পৃথিবী থেকে জীবজন্তুর বিলুপ্তি ঘটছে।
কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
আমাদের পৃথিবীতে এক সময় দেখা যেত বহু ধরনের পশু পাখি। যেকোনো জঙ্গলের পাশ দিয়ে হাঁটতে গেলেই বন্য জীবজন্তুর ভয় লেগে থাকতো এবং তার সাথে একটা ভালো লাগাও কাজ করতো কারণ প্রচুর পরিমাণে পাখির ডাক শোনা যেত। বর্তমানে জঙ্গল বলতে গেলে নেই, আর গাছপালা খুব একটা কেউ লাগায় না। বরঞ্চ গাছপালা কেটে গড়ে উঠছে বড় বড় বাড়ি এবং গ্রাম গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল শহরে। আসলে শহরের গাছপালা বন জঙ্গল বিহীন পরিবেশে কোন পাখি থাকতে পারে না তাই বর্তমান শহরাঞ্চলে কোন পাখি দেখতে পাওয়া যায় না আর কোন পশু অর্থাৎ বাঘ, হাতি, শিয়াল, ভাল্লুক, গন্ডার, কচ্ছপ, ময়ূর, কুকুর, বিড়াল, ছাগল ইত্যাদি জাতীয় প্রাণীর থাকার তো কোন সুযোগই নেই। শুধু যে শহরের দিকে এমনটা কিন্তু নয়, গ্রামের দিকেও মানুষেরা যে ভাবে পাখিদের ধরে রান্না করে খেয়ে নিচ্ছে, গ্রামে সেই কারণে পাখিদেরও খুবই কম দেখা যায়। এমনকি বর্তমান সময়ে গ্রামের বা শহরে কোথাও- কাকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না। আমার মনে আছে আমার ছোটবেলায় এত বেশি কাক ঘোরাফেরা করতো যে কোন নোংরা কোথাও পড়ে থাকলে সেখানে কাকের ঝাঁক এসে বসতে দেখা যেত। ছোটবেলা থেকেই জানি যে কাক আমাদের চারপাশের নোংরা পরিষ্কার করে, অর্থাৎ চারপাশে পরিবেশে যেসব নোংরা আবর্জনা থাকে এমনকি মৃতদেহ পর্যন্ত কাক খেয়ে পরিষ্কার করে দেয় তাই কাককে পরিবেশের বন্ধুই বলা হয়।
কিন্তু বর্তমানে দেখা যায় কাকের কোন অস্তিত্বই নেই। তেমনি পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পাখি ও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আর এইসব পাখিদের হয়তো পরবর্তী প্রজন্মরা চিনবেও না। কারণ দিন যত যাচ্ছে পাখিদের অস্তিত্ব তত কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, এবং বর্তমানেও অনেক পাখি বিলুপ্তির পথে। আবার মনে আছে আমি বেশ কয়েক বছর আগেও বিকালের দিকে ছাদে এক বাটিতে করে জল দিতাম কারণ পাখিরা সারা দিনের পরিশ্রমের পর ওই জল খেয়ে তৃষ্ণা মেটাতো এবং একটু গা ধুয়ে নিত। আমার এমন দৃশ্য দেখতে বেশ ভালো লাগতো সেই জন্য আমি প্রতিদিন নিয়ম করে ছাদে গিয়ে একটু বড় বাটিতে জল রেখে আসতাম। এবং পাশে কিছু খাবারও দিয়ে আসতাম। আর এইসব পাখিদের হয়তো আমরা আর কখনো দেখতেই পারব না। গ্রামের দিকে আগে শোনা যেত বিভিন্ন ধরনের পাখিদের সুমধুর আওয়াজ। তবে বর্তমানে গ্রামের দিকেও পাখিদের কোন আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায় না। আগেকার সময় যেমন বিভিন্ন রঙের বিভিন্ন ধরনের পাখি আমাদের চোখে পড়তো বর্তমানে সেইসব পাখিও যেন কোথাও উধাও হয়ে গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন পশু এমন আছে যারা বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
অনেক পশু আছে যারা বিলুপ্তির পথে রয়েছে। আসলে আমাদের বিভিন্ন কর্মফলে আমরা আমাদের চারিপাশের এইসব পশুপাখিদের হারিয়ে চলেছি। এছাড়াও বন জঙ্গলে দাবানলের কারণেও গাছপালা মরে যাচ্ছে আর সাথে বিভিন্ন ধরনের পশু পাখিরও মৃত্যু ঘটছে। দাবানোর একটি প্রাকৃতিক কারণ তবুও দেখা যায় এই কারণে বিশাল সংখ্যক পশুপাখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবং অনেক পশুপাখি নির্বংশ পর্যন্ত হয়ে যায়। আগে দেখা যেত বিভিন্ন পোকামাকড় যা মাটি উর্বর করে চাষীদের সাহায্য করতো এছাড়াও অনেক পোকামাকড়কে আমরা পরিবেশ বান্ধব বলে জানি তাদের কাউকেই বর্তমানে দেখতে পাওয়া যায় না। আমাদের পরিবেশে উপকার করা পোকামাকড় গুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে জলাশয় কমে যাচ্ছে, পুকুর, ডোবা, এখন আর দেখতে পাওয়া যায় না এবং নদী নালার জল প্রায় শুকিয়ে যাচ্ছে। আর এর ফলে বিভিন্ন পশু পাখি তাদের তৃষ্ণা নিবারণের উপায় পাচ্ছে না। এদিকে দিন যত যাচ্ছে গরম বেড়েই যাচ্ছে। তাই হয়তো এইসব পশুপাখি জীবন যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে। অনেক সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থা অনেক জীবজন্তুকে বাঁচানোর চেষ্টায় প্রতিনিয়ত অনেক কষ্ট করে চলেছে। পশুপাখিদের সংরক্ষণ করে তাদের খাওয়া দাওয়া এবং সুস্থ রাখার পুরো দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় গেলে দেখতে পাই বিভিন্ন ধরনের প্রাণী পশুপাখি সেখানে রয়েছে। আবার অনেক পশু পাখি চিড়িয়াখানার যত্নেও বেঁচে থাকতে পারছে না।
দিন যত যাচ্ছে আমরা বিভিন্ন ধরনের সাপ ও দেখতে পাচ্ছি না। আগে বন জঙ্গল থাকলেই সেখানে অন্তত কয়েক প্রকার সাপ আমরা দেখতে পেতাম। বর্তমানে আমাদের এই সব বিষাক্ত জীবজন্তুকেও দেখা দুর্লভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে দিন যত যাচ্ছে আমাদের পরিবেশ অনেক বেশি অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। আর পরিবেশের এসব ক্ষতির জন্য সম্পূর্ণ দোষী আমরা মানুষ জাতি। কারন আমরা নিজের শখ সৌখিনতা এবং আধুনিকতার জন্য পরিবেশের প্রতিনিয়ত ক্ষতি করে যাচ্ছি। আর এই পরিবেশের ক্ষতির জন্য শুধুমাত্র পরিবেশের পশু পাখি জীবজন্তুরই ক্ষতি হচ্ছে এমন নয় আমাদের নিজেদেরও প্রচুর পরিমাণ ক্ষতি হয়ে চলেছে। পরিবেশে গাছপালার বিলুপ্তির জন্য পশু পাখির বাসস্থানের অভাব ঘটছে যে কারণে তারা বসবাসের উপযুক্ত জায়গা পাচ্ছে না। আর সাথে আমরাও পর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং সুন্দর পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আসলে আমরা আমাদের কর্মফলের জন্যই পরিবেশের অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি এবং বর্তমানেও হারিয়ে চলেছি। আমরা চাইলেই আমাদের পরিবেশের ক্ষয় পূরণ করতে পারব না তবে চেষ্টা করলে অবশ্যই আমাদের পরিবেশটাকে ভালো করতে পারব এবং ভালো রাখতে পারব। আর তার সাথে আমরা নিজেদের জন্য একটি সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করতে পারব।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।