নিজের বড় বোনের রক্ত দেওয়ার কিছু কথা
আসসালামু আলাইকুম/আদাব আমার বাংলা ব্লগ স্টিম কমিউনিটির বন্ধু গন আমি @kibreay001 বাংলাদেশ থেকে বলছি আজ (০৩-০৪-২০২৫)
আসসালামু আলাইকুম আমার স্টিম বন্ধু গন আশা করি আপনারা অনেক ভালো আছেন । আপনাদের দোয়ায় আমিও অনেক ভালো আছি। আমি @kibreay001 আমি আজকে আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে যাচ্ছি নিজের বড় বোনের রক্ত দেওয়ার কিছু কথা। আজকে সকাল বেলা থেকেই বেশ ব্যস্ত সময় পার করছিলাম। প্রথমে সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে হালকা একটু খাবার খেয়ে বেশ কিছু সময় বাড়ির ছোট ভাইদের সাথে আড্ডা দিয়েছিলাম। তারপরে আমার আপু আমাকে ফোন দিয়ে আজকে আবারো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে বলেছিল আসলে আমার আপু এখন পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে। তাই আমি তখনই গোসল শেষ করে হালকা একটু খাবার খেয়ে এবং আপুদের জন্য বাসা থেকে কিছু খাবার নিয়ে বের হয়ে পড়লাম রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার জন্য। আসলে আমাদের বাড়ি থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অনেক দূরে। যেহেতু ঈদের পরে তাই যানবাহনে অনেক ভিড়। আমি প্রথমেই আমাদের বাড়ি থেকে কুষ্টিয়া বাস টার্মিনালে এসেছিলাম। সেখান থেকে আমি বাসে উঠে সরাসরি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে এসেছিলাম। আসলে রাজ্যের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় ৬ ঘন্টা সময় লাগে। সব মিলিয়ে অনেক সময় জার্নি করার পরে আপুদের এখানে এসে পৌঁছানোর পরে হালকা একটু খাওয়া দাওয়া শেষ করে বসে গেলাম আপনাদের মাঝে আবারো পোস্ট লেখার জন্য। তবে চলুন আজকের পোস্টের বিস্তারিত আপনাদের মাঝে শেয়ার করা যাক............
আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির অনেক ইউজার থেকে শুরু করে এডমিন মডারেটর অনেকেই জানে আমি গত কয়েকদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার আপুর পাশে রয়েছি। আসলে আমার আপুর পেটে জমজ তিন সন্তান ছিল। রমজান মাসে আমরা ২৬ রমজানের রাতে যখন সেহরি খেতে উঠেছিলাম তখন আমার আপু তার নিজের পেটে হালকা একটু ব্যথা এবং যন্ত্রণা অনুভব করছিল। আমার সেই রাতে সেহরি খাওয়ার পরে ফজরের নামাজ শেষ করার পরে বাড়ি থেকে মাইক্রো নিয়ে বের হয়ে পড়েছিলাম কুষ্টিয়া হাসপাতালে। সেখানে এসে ডাক্তার দেখানোর পরে ডাক্তাররা আমাদেরকে সরাসরি জানিয়ে দেয় এখানে আমাদের দ্বারায় অপারেশন করা সম্ভব না আপনারা রাজশাহী অথবা অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারেন। তারপর আমরা সেখান থেকে আমার আপুকে অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চলে এসেছিলাম। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে আসার পরে আমরা ইমার্জেন্সিতে দেখেছিলাম সেখানে সরাসরি আমাদেরকে ভর্তি করে নেয়। তারপরে দুপুর তিনটা থেকে আপুকে শুধুমাত্র এক ঘন্টা ডাক্তার পর্যবেক্ষণে রেখেছিল। তারপরে বিকেল চারটা দশ মিনিটে আমার আপুকে অপারেশন করানোর জন্য ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
আমার আপুকে যখন অপারেশন করার জন্য ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তখন আমরা বাইরে আমি আমার ছোট মামা আমার মা এবং আমার খালা আমরা চারজন বসে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করছিলাম। কিছু সময় পরে ডাক্তার বের হয়ে এসে আমাদেরকে সরাসরি বলে ইমারজেন্সি তিন ব্যাগ রক্ত ম্যানেজ করতে হবে। আসলে রাজশাহীতে আমাদের তেমন কোন আত্মীয় এবং বন্ধুবান্ধব নেই যেহেতু বাড়ি থেকে অনেক দূরে। তখন হঠাৎ মনে পড়েছিল আমার রক্তের সাথে আমার আপুর রক্তের মিল রয়েছে। আমি রমজান মাসে পুরোপুরি রোজা পালন করছিলাম রোজা থাকা অবস্থায় আমি রক্ত দেওয়ার জন্য রাজি হয়ে পড়লাম। কয়েক মিনিটের মধ্যে আমি আমার নিজের রক্ত ব্লাড ব্যাংক থেকে এক ব্যাগ টেনে নিয়ে এসেছিলাম। আসলে ঘনিষ্ঠ কাউকে রক্ত দেওয়া ঠিক না তাই আমি আমার নিজের রক্তটা অন্যজনের রক্তের সাথে এক্সচেঞ্জ করে নিয়েছিলাম। রক্তের ব্যাগ হাতে আমি যখন দৌড় দিয়ে অপারেশন রুমে চলে এসেছিলাম তখন জানতে পারি আমার আপুর অবস্থা খুবই খারাপ। ডাক্তার বলে এখনো দুই ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন তারপরে আমি ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে আরো এক ব্যাগ রক্ত টাকা দিয়ে সংগ্রহ করেছিলাম। তারপর এসে ডক্টর আমাকে বলেছিল চার জায়গায় বন স্বাক্ষর করে দেওয়ার জন্য তারপরে আমি একদম ভেঙে পড়েছিলাম সেই সময় আমার মামা স্বাক্ষর করে দিয়েছিল আসলে সেই সময় আমাদের কোন কিছুই করার ছিল না একমাত্র মহান আল্লাহ্ তালার উপর ভরসা রাখা ছাড়া। তার কিছু সময় পরে আমরা জানতে পারলাম আমার আপুর তিনটি সন্তান হয়েছে দুইটি কন্যা সন্তান এবং একটি পুত্র সন্তান ।
বেশ কিছু সময় পরে নার্স এসে আমাদেরকে জানাই আপনাদের তিনটি সন্তানের মধ্যে একটি কন্যা সন্তান মারা গেছে আসলে তখন আমরা সকলেই ভেঙে পড়েছিলাম। তারপরে নার্স আমাকে অপারেশন রুমে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল নিয়ে যাওয়ার পরে দুইটা জীবিত থাকা সন্তান আমার কোলে দিয়ে বলেছিল আপনি দ্রুত গিয়ে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। আমি তখন ভর্তির কাগজ হাতে নিয়ে শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দুজনকে আইসিইউরুমে ভর্তি করেছিলাম। তারপরে তাদের দুজনকে সেখানে ভর্তি করার পরে আমি আবারও ছুটে চলে এসেছিলাম আমার আপুর কাছে সেখানে এসে দেখি আমার মা সহ সকলে অনেক কান্না করছিল। আসলে সেদিন আমরা নিজের কাছে খুবই অসহায় মনে হচ্ছিল। আসলে আমি নিজে অনেক মানুষের অনেকবার নিজে ইচ্ছা রক্ত দান করেছি কিন্তু যেদিন আমার আপুর রক্তের প্রয়োজন হয়েছিল আমি অনেক মানুষের কাছে ফোন করেও রক্ত খুঁজে পেয়েছিলাম না সেদিন আমার নিজের কাছে কি যে খারাপ লেগেছিল আমি কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না। এভাবেই প্রায় ঈদের পরের দিন পর্যন্ত আমি হাসপাতালে অবস্থান করেছিলাম হাসপাতাল থেকে বাসায় গিয়েছিলাম আবারও আজকে হাসপাতালে এসেছি এখনো আমার ভাগ্নিদের নিয়ে কতদিন হাসপাতালে থাকতে হবে জানিনা আপনারা সকলে দোয়া করবেন যেন অতি দ্রুত সুস্থ হয়ে বাসায় নিয়ে যেতে পারি। আজকের মত পোস্ট লেখা শেষ করছি।
আমি মোঃ কিবরিয়া হোসেন। আমি বাংলাদেশ খুলনা বিভাগে মেহেরপুর জেলার গাংনী থানা কামারখালী গ্রামে বসবাস করি। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমি বাংলা ভাষায় কথা বলতে এবং লিখতে অনেক ভালোবাসি। সব থেকে আমি বেশি পছন্দ করি ফটোগ্রাফি ক্যামেরাবন্দি করতে। আমি বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন জায়গা ঘোরাঘুরি করে থাকি। কয়েকটি শখের মধ্যে আমার প্রধান শখ হচ্ছে বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করা এবং ফটোগ্রাফি ধারণ করা। আমি স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে যাত্রা শুরু করেছি ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের ০১ তারিখে । স্টিমিট প্ল্যাটফর্মকে আঁকড়ে ধরে ভবিষ্যতে আরো অনেক দূরে এগিয়ে যেতে চাই এটাই আমার লক্ষ্য। সংক্ষিপ্ত আকারে আমি আমার নিজের পরিচয় শেয়ার করলাম আপনাদের মাঝে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য শুভকামনা রইল।
(১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য )
VOTE @bangla.witness as witness

OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://x.com/kibreay001/status/1907777362080706704?t=bGXySi8jPC9ztDfNVm1TMA&s=19
https://x.com/kibreay001/status/1907745952146010134?t=bGXySi8jPC9ztDfNVm1TMA&s=19
https://x.com/kibreay001/status/1907660377330212918?t=bGXySi8jPC9ztDfNVm1TMA&s=19
https://x.com/kibreay001/status/1907659367442522369?t=bGXySi8jPC9ztDfNVm1TMA&s=19
https://x.com/kibreay001/status/1907658813769134224?t=bGXySi8jPC9ztDfNVm1TMA&s=19
x-promotion
দোয়া রইলো খুব তাড়াতাড়ি সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। নিজেকে একটু শক্ত করুন ভাই ভেঙে পড়লে হবে না। আল্লাহ ভরসা
এটা সত্যি বিপদের সময় কারো হেল্প পাওয়া যায়না কিন্তু আমাদের ভেঙ্গে পরলে চলবে না। সৃষ্টিকর্তা সবসময়ই পাশে থাকেন এবং তিনিই বিপদ উদ্ধার করেন। দোয়া রইল তোমার বোন এবং তার সন্তানের জন্য। নিশ্চয়ই খুব তাড়াতাড়ি ভালো খবর পাবো।