দুঃসংবাদ যেন থামছেই না

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

নমস্কার,,

২০২৩ সাল টা কেমন যেন রং ছাড়া হয়ে গেছে এক কথায়। এদিক ওদিক সব দিক থেকে দুঃসংবাদ যেন পিছু ছাড়ছে না। একের পর এক মৃত্যুর সংবাদ আসছে। কখনো বাড়ির পাশের মানুষের। আবার কখনো নিকট আত্মীয়ের। বৃদ্ধ কারোর মৃত্যুর সংবাদ হয়তো মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যার যে ছেলের জীবন মাত্র শুরু হতে যাচ্ছে তার অকাল প্রয়াণ কি কখনোও মেনে নেওয়া যায়!

ঠিক এমনই একটা দুঃসংবাদ এসে হাজির হয়েছে আমার কাছে গতকাল সন্ধ্যায়। ছেলেটার নাম মুক্ত। সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। আমার পিসতুতো দাদার একমাত্র ছেলে। বয়স খুব ১৮ কিংবা ১৯ হবে। এবার অ্যাডমিশন পরীক্ষা দিতে বসতো ছেলেটা। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কি নির্মম পরিহাস! ইলেকট্রিক শক থেকে গতকাল হঠাৎই আমাদের সবাইকে কাদিয়ে পরপারে চলে গেল।

wandering-rocks-3712_1280.jpg

Source

এমন মৃত্যু সত্যিই মেনে নেওয়া যায় না। গতকাল সন্ধ্যায় খবরটা পাওয়ার সাথে সাথে বুকটা কাপতে শুরু করলো, মাথাটাও ঘুরছিল। এটা কি শুনলাম! নিজের কানকেও বিশ্বাস হচ্ছিল না। এটা কি করে সম্ভব! এই কয়েক দিন আগেও কথা বলে আসলাম ওর সাথে। আমার কাছ থেকে এডমিশনের পড়াশোনার টিপস নিল। একটা অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিল মুক্তোর জন্য। বাড়িতে যেন দম আটকে আসছিল। চোখ মুখে জল দিয়ে বেরিয়ে চলে গেলাম।

মুক্তোর পরিবারে মাত্র তিন জন সদস্য ছিল। মা বাবা আর মুক্ত। এ বছরের শুরুতেই মুক্ত বাবাকে হারায়। হঠাৎ করেই স্ট্রোক করে দাদা মারা যান। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ছয় মাসের মাথায় ছেলেটাও চলে গেল। ঈশ্বরের এটা কেমন লিখন! এতটাও কি মানা যায়! ওর মা ওকে আকড়ে ধরে বেচেঁ ছিল। এখন কি নিয়ে থাকবে! ঐ মায়ের বুকটার ভেতর কি হচ্ছে! এই কথা মনে হলেই যেন দম বন্ধ হয়ে যায়।

road-989267_1280.jpg

Source

সন্তানের মৃতদেহ সামনে থেকে দেখা, এর চাইতে ভারী বস্তু আর কঠিন দৃশ্য হয়তো পৃথিবীতে একটাও নাই। মুক্তোর মা সম্পর্কে আমার বৌদি হন। সব সময় হাসি ঠাট্টা করতাম। দাদা মারা যাওয়ার পর বৌদির সামনে একদিনও দাড়াতে পারি নি। আর এবার ছেলেটাও চলে গেল। বৌদির সামনে দাড়িয়ে মুখের শব্দ টাও হয়তো আর কখনো বের হবে না।

মুক্ত আমাকে কাকা বলে ডাকতো। কানে ওর ডাকটা যেন বার বার ভেসে আসছে। ওর সাথে কাটানো সময় গুলো একের পর এক চোখে ভাসছে। লেখাটা বাসে বসে লিখছি। বার বার চোখ ভিজে যাচ্ছে। মুক্তোর শেষ কৃত্য সম্পন্ন করতে শ্মশানে যাচ্ছি। শেষ বেলার ঐ মুহূর্তে নিজেকে ধরে রাখাটাই হয়তো কঠিন হয়ে যাবে। তারপরও ঈশ্বর কে শুধু এটুকুই বলার, "তোমার ইচ্ছের বাইরে গাছের একটা পাতা অবধি নড়ে না। হয়তো এমন টাই তোমার ইচ্ছে ছিল। পরপারে ভালো রেখো মুক্তকে। আর ওর মা যত দিন বাঁচবে কখনোই হয়তো এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারবে না। কিন্তু তারপরও তাকে তুমি এই সামলানোর শক্তি দিও ঈশ্বর 🙏"।

Sort:  
 2 years ago 

খুব কষ্ট লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে। মুক্ত র মায়ের জন্য সত্যি খুব খারাপ লাগছে।মাকে ধৈর্য ধরার শক্তি আল্লাহ দান করুন,আমিন।কিছু কিছু দুঃসংবাদ আসলে মেনে নিতে কষ্ট হয়।আপনি খুব মন কষ্টে আছেন বেশ বুঝতে পারছি। ছেলেটি কলি তেই শেষ হয়ে গেলো।ফুল হয়ে আর ফুটতে পারলো না।ধৈর্য ধরুন,দোয়া করুন ভাইয়া।

 2 years ago 

শান্তনা দেওয়ার কোন ভাষা থাকে না এই রকম মৃত্যুতে। নির্বাক দর্শক ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। অনেক ভালো থাকবেন আপু।

 2 years ago 

মৃত্যু তো সবার একদিন হবেই হয়তোবা কারো আগে হয়তোবা কারো পরে। আসলে অল্প বয়স বলতে কিছুই নাই যার মৃত্যু যেদিন লেখা আছে তার মৃত্যু সেই দিনই হবে। তবে বয়স বেশি হয়ে গেলে বা বুড়ো হয়ে গেলে তার জন্য অতটা কষ্ট লাগে না যতটা একজন যুবক বয়সের ছেলে বা মেয়ের মৃত্যু হলে লাগে। কারণ তাদের নিয়ে অনেকে আশা করে থাকে। যাইহোক ৬ মাস আগে উনার বাবার মৃত্যু হয়েছে আবার ছয় মাস পরে উনার মৃত্যু হয়ে গেল বিষয়টা জেনে খুব খারাপ লাগলো। দোয়া করি যেন ওনার মা এই সময়টা ধৈর্য ধারণ করে নিজেকে সামলে নিতে পারেন।

Posted using SteemPro Mobile

 2 years ago 

এইরকম খবর শুনলে আসলেই বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে । এখন ওর মাকে নিয়েই ভাবছি উনি একা কি নিয়ে বাঁচবেন । আল্লাহ যেন ওনাকে শোক সইবার শক্তি দেন এই দোয়াই করি ।

 2 years ago 

আমি আজ শ্রাদ্ধে গেছিলাম আপু। ওর মায়ের সামনে যাওয়ার সাহস হচ্ছিল না একবারের জন্যও। দূর থেকে এসে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলো, মুখ দিয়ে যেন একটাও শব্দও আসছিল না। ঈশ্বর সব সামলে ওঠার যেন শক্তি দেন এটাই প্রার্থনা করি। অনেক ভালো থাকবেন আপু।

 2 years ago 

আমার খারাপ লাগছে মুক্তোর মায়ের জন্য। সে এখন এই বিশাল পৃথিবীতে একা। এটা আসলেই দাদা মেনে নেওয়া যায় না। এটা একেবারেই অনাকাঙ্খিত। এসব খবর শুনলে একসময় মনে হয় আসলেই মানুষের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। খবর টা শুনে বেশ খারাপ লাগল দাদা।

Posted using SteemPro Mobile

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া। এমন কিছু মেনে নেওয়া তো পরের কথা, ভাবাটাও যেন অসম্ভব লাগে। কিন্তু ঈশ্বরের ইচ্ছার বাইরে কারোর যাওয়ার সাধ্য নেই। ভালো থাকবেন ভাই।