মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি এবং পাঠক হিসাবে আমার অনুভূতি।

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভাল আছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে চলছে একুশে বইমেলা। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পুরো মাসে আমি আমার বাংলা ব্লগে শুধুমাত্র বই নিয়ে লিখব। তারই ধারাবাহিকতায় আজ লেখব মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি পদ্মা নদীর মাঝি নিয়ে।


boat-7765467_1280.jpg

Image by Hieu Tran from Pixabay


কুবের নামে এক হতদরিদ্র মাঝি এবং তার পরিবার নিয়ে উপন্যাসটি রচিত হয়েছে। এখানে কুবের মাঝি নিম্নবিত্ত সমাজের প্রতিক হিসেবে অঙ্কিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় মধ্যবিত্তদের নিয়ে বহু উপন্যাস রচনা হলেও, নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন নিয়ে রচিত উপন্যাসের সংখ্যা খুবই কম। যার মধ্যে পদ্মা নদীর মাঝি একটি।

আজান খুড়া নামে এক নৌকা মালিকের নৌকায় কাজ করত কুবের মাঝি। তার সাথে ছিল বোকা গণেশ। জেলে পাড়ার মানুষের জীবনের উত্থান-পতন, তাদের সামাজিক সমস্যা, তাদের আনন্দের খোরাক, জীবন নিয়ে তাদের বৈচিত্রময়তা, নিষ্ঠুরতা; এসব কিছুই দারুন ভাবে উঠে এসেছে পদ্মা নদীর মাঝিতে। একটি মানুষ যা পায় তাতে সে সন্তুষ্ট হয় না। মানুষের অন্য কিছুর প্রতি নজর থাকে। যা সে খুব পছন্দ করে। তা যে কোন কিছুই হতে পারে। যেমন কুবের মাঝি মালার মত শান্ত, সংসারি, লাজুক, অল্প হাসে, সুন্দরী একজনকে স্ত্রী হিসেবে পেয়েছিল। কিন্তু তবুও শেষ পর্যন্ত দেখা যায় সে পছন্দ করেছে কপিলার মত চঞ্চল, ঊশৃংখল একজনকে।

জেলেপাড়ার জেলেদের জীবন কাহিনী এবং জীবনের প্রতি তাদের মনোভাব খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে উপন্যাসে। তবে আমার মতে এই উপন্যাসে মুখ্যভাবে কুবের মাঝিকে উপস্থাপিত করা হলেও, সবকিছু ছাপিয়ে গিয়েছে হোসেন মিয়া। এক সময় সেও খুবই দরিদ্র ছিল। অন্য কোথাও থেকে এসে জেলেপাড়ায় বসবাস করা শুরু করে। হঠাৎ করে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। ভাগ্য উন্নয়নে যে অর্থ-কড়ি সে কামিয়েছে তা সে একা ভোগ করার চিন্তা করেনি। বরং সে তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের কাজে হাত দেয়।

তার স্বপ্ন ছিল ধর্ম, বর্ণ, জাত; এসবকে ঊর্ধ্বে রেখে এমন একটি সমাজ নির্মাণ করা যেখানে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে। জীবনের জন্য কাজ করবে। সবাই সবাইকে ভালোবাসবে। অর্থাৎ এটি সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি মেঘনা পাড়ি দিয়ে বঙ্গোপসাগরের বুকে এক খন্ড ছোট দ্বীপ কিনেছেন। সেখানে তিনি বসতিও গড়ে তোলেন। কুবের মাঝি নিজেও একবার হোসেন মিয়ার সাথে সেখানে গিয়ে ঘুরে দেখেছে৷ শেষ পর্যন্ত দেখা যায় জীবনের মারপ্যাঁচে কুবের মাঝিও কপিলাকে নিয়ে সেখানে স্থান নেয়।

পদ্মা নদীর মাঝি কেবলই কুবের কিংবা জেলেপাড়ার মানুষের জীবন নিয়ে রচিত নয়। এটি হোসেন মিয়ার মত স্বপ্নালু মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা। যারা নতুন একটা সমাজ চায় যেখানে সবকিছুই সাম্যবাদের ভিত্তিতে চলবে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম অসাধারণ একটি উপন্যাস পদ্মা নদীর মাঝি।


IMG_20250215_164306.jpg

নিজের সম্পর্কে
আমি মুহাম্মদ সাব্বির আকিব। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি। জেলাঃ চাঁদপুর, থানাঃ ফরিদগঞ্জ। থাকি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন দক্ষিণ গাজীরচট নামক স্থানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়নে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে একটি ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছি। বিবাহিত এবং আল্লাহ একটি পুত্র সন্তানের জনক করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
Sort:  
 3 months ago 
az_recorder_20250216_012725.jpgaz_recorder_20250216_012632.jpgaz_recorder_20250216_012548.jpgaz_recorder_20250216_012413.jpg
Twitter PromotionCMC PromotionDEXScreen Vote#CoinGem# Vote