দীপাবলী বলতে আমরা কি বুঝি

in আমার বাংলা ব্লগ6 months ago

নমস্কার বন্ধুরা,


আশা করি সবাই ভালো আছেন।সুস্থ আছেন।আজ আমি আপনাদের সঙ্গে দীপাবলী সর্ম্পকে কিছুটা আলোকপাত করবো।

WhatsApp Image 2024-10-22 at 01.08.46 (1).jpeg

Image created by OpenAI


দীপাবলি বা দিওয়ালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য অন্যতম বৃহত্তম এবং গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যা প্রধানত ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলসহ নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং অন্যান্য হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত দেশগুলোতে পালিত হয়। এটি পাঁচ দিনব্যাপী একটি উৎসব, যেখানে প্রতিটি দিন আলাদা আলাদা গুরুত্ব বহন করে। দীপাবলি সাধারণত আশ্বিন মাসের (অক্টোবর-নভেম্বর) অমাবস্যা তিথিতে পালিত হয়।

দীপাবলির উৎসবটি মূলত আলোর উৎসব হিসেবে পরিচিত, এবং এর পেছনে নানা ধরনের পৌরাণিক কাহিনি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীপাবলি উদযাপনের পেছনে বিভিন্ন ধর্মীয় কাহিনী রয়েছে, যা অঞ্চলভেদে আলাদা হতে পারে। নিচে এই উৎসবের কিছু প্রধান দিক এবং কাহিনিগুলো আলোচনা করা হলো:

পৌরাণিক কাহিনী

  1. রামচন্দ্রের অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন: সবচেয়ে বিখ্যাত কাহিনী হলো, রামচন্দ্র ১৪ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় ফিরে এসেছিলেন। রাবণকে বধ করে সীতা এবং লক্ষ্মণের সঙ্গে রাম যখন অযোধ্যায় ফিরে আসেন, তখন অযোধ্যাবাসী পুরো শহরকে আলোকিত করে তাঁকে বরণ করেন। সেই ঘটনাকে স্মরণ করেই দীপাবলি উদযাপন করা হয়।

  2. লক্ষ্মী দেবীর পূজা: দীপাবলির সময় লক্ষ্মী দেবীর পূজা করা হয়, কারণ এটি বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনেই দেবী লক্ষ্মী সমুদ্র মন্থন থেকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ধন-সম্পদ ও সৌভাগ্যের দেবী হিসেবে পূজিত হন। এই উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা নতুন হিসাব খোলা এবং আর্থিক সমৃদ্ধির জন্য লক্ষ্মী পূজা করে থাকেন।

  3. কৃষ্ণ এবং নারকাসুর বধ: কিছু অঞ্চলে বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনেই শ্রীকৃষ্ণ দানব নারকাসুরকে বধ করেছিলেন, যিনি মানুষের উপর অত্যাচার করতেন। সেই বিজয়ের উদযাপন হিসেবেও দীপাবলি পালন করা হয়।

  4. বসুধর্মী কাহিনী: জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দীপাবলির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে, কারণ এই দিনেই মহাবীর জ্ঞান লাভ করেন এবং মোক্ষ লাভ করেন।

দীপাবলির পাঁচটি দিন

দীপাবলি উৎসব পাঁচ দিনব্যাপী পালিত হয়, এবং প্রতিটি দিনের আলাদা আলাদা তাৎপর্য রয়েছে:

  1. ধনতেরাস: দীপাবলির প্রথম দিন ধনতেরাস নামে পরিচিত। এই দিনটি ধন ও সমৃদ্ধির দেবতা কুবের এবং স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ধন্বন্তরি দেবতার পূজা করা হয়। এই দিনে নতুন ধাতু (বিশেষত সোনা বা রূপা) কেনা শুভ মনে করা হয়।

  2. নারক চতুর্দশী বা ছোট দিওয়ালি: দ্বিতীয় দিনকে "ছোট দিওয়ালি" বলা হয়। এই দিনে কৃষ্ণ দানব নারকাসুরকে বধ করেছিলেন। এটি আত্মশুদ্ধির দিন হিসেবে পালিত হয়।

  3. লক্ষ্মী পূজা: দীপাবলির তৃতীয় দিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনটি দেবী লক্ষ্মীর পূজার জন্য নিবেদিত। সন্ধ্যায় লক্ষ্মীর পূজা করা হয় এবং বাড়িতে প্রদীপ জ্বালানো হয়। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, দেবী লক্ষ্মী এই রাতে ঘরে ঘরে ভ্রমণ করেন এবং যারা পরিচ্ছন্নতা এবং পূজা-অর্চনা করেন, তাঁদের বাড়িতে প্রবেশ করেন।

  4. গোবর্ধন পূজা বা পাড়োয়া: দীপাবলির চতুর্থ দিনটি গুজরাটে গোবর্ধন পূজা এবং উত্তর ভারতে পাড়োয়া নামে পরিচিত। এটি কৃষ্ণের গোবর্ধন পাহাড় তুলে ইন্দ্রের প্রলয় বৃষ্টি থেকে ব্রজবাসীদের রক্ষা করার ঘটনা স্মরণ করে পালিত হয়। এই দিনটিতে কৃষকদের জন্যও বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে, কারণ ফসল কাটা শেষ হওয়ার পর এই দিন উৎসব করা হয়।

  5. ভাই দূজ: দীপাবলির পঞ্চম দিনটি ভাই দূজ নামে পরিচিত, যেখানে বোনেরা তাঁদের ভাইদের মঙ্গল কামনা করে এবং ভাইরা তাঁদের বোনদের প্রতি দায়িত্ব পালন করার প্রতিজ্ঞা করে। এটি ভাইবোনের মধ্যকার ভালোবাসা এবং দায়িত্বের সম্পর্ককে উদযাপন করে।

উৎসবের আচার-অনুষ্ঠান

  • আলো ও প্রদীপ: দীপাবলিতে বাড়িঘর, রাস্তা এবং মন্দিরগুলো প্রদীপ, মোমবাতি ও বৈদ্যুতিক আলো দিয়ে সজ্জিত করা হয়। এটি অন্ধকারের ওপর আলোর বিজয় এবং অশুভের ওপর শুভের জয়কে প্রতীকী করে।

  • মিষ্টান্ন ও ভোজন: দীপাবলির সময় বাড়িতে বাড়িতে নানা ধরনের মিষ্টি এবং উপাদেয় খাবার তৈরি করা হয় এবং প্রতিবেশী, বন্ধু ও আত্মীয়দের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

  • আতশবাজি: দীপাবলির অন্যতম আকর্ষণ হলো আতশবাজি পোড়ানো। সন্ধ্যায় ছোট বড় সবাই আতশবাজি ফোটায়, যা আনন্দ এবং উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ধরা হয়।

  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সজ্জা: দীপাবলির আগে ঘরবাড়ি পরিষ্কার ও সাজানো হয়। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, পরিচ্ছন্নতা সৌভাগ্য এনে দেয় এবং দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পেতে সাহায্য করে।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

দীপাবলির সময় ব্যাপক কেনাকাটা এবং ব্যবসায়িক লেনদেন হয়। নতুন পোশাক, সোনা, গৃহস্থালি সামগ্রী এবং গাড়ি কেনা সাধারণত দীপাবলির সময় হয়ে থাকে। এটি ভারতের অর্থনীতিতে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে এবং এই সময় প্রচুর বাণিজ্য হয়।

সংক্ষেপে

দীপাবলি একদিকে যেমন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং ঐতিহ্যের মধ্যে নিহিত, তেমনই এটি সামাজিকভাবে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং সমাজের সকলের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করার উৎসব।

Image taken from Open AI




VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


ধন্যবাদ।সবাই ভালো থাকবেন।

BoC- linet.png
-cover copy.png

|| Community Page | Discord Group ||


Posted using SteemPro Mobile

1000158488.jpg

PUSS COIN:BUY/SELL

Sort:  
 6 months ago 

দিদি আপনি আজ দীপাবলি নিয়ে খুব সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। আপনি দীপাবলির নানান দিক তুলে ধরেছেন। বিভিন্ন তথ্য থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি সুন্দর ভাবে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 6 months ago 

দীপাবলি উৎসব সর্ম্পকে চমৎকার আলোচনা করেছেন বৌদি। দীপাবলি উৎসবটা আমার খুব ভালো লাগে। পোস্টটি পড়ে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। যাইহোক এতো চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।