২০০৪ সালের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি

in আমার বাংলা ব্লগ14 hours ago

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসি, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি সকলেই ভাল আছেন। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব আমার দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কথা।


flood-123203_1280.jpg

Photo Source


সময়টা ২০০৪ সাল। আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখেছিলাম সেই বছর। তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়তাম। তীব্র বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর যখন আমাদের স্কুলের মাঠ পানিতে ডুবে গেল তখন স্কুল বন্ধ দিয়ে দেয়। বিষয়টা আমাকে বেশ খুশি করেছিল। কারণ স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তখন বন্যা এবং এর ভয়াবহতা সম্পর্কে কোন ধারণা আমার ছিল না।

ধীরে ধীরে আশেপাশের খাল, বিল, পুকুর, নদী ভরে উঠতে থাকে। একপর্যায়ে আমাদের গ্রামের প্রধান সড়ক ব্যতীত বাকি সব কিছুই পানির নিচে তলিয়ে যায়। আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ি প্রধান রাস্তা সমান উঁচু বিধায় বাড়িগুলো উঠান পানির নিচে ছিল না। কিন্তু যাদের বাড়ি কিছুটা নিচু তাদের বাড়িতে পানি উঠে গেল।

চারিদিকে অথৈ পানি। আমাদের বাচ্চাদের জন্য তাদের খুশির বিষয় ছিল। কিন্তু এই পানিতে ভেসে গিয়েছিল অনেকের পুকুরে চাষ করা মাছ। এই পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল আউশ ধান। এই পানি গৃহীন করেছিল অনেককেই। দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম পানির নিচে ছিল। প্রতিদিন ঐ দিনের আলো ফুটলে শুরু হতো জাল দিয়ে মাছ ধরার খেলা। সবাই বিলে জাল ফেলে মাছ ধরত। চাষ করা পুকুরের মাছগুলো উঠতো। সবাই মজা করে খেত। কিন্তু যার পুকুরের মাছ সে তো ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

গ্রামে একটি নদী বহমান ছিল। ডাকাতিয়া নদী, এখনো আছে। আমরা নদী এবং পানি দেখে অভ্যস্ত থাকায় আমাদের তেমন ভয় লাগত না। এমনও হয়েছে, আমাদের ফুফুর বাড়িতে ঘরের মধ্যে পর্যন্ত পানি উঠেছিল। উনারা সেই বাড়িতেই থাকতো। কারণ ঘরে পানি উঠলেও খাটে পানি উঠেনি। ওই অবস্থাতেও তারা ঘরের মধ্যেই জাল পেতে ছিল এবং সেখানে ছোট ছোট অনেক মাছও আটকাতো। শুধু যে তারাই এটা করেছে এমন নয়। যাদের ঘরে পানি উঠে ছিল তারা সবাই এমন কাজ করেছিল।

এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন আর আগের মত খোলা জায়গা নেই। খালগুলো ভরাট হয়ে গিয়েছে। বড় দুটো খাল বাদে, গ্রামে আর কোন খালের অস্তিত্বই নেই। অবশ্য, সৌভাগ্যজনক ভাবে, আমাদের চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদী পূর্ণ জীবনে বেঁচে থাকায় এবং খালগুলো সচল থাকায়, বৃষ্টির পানি আমাদের সেভাবে জমে থাকে না। যার কারণে অনাকাঙ্খিত বদনাও আর হয় না। কোথাও কখনো পানি জমে থাকলেও সেটাকে বন্যা কিংবা ভয়াবহ বন্যার আওতায় ফেলা যায় না।

নদী এবং খালের অঞ্চলে বড় হওয়ায় একটা বিষয় আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি, প্রবাহমান পান ব্যবস্থা সব সময় করে রাখতে হবে। নদী না থাকলেও খাল খনন করে রাখতে হবে। যেখানে এগুলো আছে সেখানে এগুলোর অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় বন্যার পানিতে ডুবতে হবে। এগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিন্তু নিজেদেরও একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে।


PUSSFi_NFT22.png