ধর্ম ব্যবসা কী? ইসলামে ধর্ম ব্যবসার বিভিন্ন রূপ
ধর্ম ব্যবসা কী?
ধর্ম ব্যবসা বলতে সেই কর্মকাণ্ডকে বোঝানো হয়, যেখানে ধর্মকে ব্যবহার করে আর্থিক বা পার্থিব স্বার্থ হাসিল করা হয়। ইসলাম একটি পবিত্র জীবনব্যবস্থা, যেখানে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যখন কেউ ধর্মীয় জ্ঞান, আমল বা শিক্ষা ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থে সম্পদ উপার্জন করে, তখন তা ধর্ম ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত হয়।
ইসলামে ধর্ম ব্যবসার বিভিন্ন রূপ:
নিচে কয়েকটি সাধারণ ধর্ম ব্যবসার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলো—
- ইমামতি করে বেতন গ্রহণ করা – অনেকে মসজিদের ইমামতির জন্য নির্দিষ্ট বেতন নেন। যদিও ইমামের প্রয়োজন মসজিদ পরিচালনার জন্য, তবে এটিকে পেশা বানিয়ে নেওয়া এবং ধর্মীয় কাজের বিনিময়ে দুনিয়াবি লেনদেন করা ধর্ম ব্যবসা।
- ওয়াজমাহফিল করে মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করা – অনেক বক্তা ইসলামের শিক্ষা প্রচারের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা দাবি করেন এবং বিশেষ সুবিধা ছাড়া ওয়াজ করতে যান না। ইসলামের দাওয়াত দেওয়া একটি ইবাদত, এটিকে ব্যবসায় পরিণত করা ধর্ম ব্যবসার বড় উদাহরণ।
- তাবিজকবচ বিক্রি করে উপার্জন করা – অনেক ব্যক্তি ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠান বা তাবিজকবচ বিক্রির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করেন, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
- মাজার, পীরমুরিদ প্রথার মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ – অনেক পীর বা ধর্মীয় নেতা অনুসারীদের কাছ থেকে নানাভাবে দানচাঁদা সংগ্রহ করেন এবং নিজেদের আধ্যাত্মিক শক্তির অপব্যবহার করে টাকা কামান।
- ধর্মীয় কার্যকলাপকে বাণিজ্যিকীকরণ – ধর্মীয় সেবা (যেমন—দোয়া, ঝাড়ফুঁক, হজওমরা ব্যবস্থাপনা) এমনভাবে পরিচালনা করা যাতে তাতে শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনের লক্ষ্য থাকে, এটিও ধর্ম ব্যবসার মধ্যে পড়ে।
ধর্ম ব্যবসার ফলে ইসলামের ক্ষতি:
- সত্য ধর্মীয় জ্ঞান বিকৃত হয় – ধর্ম ব্যবসায়ীরা অনেক সময় ইসলামের মূল শিক্ষাকে বিকৃত করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেন।
- গরিব ও সাধারণ মানুষ প্রতারিত হয় – অনেকে দোয়া, তাবিজ বা বিশেষ ক্ষমতার আশ্বাস দিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নেয়।
- ইসলামের পবিত্রতা নষ্ট হয় – যখন ধর্মের প্রচারকরা অর্থলোভী হয়ে ওঠেন, তখন ইসলাম মানুষের কাছে অবিশ্বাস্য হয়ে ওঠে।
- অসৎ ব্যক্তিরা ধর্মীয় স্থানে আধিপত্য বিস্তার করে – যখন ধর্মকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তখন আসল আলেম ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা পিছিয়ে পড়ে, আর লোভী ও প্রতারকরা সামনে চলে আসে।
- ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বাড়ে – অমুসলিমরা এবং ইসলামের শত্রুরা সুযোগ নেয় যে, ইসলামের নেতারা অর্থলোভী এবং স্বার্থপর।
ধর্ম ব্যবসায়ীদের জন্য আল্লাহর শাস্তি
- আল্লাহর আয়াত বিক্রির শাস্তি:
"যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার ও তাদের শপথ স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে, তাদের জন্য আখিরাতে কোনো অংশ নেই, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদের পবিত্রও করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।" (সূরা আলে ইমরান: ৭৭) - দুনিয়ায় ধ্বংস এবং লাঞ্ছনার শাস্তি:
"অতঃপর তাদের দুর্ভোগ! যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে, তারপর বলে—'এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে'—যাতে তারা এর বিনিময়ে স্বল্প মূল্যে কিছু পেতে পারে। তাদের হাত যা লিখেছে, তার জন্য দুর্ভোগ! আর তারা যা অর্জন করেছে, তার জন্য দুর্ভোগ!" (সূরা বাকারা: ৭৯) - ইসলামকে বিকৃত করে যারা ব্যবসা করে, তারা জাহান্নামে যাবে:
"যারা কুফরি করে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে, তাদের কর্মসমূহ তিনি (আল্লাহ) নিঃফল করে দেন।" (সূরা মুহাম্মাদ: ১) - সুদখোর এবং প্রতারকদের মতো শাস্তি:
"যারা মানুষকে সত্য ধর্ম থেকে দূরে সরিয়ে মিথ্যা প্রচার করে এবং নিজে লাভবান হয়, তারা যেন দুনিয়াতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং আখিরাতে কঠিন শাস্তি পায়।"
উপসংহার
ইসলাম একটি পবিত্র ধর্ম, যেখানে ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে দুনিয়াবি লাভের চিন্তা করা নিষিদ্ধ। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা উচিত, অর্থের জন্য নয়। যারা ইসলামের দাওয়াত, ইবাদত, বা ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবহার করে ব্যবসা করে, তারা বড় ধরনের গুনাহগার এবং কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। তাই, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনোভাবেই ধর্মকে ব্যবসার উপকরণ না বানাই।