। তাই খুব সহজেই অনেক বেশি পরিমাণে ওজন কমানো সম্ভব হয়ে যায়। যেসব মানুষ দালান বাড়িতে থাকে তাদের তো তাও একটু শান্তি আছে কিন্তু যারা টিনের বাড়িতে বা টিনের ঘরে থাকে তাদের তো এই গরমের দিনে অবস্থা পুরাই খারাপ হয়ে যায়। দুপুরবেলা মনে হয় তো এরা অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে এবং বিকালের দিকে আস্তে আস্তে জীবিত হওয়া শুরু করে। আর বর্তমানে দুপুরবেলা ট্যাংকির জল ব্যবহার করা তো অনেক বেশি কষ্টকর একটি বিষয়। ফুটন্ত গরম জলের থেকেও গরম হয় বর্তমানে দুপুরের টাংকির জল। সন্ধ্যা হওয়ার আগে পর্যন্ত ট্যাংকির জল আগুনের মত গরম থাকে। বাথরুমে গিয়ে জল ব্যবহার করা, স্নান করা, হাতমুখ ধোঁয়া বর্তমানে দুপুরবেলা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। কারণ যে কোনো সময়ে গরম জলে মুখ ঝলসে যেতে পারে।
এই গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে অথবা একটু সুস্থ থাকতে গেলে সকালে একবার স্নান করে নিতে হবে এবং সারাদিন বাদে রাতে অথবা সন্ধ্যার পরে স্নান করতে হবে, তাহলেই শরীরটা একটু সুস্থ বা ঠান্ডা রাখা সম্ভব হতে পারে। মসলাদার খাওয়া-দাওয়া বর্তমান সময়ে একদমই সহ্য করা যাচ্ছে না। বিনা মসলায় পাতলা ঝোল, ডাল এবং টক জাতীয় খাবারই বর্তমান গরমের সময়ে একমাত্র স্বস্তির খাবার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাদিনটা গরমে হাঁসফাঁস করতে করতেই দিন চলে যাচ্ছে। দুপুরবেলা একটুও কাজকর্ম করা যাচ্ছে না, একটু নড়ে বসলেই যেন মনে হচ্ছে গরম বেশি ধরে নিচ্ছে। বর্তমানে এই গরমের মধ্যে যেসব ঘরে এসি লাগানো হয়েছে তাদের মনে হয় একটু শান্তির জীবন। তবে এসি ঘরের মধ্যে থাকলে তারপর যখন কোন প্রয়োজনে বা কোন কাজের কারণে ঘর থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন হয় তখনই মনে হয় গরমের একটা তীব্র হাওয়া যেন অ্যাটাক করছে শরীরের মধ্যে। এসি ঘর থেকে বেরোনোর সাথে সাথে এই তীব্র জ্বালা যন্ত্রনা শুরু হয়ে যায় শরীরের মধ্যে। ঠান্ডা শরীর হঠাৎ করেই গরমের আক্রমণে পড়ে অসুস্থতার স্বীকার হয়। ঠান্ডা গরমে বিভিন্নভাবে মাথা যন্ত্রণা, শরীর খারাপ, ঠান্ডা লাগার মত অসুবিধায় পড়তে হয়।
বর্তমানে এমন হয়েছে সকালের খাবারটা কোনরকমে সকালে খাওয়া হলেও দুপুরের খাওয়াটা একবারে গিয়ে রাতের সাথে যুক্ত হয়েছে। কারণ দুপুরে জল খেয়ে দুপুরে খাবারটা সম্পন্ন হয়ে যায়। এবং সারাদিন এর কিছু কাজ সকালের মধ্যে করা হয় এবং বাকি কাজগুলো রোদ পড়ে গেলে বিকাল থেকে কাজ করা শুরু করতে হয়। সব থেকে কষ্টের জীবন তো তাদের যারা এই গরমে রোদের মধ্যে বাইরে গিয়ে চাকরি করছে, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। এই সব মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে অনেকেরই সান স্ট্রোক হয়ে যায়। এবং শরীরেরও বিভিন্ন ধরনের প্রবলেম ঘামাচি, ঘাঁপাচরা, মাথা ঘুরে যাওয়ার মত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা যায়। বর্তমানে এইসব সমস্যা থেকে বাঁচার একটি মাত্রই উপায় রয়েছে সেটি হল প্রচুর পরিমাণে লেবু জল ও স্যালাইন জল খেতে হবে, শরীরকে হাইড্রেট রাখতে হবে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে থাকার চেষ্টা করতে হবে, যথাসম্ভব শরীর ঢাকা পোশাক পড়তে হবে, এবং সর্বদাই চেষ্টা করতে হবে যেন সূর্যের থেকে একটু আড়ালে থাকা যায়। তবেই আমরা এই গরমে একটু সুস্থ থাকতে পারবো। আমাদের সব সময় সচেতন থাকতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যে আমাদের শরীরে কোন রকমের অসুবিধা হচ্ছে কিনা। শরীরের কোন সমস্যা হলেই আমাদের সাথে সাথে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।
গরমে স্বস্তি পেতে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা, হালকা সুতি কাপড় পরা এবং বেশি করে পানি পান করা খুবই কার্যকর।গরম কমাতে বাড়ির আশেপাশে বেশি করে গাছ লাগানো উচিত। গাছ শুধু ছায়াই দেয় না, বাতাসও ঠান্ডা করে। ছাদে বা বারান্দায় গাছের টব রাখলে ঘরও ঠান্ডা থাকবে।