অল্প বয়সে বিয়ে।

in আমার বাংলা ব্লগ4 days ago


কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


17501413766645428745913268270497.jpg


সোর্স



আগেকার যুগে এমন একটা সময় ছিল যে সময়ে ছোট ছোট বাচ্চা মেয়েদের যাদের কোনো রকমে ১৩ বছর উত্তীর্ণ হতো কি হতো না সেই বয়সেই বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিত। একটি ১৩ বছর বয়সী মেয়ের সংসার কি জিনিস সেটা বোঝার তখন ক্ষমতাই তৈরি হতো হয় না। তাও বাবা-মা সেই বয়সে বিয়ে দিয়ে দিত কারণ তখনকার কালচার ছিল এমন যে ১৩ বছর বয়সী মেয়েরাই বিবাহ উপযুক্ত হয়ে যেত। কিন্তু আসলে এমনটা কখনোই নয়। একটি তেরো বছর বয়সী মেয়ে তাদের নিজস্ব জীবন সম্পর্কে চাহিদা জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে বুঝে উঠতে পারে না তাহলে সে বিবাহ নামক এমন জটিল জিনিসকে কি করে বুঝবে। তবে তখনকার মানুষের ১৩ বছর বয়স থেকে শুরু হতো বিবাহ দেওয়া। আর ১৮-২০ বছর বয়স হয়ে গেলে তো মেয়েদের যেন বয়স্কদের খাতায় নাম দিয়ে দেওয়া হতো। মূলত তখনকার কালচার অনুযায়ী মনে হয় এই "কুড়িতে বুড়ি" কথাটি প্রচলিত হয়েছে। আসলে কখনোই কোন মেয়ে কুড়িতে বুড়ি হয় না। বরং কুড়ি বছর পর থেকেই একটি মেয়ের আসল সংসার এবং পৃথিবীর জ্ঞান হতে শুরু করে।


তবে আগের মানুষের মধ্যে শিক্ষার অভাব থাকার জন্য তারা এসব কথা মোটেও বুঝতো না যার ফলে বাল্য বয়সেই সন্তানের সেটা ছেলে হোক বা মেয়ে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো। তবে দিন যত গেছে মানুষ পড়াশোনা করে শিক্ষিত হয়েছে এবং ধীরে ধীরে সেই কম বয়সে বিয়ে দেওয়া প্রথম বন্ধ হয়েছে বা অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে মেয়েদের একটু বয়স হলেই বিয়ে দিয়েছে তার মা বাবা। ধীরে ধীরে ছেলেমেয়েরাও শিক্ষিত হয়েছে এবং বুঝেছে যে জীবনের আসল উদ্দেশ্যটা কি এবং বিয়ে করার সঠিক বয়স কোনটি। অল্প বয়সে বিয়ের অনেক খারাপ দিক আছে যা আগেকার মানুষ না বুঝলেও বর্তমানে শিক্ষিত মানুষেরা খুব ভালোভাবেই সেটা বোঝে বা জানে। সেই জন্য আইনত দিক থেকেও আগে মেয়েদের ১৮ বছর বয়সে বিবাহ করার পারমিশন থাকলেও বর্তমানে ২১ বছর করে দেওয়া হয়েছে এবং ছেলেদের ২১ বছর পরেই বিবাহের আইনত পারমিশন দেওয়া আছে। তার আগে যদি কোনভাবে কোন ছেলে বা মেয়ে বিবাহ সম্পন্ন করে সেটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি ধরা হবে। আর আইন অনুযায়ী বিবাহের এই বয়েস একদমই ঠিক বলে ধরা হয়। কারণ এই বয়সে বিয়ে সম্পর্কে এবং জীবনসঙ্গী সম্পর্কে আমাদের যথেষ্ট ধারণা এবং জ্ঞান হয়ে যায়।


তবে আজকালকার সমাজে দেখা যাচ্ছে একদিকে যেমন শিক্ষিত কিছু মানুষ বিবাহ করার জন্য অনেক বেশি ভাবনা চিন্তা করছে। অন্যদিকে কিছু ব্যক্তি আছে যারা আবার কম বয়সেই বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়া শুরু করেছে। আসলে শিক্ষিত ব্যক্তিরা সবসময় তাদের জীবন একটি সুন্দর পরিকল্পনার মাধ্যমে চালনা করে। পড়াশোনা শেষ করে অবশ্যই মনে করে নিজেকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হবে, এবং এই চিন্তার জন্য তারা সব সময় চেষ্টা করে নিজের একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার। এবং তারপরেই বিবাহের চিন্তা মাথায় আনে। কিন্তু অন্যদিকে দেখা যায় কিছু ছেলে বা মেয়ের অল্প বয়সেই পড়াশোনা না করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। তাদের সাথে কথা বললে এইটুকু বোঝা যায় যে তাদের সংসার সম্পর্কে তেমন কোন ধারনা নেই। ভালোবাসা এবং মোহে পড়ে তারা এমন কাজটি করে বসে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পরবর্তীতে এইসব বিবাহের কোন ভবিষ্যৎ থাকে না। কিছুদিন বা কিছু বছর পরেই এইসব বিবাহের বিচ্ছেদ ঘটে। কারণ যথেষ্ট পড়াশোনা না করলে এবং আর্থিক স্বাবলম্বী না হলে ভালোবাসা কখনোই টেকে না। সংসার করতে গেলে বা জীবনযাপন করতে গেলে অবশ্যই আমাদের আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়া দরকার। তাই আমাদের যথেষ্ট ভালোভাবে নিজের জীবনকে পরিকল্পনা করা উচিত।


কিন্তু বর্তমান সময়ে এত বেশি শিক্ষার অভাব ঘটছে যে চারিদিকে দেখা যাচ্ছে জীবনে এইসব ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলছে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা। আর দেখা যায় বর্তমান সমাজের অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েদের কখনোই তাদের বাবা-মা বিবাহ দেয় না। তারা নিজেরাই আবেগে পড়ে নিজেদের জীবন নষ্ট করে ফেলছে এই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে। বর্তমানে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিজের জীবনে যে কতটা ক্ষতি আনছে সেটা তারা নিজেও বুঝতে পারছে না। চারিদিকে দেখা যাচ্ছে শিক্ষার অভাবে বিভিন্ন অঘটন ঘটিয়ে ফেলছে এই অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা। বিবাহ একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আমাদের জীবনের জন্য। আর এই সিদ্ধান্তে যদি আমরা ভুল করে ফেলি তাহলে অবশ্যই আমাদের জীবনে এই ভুলের মাশুল প্রতিনিয়ত দিতে থাকতে হবে। তাই অল্প বয়সে অবুঝের মত বিবাহ করা থেকে আমাদের অবশ্যই দূরে থাকতে হবে এবং অপরকেও দূরে থাকতে সাহায্য করতে হবে। এবং জীবনের আসল মানে বুঝতে হবে আর সবার আগে বুঝতে হবে আমাদের জীবনের প্রতি চাহিদা এবং লক্ষ্য। জীবনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সেই বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞান অর্জন করে তারপরে প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত নিলে তবেই সেই সিদ্ধান্তগুলো হবে সঠিক। আর জীবনের এই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সর্বদা সাহায্য করতে পারে আমাদের শিক্ষা।


আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।