শৈশবে কিডন্যাপারের ভয়ে দৌড়ে পালানোর হাস্যকর স্মৃতি।।
পরম করুনাময় অসীম দয়ালু মহান সৃষ্টিকর্তার নামে শুরু করিতেছি।
Image source https://pixabay.com/
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসি বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি আপনারা সবাই আল্লাহর অশেষ রহমতে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছেন। আমিও সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে আবারও একটি নতুন ব্লগ নিয়ে হাজির হলাম। আমার আজকের ব্লগ টি হলো শৈশব স্মৃতি সম্পর্কে। শৈশবে আমি অনেক লোককে কিডনাপার ভেবে দৌড়ে পালাতাম। সে হাস্যকর স্মৃতিগুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। আশা করি আমার আজকের ব্লগটা আপনাদের সবারই ভালো লাগবে।
আমাদের শৈশব রূপকথার গল্পের মতোই। রূপকথার গল্পের নেই ডাইরিতে এখন লেখা হয়। আমাদের শৈশবে আমরা কতই না আনন্দ উল্লাস করতাম। যা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে বললেই চলে। আমরা শৈশবে মাঠে-ঘাটে রাস্তায় ছোটা ছুটি, দৌড়াদৌড়ি করতাম । বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা করতাম। আমরা যে খেলা গুলো খেলতাম বর্তমানে এইসব খেলা আর দেখা যায় না। বিশেষ করে গ্রামের মেয়েরা যেসব খেলা খেলে। শহরের ছেলে মেয়েরা সেই খেলা গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকে না। শহরের ছেলেমেয়েরা মাঠের খেলা বলতে, শুধু ক্রিকেট আর ফুটবল খেলা কে বুঝে। বর্তমানে তো গ্রামেও তেমন বাচ্চাদের খেলতে দেখিনা। এখনতো আধুনিক ও ডিজিটাল যুগ। এই যুগে বাচ্চারা মোবাইল ও টিভি ছাড়া কিছুই বুঝে না। অথচ আমাদের শৈশবে আমরা কত রকমের জিনিসের সাথে সম্মুখীন হয়েছি। কত রকম আনন্দ করেছি। আজ প্রায়ই মনে পড়ে সেই শৈশবের হাস্যকর অনেক স্মৃতির কথা। তেমনি আজকে আমি আপনাদের মাঝে আমার শৈশবের কিছু হাস্যকর কিডনাপারের বিষয় নিয়ে স্মৃতিময় গল্প শেয়ার করব। কারণ চলুন তাহলে সেই গল্পগুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করি।
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার অনেক বন্ধু বান্ধবীর সাথে রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি, মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে অনেক খেলতাম। তখন যদি কোন কালো কালারের মাইকো দেখতে পেতাম। তখন সবাই খেলা ছেড়ে দৌড়ে পালাতাম। কালো কালার মাইকো গুলো দেখলে আমরা সবাই ভাবতাম যে, এ মাইকো গুলোর ভেতরে কিডনাপাররা থাকে৷ তারা এসে বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যায়। এই মাইকো গুলো কালো কালার হওয়ার কারণে কাউকে ভিতর থেকে দেখা যায় না। তাই কালো কালারের মাইকো দেখলেই, খেলা ছেড়ে দিতাম। যে যেভাবে পারতাম সেভাবে প্রাণ প্রণে বাঁচার চেষ্টা করতাম। বাসায় সবার কাছে বলতাম কিডন্যাপার এসেছে। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন অনেক বাচ্চারা ও কিছুদিন পর পর হারিয়ে যেত। যার কারণে কালো মাইকো দেখলে অনেক ভয় পেতাম। এখন বড় হওয়ার পর কালো মাইকো দেখে অনেক হাসি পায়। 🤭🤭
ডাব কাটার জন্য অনেক লোককে দেখা যায় ভিন্ন রকম ভাবে। আমাদের এলাকায় অনেক নারিকেল গাছ আছে। তাই কিছুদিন পর পর ডাব কাজ পরিস্কার করার জন্য অনেক লোক আসতো। একজন লোককে দেখলে আমি কেল্লা/মাথা কাটনি অর্থাৎ কিডন্যাপার ভাবতাম। লোকটি দেখতে মধ্যবয়স্ক ও দাড়িগুলো পাকা ছিল। উনার হাতে বিশাল বড় একটি কোপা দাউ ছিল। তাছাড়া তিনার হাতে অনেক মোটা দড়ি ও পুরাতন একটি ছালার বস্তা ছিল। আমি ওই লোককে দেখলে ভাবতাম যে, এ লোকটি বুঝি বাচ্চাদের মাথা কাটার জন্য রাস্তা দিয়ে এভাবে হাঁটছে। লোকটাকে দেখলে আমি দৌড়ে বাসায় চলে যেতাম। বাসায় যেয়ে ভাবতাম একটুর জন্য হয়তো আমাকে ধরে নিয়ে যেতো। আর আমার মাথা কেটে ফেলতো। আর তখন চারিদিকে শুনতাম যে বড় বড় নদীগুলোর সেতু তৈরি করার জন্য বাচ্চাদের মাথা দেওয়া হয়। তাই আরো বেশি ভয় লাগতো। তখন এই কথাগুলো মনে পড়ে যেত এই লোকটিকে দেখে। যখন বড় হয়েছি তখন এই লোকটিকে আমার নানা বাড়ির ডাব কাটতে দেখেছি। তখন আমি হাসতে হাসতে ভাবলাম যে, ওনাকে আমি কিডনাপার ভাবতাম অথচ উনি ডাব গাছ পরিস্কার করে। 😆😆😆। অথচ ছোটবেলায় কতই না ভয় পেতাম। আগে কেনো দেখিনি তিনি ডাব গাছ কাটে, তাইলে তো এত ভয় পেতাম না। 🤭🤭
ছোটবেলায় আপনারা সবাই হয়তো হাওয়াই মিঠাই ও শনপাপড়ি খেয়েছেন। আমিও অনেক হাওয়ায় মিঠাই ও সন পাপড়ি খেতাম। ছোটবেলায় শনপাপড়ি ওয়ালারা দেখতাম যে,কাচের বড় বক্সের মধ্যে গোল গোল হাওয়া মিঠাই ও ছোট ছোট শনপাপড়ি বিক্রি করতো। তারা যখন ঘন্টা বাজিয়ে হাওয়াই মিঠাই বলে ডাক দিত। তখন আমি মনে করতাম যে, হাওয়াই মিঠাই এর মধ্যে অজ্ঞান করার ওষুধ মিশিয়ে রাখে। ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে ধরে নিয়ে যায়। হাওয়াই মিঠাইওয়ালারা একটা পুরাতন বড় বিশাল বস্তা নিয়ে এক কাদে রাখে অন্য কাদে হাওয়াই মিঠায় রাখে। আমি মনে করতাম এ পুরাতন বস্তার ভিতরে বুঝি মানুষকে অজ্ঞান করে রেখে দেয়। তবে ভাবা যেমন তেম হাওয়াই মিঠাই কিন্তু ছাড়তাম না।🤭 হাওয়াই মিঠাই কিনার জন্য বাড়ির উঠানে বসে কান্নাকাটি করতাম। আম্মু টাকা দেওয়ার পরও কান্না করতাম। যে আম্মু যাতে নিজে গিয়ে কিনে দেয়। নয়তো শনপাপড়ি ওয়ালা আমাকে ধরে নিয়ে যাবে। 😆😆😆। এখন মনে হলে প্রচুর হাসি। অথচ বস্তার মধ্যে তারা প্লাস্টিকের ভাঙ্গারি সংগ্রহ করার জন্য এরকম বস্তা হাটে। আর এই বস্তাই আমার ভয়ের কারণ ছিল। 🙄🙄
ছোটবেলায় বাবার সাথে অনেকবার বাজারে গিয়েছিলাম। বাজারে প্রতি শুক্রবারে পুশু জবাই করা হতো । যারা পশু জবাই করত তাদেরকে তো কসাই বলা হয়। আমি আমার আব্বুর সাথে বাজারে যেতাম কসাইদের দেখলে অনেক ভয় পেতাম। আমার আব্বুর হাতে শক্ত করে ধরে রাখতাম। আর যদি তাদেরকে রাস্তা বা কোথায় দেখতাম ভাবতাম বুঝি সে আমার মাথা কেটে নিয়ে যাবে। সে কাথা ভেবে দৌড়ে পালাইতাম। 😆😆। এখন বুঝি তারা এসব করে না। এগুলো তাদের পেশা। জীবনে যে কত কিডন্যাপারদের সম্মুখীন হয়েছি। হাহাহা। মনে মনে ভয় পেয়েছি। শুধু শুধু দৌড়ে পালিয়েছি। হাহাহা। এখন মনে পড়লে শুধুই হাসি পায়।
আর আমার এরকম ভয় পাওয়ার কারণ রয়েছে। আমার পরিবার রাস্তায় বাচ্চাদের সাথে খেলা পছন্দ করত না। সারাদিন পড়া আর পড়া। একজনের পর একজন টিচার আসতো বাসায় পড়াতে। তারাও আমাকে অনেক প্রকারের ভয় দেখাতো। তার কারণে আমি যেখানেই যেতাম, কিছু দিলেও ভাবতাম যে, সে বুঝি একটা কিডন্যাপার। মজা দিয়ে আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে। তাই সহজে কারো কাছ থেকে কিছু নিতাম না। আম্মু আব্বু যদি বলতো নেউ, তখন নিতাম।
যাইহোক বন্ধুরা, আপনাদের মাঝে আমার আজকের ব্লগটি কেমন হলো। কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। ব্লগটি আর বড় করছি না। সবাই সবার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।
আমার পরিচিতি
আমি মোছাঃ মুসলিমা আক্তার নীলা। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @titash নামে পরিচিত। আমার জন্মস্থান চট্রাগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভাদুঘর গ্রামে। আমি বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষে বাংলা বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করতেছি। আমি বিবাহিত,আমার একটি কন্যা সন্তান আছে। আমি আমার হাসবেন্ডের সাথে ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত নারায়নগঞ্জ জেলায় বসবাস করছি। আমি আমার হাসবেন্ডের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। প্লাটফর্মটার বিষয়ে জেনে আমি এখানে কাজ করার আগ্রাহ প্রকাশ করি। তারপর ২০২৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমে স্টিমিট প্লাটফর্মে যুক্ত হয়। আমি ভ্রমন করতে,মজার মজার রেসিপি করতে,বই পড়তে, নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে ও সৃজনশীল জিনিষ তৈরী করতে ভালোবাসি। আমি বাঙ্গালী জাতি হিসাবে ও আমার বাংলা ব্লগের সদস্য হতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি।
![image.png](
Thank you for sharing on steem! I'm witness fuli, and I've given you a free upvote. If you'd like to support me, please consider voting at https://steemitwallet.com/~witnesses 🌟
আপু আপনি তো একদম আমাদের পুরো শৈশবের কাহিনী গুলো তুলে ধরলেন। আমরাও এরকম মনে করতাম। আসলে অপরিচিত লোক বা এরকম বস্তাওয়ালা কোন লোক দেখলে তাদেরকে মাথা কাটা ওয়ালা বলেই সবাই পালিয়ে যেতাম। আর এগুলো খাওয়া থেকে দূরে রাখার জন্যই মূলত আমাদের এই বুজ দেয়া হতো। ছোটবেলার এই মুহূর্তগুলো যখন মনে উঠে তখন আসলেই হাসি পায়।
আসলে আপু ও শৈশবের মজার ঘটনা গুলো সবার সাথেই ঘটে থাকে। সত্যিই এই মুহূর্তগুলো অনেক হাস্যকর। আর আপনি ঠিকই বলেছেন, আমাদের বড়রা এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য শিখাতো। ধন্যবাদ আপু।
অনেক সময় সত্যি সত্যিই নিয়ে যেত, কেউ টেরই পেত না।তাইতো হারিয়ে যেত বাচ্চারা।