জেনারেল রাইটিং- আগুনে ঝলসে যাওয়া হাত দেখে আমার কিছু অনুভূতি ||written by@maksudakar ||

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম

বন্ধুরা কেমন আছেন? বেশ ভালো তো তাই না? যদিও গরমের তাপদাহ কমার কোন ভরসা পাচিছ না, তবুও আমাদের সবাই কেই ভালো লাগতে হবে। আর ভালো থাকার জন্য আমাদের প্রয়োজন প্রতিদিনকিছু ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়া। যদিও আমি নিজেই তা খাই না। আমি আবার এত গরমের মধ্যেও চা খেতে বেশ পছন্দ করি। যে কারনে আমার নাম দেওয়া হয়েছে চা খোর। হি হি হি। যাক সে গল্প অন্য একদিন শেয়ার করবো আপনাদের মাঝে।

আজ আবার চলে আসলাম বন্ধুরা। চলে আসলাম প্রতি সপ্তাহের মত করে আজও একটি জেনারেল রাইটিং আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।। প্রতি সপ্তাহেই চেষ্টা করি আপনাদের মাঝে একটি হলেও জেনারেল রাইটিং শেয়ার করতে। তাই তো আজও চলে আসলাম আপনাদের জন্য আরও একটি নতুন জেনারেল রাইটিং নিয়ে। আশা করবো প্রতিদিনের মত আমার আজকের পোস্টটিও আপনাদের কাছে অনেক ভালো লাগবে।

আগুনে ঝলসে যাওয়া হাত দেখে
আমার কিছু অনুভূতি

fire-and-water-2354583_1280 (2).jpg

Source

গত পহেলা মে হঠাৎ ঘটে গেল একটি দুর্ঘটনা। চুলায় ভাত বসিয়ে প্রতিদিনের মত সেদিনও গিয়েছিলাম ভাতের মাড় গালতে। কিন্তু হঠাৎ অনুভব করলাম ভাতের মাড় গুলো বেসিনে না পড়ে আমার ডান হাতের উপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। আর পুরো হাত কে ঝলসে দিচেছ। আল্লাহ্ আমার ধৈর্য্য শক্তি এত দিয়েছে যে আমি আর ভাতের পাতিল হাত থেকে ছাড়িনি। কারন ভাতের পাতিল ছেড়ে দিলে ঠিক তখনই সমস্ত ভাত গুলো মাটিতে পড়ে যেয়ে খাবার অযোগ্য হয়ে যেত। তাই সেই হাত দিয়েই ভাত গুলা ঠিকায় রাখলাম। তারপর দৌড়ে যেয়ে হাতটিকে বেশ কিছুক্ষন পানিতে রাখলাম। হাতের মধ্যে লবন, টুথপেস্ট সব কিছুই দিলাম। আমি ভেবেছিলাম সামান্য গরম মাড় পড়েছে। তাই কিছুক্ষনের মধ্যে জ্বালাটা কমে যাবে। কিন্তু না সেটা আর কমলো না। বরং কিছুক্ষন পর দেখলাম হাতের মধ্যে ফোচকা পড়ে গেল। যেমন জ্বালা পোড়া, তেমনি আবার দেখতে বেশ খারাপ দেখাচ্ছিল।

বাসায় তখন আমি একাই ছিলাম। কেউ ছিল না। আর নিজেও ভাবলাম নিজের জন্য কাউকেই পেরেশানি করবো না। তাই আর কাউকেই জানালাম না। দৌড়ে গেলাম পাশের হাসপাতালের জরুরী বিভাগে। ডাক্তার সাহেব দেখে দুটো ওয়েন্টমেন্ট দিল। কিন্তু কি জানেন? ততক্ষনে আমার হাতের অবস্থা আমার আরও খারাপ হতে লাগলো। অনেক কষ্টে রাত পার করে পরের দিন অফিসে আসলাম। একজন প্রফেসার দেখালাম। কিন্তু হাতের যে অবস্থা তা নিয়ে আমার জন্য অফিস করাটাও বেশ মুশকিল হয়ে গেল। কিন্তু কিছুই করার নেই। অফিস করতে হবে। একদিকে নার্সিং পরীক্ষা, আর অন্য দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রী আসবে অফিস পরিদর্শনে। যাও বসের কাছে গেলাম একটু আগে বের হওয়ার জন্য বস বেচারা তিন থেকে চার বার ঘড়ির দিকে দেখলো ছুটির সময় হয়েছে নাকি। ভাবলাম বেটা তোর হাত পুড়লে বুঝতি কেমন লাগে। রাগে জিদে এসে নিজের ডেস্কে বসে রইলাম। আর সময় মত অফিস ত্যাগ করলাম। যেখানে আধ ঘন্টা আগে বাসায় যাওয়ার সুযোগ নেই সেখানে দুই তিন দিনের ছুটি চাই কি করে বলেন তো?

যেহেতু হাতের অবস্থা খারাপ তাই সে হাত দিয়ে রান্না বান্না তো দূরে থাক একটু পানি পর্যন্ত ধরতে পারি না। কি যে যন্ত্রণা হয়েছে আমার। একদিকে ব্যাথা , অন্য দিকে জ্বালা পোড়া। আবার এর মধ্যে তো আছে অসুস্থ দেহ নিয়ে অফিস করা। তাই তো ছোট বোন @mahfuzanila কে হায়ার করলাম রান্না বান্নার জন্য। বেচারি, একদিকে রোজা করছে এবং আমাদের কমিউনিটিতে কাজ করছে। আর অন্য দিকে আমার জন্য সেই পাচঁতলায় উঠে রান্না বান্না করে দিচেছ। আল্লাহ তার মঙ্গল করুন। এমন বোন যেন পৃথিবীর সবার ঘরে ঘরে আল্লাহ দেন। আমার এই বিপদের সময়ে আমার আপনজনরা যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে তাতে করে আমি তাদের কাছে চিরকাল কৃতজ্ঞ। দোয়া করবেন আপনারা সবাই আমার পরিবারের জন্য।

এত কিছুর পরও মনের ভিতর কষ্ট লাগে যখন কিনা আশে পাশের মানুষ গুলোর কথা শুনি। মানুষ গুলো আামর কষ্টের চেয়ে আমার হাত কি করে পুড়লো? আমি কেন সাবধানে কাজ করি না, আমি কাজ করতে জানিনা এমন সব প্রশ্ন করে, আর কথা বলে। আমার কথা দূর্ঘটনা কি আর বলে কয়ে আসে? কখন যে কার জীবনে বিপদ আসবে, কিউ কি বলতে পারে। তানাহলে তো আমি প্রতিদিনই ভাতের মাড় গালি। কই প্রতিদিন তো আর এমন হয় না। তাহলে প্রতিদিন কি আমার ভাত অন্য কেউ রান্না করে দেয় বলেন তো আপনারা? নাকি জ্বীন ভূতে রান্না করে? হি হিহি।

কিন্তু এই আগুনে জ্বলসে যাওয়া হাতের সামান্য ক্ষত দেখে বেশ ভাবছি যে আমার এতটুকু ক্ষততে আমার এত কষ্ট। তাহলে যে মানুষ গুলো আগুনে পুড়ে মারা যায় তাদের কেমন কষ্ট হয়? তাদের কতটা খারাপ লাগে। কি করে তারা এমন মৃত্যুর যন্ত্রণা সহ্য করে? কি যে ভয়ানক যন্ত্রণা সে কেবল আমিই বুঝি। আচ্ছা আপনাদের কি মনে আছে বেইলী রোডের ঘটনা, মনে আছে পুরান ঢাকান ঘটনা? যে মানুষ গুলো আগুনের বিষাক্ত ছোবলে পড়ে জীবন হারিয়েছে তাদের যন্ত্রণা কতটুকু ছিল? আজ ক’ দিন যাবৎ মনের ভিতর এসব প্রশ্ন গুলোই শুধু কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। অনুভব করার চেষ্টা করছি তাদের কষ্ট। আমার এতটুকু জ্বলসে যাওয়া হাত নিয়ে আমি যে কি কষ্ট পাচ্ছি, তাহলে তাদের কষ্ট গুলো কেমন ছিল?

image.png

শেষ কথা

মানবতা বড়ই অসহায়। রক্তচক্ষুর মানুষ গুলোরি মধ্যে এখন আর মানবতা নেই। নেই কোন সহানুভূতি। তাই তো আজ আমরা অন্যের দুঃখ অনুভব না করে, ঘটনার কারন খুঁজে বেড়াই। আগুনে ঝলসে পুড়ে মানুষ মরছে জেনেও নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভিডিগ্রাফি আর ফটোগ্রাফি নিয়ে ব্যাস্ত থাকি। তবুও দোয়া করি জেগে উঠুক তাদের মধ্যে মানবতার সত্যিকারের রূপ।

image.png

ধন্যবাদ সকলকে
@maksudakawsar

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।

image.png

Screenshot_1.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 last year 
 last year 

কিছু কিছু মানুষের প্রশ্ন শুনে মনে হয় ইচ্ছে করেই আমরা কাজটা করেছি। আপু আপনার হাত পুড়ে যাওয়ার কথাটি শুনে আমার ভীষণ খারাপ লেগেছে। আর অনেক সময় হঠাৎ করে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। যাই হোক আপনার বোন আপনার জন্য অনেক পরিশ্রম করছে বোঝাই যাচ্ছে আপু। বিপদে পড়লে আপন মানুষ গুলোই পাশে দাঁড়ায়।

 last year 

একদস ঠিক আপু বিপদে পড়লে আসল মানুষ গুলোই পাশে দাঁড়ায়। ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আপনার হাতে ভাতের গরম মার পড়ে হাত পুড়ে গিয়েছিল এই কথাটা শুনে সত্যি অনেক খারাপ লাগছে। আসলে মাঝেমধ্যে আমাদের জীবনে এমন কিছু এক্সিডেন্ট হয়, আর আপনি যে চায়ের কথা বললেন আমিও চা খেতে খুব ভালোবাসি । এই গরমেও অনেক চা খাই। আপনার হাত ঝলসে যাওয়ার পরে আপনি যথাযথভাবে সাধারণ ট্রিটমেন্ট গুলো নিয়েছেন এটা খুবই ভালো একটা বিষয়। যাই হোক আপনার জন্য দোয়া করি আপনি যেন খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন।

 last year 

দোয়া রাখবেন ভাইয়া আমার জন্য। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আপু, এই দুঃসংবাদটা আমি আগেই শুনেছি, আসলে অনেক বেশি খারাপ লেগেছে আপনার হাতের কথাটা শুনে। পুড়ে গেলে কতটা জ্বালা করে সেটা আমি জানি। কারণ অনেক বারই আমার ছোটখাটো হাত পুড়েছে। তবে সত্যিই আপনি অনেক ধৈর্যশীল, না হলে গরম মাড় হাতের উপরে পড়া সত্ত্বেও ভাতের পাতিল টা ফেলে দেন নাই‌। তবে এই অবস্থায় অফিস না করলেই মনে হয় ভালো হতো। তবে আপনার বস দেখছি একটু আগেও ছুটি দিতে পারল না। ভালোই হয়েছে ছোট বোনকে ডেকে নিলেন। যাই হোক আপনার হাত তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাক এটাই কামনা করি।

 last year 

কি আর করার এমন অবস্থা নিয়েই চলতে হবে আপু। ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য।

 last year 

পুড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে পারলে সমস্যা হয় না। তবে একটু দেরি হলে ক্ষতিটা বেশি হয়। আপনার ঠিক তাই হয়েছে দেরি হওয়ার কারণে আপনার ক্ষতিটা হয়েছে বেশি। আর পাশে যদি মানুষ থাকতো ওই মুহূর্তে তাহলে সহায়তা পেতেন বেশি। আপনার জন্য দোয়া করি যেন দ্রুত সুস্থ হন।

 last year 

ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 last year 

খুবই খারাপ লাগলো আপনার এমন দুর্ঘটনার কথা শুনে আপু । আসলেই সব দিন সমান মানসিকতা থাকে না, কোনো কারণে হয়তো ভুলবশত এটা হয়ে গিয়েছে। তবে আপনার হাতে যে অনেকটা জ্বালা যন্ত্রণা করছে আর তাই নিয়েও আপনাকে অফিস করতে হচ্ছে সেটা বড়ই যন্ত্রণাদায়ক। ঠিকই বলেছেন আপু আমারও যখন হাতে কোনো ছ্যাকা লাগে বা কিছু হয় তখন আমিও এটা ভাবি যারা আগুনে পুড়ে মারা যায় তারা কতটা কষ্ট নিয়ে এরকম যন্ত্রণায় পুড়ে মরার পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

 last year 

ধন্যবাদ দিদি এমন সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।

 last year 

গরম ভাতের মাড় হাতের উপর পড়লে যে কেমন লাগে, সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি আপু। তবে আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে ভাতের পাতিল ছেড়ে দিত। যাইহোক, এই সময়টাতে আপনার বোন হয়তো আপনাকে কিছুটা সাহায্য করেছে, এই জন্য সমস্যাটা একটু কম হয়েছে। তবে আপু আমাদের আশেপাশের মানুষগুলো আসলেই এরকম, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কতটা কষ্ট পাচ্ছি তার থেকে বেশি তাদের ইন্টারেস্ট থাকে যে কি কারণে বা কি জন্য ক্ষতি হয়েছে, সেটা নিয়ে।