কার ঈদ কেমন কেটেছে।।
বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য এক অনন্য কমিউনিটি।।
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। তবে সেটা সবার ক্ষেত্রে নয়। যদি মানুষের মাঝে ন্যয়পরাণতা থাকতো,যদি মানুষ ঠিক ভাবে যাকাত,ফিতরা আদায় করতো, যদি দেশের শাষক জনবান্দব হতো তাহলে ঈদ সবার জন্য খুশি বয়ে আনতো। পৃথিবীর সব থেকে বেশি বৈষম্য আমাদের এই বাংলাদেশে। ১,৪৭,৫৭০ বর্গ মাইলেরই এই বাংলাদেশের প্রায় বিশ কোটি মানুষ রয়েছে। এর মধ্যে ১০% মানুষ উচ্চ ধনী। তারা দেশের ভিতরে ঈদ করে না। তারা ঈদ উদযাপন করার জন্য দেশের বাহিরে চলে যায়। তাদের মূল গন্তব্য হলো দুবাই,সিংঙ্গাপুর,মালোয়েশিলা,থাইল্যন্ড। আবার কিছু কিছু মানুষ আছে ইউরোপ,আমেরিকাতেও চলে যায়। তাদের কাছে বাংলাদেশটা বসবাসের জন্য নয়। বরং বাংলাদেশ হলো টাকা কামানোর জন্য। যে কোন উৎসবেই তারা বিদেশ চলে যায়। সেখান থেকেই মাকের্ট করে,সেখানেই উৎসব পালন করে।
আর ২০% মানুষ আছে বড়লোক বা ধনী। তাদের সাধারনত ঢাকা শহরে বাড়ি গাড়ি আছে। তারা তেমন গ্রামের বাড়িতে যায় না। তারা ঢাকাতেই থাকে,ঈদ উপলক্ষে অনেক আনন্দফুর্তি করে। তারা বিভিন্ন শপিং মলে মার্কেট করে। তাদের নিজেদের গাড়ি আছে,ক্রেডিট কার্ড,ডেভিড কার্ড,মাস্টার কার্ড দিয়ে মাকের্ট করে। তারা সবাই ঈদ উপলক্ষ প্রত্যেকটা জিনিষ কমপক্ষে চার পাঁচ জোড়া করে কিনে থাকে। ঈদ উপলক্ষে তারাই বেশি আনন্দ উপভোগ করে। আর বাকি যে ৭০% মানুষ আছে,তাদের মধ্যে কিছু উচ্চ বিত্ত,কিছু মধ্য বিত্ত,কিছু নিম্ন বিত্ত। কেউ চাকরি করে,ছোট খাটো ব্যবসা বানিজ্য করে,কেউ গাড়ি চালায়,কেউ গার্মেন্টস করে। এখানে অধিকাংশ মানুষই জীবন অনেক কষ্টে কাঠে। আর যদি হুট করে কোন পন্যের দাম বেড়ে যায়,তাহলে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
যেমন ধরেন ঈদের আগে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমানে পেঁয়াজ থাকা সত্বেও প্রতিকেজি পেঁয়াজে পনের বিশ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের কাকা বাবুরা কেউ কিছু বলে নাই। ঈদের পরে একটি নিউস শুনেছি কোরবানির ঈদের পরে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব করবে। আজকে পত্রিকা খুলে দেখি কোন কারণ ছাড়াই প্রতি কেজি সয়াবিন তেলে ১০ টাকা করে বেড়েছে। চিন্তা করেন, এই বিষয়েও উপর মহলের কোন প্রতিক্রিয়া নেই। যায়হোক এক বিষয় দিয়ে শুরু করে অন্য বিষয়ের দিকে চলে যাচ্ছি। মূল বিষয়ে ফিরে আসতেছি।
বলতেছিলাম বাকি যে ৭০% মানুষ আছে,তাদের মধ্যে কেউ রয়েছে চাকরিজিবী। তারা ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া দিয়ে,সংসার চালিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হয়। তারপরও যে টাকা বোনাস পায়,সেলারি অবশিষ্ট যে টাকা থাকে, সেটা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নতুন জামা-কাপড় কিনে দিয়ে হাতে তেমন টাকা পয়সা থাকে না। তারা নিজের জন্য এক সেট পাঞ্জাবী পায়জামা ছাড়া আর কিছুই কিনে না। তারা সাধারনত গ্রামের বাড়িতে যায় ঈদ করতে। যারা দিনমুজর বা গার্মেন্টসে কাজ করে তারা শত কষ্ট করে হলেও ফুটপাত থেকে নিজের পরিবারের সদস্যের জন্য জামা কাপড় কিনে নিয়ে যায়। তারা নিজের জন্য তেমন কিছু কিনে না। তারা গত বছরের কাপড় পড়েই ঈদ পালন করে। পরিবার খুশি হলেই তারা খুশি। তারা বেশি হেনস্থার শিকার হয়। বাড়িতে যাওয়া আসার পথে তাদের থেকে অনেক টাকা গাড়ি ভাড়া আদায় করে।
কিছু আছে রিকশা চালক,অটো চালক। তারা ঈদে গ্রামের বাড়ি যায় না। তারা ঈদের সময় ঢাকা শহরে থাকে এক্সট্রা কিছু ইনকাম করার জন্য। তাদের কাছে ঈদ বলে কিছু নেই। তারা ঈদের দিন সকালেও যাত্রী বহন করে। আবার কিছু আছে বড় লোকদের প্রাইবেট ড্রাইভার। বড় লোকরা নিজের ঈদের আনন্দের দিক দিয়ে কোন কমতি দিবে না। তবে ড্রাইভারকে সেলারি দিতে,বোনাস দিতে তাদের কলিজা ফেটে যায়। তারপরও অনেক জামেলা সহ্য করার পরে ঈদের দিন রাতে তাদের হাতে বেতনের ৬০/৭০% টাকা দিয়ে বলবে সব টাকা খরচ হয়ে গেছে। ঈদের পরে এসে বাকি টাকা নিও। চিন্তা করেন ঈদের চাঁদ উঠে গেছে, রাত পোহালে ঈদ সেখানে ড্রাইভার ভাইদের এই হাল অবস্থা। সেখানে আবার বলে দিবে ঈদের একদুই দিন পরেই চলে আসবে। কারন ঈদের পরে ছেলে মেয়েরা অনেক জাগায় ঘুরতে যাবে। আর ড্রাইভারদের ছেলে-মেয়ে স্ত্রী মা-বাবা আত্বীয় স্বজন কেউ নেই।
এই ঈদের সবার মুখে একটি কথাই শুনা যাচ্ছে যে, এই ঈদটা সবার পানসে ভাবে অতিক্রম হয়েছে। কারো ভিতরে ঈদ ঈদ কোন আনন্দ নেই। অন্যান্য ঈদে যে আনন্দ করেছে, এই ঈদে তার কিছুই হয়নি। জামা-কাপড় নিত্যপণ্যের দাম বেশি হওয়ার কারনে কারো মন সন্তুুষ্ট করা যাচ্ছে না। প্রত্যেকটা মানুষের চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে কেউ খুশি না। গার্জিয়ানরা চাহিদা অনুযায়ী দিতে পারছে না,তাই তাদের মন খারাপ আর যারা পাবে তারা চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছে না। তাই তাদের মন খারাপ। ঠিক ভাবে ঈদ পালন হচ্ছে না। আর যারা ফুটপাতে বস্তিতে থাকে তাদের কথা কি বলবো। তারা মনে করে আমাদের জীবনে কোন ঈদ নেই। যেখানে যা পায় তাই খায়,যেখানে রাত হয় সেখানেই ঘুমায়। আমাদের দেশের কর্তাদের কাছে তাদের দিকে তাকানোর কোন সময় নেই।
কারো স্বদেশের ঈদ পালন ভালো লাগে না তাই বিদেশ চলে যায়। আর কেউ দেশেও ঈদ পালন করতে পারে না, পেটের দায়ে ঈদের দিনও কাজ করতে হয়। কেউ ঈদে একটিও জামা কিনতে পারে না আর কেউ ঈদের দিন কোন জামাটা পড়বে সেটা বুঝতে পারে না। কেউ ছেলে মেয়েকে ক্রেডিট কার্ড,ডেভিড কার্ড দিয়ে দেয় আনলিমিটেড খরচ করার জন্য আবার কেউ ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পরেও বেতন বোনাস পায় না। কেউ ঈদের দিন সেমাইয়ের পরিবর্তে চাইনিজ বা বিদেশি খাবার খায় আবার কারো সেমাই চিনি কেনার টাকাও নেই। কারো ঈদ কাটে রাস্তায়,গাছ তলায় আবার কারো ঈদ কাটে পাঁচ তলায় দশ তলায়। যায়হোক যেটা চলে যায় সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা না করাই ভালো। ভবিষ্যতের ঈদ যেন সবার জীবনে সুখ শান্তি বয়ে আনে,সেই কামনা করেই আজকে বিদায় নিলাম।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা,ডিজাইন করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
Thank you, friend!


I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
আলহামদুলিল্লাহ এবার ঈদটা মোটামুটি বেশ ভালই হয়েছে। সবথেকে ভালো লেগেছে আমার সন্তানের সাথে এ বছর প্রথম ঈদ পালন করতে পেরে। তবে আপনি ঠিক কথাই বলেছেন অনেকে ই এইটা খুবই খারাপের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত করেছে। আমার কাছে তো মনে হয় বর্তমান যুগে যার টাকা আছে সেই সব থেকে বেশি সুখী। এখন সমাজ এরকম হয়ে গেছে যার টাকা বেশি তার সম্মান বেশি। আপনার কার ঈদ কেমন কেটেছে পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া এরকম সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপহার দেওয়ার।
জী আপু এই যুগে সম্মানটা আসে টাকা পয়সার উপর নির্ভর করে। ধন্যবাদ।
আজকে আপনি আমাদের মাঝে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। যেখানে চাকরিজীবী মানুষের জীবন আর অন্যান্য বিষয় নিয়ে উপস্থাপন করেছেন আপনার লেখা। আসলে যারা ঢাকায় চাকরি করে তারা যা বেতন পায় আর ঈদের বোনাস পায় সব মিলে কিন্তু তাদের আর্থিক খরচ মিটিয়ে কোনমতে সবাইকে খুশি করার জন্য ঈদ উপলক্ষে নতুন কিছু কিনে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমি যতটা জানি পুরুষরা সবদিকে সমান দৃষ্টি দেখে খরচ করার চেষ্টা করে তাই হিমশিম বেশি খায়। আবার অনেক সময় অনেক কথা সম্মুখীন হতে হয় তাদের। যাহোক বিস্তারিত সুন্দর একটি আলোচনা করেছেন ঈদ উপলক্ষে পড়ে ভাল লাগল। মোটামুটি আমারও ঈদের দিন ভালই কেটেছে পরিবার নিয়ে।
জী আপু সব শ্রেণী পেশা মানুষের জীবন চিত্র ও ঈদ নিয়ে ব্লগটি সাজিয়েছি। ধন্যবাদ।
বাস্তবতা সম্পুর্ন একটি পোস্ট তুলে ধরেছেন ভাই। আপনার এধরনের লেখা আমার কাছে ভালো লাগে। আল্লাহর রহমতে পরিবার নিয়ে সুন্দর ভাবে আনন্দ উপভোগ করেছি। চমৎকার কিছু যুক্তি তুলে ধরেছেন। আপনার লেখা থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো ভালো থাকবেন।
অনেক চিন্তা ভাবনা করে বাস্তব ভিত্তিক ব্লগ লেখার চেষ্টা করি। উৎসাহ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভোজ্য তেলের দাম বাড়লে এটা সরকারের লাভ। কারণ তারা ভ্যাট টেক্সট পাবে তার জন্যই। সবকিছু হচ্ছে সরকারের সহযোগিতায় করে থাকেন করার কিছু নেই কিনতে হবে খেতে হবে। ঈদ যার যেখানে যেমনি হয় সবাই কিন্তু বেশ আনন্দ করে। বড় লোকেরা পাঁচ জোড়া কাপড় কিনে যে আনন্দ করে। গরিব মানুষেরা এক জোড়া কাপড় কিনে একই আনন্দ করে। আমি মনে করি প্রত্যেকটা মানুষের কাছে ঈদের দিনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমারও বেশ আনন্দের সাথে ব্যস্ততাই সময় কেটেছে। অনেক ধন্যবাদ সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করলেন।
জী আপু ঈদ যেমন সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ঈদ উপলক্ষে সবার দায়িত্বও আছে। ধন্যবাদ।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন ভাই, হ্যাঁ এখনো ঢাকা শহরে একশ্রেণীর মানুষ আছে যারা ঈদের আনন্দ মাটি করে কিছু বাড়তি অর্থ রোজগার করার উদ্দেশ্যে ঢাকা শহরে থেকে যায়। বা ছোট কোন চাকরি করে আর সেখান থেকে ছুটি না পেলে পরিবার থেকে দূরে থাকে মনে হয় তাদের কপালে আর ঈদের আনন্দ নেই। এই মানুষগুলোই আসল যোদ্ধা।
ভাইয়া জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে হলে কত কিছু করতে হয়। সবার জীবনে ঈদ মানে আনন্দ না। ধন্যবাদ।