কুকুর একটি প্রভুভক্ত প্রাণী।

in আমার বাংলা ব্লগ4 days ago


কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।


17436570568942585978817527194195.jpg



সোর্স



কুকুর একটি প্রভুভক্ত জীব। এই কুকুর যে কেউ অতি সহজেই পোষ মানিয়ে নিতে পারে। কুকুরকে পোষ মানানো যেমন সোজা আমার মনে হয় কুকুরকে লালন পালন করা তার থেকেও বেশি মজাদার। কারণ কুকুর একটি খুবই মায়াবী প্রাণী। একটি কুকুরের সাথে যদি আপনি পাঁচ থেকে দশ মিনিট সময় কাটান তাহলে তার মায়া জড়িয়ে যাবে। এবং সেই সময়টি হবে আপনার জীবনের অনেক সুন্দর একটি সময়। অতিব নিষ্পাপ এবং সহজ সরল মনের অধিকারী কুকুর নামক প্রাণীটি। একটু লক্ষ্য করলে খেয়াল করা যাবে রাস্তায় কোনো কুকুরকে যদি আপনি একটু খাবার খেতে দেন এবং একটু স্নেহের আদরে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন তাহলে সেই কুকুরটি আপনার পেছন পেছন আপনাকে রক্ষা করতে চলে আসবে। আসলে কুকুর বোঝে ভালোবাসার স্পর্শ। আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি আমাদের বাড়িতে একটি কুকুর থাকতো আমার বাবা-মা প্রতিবেলা যখন খাবার খেত সেই কুকুরটিকেও খাবার দিয়ে আসতো। আমাদের পোষা কুকুর ছিল কিন্তু আমাদের ঘরে ঢুকতো না। উঠোনেই আমার বাবা তার একটা থাকার জায়গা করে দিয়েছিল কুকুরটি সেখানেই থাকতো। আমার বাবা-মা যখন চাকরিতে যেত তখন কুকুরটি একদম মেইন রাস্তা অব্দি তাদের এগিয়ে দিয়ে আসতো। যতক্ষণ না মা আর বাবা কোনো গাড়িতে উঠতো ততক্ষণ সেও দাঁড়িয়েই থাকতো।


আমাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসতো, অদ্ভুতভাবে আবার ছুটির সময় দেখতে পেতাম স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমাকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য। তোমার বাড়ি থেকে স্কুল খুব বেশি দূরে না তাই সে আমার স্কুল পর্যন্তই চলে যেত। কুকুরটির এত বুদ্ধি এবং এত কর্তব্যবোধ দেখে আমরা অবাক হয়ে যেতাম। আমাদের পরিবারের একজন হয়েই ছিল সে। আসলে কুকুর তাদের ভালোবাসা বলে বোঝাতে পারেনা আচরণের মাধ্যমে এবং তাদের ভালোবাসার মানুষকে রক্ষা করার মাধ্যমেই প্রকাশ করে। বর্তমানেও আমাদের বাড়িতে একটি কুকুর আছে, আমাদের বাড়িতে সে নিজে থেকেই থাকা শুরু করেছে আমরাও কখনো তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিইনি। কুকুরটি একটি মেয়ে, তাই কয়েক মাস আগে সে বেশ কয়েকটা বাচ্চার জন্ম দিয়েছিল। তবে সবাই বিভিন্ন কারণে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছিল। শুধু একটি মাত্র বাচ্চা কুকুর বেঁচে আছে। তবে সেই বাচ্চার মা মানে বড় কুকুরটি মারা গিয়েছে সেই একই রকম অসুস্থতার কারণে। এই বাচ্চা কুকুরটি এখন মোটামুটি ভালোই বড় হয়ে গেছে সে এখন আমাদের বাড়িতেই থাকে এবং খাওয়া দাওয়া করে। আর দেখা যায় প্রায় সময়ে গেটের সামনেই পাইচারি করে বা শুয়ে থাকে। তাকে দেখলে কেমন মনে হয় বাড়ির দেখাশোনার কাজ করে।


অনেক বুদ্ধিমান এবং আমাদের কথা খুব ভালোভাবে বোঝে। তবে শুধু পালিত কুকুরই নয়, প্রত্যেকটি কুকুর বোঝে যে তাকে কি বলা হচ্ছে। কুকুরটি যখন দুষ্টুমি করে আমি তাকে বকা দিলে সে পুরো শান্ত হয়ে বসে পড়ে। ব্যাপারটা দেখতে যদিও আমার খুবই ভালো লাগে। এখন দেখা যায় প্রায় মানুষই নামিদামি কুকুর কিনে আনে এবং বাড়িতেই তার লালন পালন করে। কিন্তু আমরা যদি পাশাপাশি রাস্তার কুকুরদেরও একটু খাবার খেতে দিয়ে আসি এবং যত্ন নেই তাহলে তারাও ভালোভাবে বাঁচতে পারবে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গের রাস্তার কুকুরগুলো অনেক বেশি ক্ষুধার্ত থাকে এবং অনেক বেশি অযত্নে থাকে। কিন্তু আমি যখন সিকিম গ্যাংটকে ঘুরতে গেছিলাম তখন দেখে অবাক হয়ে গেছিলাম ওখানকার রাস্তার কুকুর গুলো এত সুন্দর এবং স্বাস্থ্যবান, দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না যে ওগুলো রাস্তার কুকুর নাকি গৃহ পালিত কুকুর। ওখানকার মানুষেরা রাস্তার কুকুরের অনেক বেশি যত্ন নেয় এবং নিয়মিত খাবার খেতে দেয়। আমরাও যদি আমাদের চারপাশের কুকুরদের সামর্থ্য মতো খেতে দিতে পারি তাহলে তারা একটু খিদে মেটাতে পারবে। আমাদের মত তাদের যেহেতু হাত পা ভগবান দেয়নি যে তারা কর্ম করে খাবে, এবং বাসস্থান ও দেয়নি যে তারা ঝড়-বৃষ্টি এবং প্রখর রোদে সেই ঘরে গিয়ে জীবন বাঁচাবে, তাই আমাদের উচিত আমাদের চারপাশের যে অবলা প্রাণী প্রতিনিয়ত কষ্ট পায় তাদেরকে রক্ষা করা।


তবে আমরা মানুষ বড়ই অদ্ভুত আমরা এদের কথা একটুও ভাবনা চিন্তা করি না। তাই দেখা যায় আমাদের কর্মের দ্বারাই এরা অনেক সময় বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। কখনো আমাদের ফেলা কাঁচের টুকরোতে তাদের মুখ কেটে যায়। যার ফলে তারা অনেক বেশি কষ্ট পায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি ইনফেকশন হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেমন দোলযাত্রায় তাদের গায়ে অযথাই আমরা রং লাগিয়ে ফেলি আর এই ক্ষতিকর রং আমাদের যেমন ক্ষতি করে তার থেকেও অনেক বেশি গুণে ক্ষতি করে এইসব অবলা প্রাণীর। আমরা এত বুদ্ধিমান হয়েও কুকুর জাতিদের বুঝে বা না বুঝে যা ক্ষতি করে থাকি তারা কিন্তু কখনোই আমাদের কোন ক্ষতি করে না। বরং সর্বদা আমাদের উপকার করার চেষ্টা করে। কুকুরকে এক বেলা খেতে দিলে সারা জীবন সে তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে এবং উপকার করতে থাকে। আর অপরদিকে একটি মানুষকে যদি সারা জীবন অনেক ভালোভাবে ভরণপোষণ দিয়ে রাখা হয় এবং কোন অভাব না দিয়ে সুখে রাখা হয় তবু সে মানুষ সুযোগ পেলে কৃতজ্ঞতা ভুলে অবশ্যই তার ক্ষতি করবে। তাই আমার মনে হয় কোন মানুষকে কুকুর বলে গালি দিলে মানুষের থেকে বেশি কুকুরদেরই অপমান করা হবে। আর কুকুর মানুষদের কাছে সবসময় আদর ভালোবাসা এবং একটু খাদ্যের চাহিদা রাখে অসম্মান তাদের প্রাপ্য নয়।



আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।

Sort:  
 4 days ago 

1000037160.jpg

1000037159.jpg

1000037158.jpg