ছোটগল্প: রক্তাক্ত বিকেল( পর্ব: ১ )!!

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago


আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।

আজ শনিবার, ৩ রা মে ,২০২৫।

আমি @emon42.

বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে


1000578650.png


এই শহরে যেদিন প্রথম এসেছিলাম ঐদিনই আমার পরিচয় হয় শুভ্র ভাইয়ের সাথে। আমার থেকে মোটামুটি বছর ৫ এর বড়। কী সুন্দর অমায়িক ছিল ভাইয়ের ব‍্যবহার। কোন ধর্মীয় গোড়ামি নেই কোন রাজনৈতিক মতবাদ নেই একেবারে যেন ঝামেলাহীন একটা মানুষ। ভাইয়ের বাবা মা থাকত গ্রামের বাড়িতে। ভাই গ্রাজুয়েশন শেষ করে একটা প্রাইভেট কোম্পানির আইটিতে জব করত। প্রথম দিন ঢাকায় এসে আমার থাকার জায়গাটা টাও ছিল না ভাইয়ের সাথে অনেক টা আকর্ষিকভাবেই পরিচয় হয়ে যায়। বাস থেকে নেমে গুলিস্তান শহীদ নূর হোসেন চত্বরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন সন্ধ‍্যা সাড়ে সাতটা। কোথায় যাব জানি না কী করব সেটাও জানা নেই। ব‍্যাগে শুধু নিজের কয়েকটা একাডেমিক সনদপএ এবং নিজের যথাসামান‍্য জামাকাপড়। শুভ্র ভাইয়ের বাইক ছিল একটা ইয়ামায়া ব্রান্ডের।

ভাই প্রতিদিন অফিস শেষ করে বাইকে কয়েকটা রাইড শেয়ার করত অতিরিক্ত কিছু ইনকামের জন্য । ঐদিনও ভাই আমার কাছে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে
এই যে কোথায় যাবেন আপনি। প্রথমে আমি কোন উওর দেয়নি। পরবর্তীতে আবার জিজ্ঞেস করে আপনাকেই বলছি কোথায় যাবেন, চলেন গিয়ে নামিয়ে দিয়ে আসি।

আমার সহজ সরল উওর ভাই আমি কোথায় যাব জানি না আজকেই ঢাকা এসেছি চাকরির জন্য। ঢাকায় আমার কেউ নেই।

এই শহরে এমন কথা শুনলে এরপর সাধারণত আর কেউ কোন প্রশ্ন না করে চলে যেত। কিন্তু শুভ্র ভাই সেটা করল না। ভাই বলে বসলো ঠিক আছে বাইকে উঠেন। প্রথমে কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম আমি,কেন আমি বাইকে উঠব?

কিন্তু ভাইয়ের মুখের সেই উচ্ছসিত হাসি আর চোখের চাহনি বলে দিচ্ছিল ভাই আর যাইহোক খারাপ মানুষ না। ভাই নিয়ে গেল তার ফ্লাটে। ওখানে উনি সহ আরও কয়েকজন থাকত। ফ্লাট টা ছিল ফার্মগেট তেজগাঁও কলেজের একেবারেই পাশেই। ভাইয়ের তদবিরে সেখানে একটা সিট জুটে গেল। আমার অবস্থা দেখে উনাকে কিছু বলতে হয়নি। নিজে থেকেই উনার ফ্রেন্ডদের বলে দেয় যেন আপাতত আমার থেকে যেন কোন টাকা না চাই। যেহেতু ভাই অনেকদিন আছে এখানে সবাই ভাইকে বেশ সম্মান করত। ভাইয়ের সম্মানে আমার থাকা খাওয়ার ব‍্যবস্থা হয়ে যায়।

বেশ কয়েকদিন কেটে যায় কোন ব‍্যবস্থা করতে পারিনা। যেখানেই যায় বলে জব নেই। অনলাইনে চাকরির পেইজগুলোতে সার্কুলার দেখে অন্তত কয়েকশ জায়গাই সিভি পাঠিয়েছি। কিন্তু সেরকম কোন সাড়া পাইনি। যে দুই এক জায়গা থেকে ডেকেছে তারাও শেষ পযর্ন্ত নিরাশ করেছিল।

ফ্লাটে শুভ্র ভাই ছাড়াও জামিল, মেহেবুব এবং নিলয় ভাই থাকত। মোটামুটি পাঁচ জনের একটা ছোট্ট বাসা যেটার সিস্টেম অনেক টা মেসের মতো। উনাদের সাথে খুব একটা কথা হতো না। মাঝে মাঝে রাতে শুভ্র ভাই নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করত কী ব‍্যাপার তোমার চাকরির কী হলো? কিছু হয়েছে। আমার ফ‍্যাকাশে মুখ দেখে ভাইয়ের কিছু বুঝতে বাকি থাকত না। এভাবে প্রায় এক মাস কেটে যায়। কোন ব‍্যবস্থা একেবারেই করতে পারি না।

শুভ্র ভাই নিজে থেকেই আমার একটা সিভি চেয়ে নিয়েছিল। যদিও ভাই কোন আশা আমাকে দেয়নি। তবে ভাইয়ের বদৌলতে আমার একটা ব‍্যবস্থা হয়ে যায়। একদিন একটা ইন্টারভিল কল পায় একটা প্রাইভেট কোম্পানি থেকে। ওখানে শুভ্র ভাইয়ের ফ্রেন্ড আদিত‍্য চাকরি করত। ভাইয়ের রেফারে ওখানে সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরি টা হয়ে যায়।

চাকরি হওয়ার পরে আমার মনে আছে ঐদিন শুভ্র ভাই আমাকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে খাইয়েছিল। হ‍্যা ব‍্যাপার টা বেশ অদ্ভুত চাকরি টা আমার হয়েছিল কিন্তু ভাই আমাকেই খাইয়েছিল। এই শহরে কেউ না থাকার পরেও আমি যেন নিজের একজন বড় ভাই খুজে পেয়েছিলাম। দিন যতই অতিবাহিত হতে থাকে শুভ্র ভাইয়ের সাথে আমার ব‍্যক্তিগত সখ্যতা বাড়তে থাকে।



সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।



IMG-20231027-WA0008.jpg

Facebook
Twitter
You Tube



অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।


আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।





Amar_Bangla_Blog_logo.jpg

Banner(1).png

3jpR3paJ37V8JxyWvtbhvcm5k3roJwHBR4WTALx7XaoRovUdcufHKutmnDv7XmQqPrB8fBXG7kzXLfFggSC6SoPdYYQg44yvKzFDWktyjCspTTm5NVQAdTm7UoN34AAMT6AoF.gif



Heroism_Second.png


1000561739.png