ক্রিয়েটিভ রাইটিং || ছোটগল্প: চৌকিদার (পর্ব -০২) শেষ পর্ব ।

in আমার বাংলা ব্লগlast year (edited)

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। আমিও ভালো আছি।

আজকের এই ব্লগে তোমাদের সাথে একটি ছোটগল্প শেয়ার করবো । গল্পটির নাম "চৌকিদার"। গল্পটির শেষ পর্ব নিচে দেখে নেওয়া যাক।

guard-1129949_1280.jpg

ইমেজ সোর্স

প্রথম পর্বের লিংক

চোরেরা এবার টার্গেট করেছিলো গ্রামের এক বিত্তশালী লোকের বাড়ি। এই বাড়িতে বেশি লোক থাকে না। এই বাড়িটি "চৌধুরী" বাড়ি নামে এই গ্রামে বিখ্যাত। বাড়িতে রিপন চৌধুরী, তার বউ এবং তার মা, এই তিনজন মানুষই থাকে। তবে চুরির এইদিন রিপন চৌধুরী বাড়িতে ছিলেন না, তার বৃদ্ধ মা এবং অসুস্থ বউই শুধু বাড়িতে ছিল। যেহেতু অনেক রাতে এই চুরির ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল, তখন দিব্যি ঘুমিয়ে ছিলেন তারা। এদিকে চোরেরা এসে প্রথমে তাদের গোয়াল ঘর থেকে গরুর দড়ি খুলে ফেলে দেয়, গরু চুরি করার জন্য। তাছাড়া তাদের রান্নাঘরে গিয়ে পিতলের দামি জিনিসগুলোও বস্তার মধ্যে ভরা শুরু করে দেয়। এগুলো দূরে থেকে সুনীল চৌকিদার এবং তার সাথে যাওয়া গ্রামের অন্য দু'জন লোক ফলো করতে থাকে। তারা যেহেতু চোর হাতেনাতে ধরবে, এইজন্য চোরগুলো যখন চুরি করছিল এই বিষয়গুলো তারা পর্যবেক্ষণ করছিল আর সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিল।

অতঃপর চৌকিদার এবং গ্রামের যে দু'জন লোক ছিল, তারা চিৎকার করতে করতে চোরদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যেহেতু তারা চিৎকার করে চোরদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই সময় চোর গুলোও হঠাৎ করে ভয় পেয়ে যায়। তারাও পালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে । কিন্তু এই সময় চৌকিদার শক্ত করে একটি চোরকে ধরে রেখেছিল। এই চোরদের কাছে আবার ধারালো অস্ত্র ছিল। যেহেতু চৌকিদার বাবু একটি চোরকে ছাড়ছিলই না, সেজন্য সেই চোরটা নিজেকে বাঁচানোর জন্য চৌকিদারের গলায় ছুরি বসিয়ে দেয়। এই সময় ছটফট করতে করতে চৌকিদার সেই চোরকে ছেড়ে দেয়।

যে কয়েকজন চোর এসেছিল সেদিন গ্রামে সবার কাছে অস্ত্র ছিল না। দুই একজনের কাছেই অস্ত্র ছিল। তবে অস্ত্রের আঘাত এসে পড়েছিল গ্রামের চৌকিদারের উপরেই। এ সময় কয়েকজন চোর পালিয়েও যায়। তবে চৌকিদারের সাথে যে গ্রামের দুইজন লোক ছিল, তারা দুজন চোরকে আটকে রাখতে পেরেছিল। এই অবস্থায় চিৎকার চেঁচামেচিতে গ্রামের অন্যান্য লোকজন জড়ো হয়ে যায়। এই সময় তারা এসে দেখে সুনীল চৌকিদার ছটফট করছে বাঁচার জন্য ছুরির আঘাত পেয়ে। চারিদিকে হৈ-হুল্লোড় পড়ে যায় তখন। তারপর তাড়াতাড়ি করে সুনীল বাবুকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়

এই গ্রাম থেকে হসপিটালের দূরত্ব অনেকটাই ছিল। গ্রামের লোকজন কোনো রকম করে ধরে নিয়ে গিয়ে হসপিটালে ভর্তি করে দেয়। প্রায় দুই ঘণ্টার মতো সময় লেগে গেছিল, তাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করতে । সেই সময় সুনীল বাবুর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। প্রচন্ড পরিমাণে রক্ত শরীর থেকে বেরিয়ে গেছিল তার সাথে এই দুর্ঘটনাটা হয়ে যাওয়ার পর। সেই রাতে ইমারজেন্সিতেই ভর্তি করা হয় তাকে। আর ডাক্তাররাও চেষ্টা করতে থাকে তাকে ঠিক করার, তবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সেই সময় সুনীল বাবু।

এই সময় সুনীল বাবুর বাড়িতেও গ্রামের লোকজন খোঁজ দিয়ে, সুনীল বাবুর এই অবস্থার কথা জানিয়ে দেয়। সুনীল বাবুর বাড়িতে তার বউ এবং দুই ছেলে ছিল। তারাও তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে চলে আসে সেই রাতেই। সবাই অপেক্ষা করতে থাকে কখন সুনীল বাবুর একটু জ্ঞান ফিরবে। কিন্তু সারারাতের মধ্যেও সুনীল বাবুর আর জ্ঞান ফেরে না। সেই মুহূর্তে অনেক রক্তেরও দরকার ছিল কিন্তু হসপিটালে রক্তেরও কোন ব্যবস্থা ছিলনা। এই সময় গ্রামের একজন লোক রক্ত দেয় থাকে। গ্রামের লোকজন সহ অনেকেই সারারাত ধরে এই হসপিটালে থাকে সুনীল বাবুর জন্য।

সকালে কিছু সময়ের জন্য সুনীল বাবুর জ্ঞান ফেরে। তবে সে কথা বলতে পারছিল না ভালো করে। একদম আলতো আলতো ভাবে চোর গুলো ধরা পড়েছে কিনা, শুধু এই কথাটাই জিজ্ঞেস করে তাকে দেখতে যাওয়া লোকদের কাছে। তখন সবাই আশ্বাস দিয়ে বলে যে, চোর গুলো সব ধরা পড়েছে। প্রায় ৩০ মিনিট জ্ঞান থাকার পর পুনরায় আবার সে অজ্ঞান হয়ে যায়। তবে এই বার তার হার্টবিট থেমে গেছিল। তাকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করা হয় কিন্তু তার আর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছিল। এই সময় পরিবারের সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে। কি থেকে কি হয়ে গেল, কেউই কোন কিছু বুঝতে পারে না।

এই সময় জেলা থেকে পুলিশ আসে, কি ঘটনা হয়েছে সেটা জানার জন্য। তাছাড়া যে চোর দুজন ধরা পড়েছিল, তাদের মাধ্যমে যে চোরটি সুনীল বাবুর এই অবস্থা করেছিল তাকেও ধরে আনা হয়। তাদেরকে শাস্তির আওতায়ও নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এই চোর ধরতে গিয়ে সুনীল বাবুর জীবনটা হারিয়ে যায়। সেটা তো আর কোন কিছুর বিনিময়ে ফিরে পাওয়া যাবে না। এই ভাবেই সুনীল চৌকিদারের জীবনের ইতি ঘটে যায় চোর ধরতে গিয়ে।


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীক্রিয়েটিভ রাইটিং (ছোটগল্প)
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
বন্ধুরা, আমার আজকে শেয়ার করা এই চৌকিদার গল্পের শেষ পর্বটি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.