শৈশবের মজার দিনগুলো - স্কুল ফাঁকি দেওয়ার সেরা বাহানা!
শৈশব মানেই দুরন্তপনা, দুষ্টুমি আর স্কুল না যাওয়ার নানান রকম বাহানা বানানোর এক অসাধারণ সময়। প্রতিদিন সকালবেলা মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠে স্কুলের জন্য তৈরি হওয়ার চাইতে বিছানায় গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকাটাই তখন সবচেয়ে আনন্দের কাজ ছিল। কিন্তু মা তো আর ছাড়বার পাত্র নন। তাই নতুন নতুন বাহানা তৈরি করা ছিল রীতিমতো প্রতিযোগিতার মতো। আজ ফিরে তাকালে সেই মজার দিনগুলো মনে পড়ে, আর হাসি থামতেই চায় না।
ছোটবেলায় স্কুলে না যাওয়ার জন্য মাকে যেসব বাহানা দিতাম সেই দুষ্ট কৌশল গুলো আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।আশা করছি আপনাদের ছোটবেলার সাথেও কৌশল গুলো মিলে যাবে।চলুন আজকে সবাই মিলে এক মুহূর্তের জন্য ফিরে যায় ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার সেই আগ মুহূর্তের সময়ে...
"মা, আমার জ্বর!"
এই বাহানাটা ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং কার্যকর।স্কুল না যাওয়ার জন্য বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে গরম গরম শরীর দেখানোর চেষ্টা করতাম। মুখটা যতটা সম্ভব কাহিল করতাম, যেন সত্যিই জ্বর এসেছে। মা প্রথমে সন্দেহ করলেও কপালে হাত রেখে দেখতেন। কোনো কোনো দিন একটু গরম পানি দিয়ে কপাল মুছে দিয়ে বলতেন, "এই নাও, ভালো হয়ে গেলে স্কুলে যাও!" আবার কোনো কোনো দিন বেশি অভিনয় করলে পেঁয়াজ-মধু খাইয়ে দিতেন, তখন ইচ্ছে করলেও আর জ্বরের অভিনয় করা যেত না।🤭
" মা,পেটব্যথা হচ্ছে!"
জ্বরের বাহানা যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ‘পেটব্যথা’ নামক সেফ মুড অন। চোখ কুঁচকে, হাতে পেট ধরে বসে পড়তাম, যেন একদমই হাঁটতে পারছি না। মা সন্দেহ করলে বলতাম, "গতকাল রাতে অনেক ভাত খেয়েছি, মনে হয় গ্যাস হয়েছে।" মা কিছুটা চিন্তিত হলে গরম পানি আর আদা-জল খেতে দিতেন। কিন্তু সব চেয়ে ভয়ের ব্যাপার ছিল, মা যদি ডাক্তার আনতে বলেন, তখনই আসল বিপদ! তাই মাঝে মাঝে নিজেই বলতাম, "ঠিক আছে মা, একটু পরে ভালো হয়ে গেলে চলে যাব।" 😄
"মা,আজ স্কুল বন্ধ!"
কিছু দিন তো এমন হতো যে, রাতেই পরিকল্পনা করে রাখতাম, সকাল হলে মা যদি ডেকে তোলে, তাহলে সরাসরি বলে দেব,"আজ তো স্কুল বন্ধ!" মা যদি সন্দেহ করে বলেন, "কাল রাতেও তো কিছু বলোনি!" তখন সাথে সাথে বলতাম, "স্যার বলেছে আজ বিশেষ ছুটি আছে, তোমাকে বলতেই ভুলে গেছি!" তবে যদি মা নিজেই স্কুলে ফোন দিয়ে খবর নেন, তাহলে একবার ধরা পড়লেই এক সপ্তাহের জন্য সব বাহানা বন্ধ।🫠
"মা,আমার ব্যাগ হারিয়ে গেছে!"
স্কুলের ব্যাগ ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় বোঝা! তাই একদিন মনে হলো, যদি বলি ব্যাগ খুঁজে পাচ্ছি না, তাহলে নিশ্চয়ই স্কুলে যেতে হবে না। সকালে উঠে চিৎকার করে বলতে লাগলাম, "আমার ব্যাগ কোথাও নেই।" মা প্রথমে খুঁজতে লাগলেন, কিন্তু যখন দেখলেন আমি একটুও খুঁজছি না, তখন বুঝে ফেললেন। রেগে গিয়ে বললেন, "তোর দুষ্টামি বুঝতে পারছি, তোর ব্যাগ তো আলমারিতেই ছিল!" আর ব্যস, ধরা পড়ার পর সোজা স্কুলে যেতে হলো।😴
"মা,স্কুলের সামনে ভূত দেখেছি!"
এই বাহানাটা একদম ফাটাফাটি ছিল।একদিন সাহস করে মা'কে বললাম, "স্কুলের গেটের সামনে একটা সাদা কাপড় পড়া মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে, রাতে নাকি ওখানে ভূত আসে!" মা প্রথমে হাসলেন, কিন্তু আমি একেবারে ভীত-সন্ত্রস্ত মুখ করে বোঝালাম যে এটা একদম সত্যি ঘটনা। মা তখন বললেন, "আচ্ছা, আজ বাবাকে নিয়ে স্কুলে যাব, দেখি ভূত কোথায়!" তখন মনে হলো, বাহানা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। তাই নিজেই বললাম, "না না, আজ না হয় স্কুলে যাই, কাল থেকে দেখবো।"😂
"মা,সকালের নাশতা খাব না!"
স্কুলের দিন সকালেই কেন যেন খিদে মরে যেত।মা জোর করেও খাওয়ানোর চেষ্টা করতেন, আর আমিও মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতাম। কিন্তু মায়েরা তো মায়ের মতোই।জোর করেই নাশতা খাওয়াতেন, আর বলতেন, "ঠিক আছে, না খেলেও চলবে, কিন্তু স্কুলে যেতে হবে।" তখন বুঝতাম, খাবার না খেয়ে স্কুল ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়। 😁
"মা,স্কুলের স্যার শাস্তি দেবেন!"
কোনোদিন হোমওয়ার্ক না করলে বা ক্লাসে দুষ্টুমি করলে বুঝতে পারতাম, পরের দিন স্কুলে গেলে স্যার দেবেন। তখনই শুরু হতো নতুন কৌশল,"মা, কাল ক্লাসে খুব দুষ্টুমি করে ফেলেছি, স্যার যদি খুব বকা দেন!" মা কিন্তু ঠিকই বুঝে ফেলতেন, "ঠিক আছে, বকা দিলে শুনবি, এখন চুপচাপ স্কুলে যা।" তখন মনে হতো, ইশ! এমন একটা মা পেলে ভালো হতো, যিনি বলতেন, "তাহলে আজ স্কুলে যাস না!" 😆
"মা,আমার জুতো খুঁজে পাচ্ছি না!"
এটা বেশ চালাকির বাহানা ছিল। স্কুলের জুতো লুকিয়ে ফেলতাম, আর সকালবেলা হঠাৎ করে চিৎকার করতাম, "জুতো নেই! কীভাবে যাব?" কিন্তু মা যেন আগে থেকেই সব জানতেন! কোথা থেকে যেন বের করে এনে দিতেন, যেন তিনিও এই গেমে এক্সপার্ট! একবার ভাবলাম, "জুতোর ফিতা লুকিয়ে রাখি!" কিন্তু মা তখন বললেন, "ঠিক আছে, চপ্পল পরেই স্কুলে যা।" তখন বুঝলাম, কোনো কৌশলই কাজে দেবে না।😶
শৈশবের দিনগুলোতে স্কুলে না যাওয়ার জন্য কত মজার মজার বাহানা করতাম, আজ সেগুলো মনে পড়লে সত্যিই হাসি পায়। তখন স্কুল ছিল বিশাল এক বোঝা, আর আজ মনে হয়, ইশ! যদি সেই দিনগুলো আবার ফিরে পাওয়া যেত! এখন বুঝি, মা-বাবারা আমাদের সব কৌশল আগেই বুঝতেন, কিন্তু আমাদের ছোট ছোট বুদ্ধির খেলা দেখতে তাদেরও মনে মনে মজা লাগত।
তবে হ্যাঁ, এখন যদি ছোটদের স্কুল ফাঁকি দেওয়ার বাহানা শুনি, তখন কিন্তু নিজের শৈশবের কথা মনে পড়ে, আর মুচকি হেসে বলি "এই বাহানা আমারও খুব চেনা!"
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
X-Promotion
আসলে ভাই স্কুল ফাঁকি দেওয়ার কত রকম বাহানা ধরতাম তার কোন শেষ নেই। তবে অধিকাংশ বাহানা ধরা খেয়ে যেতাম। আপনার স্কুল ফাঁকি দেওয়ার বাহানা পড়ে খুব ভালো লাগলো ভাই। শৈশবের স্কুলের দিন গুলোর মাঝে হারিয়ে গেলাম। ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য।