প্রাণের বিদ্যালয় যখন ধ্বংসের মুখে( শেষ পর্ব )।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
গত দুই পর্বে আমি আমার মাধ্যমিক বিদ্যালয় কুমারখালী এম এন পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সৃষ্টির ইতিহাস এবং অবস্থা সম্পর্কে লিখেছিলাম। বিদ্যালয়টা কেন ধ্বংসের মুখে আজ আমি এই বিষয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলব। কুমারখালী এম এন পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল বয়েজ স্কুল। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে এখানে মেয়ে ভর্তি শুরু করা হয় এবং নামকরণ করা হয় কুমারখালী এম এন পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বলা যায় সমস্যার শুরু ওখান থেকেই। ১৬০ বছরের একটা পুরানো বয়েজ স্কুলে মেয়েদের ভর্তি নেওয়ার সিদ্ধান্ত টা যে মোটেই ভালো ছিল না সেটা অনেকেই বুঝতে পেরেছিল। এবং কয়েকবছর যেতেই সেই অবস্থা টা বেশ পরিষ্কারও হয়ে যায়। মেয়ে ভর্তি করার পর পরিবেশ অবস্থা অনেক টাই বদলে যায়। অসংখ্য ছেলেদের মধ্যে সামান্য কিছু মেয়ে। যদিও কোনো ছেলে কতৃক কোনো মেয়েকে ইভটিজিং করার ঘটনা কখনো ঘটেনি। তবে যতদিন শহিদুল ইসলাম স্যার ছিলেন ততদিন বিদ্যালয়ের পরিবেশটা ঠিক করে রেখেছিলেন।
২০১৮ সালে শহিদুল স্যার চলে যায় অবসরে। এরপর প্রধান শিক্ষক হয় সহকারী প্রধান শিক্ষক ফিরোজ আহমেদ বাশার স্যার। শহিদুল স্যার অনেক কঠোর ছিলেন সেজন্য তার অবসরে ছাএ শিক্ষক সবাই খুশি হয়েছিল। কিন্তু তিনি যে কতটা ভালো ছিলেন এই বিদ্যালয়ের জন্য কতটা করেছিলেন সেটা এখন সবাই বুঝে। বাশার স্যার প্রধান শিক্ষক হওয়ার পরপরই আমরা স্কুল থেকে বিদায় নেয়। তারপর শুনি ক্রমেই নাকী স্কুলের অবনতি হচ্ছে। স্কুলের পরিবেশ নষ্ঠ হচ্ছে। কারণ বাশার স্যার ছিল একটু নরম এবং শান্ত প্রকৃতির। সেজন্য কাউকে কিছু বলত না তারই সুযোগ নিত কিছু সুবিধাবাদী শিক্ষক এবং স্কুলের কমিটির সদস্যরা। বাশার স্যার এর এই সরলতার সুযোগ নিয়ে স্কুল কমিটির সদস্যরা টাকা নিয়ে নিজেদের ভাই ভাতিজা আত্মীয়দের শিক্ষক হিসেবে চাকরি দেয়। যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্ধিহান আছে। তারপর ঐসব শিক্ষক ঠিকমতো ক্লাস নেয় না। এবং নিজেদের ক্ষমতা জাহিরের চেষ্টা করছে।
এতো গেল স্কুলের শিক্ষক এবং কমিটির সদস্যদের কথা। এবার ছাএদের কথা বলি। আমাদের এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও ছাএ রাজনীতি ঢুকে গেছে। তাদের আবার দুইটা পক্ষ আছে একটা হলো এমপি গ্রুপ এবং অন্যটা হলো উপজেলা চেয়ারম্যান গ্রুপ। দুজনই বর্তমান বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের নেতা। স্কুলে এই ছাএদের মধ্যে প্রায়ই মারামারি লেগে থাকে। এটা আমি প্রায়ই শুনি। এছাড়া শুনলাম কিছুদিন আগে নাকী বেশ কিছু ছাএের ব্যাগে ছোট ধারালো অস্ত্র পাওয়া গেছে। আপনারা ডাসা বা চাপাতি চিনে থাকতে পারেন। বেশ কিছু ছাএের ব্যাগে ছিল এইরকম ধারালো অস্ত্র। তাহলে একবার ভেবে দেখুন স্কুলের পরিবেশ কত নিচে নেমে গেলে এই অবস্থা হয়। ছাএরা করবেই বা না কেন। কারণ ছাএদের এই কাজে মদদ দিচ্ছে কিছু শিক্ষক।
শহিদুল স্যার থাকতে স্কুলে কোনো রাজনৈতিক দল পাওা পেত না। কিন্তু তিনি এখন নেই। বাশার স্যার কিছু বলে না। সেজন্য অধিকাংশ শিক্ষক সেই সুযোগ নেওয়া শুরু করেছে। এখন প্রায়ই দেখি চারটার বদলে দুপুরেই স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। কারণ কী জানেন। কারণ কোনো রাজনৈতিক দলের সমাবেশ আছে বা এমপি ঢাকা থেকে কুমারখালী আসবে তাকে এগিয়ে নিয়ে আসতে যেতে হবে। সেজন্য স্যার রা যাবে ক্লাস কে নিবে বলেন?? সেজন্য স্যার রা স্কুল ছুটি দিয়ে ঐসব নেতার পেছনে ছুটে বেড়ায়। আমার এখন মাঝে মাঝে লজ্জা লাগে ভাবতে যে আমি এদের ছাএ ছিলাম উনারা আমার শিক্ষক। উনাদের মাঝে যদি ভালো মন্দ জ্ঞান না থাকে তাহলে ছাএরা কীভাবে শিখবে বলেন। তারাও তো ঐ পথেই যাবে। এর ফলাফল পড়েছে সরাসরি শিক্ষার্থীদের ফলাফলে। এছাড়াও কোচিং বানিজ্য তো রয়েছেই। স্যার রা ক্লাসে ঠিকমতো পড়াক বা না পড়াক কিন্তু তারা খুলে রেখেছে কোচিং সেন্টার। কারণ স্যার রা জানে ক্লাসে না পড়ালে ছাএদের শেষ গন্তব্য আমাদের প্রাইভেট কোচিং সেন্টার গুলো। এবার আপনারাই ভেবে দেখুন আমার প্রাণের বিদ্যালয় কুমারখালী এম এন পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা টা কতটা করুন।
------- | ------ |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @emon42 |
ডিভাইস | VIVO Y91C |
সময় | ডিসেম্বর,2021 |
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
সত্যি যখন নিজের স্কুলের এরকম পরিণামের কথা আপনি শুনেছেন তখন আপনার কাছে জেনে কি রকম লেগেছে আমি তা জানি না কিন্তু আমার কাছে তো ভীষণ খারাপ লেগেছে আপনার স্কুলের কথা শুনে। সত্যি ছাত্রদের ব্যাগে যখন ছোট ধারালো অস্ত্র থাকে তাহলেই বোঝা যাচ্ছে কি রকম অবস্থায় রয়েছে আপনারদের স্কুল। যেখানে শিক্ষকরা এরকম সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা এরকম হবে আর।
দুখের বিষয় হলেও সত্য এখন অনেক স্কুলের অবস্থায় এই রকম আজ থেকে ১০ বছর আগেও যেখানে পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোন শব্দ উচ্চারণ হয়নি সেখানে আজ পড়াশোনা ছাড়া সব কিছুর ই যেন ভাল পরিবেশ । নিজের এত স্বাদের স্কুল নিয়ে ভাবতেও আজ লজ্জা বোধ হয় । আশাকরি এর থেকে খুব দ্রুতই আমাদের স্কুল গুলো রক্ষা পাবে ।
আপনার স্কুলের প্রথম পর্ব টা আমি পড়েছিলাম। আপনাদের স্কুলটা সত্যি ভীষণ ভালো ছিল। কিন্তু বয়েজ স্কুলে বালিকাদেরকে কেন ভর্তি করানো হলো। আর শহিদুল স্যার কিন্তু ভালো ছিল। আসলে যে স্যার একটু কঠোর কিংবা সবকিছুতে স্ট্রেট হয় কেউ তাদেরকে সহ্য করতে পারে না। কিন্তু তারা যে ভালো চায় এটাই বুঝতে পারে না। আর বর্তমানে এরকম অবস্থা হয়েছে শুনে খুবই খারাপ লাগলো। বিশেষ করে শিক্ষকরা বর্তমানে রাজনীতিবিদদের পিছনে ছুটছে বিষয়গুলো শুনে ভীষণ খারাপ লাগলো।
বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন আর মনুষত্ববোধ মানবিক মানুষ হওয়া শিক্ষা দেওয়া হয় না। এটি আমাদের দেশের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে খুবই ভয়ঙ্কর অধ্যায়। পোস্টে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য, আসলে আপনার পোস্টটি পড়ে জানতে পারলাম যে একজন কঠোর এবং একজন নরম মেজাজের নেতৃত্বের মধ্যে কতটা পার্থক্য। শহিদুল স্যার হয়তো বুঝতে পারতেন যে আমি যদি কোন রকম ছাড় দেই তাহলে সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাবে তাই সে কঠোর ছিলেন, কিন্তু বাশার স্যার হয়তো বিষয়টি অন্যভাবে দেখেছেন যার কারণে এমনটি হয়েছে। আর ছাত্র রাজনীতি এখন সবখানে ঢুকে গেছে যার জন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটা স্কুলের ছাত্রদের ব্যাগে অস্র সেটা কিন্তু খুবই দুঃখজনক।