জেনারেল রাইটিং:- "অপেক্ষা"

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

অপেক্ষা-
এই শব্দটার ভেতরে একধরনের নীরব ধ্বনি আছে। একা থাকার, চুপচাপ বসে থাকার, একটা বিশেষ মুহূর্তের প্রতীক্ষায় প্রহর গোনার মতো অনুভূতি। জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে আমরা কেউ না কেউ, কিছু না কিছু জন্য অপেক্ষা করি। কখনো মানুষ, কখনো সময়, কখনো ভালোবাসা কিংবা শুধুই একটা খবরের জন্য। অপেক্ষা মানেই যেন একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলা আসবে কি? কিংবা “হবে তো?”

1000064085.png

AI-generated image

ছোটবেলায় স্কুল শেষে আম্মু কখন এসে নিয়ে যাবে, সেই অপেক্ষা ছিল। রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে পথ চেয়ে থাকতাম, সবার আব্বু/আম্মু আসছে, আর আমি দাঁড়িয়ে আছি। মনে হতো, আমারটা বুঝি আজ ভুলে গেছে। অথচ কয়েক মিনিট পরেই হাসিমুখে আম্মু এসে দাঁড়াতেন সামনে, যেন পৃথিবীর সব সুখ তখন এসে গেছে আমার কাঁধে।বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অপেক্ষার ধরন বদলেছে, কিন্তু অনুভব বদলায়নি। বন্ধুদের ফোনের অপেক্ষা, পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষা, পছন্দের কাউকে একটা মেসেজ পাঠিয়ে তার রিপ্লাইয়ের অপেক্ষা- এসব অপেক্ষা খুব নরম, খুব ব্যক্তিগত। কখনো আশাবাদী, কখনো উদ্বিগ্ন, আবার কখনো ধৈর্যচ্যুতি।

কখনো কখনো অপেক্ষা খুব দীর্ঘ হয়, কষ্টের হয়। যেমন ধরেন, কোনো প্রিয় মানুষ দূরে চলে গেলে তার ফেরার অপেক্ষা। দিন, মাস, এমনকি বছর কেটে যায়, তবু সেই অপেক্ষার মাটি ছেড়ে কেউ নড়ে না। হয়তো জানে না সে ফিরবে কিনা, তবুও আশা ছাড়ে না। একটা মেসেজ, একটা ফোনকল, একটা দেখা- এই ছোট্ট আকাঙ্ক্ষাগুলোই হয়ে ওঠে জীবন।অপেক্ষা অনেকটা নদীর মতো। নিজেই নিজের গতিতে বয়ে চলে, আর যাকে নিয়ে সেই অপেক্ষা, সে হয়তো জানেও না তার জন্য কেউ এতটা সয়ে আছে। আবার অপেক্ষা অনেকটা চিঠির মতোও- লিখে পাঠানো হয় ঠিকানায়, কিন্তু জানি না আদৌ পৌঁছাবে কিনা।

মাঝেমধ্যে মনে হয়, অপেক্ষা না থাকলে কি জীবন এত বৈচিত্র্যময় হতো? সুখ যে কেবল প্রাপ্তিতেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রাপ্তির আগে সেই আগ্রহ, সেই না পাওয়ার কষ্টটুকুও একরকম সুখ এনে দেয়। একজন প্রিয় মানুষকে দীর্ঘদিন পর দেখা, অথবা বহুদিনের পরিশ্রমের পর স্বপ্নের চাকরি পাওয়া- এসব কিছুই অপেক্ষা ছাড়া পূর্ণ হতো না।তবে, অপেক্ষা সবসময় ফল দেয় না। কিছু কিছু অপেক্ষা চিরকাল অপূর্ণ থেকে যায়। কেউ আর ফিরে আসে না, কোনো খবর আর আসে না। তবু আমরা অপেক্ষা করি। মানুষের মধ্যে এই 'অপেক্ষা' করার অদ্ভুত ক্ষমতা আছে। হয়তো সেটাই আমাদের ভালোবাসা, আন্তরিকতা, বা আশাবাদের সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, প্রত্যেকেই কারও জন্য অপেক্ষা করছে। কাউকে বিদায় জানাতে, কাউকে গ্রহণ করতে। বাসস্ট্যান্ডে, হাসপাতালের সামনে, স্কুল গেটের পাশে- সব জায়গায়ই অপেক্ষার ছায়া পড়ে থাকে।আমি নিজেও অনেক অপেক্ষা করি। কখনো নিজের জন্য, কখনো অন্য কারও জন্য। আর এই অপেক্ষাগুলোর ভেতরেই খুঁজে পাই নিজেকে- আমার ভালোবাসা, আমার ভয়, আমার প্রত্যাশা। কখনো ধৈর্য হারাই, আবার কখনো চুপচাপ বসে থাকি। তবু অপেক্ষা করি, কারণ মনে হয়, কোনো না কোনো দিন সে আসবেই। হয়তো কাল, হয়তো পরশু, হয়তো আরও পরে। কিন্তু আমি থাকবো, অপেক্ষায়।

অপেক্ষা যেন আমাদের জীবনের এক অনিবার্য সংগীত- যেখানে প্রতিটি সুরই গাঁথা কারো না কারো জন্য বোনা এক গভীর অনুভবে। জীবন এগিয়ে চলে, মানুষ বদলায়, স্থান-কাল পাল্টায়, কিন্তু অপেক্ষা ঠিক একই রকম থেকে যায়- নিরব, ধৈর্যশীল, অথচ ভীষণ রকম জীবন্ত।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif