বর্তমানে মানুষ অনেক বেশি স্বেচ্ছাচারী হতে চায়।
কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন মা ঠাকুমাদের দেখেছি সব সময় গুরুজনদের কথা মেনে চলতে। কোনো রকম কাজ করার আগে সবসময় পরিবারের গুরুজনদের কাছে সেই কাজটি করার অনুমতি এবং পরামর্শ নিতো। যদি তারা কাজটি করার অনুমতি দিত তাহলেই মা ঠাকুমারা কাজটি করতো আর যদি কাজটি করতে বারণ করা হতো তাহলে আর সে কাজটি করার কথা দ্বিতীয়বার ভাবতো না। এমনকি তাদেরকে যেমনভাবে চলতে বলতো তাদের গুরুজন, মা-বাবা তারা তেমনভাবেই চলাফেরা করতো। কোনরকম জেদ প্রকাশ করত না এমনকি নিজের ইচ্ছাকেও প্রতিনিয়ত দমন করে রাখত। কিন্তু বর্তমান সময়ে মানুষ হয়ে গেছে অনেক বেশি স্বেচ্ছাচারী। বর্তমানে মানুষেরা কোন কিছু করার আগে গুরুজনদের পরামর্শ নেয় না বরং তারা নিজেরাই ভাবনা-চিন্তা করে নেয় যে সেই কাজটি করা ঠিক হবে নাকি ভুল হবে। বর্তমান মানুষদের বিশেষ করে বর্তমান জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা প্রতিনিয়ত তাদের শখ সৌখিনতা এবং ইচ্ছাকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। আর তার এই শখ সৌখিনতা এবং ইচ্ছাকে পূরণ করার জন্য কারোর পরামর্শ বা অনুমতির তারা প্রয়োজন বলে মনে করে না। এমনকি তারা ভবিষ্যতে কি কাজ করতে চায় নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য সেটাও তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয়। আসলে আগেকার মানুষ খুব বেশি শিক্ষিত না থাকায় গুরুজনেরা যা বলতো সেটাই ঠিক বলে মনে করত এবং গুরুজনদের কথা মতই চলত।
কিন্তু বর্তমানে যেহেতু মানুষ পড়াশোনা করে অনেক বেশি শিক্ষিত হচ্ছে তাই প্রত্যেকে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতেই সক্ষম হয়ে উঠছে। বর্তমানে মানুষ বুঝতে শিখেছে কোনটা ঠিক এবং কোনটা ভুল আর কোনটা কুসংস্কার এবং কোনটা সাইন্স। এছাড়াও বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে মানুষের শখ সৌখিনতা, ইচ্ছা এবং চাহিদা ক্রমশ বেড়েই চলেছে, যা আগেকার মানুষের চিন্তাভাবনার সাথে একদমই মিল খায় না। ফলে আগেকার জেনারেশনের মানুষদের সাথে বর্তমান জেনারেশনের মানুষদের মধ্যে চিন্তাভাবনার আকাশ পাতাল পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর এই কারণেই আগেকার মানুষদের মতে বর্তমানে মানুষেরা অনেক বেশি স্বেচ্ছাচারী হয়ে যাচ্ছে। আগেকার মানুষদের মধ্যে কখনোই ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ দেখা যেত না, এমন কি বিবাহ বিচ্ছেদ নাম উচ্চারণ করা যেন তাদের কাছে পাপ সমান ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদ খুবই কমন এবং স্বাভাবিক একটি জিনিস হয়ে উঠেছে। আর এই বিবাহ বিচ্ছেদ আমাদের এই জেনারেশনে স্বাভাবিক হওয়ার পেছনেও রয়েছে মস্ত বড় একটি কারণ। আগেকার সমাজে একবার বিয়ে হয়ে গেলে সেই স্বামী-স্ত্রীর যদি মানসিকভাবে মিলতাল না থাকতো বা চিন্তা ভাবনার যদি মিল না থাকতো তবুও সেই বিবাহ সম্পর্কটিকে তারা মৃত্যু পর্যন্ত নিষ্ঠার সাথে মেনে চলত। অনেক সময় দেখা যেত স্বামীর মৃত্যুর পরে স্ত্রী বা স্ত্রীর মৃত্যুর পরে স্বামী অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতো না বা হতে চাইতো না।
এমনকি অন্য নারী বা পুরুষের কথা কল্পনা করাও তারা পাপ বলে মনে করত এবং মৃত স্বামী বা স্ত্রীকে ঠকানো হচ্ছে বলে ভাবতো। তাদের মন এতটাই পরিষ্কার এবং সহজ সরল ছিল যে তারা কখনো কোনো সম্পর্কের মানুষকে ঠকাতো না, নিজের সুখ, শান্তি, ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা সবকিছু ত্যাগ করে পরিবারকে এবং প্রিয় মানুষকে খুশি রাখার চেষ্টা করত। তবে তখনকার যুগে পুরুষরা ছিল অনেক বেশি অত্যাচারী, পুরুষের শাসনে নারীরা অনেক বেশি নির্যাতিত ছিল। নারীদের অনেক বেশি অত্যাচার সহ্য করতে হতো যা শারীরিক, মানসিক বিভিন্ন ধরনের ছিল। আর এই অত্যাচার প্রত্যেকটি নারী মুখ বুজে সহ্য করতো। আর যেহেতু সমাজে ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ পাপ বলে মনে করা হতো তাই তারা কখনো এসব নিয়ে কল্পনাও করত না। নারীদের কোনো স্বপ্ন দেখা বা নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া অর্থ উপার্জনের কথা চিন্তা করা চাকরি করা কোনভাবেই অনুমতি ছিল না। মেয়েরা অনেক বেশি পরাধীন ছিল পুরুষদের কাছে। সারাদিন অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হতো, সংসারের যাবতীয় সব কাজ করতে হতো তারপরেও তারা পেট ভরে খেতে পারত না এবং তাদের পছন্দমত বা ভালো কোনো খাবার খেতে দেওয়া হতো না। আসলে সেই আগেকার সময় থেকে মানুষ প্রত্যেকটি সংসারের দাদু, দিদা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা, মা এবং বাবার আত্মত্যাগের গল্প শুনে শুনে বড় হওয়া সন্তানেরা প্রতিনিয়ত শিখেছে যে শুধুমাত্র ত্যাগ করলেই শান্তি আসে না।
কারণ মেয়েরা যতই সংসারের ভালোর জন্য বা অন্যকে ভালো খেতে দেওয়ার জন্য নিজে না খেয়ে থাকুক না কেন এবং নিজের সব শখ সৌখিনতা ইচ্ছা আশা আকাঙ্ক্ষা এমনকি বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েও দিনশেষে তারা এটাই শোনে যে তারা সংসারের প্রতি ঠিকমতো কর্তব্য পালন করেনি, এবং তারা সব সময় নিজের কথাই ভেবেছে এবং নিজে ভালো থাকার চেষ্টা করেছে সারা জীবন। সবকিছু করে যদি এমন কথা শুনতে হয় তবে নিজের কথা ভাবা এবং নিজে ভালো থাকার চেষ্টা করাই ভালো বলে মনে করেন বর্তমান জেনারেশনের মানুষেরা। আর এই জন্যই বর্তমান জেনারেশনের মানুষ সংসার জীবনে কোন সমস্যা দেখলেই ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদের কথা ভাবে এবং বিবাহ বিচ্ছেদ করে ফেলে। পূর্ব অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে বর্তমানের জেনারেশনের মানুষ নিজের কথা এবং নিজে ভালো থাকার কথা ভাবে এবং এমন কঠিন পদক্ষেপ নেয় তখন সবার চোখে তারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে যায়। তবে আমার মনে হয় এমন স্বেচ্ছাচারী একটু হওয়া ভালো কারণ আমাদের অনেক ছোট একটা জীবন, আর সারা জীবন যদি আমরা অত্যাচারিত হতে থাকি এবং নিজস্ব শখ সৌখিনতা বিসর্জন দিতে থাকি তবে কয়দিনই বা শান্তিতে বাঁচতে পারব? তাই সারা জীবন অন্যের কথা ভেবে অন্যদের ভালো রাখার চেষ্টা করেও যদি দিনশেষে বদনাম কুড়াতে হয় তবে স্বেচ্ছাচারী হয়ে নিজেকে ভালো রেখে নিজের যত্ন করা অনেক বেশি শ্রেয় এবং তাতে যদি কেউ বদনাম করে সেই বদনামও অনেক ভালো।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।
https://x.com/pussmemecoin/status/1948735773928214650