"শৈশব ফিরে আসলো ছাগলনাদি ফলের স্বাদে"

in আমার বাংলা ব্লগ4 days ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

এই ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জে ফিরেছি। প্রতিবারের মতো এবারও শহরের ব্যস্ততা থেকে ছুটি নিয়ে, প্রিয়জনদের মাঝে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য এই ফিরে আসা। ঈদ মানেই একটা অন্যরকম উচ্ছ্বাস, নিজের মাটির গন্ধ, ছোটবেলার মানুষগুলো, আর সেই চিরচেনা পরিবেশে আবার নতুন করে মিশে যাওয়া। সিরাজগঞ্জ শহরে থাকলেও গ্রামের টানটা সবসময় আলাদা। তাই সিরাজগঞ্জে আসার পর পরই আমি দুইদিনের জন্য ছুটে গিয়েছিলাম আমাদের গ্রামের বাড়িতে।

1000075008.jpg

যদিও সময়টা খুব বেশি ছিল না, তবুও গ্রামের সেই শান্ত পরিবেশ, উঠানের আমগাছ, পাশের পুকুর, মাটির গন্ধ সবকিছু যেন আবারও নতুন করে হৃদয় জুড়ে বসে গেল। কিন্তু এই পুরো যাত্রায় সবচেয়ে আলাদা আর সুন্দর যে মুহূর্তটা ধরা দিল, সেটা এসেছিল একেবারেই হঠাৎ করে, এক বিকেলে।বিকেলটা ছিল একটু মেঘলা, গরম ছিল না খুব একটা। আমি উঠানে চুপচাপ বসে আছি, হালকা বাতাস বইছে। চারপাশে পাখির ডাক, দুর থেকে কারও হাসির শব্দ ভেসে আসছে ঠিক তখনই আমাদের গ্রামের এক ছোট ভাই হাতে একগোছা ফল নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমি প্রথমে চিনতে পারিনি। ফলগুলো একদম গোলগাল, লালচে। কাছে এনে যখন হাতে দিল, তখনই যেন একটা হালকা ঝাঁকুনি খেল মনে। এতদিন পর সেই চেনা, প্রিয় ফল - ছাগলনাদি

1000075594.jpg

এই ফলটার নাম অনেকেই জানে না, বিশেষ করে শহরের মানুষেরা। তবে আমাদের মতো গ্রামের ছেলেদের কাছে এই ফল একসময় ছিল গ্রীষ্মকালের সবচেয়ে প্রিয় সঙ্গী। আমি একবার ফলগুলো ভালো করে দেখলাম। ঠিক সেই রঙ, সেই মসৃণ ভাব, আর সেই হালকা টক-মিষ্টি ঘ্রাণ। একটা মুখে দিতেই যেন মনে হলো, আমি ফিরে গেছি অনেক বছর পেছনে সেই সময়ে, যখন গাছ বেয়ে উঠে বন্ধুবান্ধব মিলে ছাগলনাদি খেতাম, চুপিচুপি।আমি ছোট ভাইটিকে বললাম, “আরও আনতে পারবি? একটু বেশি করে আন।” সে কিছু না বলে দৌড়ে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর হাতে আরেকগোছা ফল নিয়ে ফিরে এলো। মনে হলো, ও যেন বুঝে গেছে এই ফলটার মূল্য আমার কাছে কতটা। ফলগুলো হাতে পেয়েই আমি আর দেরি করিনি। একটার পর একটা খেতে শুরু করলাম। কী অদ্ভুত, সেই স্বাদ এখনো ঠিক আগের মতোই আছে একটুও বদলায়নি। বদলেছে গাছ, বদলেছে সময়, কিন্তু এই ফলের স্বাদ আর সেই মুহূর্তের আনন্দ আজও একই।

1000075595.jpg

আমার এই আনন্দের মুহূর্তটা শুধু আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বাড়ির আরও কয়েকজন এসে ফলগুলো দেখল, খেতে শুরু করল। কারও চোখে বিস্ময়, কেউ বলছে, “এটা তো বহুদিন খাইনি!” আবার কেউ কেউ বলছে, “আমাদের সময়ও এই ফল ছিল, এখন আর তেমন দেখা যায় না।” একসাথে বসে, গল্প করতে করতে, ফল খেতে খেতে বিকেলটা একেবারে অন্যরকম হয়ে গেল।আমার মনে হচ্ছিল, কী সহজেই আমরা ছোট ছোট জিনিসে আনন্দ খুঁজে পেতে পারি যদি শুধু একটু মন খুলি। ঈদের ছুটির এই দিনগুলো এমনিতেই আবেগ আর আনন্দে ভরা থাকে। কিন্তু এই বিকেলটা যেন আমার জন্য একরকম ‘ট্রাভেল ব্যাক ইন টাইম’ ছিল। আমি সময়ের নদী পেরিয়ে, শৈশবের সেই ছেলেটার পাশে গিয়েছিলাম, যে গাছের ডালে ঝুলে ফল পাড়ত, মাটি মেখে খেত, আর খাওয়ার পর আঙুল চেটে বলত, “আরেকটা খেতে পারলে মজা হতো!”

1000075007.jpg

গ্রামের সেই পুরনো ছাগলনাদি গাছটা এখন আর নেই, হয়তো হারিয়ে গেছে সময়ের সাথে। কিন্তু এই নতুন গাছ, নতুন ফল, আর সেই পুরনো অনুভূতির ফিরিয়ে আসা, এসব মিলিয়েই আমার এই ঈদের ছুটির বিকেলটা হয়ে উঠেছিল অনন্য। মনে হচ্ছিল, এত বছর পর এই ফল খাওয়ার মধ্যে দিয়ে আমি যেন আমার শৈশবকে আবার ছুঁয়ে দেখছি।

আবার ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়িতে যাব। জানি না তখন আবার ছাগলনাদি পাবো কিনা। তবে গতকালকের সেই বিকেল, সেই স্বাদ আর সেই মুহূর্তের আবেগ আমার সাথে থাকবে অনেক দিন। ছাগলনাদি এখন শুধু একটা ফল নয় এটা এখন আমার ঈদের ছুটির আনন্দের একটা মিষ্টি প্রতীক হয়ে উঠেছে।আপনাদের যাদের এখনো ছাগলনাদি ফলের সাথে পরিচয় হয়নি, তারা আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে পরিচয় হতে পারেন। কারণ এ ফলটি অনেকের কাছেই অজানা।তাই আজকের এই পোষ্টটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করা। আশা করি সবার ভালো লেগেছে।


আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

ফোনের বিবরণ

মোবাইলSamsung A33 (5G)
ধরণ"শৈশব ফিরে আসলো ছাগলনাদি ফলের স্বাদে"
ক্যমেরা মডেলA33 (48+8+5+2)
ক্যাপচার@mohamad786
অবস্থানসিরাজগঞ্জ- বাংলাদেশ

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Sort:  
 4 days ago 

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 3 days ago 

ভাইয়া, আপনার লেখাটি যেন শুধু একটা স্মৃতিচারণ নয়।বরং সময়ের ওপর হেঁটে চলা এক মায়াবী ভ্রমণ। “ছাগলনাদি” ফলের নামটাই যেন এক ঝটকায় আমাদের শৈশবকে সামনে এনে দাঁড় করায়। যেভাবে আপনি মেঘলা বিকেলের পরিবেশ, হালকা বাতাস, আর ছেলেবেলার বন্ধনগুলোর অনুভূতি তুলে ধরেছেন, তা সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। ছোট একটি ফল কতটা গভীর আবেগ জাগাতে পারে, তার চমৎকার উদাহরণ এই পোস্টটি। ধন্যবাদ ভাইয়া পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 3 days ago 

বহুবছর পর আপনার মাধ্যমে এই ফল দেখতে পেলাম।আমাদে এলাকায় এই ফল গুলোকে আমরুল ফল বলে।এই ফল গাছ ঝোপে জঙ্গলে হয়ে থাকে। ছোট ছোট টক স্বাদের ফুল গুলো কতো খেতাম সবাই দল বেঁধে গিয়ে। ছোটবেলায় শুধু এ ফল দেখেছি তারপর থেকে বিলুপ্ত আজ দেখে খুবই ভালো লাগলো।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর ফল নিয়ে লেখা পোস্ট টি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।