"ধানের খেঁড় দিয়ে সাপ তৈরি ও ছোটবেলার হারানো শৈশবের গল্প "।।

🥰.. আসসালামুয়ালাইকুম ...🥰

প্রিয় হিন্দু ভাই-বোনদের জন্য আদাব ও ভালোবাসা 💗🙏। আমার প্রিয় আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সকল বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্নেহ। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি, মহান আল্লাহর রহমতে এবং একে অপরের ভালোবাসায় আপনারা সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমিও বেশ ভালো আছি।আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির একজন সদস্য,এই প্ল্যাটফর্মের সাথে আমার যাত্রা প্রায় এক বছর ধরে। সত্যি বলতে, এখানে আসতে পেরে আমার মনে হচ্ছে ! যেন নিজের আর একটি নতুন পরিবার খুঁজে পেয়েছি। প্রতিটি লেখা, প্রতিটি মন্তব্য, প্রতিটি বন্ধুত্ব আমাকে দিয়েছে আনন্দ, ভালোবাসা এক নতুন অধ্যায়ের স্বাদ।আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো "ধানের খেঁড় দিয়ে সাপ তৈরি ও ছোটবেলার হারানো শৈশবের গল্প "।আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক অনেক ভালো লাগবে। চলুন এবার শুরু করা যাক।

শৈশব মানেই অনেক মধুর স্মৃতি। গ্রামের খোলা মাঠ, ধান কাটার মৌসুম, আর ধানের খেড় দিয়ে বানানো ছোট ছোট খেলনা সবই ছিল আনন্দের এক বিশাল ভাণ্ডার। শৈশবের কথা মনে পড়লেই হৃদয় জুড়ে একরাশ উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে সেই দিনগুলো, যেগুলো কাটত চাচাতো ভাইবোনদের সঙ্গে মিলে হইহুল্লোড় করে । সেসব স্মৃতি আজও যেন রঙিন হয়ে আছে মনের অন্দরে। ধান কাটার সময় ছিল আমাদের জন্য এক উৎসব। মাঠভরা ধান, আশপাশে খড়ের গন্ধ, আর তার মাঝেই পড়ে থাকা খেঁড়গুলো যেন আমাদের হাতে খেলনার মতো এসে ধরা দিত। বাজার থেকে খেলনা কেনা হতো না বরং প্রকৃতির দেওয়া জিনিস দিয়েই বানিয়ে নিতাম আমরা নিজের মতো সৃষ্টিশীল আনন্দ।

একদিন এমনই এক ধানের মৌসুমে আমরা চাচাতো ভাইবোনেরা মিলে ঠিক করলাম খেঁড় দিয়ে সাপ বানাবো। কেউ খেঁড় তুলছে, কেউ সোজা করে নিচ্ছে, কেউ গাঁট বাঁধতে সাহায্য করছে, আবার কেউ একেকবার ভুল করে হেসে গড়িয়ে পড়ছে। সেই সব মুহূর্ত আজও কানে বাজে। কত মনোযোগ দিয়ে আমরা খেঁড় বেছে নিতাম । যেন গাঁট বাঁধার সময় ভেঙে না যায়। সেই খেঁড় গুলো দিয়ে বুনন শুরু করতাম। প্রথমে ক্রস করে গাঁট বাঁধা, তারপর ধীরে ধীরে একটির ওপর আরেকটি রেখে সাপের মাথার আকার দেওয়া।

একবার যখন ঠিকঠাক বুনতে শুরু হতো, তখন সবাই মিলে ঘিরে বসে যেতাম। যে বানাতে জানতো, সে শেখাত অন্যদের। ছোট ছোট হাত আর সরু খেঁড়ের ঘোরানো গাঁটগুলো একসময়ে জটিল কিন্তু সুন্দর এক নকশায় পরিণত হতো। তখন তো আর মোবাইল ছিল না, ছবি তোলার চিন্তাও ছিল না। কিন্তু আজ যখন আবার হাতে খেলতে খেলতে সেই কাজটা করলাম, মনে হলো আহা! যদি তখনকার সেই দৃশ্যগুলো কিছু একটা দিয়ে ধরে রাখতে পারতাম। আজ অনেকদিন পর সেই পুরোনো স্মৃতিকে আবার নতুন করে জাগিয়ে তুললাম। ধানের খেড় পেয়ে আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না। হাতের কাজটা আবার শুরু করলাম।

শুরুতে কয়েকটি সরু খেড় বেছে নিলাম। অবশ্য খেয়াল রাখতে হয় যেন খেড়গুলো খুব শুকনো না হয়, নইলে ভেঙে যাবে। আবার বেশি নরম হলেও ভালো গাঁট বাঁধা যায় না। একদম মাঝারি শক্তির খেড়ই সবচেয়ে ভালো। এবার দুইটা খেড় ক্রস করে বুননের গোড়া শুরু করলাম। সেই ছোটবেলার অভিজ্ঞতা আজও ভুলিনি। আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে খেঁড়গুলোকে পার করে জটিল এক নকশা তৈরি হতে থাকল। ধীরে ধীরে গাঁটগুলো শক্ত করে বাঁধতে লাগলাম, যেন উল্টে না যায়, ছিঁড়ে না যায়। অনেকটা ধৈর্য ধরে হাতের কাজ করতে হয়। একবার একদিকে, একবার অন্যদিকে ঘুরিয়ে বুননের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হয়। কী মজা লাগছিল! যেন ফিরে গেলাম সেই স্কুল ছুটির দুপুরে, যখন একদিকে ধান মাড়াই চলছে, অন্যদিকে আমরা মাটিতে বসে খেঁড় বুনে খেলনা তৈরি করছি।

খুব সাবধানে ধাপে ধাপে যখন কাজ এগোতে লাগল, তখন দেখতে পেলাম সেই চেনা ত্রিভুজাকৃতি রূপটা, যা ছোটবেলায় আমরা বলতাম “সাপের মুখ”। তারপর পেছনের অংশে লম্বা দাগের মতো খেঁড় গুলো রেখে দিলাম, যেন সাপের লেজ। কাজটা যত এগোয়, মনের ভেতরে ততই যেন একটা অদ্ভুত আনন্দ খেলা করতে লাগল। যেন ছোট্ট একটা সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে শৈশবকে আবার ছুঁয়ে ফেললাম। হাতে থাকা সাপটা তৈরি হয়ে যখন একবার তাকিয়ে দেখলাম, তখন মনে হলো কত বছর পরে এমন করে কিছু বানালাম! মোবাইল, ইন্টারনেট, কাজের ব্যস্ততা এসবের ভিড়ে এমন হাতে বানানো জিনিস যেন একেবারেই ভুলে গেছি।

আজ এত বছর পর আবার হাতে খেলাম খেঁড় দিয়ে। সেই পুরনো স্মৃতিগুলো যেন একে একে ফিরে এলো। চাচাতো ভাইবোনদের সঙ্গে কাটানো শৈশব, মাঠে দৌড়ঝাঁপ, খেঁড় জোগাড় করা থেকে শুরু করে কারটা সবচেয়ে সুন্দর হলো সেটা নিয়ে হালকা মনোমালিন্য সবকিছুই যেন জীবন্ত হয়ে উঠল চোখের সামনে। আজ একা হাতে বানালেও মনটা যেন ভরে গেল সেই পুরোনো মুখগুলোর কথা ভেবে, যাদের সঙ্গে মিলে এই আনন্দ শিখেছিলাম।এই খেঁড়ের সাপ শুধু একটা খেলনা নয়, এটা হলো আমাদের শৈশবের এক টুকরো ধন, যেটা সময়ের সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে। আজকের প্রজন্ম হয়তো জানেই না, কীভাবে প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে আমরা এমন সব আনন্দ পেতাম। অথচ একটু সময় নিয়ে যদি তাদেরও শেখানো যায়, তাহলে হয়তো তারাও খুঁজে পাবে নতুন এক শিকড়ের আনন্দ।

এই সাপ বানানো আমার কাছে শুধু একটি হাতের কাজ নয়, বরং এটা আমার জীবনের এক স্মৃতির থলে, যেখানে রয়েছে চাচাতো ভাইবোনদের হাসি, ভালোবাসা আর একসাথে বড় হয়ে ওঠার গল্প।

ধাপে ধাপে সাপ বানানোর প্রক্রিয়া:

📸 প্রথম ধাপ :-

প্রথমে সমান আকৃতির কয়েকটি খেড় বেছে নিলাম।

📸 দ্বিতীয় ধাপ :-

এরপর চারটি খেড় ক্রস করে বুনতে শুরু করি। এটি হবে সাপের মাথার শুরুর অংশ।

📸 তৃতীয় ধাপ :-

ধীরে ধীরে একটির ওপর একটি রেখে বুনতে থাকি। এই সময় সঠিকভাবে ভাঁজ করে গিঁট দেওয়া জরুরি।

📸 চতুর্থ ধাপ :-

এরপর একটি করে খেড় নিয়ে একটু একটু করে বুনতে থাকি। খেয়াল রাখতে হয় যেন প্যাটার্নটি ঠিকঠাক হয় এবং গাঁটগুলো শক্ত হয়।

📸 পঞ্চম ধাপ :-

এবার দেখতে পাচ্ছেন, ত্রিভুজাকৃতির একটি খোপ।যা সাপের মাথা ও শরীরের কাঠামো তৈরি হয়েছে।

📸 শেষের ধাপ :-

বাকি অংশে গোঁফের মতো সরু খেড় গুলো রেখে শেষ করি। সাপের মতোই দেখতে হয় যেন জীবন্ত মনে হয়।

এই সাপটি শুধু একটি খেলার মতো মনে হলেও, এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে আমাদের সংস্কৃতি, স্মৃতি আর হাতের শিল্পের মাধুর্য। এখনকার শিশুদের হয়তো এই অভিজ্ঞতা নেই, তাই ইচ্ছা করেই আবার শুরু করলাম এই চর্চা। হয়তো একদিন ওদেরও শিখাবো এই আনন্দের কাজ।গ্রামীণ জীবনের এমন ছোট ছোট সৃষ্টিশীল কাজগুলো আমাদের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নেয়। সময় থাকলে আপনিও একবার চেষ্টা করে দেখুন। শৈশবের ছোঁয়া পেয়ে যাবেন নিশ্চিত। 😊

এই ছিল আজকের ব্লগ । আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।কার কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্টের মন্তব্য করে জানাবেন। কোন ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি, আবার নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইল ।

আমার নাম মোছাঃ সামছুন্ নাহার সুইটি । আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক । আমি আমার মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করি । আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছি । আমি গত ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই । এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি ।আমি ভ্রমণ করতে অনেক বেশি পছন্দ করি।সেই সাথে নতুন নতুন ফটোগ্রাফি করতে ও ইউনিক রেসিপি এবং নতুন নতুন ইউনিক ডাই তৈরি করতে বেশ পছন্দ করি । আর স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যেতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।