দান-সদকা কি শুধু রমজান মাসের জন্যই সীমাবদ্ধ?

in আমার বাংলা ব্লগ10 days ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

রমজান মাস ফজিলতপূর্ণ মাস। এ মাসে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়, আর দান-সদকার মাধ্যমে পাওয়া যায় অসীম সওয়াব। রমজান কেবল সিয়াম সাধনার মাসই নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, সংযম, সহমর্মিতা ও দানশীলতারও মাস। বিশেষ করে ধনী-গরিবের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করার উত্তম সময় এটি। সমাজের ধনীদের প্রতি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হলো যাকাত প্রদান করা, যা গরিবদের হক। রমজান মাসে যাকাত প্রদান করা হলে এর সওয়াব আরও বেড়ে যায়। তবে প্রশ্ন থেকে যায়,এই দান-সদকা কি শুধু রমজান মাসের জন্যই সীমাবদ্ধ?

1000061703.webp

Made by AI Generator

ইসলাম শুধু রমজান মাসে দান করার কথা বলেনি, বরং ধনী ব্যক্তিদের সম্পদে গরিবদের অধিকার সবসময়ই রয়েছে। যাকাত একটি বার্ষিক ফরজ ইবাদত, যা ধনীদের সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। তবে আমাদের সমাজে এক ধরনের প্রবণতা দেখা যায় যে, রমজান মাস এলেই অধিকাংশ মানুষ যাকাত প্রদান করেন, অথচ বছরের বাকি সময়টায় তারা এ বিষয়ে তেমন একটা সচেতন থাকেন না। এর ফলে গরিব ও অসহায় মানুষের কষ্ট লাঘবের যে উদ্দেশ্যে যাকাত ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, তা পূর্ণতা পায় না। অথচ দরিদ্রদের সাহায্য করার দায়িত্ব শুধু একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না।

আজকের সমাজে ধনীদের অধিকাংশই যাকাত দেন লোক দেখানোর জন্য, যেন সমাজের মানুষ তাদের প্রশংসা করে। প্রকৃতপক্ষে, যাকাত দেওয়া মানে ধনীদের প্রতি গরিবদের যে অধিকার রয়েছে, তা ফিরিয়ে দেওয়া। এটি কেবল একটি দান বা দয়ার বিষয় নয়, বরং এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। যদি সমাজের প্রতিটি বিত্তবান ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যাকাত প্রদান করত, তাহলে সমাজে দারিদ্র্যের পরিমাণ অনেক কমে যেত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, অনেকেই যাকাত প্রদানকে শুধু রমজান মাসের একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে দেখে। এ মানসিকতা পরিহার করা দরকার।

যাকাত একটি ফরজ ইবাদত হওয়া সত্ত্বেও অনেক মানুষ এ বিষয়ে উদাসীন। অথচ ইসলাম আমাদের সম্পদে গরিবদের অধিকারকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। শুধু রমজানে নয়, বরং বছরের প্রতিটি দিন আমাদের উচিত গরিব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের খোঁজখবর নেওয়া। সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা দারিদ্র্যের কষ্টে দিন কাটায়, যাদের নেই পর্যাপ্ত খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা বা চিকিৎসার সুযোগ। তারা যদি সারা বছর সাহায্য না পায়, তবে তাদের কষ্ট আর দুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে। তাই শুধু রমজানে যাকাত দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, বরং সারাবছরই দরিদ্রদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানো দরকার।

আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছেন, যারা শুধু ধর্মীয় কারণে যাকাত প্রদান করেন, আবার কেউ কেউ লোক দেখানোর জন্য। অথচ ইসলাম স্পষ্টভাবে বলেছে, সৎ উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো ইবাদতই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যদি আমরা সত্যিকারের ঈমানদার হই, তবে আমাদের উচিত হবে শুধু রমজান মাসেই নয়, বরং সারা বছরই গরিবদের সাহায্য করা। কারণ একজন গরিব মানুষ কেবল রমজান মাসেই অভুক্ত থাকে না, বরং সারা বছরই তার খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা এবং শিক্ষার অভাব থাকে। তাই গরিবদের প্রতি সাহায্যের মনোভাব সারাবছর থাকা উচিত।

একটি সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য ধনী-গরিবের মধ্যে পার্থক্য কমানো জরুরি। ইসলাম ধনী ও গরিবের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করে না। একজন ধনী ব্যক্তির যে দায়িত্ব রয়েছে, একজন গরিবেরও সেই একই দায়িত্ব রয়েছে, কিন্তু জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে গরিবরা অধিকতর কষ্টের শিকার হয়। এই বৈষম্য কমানোর জন্যই ইসলাম ধনীদের সম্পদে গরিবদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই আমাদের প্রয়োজন শুধু রমজান মাসে নয়, বরং প্রতিদিন গরিব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানো।

সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য দরিদ্র মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করা প্রয়োজন। যাকাত, দান-খয়রাত, সাদাকা এসব কেবল রমজান মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তা সমাজের প্রকৃত উপকারে আসে না। আমাদের উচিত, এমন ব্যবস্থা করা যাতে দরিদ্র মানুষ কেবল এক মাসের জন্য নয়, বরং সারাবছরই তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে। ধনী ব্যক্তিরা যদি নিজের বিলাসিতা কিছুটা কমিয়ে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ দরিদ্রদের কল্যাণে ব্যয় করতেন, তবে দারিদ্র্য অনেকাংশেই কমে যেত।

সমাজে ধনী-গরিবের বিভেদ দূর করতে হলে আমাদের মধ্যে সহানুভূতি ও মানবতার বোধ জাগ্রত করতে হবে। আমরা সবাই এক, আমাদের আসল পরিচয় আমরা মানুষ। আর মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব একে অপরের পাশে দাঁড়ানো। ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে হলে কেবল যাকাত নয়, বরং দরিদ্রদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও জীবিকা নিশ্চিত করাও প্রয়োজন। রমজান মাসে যাকাত দেওয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সারা বছর গরিবদের সাহায্য করাও ততটাই জরুরি।

তাই আসুন, আমরা শুধু রমজানে নয়, বরং সারা বছরই দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা তৈরি করি। যাকাত, দান-সদকার মাধ্যমে ধনী-গরিবের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, তা কমিয়ে আনার চেষ্টা করি। আর তা যেন শুধুমাত্র লোক দেখানোর জন্য না হয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়। তাহলেই সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে, ধনী-গরিবের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে উঠবে এবং আমাদের সমাজ হবে সত্যিকারের মানবিক ও সমৃদ্ধ।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

ফোনের বিবরণ

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Sort:  
 10 days ago 
 10 days ago 

খুবই সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া আমার কাছে তো অসম্ভব ভালো লাগলো। সত্যি আমরা যদি ধনী গরিবের মধ্যে কোন বৈষম্য না রেখে সবাইকে এক নজরে দেখি তাহলে সবকিছু কত সুন্দর হতো। আর শুধু রমজান মাসে কেন সারা বছর যদি এভাবে ধনীরা গরিবদের সাহায্য করতো তাহলে গরিবদের এত কষ্ট করতে হতো না। তাই আমরা সবাই এই পার্থক্য ভুলে যদি এক হয় এবং সব সময় চেষ্টা করি গরিব মানুষের পাশে থাকার তাহলেই সমাজ সুন্দর হবে আমাদের মন মানসিকতা আরো বিকাশিত হবে। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 9 days ago 

আপনার লেখাটা খুবই সুন্দর হয়েছে! সত্যিই, যদি আমরা শুধু রমজানেই নয়, সারা বছর গরিবদের পাশে দাঁড়াতাম, তাহলে সমাজে এত বৈষম্য থাকত না। আপনার কথাগুলো অনেক বাস্তবসম্মত লেগেছে। এভাবেই ভালো কিছু লেখার মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করুন। ধন্যবাদ আপনাকে!