যখন দিন বাজে যায়||কিছু বাজে মুহুর্ত
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ বাসী।আশা করি সবাই ভাল আছেন।আমিও ভাল আছি।আজ আপনাদের সাথে একটি ব্যতিক্রমধর্মী পোস্ট শেয়ার করব।
যারা মোটামুটি মুভি দেখেন তারা নিশ্চয় ডিসি ইউনিভার্সের নাম শুনেছেন।ডিসি ইউনিভার্সের খুব বিখ্যাত একটি মুভি হল জোকার।এই জোকার মুভির একটি সংলাপ আমার দারুন লেগেছিল।সংলাপ টি ছিল এমন "একজন সুস্থ মানুষ কে সাইকোপ্যাথ বানাতে শুধু মাত্র একটি খারাপ দিনই যথেষ্ট।"
গতকালের দিনটি ছিল আমার জন্যএমনই একটি খারাপ দিন।গতকাল দিনটি খুবই বাজে কেটেছে।প্রথম কথা গতকাল ছিল পরীক্ষা।বই এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি,মাত্র অর্ধেক শেষ।তারপরেও পুরো সিলেবাস এর উপর পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।বুঝতেই পারছেন মেজাজ এর কি অবস্থা।যাই হোক তারপরেও সকালে পরীক্ষা দিতে রওনা দিলাম।
হাতে যথেষ্ট সময় নিয়েই বের হয়েছিলাম।কলেজ যেতে ১ঘন্টা লাগে।সেখানে ১ঘন্টা ৪৫মিনিট সময় নিয়ে বেড়িয়েছিলাম।
কিন্তু ভাগ্যদেবতা সম্ভবত আমাদের সাথে মজা করার মুডে ছিলেন।মেইল গাড়ি,যে গাড়ি ১ঘন্টায় যায় সেই গাড়ি লোকালের মত আচরণ শুরু করল।তাদের অবস্থা এমন পারলে বাড়ি থেকে ডেকে এনে যাত্রী উঠায়।এভাবেই নাটক করতে করতে ১ঘন্টার রাস্তা ১ঘন্টা ৪৫মিনিট লাগিয়ে পৌছে দিল।
তারপর আবার সিএনজি ভরতে আরেক নাটক।আমাদের সিএনজি তে আর একজন প্রয়োজন।কিন্তু আজ যেন সবাই জোড়ায় চলো নিতীতে বিশ্বাসী হয়ে বেড়িয়েছে রাস্তায়।সিংগেল প্যাসেঞ্জার নেই।এদিকে পরীক্ষায় অলরেডি লেট।তাই বাকি একজনের ভাড়া আমি দিতে চাইলাম।ফলে সিএনজি ওয়ালা যেতে রাজি হল।
এরপর ১৫মিনিট লেট করে পৌছালাম পরীক্ষা হলে।স্যার আমাদের কথা না শুনেই বকা দেওয়া শুরু করল।আর মজার ব্যাপার হল,লেট করার শাস্তি হলের বাইরে ৫মিনিট দাড়িয়ে থাকা। আরো মজার ব্যাপার কি জানেন পরীক্ষা কিন্তু একঘন্টার।
যাই হোক ৩মিনিট পর স্যারের মন গললো।তিনি খাতা প্রশ্নপত্র দিয়ে বসার অনুমতি দিলেন।যাই হোক এখানে লাক সহায় ছিল।প্রশ্ন গুলো সব কমন ছিল।পরীক্ষা দিয়ে বের হলাম।কিন্তু অর্ধেক রাস্তায় শুরু হল বৃষ্টি।কিন্তু বিশ্বাস করেন আকাশে মেঘের ছিটেফোটা ছিল না।গেলাম ভিজে।এরপর একটা দোকানের নিচে আশ্রয় নেই।তারপর বৃষ্টি থামে,আমরা বেড়োতে নেই তখনই আবার জোরে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়।এভাবে কাটল ১ঘন্টা।
এর মাঝে বান্ধবীর ফোন।সে এখনো বই কেনে নি।তার বই কিনতে হবে।সেই ভেজা গায়ে গেলাম লাইব্রেরীতে।কিন্তু সে যেন ডিসাইড ই করতে পারছিল না গাইড নেবে নাকি মূল বই নেবে।একবার তো মূল বই প্যাক করিয়ে নেওয়ার পর যখন চলে আসব, তখন আবার ফোন করে বলল গাইড বই নিতে।এদিকে প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে।কিন্তু টিউশন আছে,তাই জলদি ফিরতে হবে বাড়িতে।এজন্য খেলাম না কোথাও।
লাইব্রেরী থেকে বেড়িয়ে সিএনজি নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে চলে আসলাম।বইয়ের ব্যাগ টা রাখা ছিল সিএনজির পিছে।নামার সময় আমি ভাড়া দিয়ে নুরের সাথে গল্প করতে করতে করতে চলে এসেছি।সিএনজি থেকে নেমে অনেকটা যাওয়ার পর আমার মনে হচ্ছিল হাত ফাকা ফাকা লাগছে কেন? কি ছিল হাতে? পরে মনে হল আরে বইয়ের ব্যাগ কই?
আমার মাথায় তো বজ্রপাত হল।প্রায় ১২০০টাকার বই।হারিয়ে গেলে পুরোটাই আমার আবার কিনে দিতে হবে।আবার দৌড়ে গেলাম যেখানে সিএনজি থেকে নেমেছিলাম।কিন্তু গিয়ে সিএনজি টাকে পেলাম না।মাথা তো খারাপ হবার দশা।তখন নূর বলল চল স্ট্যান্ডে যাই।তার বুদ্ধি টা মনে ধরল।গিয়ে চেইন মাস্টার কে ধরলাম।উনি বললেন যদি লাইনের সিএনজি হয় তবে এখানেই পাবেন।খুজুন,আমরাও দেখছি।কিন্তু হতাশ হলাম,কোথাও নেই।
এরপর উনি আমাদের উনার নাম্বার দিয়ে বললেন,চিন্তা করবেন না।আপনি বাসায় যান।আমরা খুজে বের করব,হারাবে না।কাল এসে খোজ নেবেন।"কিন্তু এটা কোন ভাবেই সম্ভব না। কারন বই আজকেই দিতে হবে।তখন নুর বলল,ভাই রাস্তায় তো প্রচুর জ্যাম।ইউটার্ন নিতে হয়ত দেরি হচ্ছে।চল তো সামনে গিয়ে দেখি।চেইন মাস্টার সাহেব কে ধন্যবাদ দিয়ে খোজ নিতে বলে এগিয়ে গেলাম।
এবার যেন ভাগ্যদেবতা সহায় হলেন।একটু সামনে যেতেই দেখি সেই সিএনজি ওয়ালা মামা।আর বইয়ের ব্যাগ সেখানেই রাখা।মামা খেয়াল করে নাই ব্যাগ টা।কিন্তু উনি বিশ্বাস করছিলেন না ব্যাগ টা আমাদের।তাই দিতে চাচ্ছিলেন না।পরে চেইন মাস্টার সাহেব এগিয়ে এসে বললেন ব্যাগ টা আমাদেরই।তারপর ড্রাইভার সাহেব ব্যাগ টি দিলেন।আবার চেইনমাস্টার সাহেব কে ধন্যবাদ দিয়ে বাসায় রওনা দিলাম।আর কিছু অবশ্য ঘটেনি পরে।
কিন্তু এই কয়েকটা ঘটনাই প্রচুর চাপ ফেলেছিল আমার উপর।নুরের উপস্থিত বুদ্ধির জন্য বই গুলো উদ্ধার হল।আমিও একটি নতুন ধরনের পরিস্থিতি ট্যাকল করা শিখলাম।আর শিখলাম কেন বিপদে মাথা ঠান্ডা রাখা এত প্রয়োজন কেন।এজন্যই বলে, না ঠেকলে শেখা যায়না।আর বাইরে না গেলে অভিজ্ঞতা বাড়ে না।
আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম যাতে আপনারাও আমার পরিস্থিতি দেখে কিছু শিখতে পারেন।কারন সব কিছুই ঠেকে শিখতে হবে এমন মানে নেই।দেখেও শেখা যায়,আর সেই বেশি চালাক যে দেখে শেখে।ধন্যবাদ এতক্ষণ কষ্ট করে পড়ার জন্য।
OR
আসলে প্রতিদিন ভালো যাবে এমন নয় কিছু কিছু খারাপ মুহূর্ত আমাদের পার করতে হয়। কিছু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা খুবই কষ্ট দেয় জীবনকে। খারাপ মুহূর্তের সময় ধৈর্য ধারণ করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করাটাই হলো উত্তম। পোস্টটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ জানাই
আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর ভাবে শান্তনা দেওয়ার জন্য।
সত্যি ভাইয়া বিপদে মাথা ঠান্ডা রাখা অনেক ভালো একটি কাজ। বিপদ যতই আসুক আমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। আসলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা খুবই কষ্টকর। এ সব বিপদে ধৈর্য্য ধারণ করে মোকাবেলা করাটাই অনেক উত্তম কাজ।যাইহোক অবশেষে খারাপ মুহূর্ত গুলো কাটাতে পেরেছেন জেনে অনেক ভালো লাগল। ধন্যবাদ
সুন্দর মন্তব্য করেছেন আপু। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
সত্যি একটা বাজে দিন ছিল আপনার জন্য দাদা। যতপ্রকার সমস্যা আছে সব যেন একদিনে এসে হাজির। ট্রেন লেট বৃষ্টিতে ভেজা পরীক্ষা হলে যেতে দেরী তারপর আবার বই হারিয়ে যাওয়া। যাক শেষ পযর্ন্ত যে বই পেয়েছেন এটা জেনে ভালো লাগল। আশাকরি আপনার সামনের দিন শুভ হবে।।
বাস লেট ছিল ভাই। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
দিনটা আপনার খারাপ দিয়ে শুরু হলেও শেষটা ভাল ছিল। আতো বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে পরিক্ষাটাতো ভালো হলো। আর আপনি ঠিক বলেছেন বিপদে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। তাহলে যে কোন সমস্যা সহজে সমাধান করা যায়। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।
হ্যা আপু। শেষ ভাল।তাই বলা যায় সব ভালো।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
বাপরে! এক নিঃশ্বাসে পড়ে গেলাম। যখন খারাপ হতে থাকএ তো এক নাগারে হতে থাকে। তবে একটা ভালো বিষয় এই যে শুধু লেট হওয়া ছাড়া আর একটু খিদে পেটে থাকা ছাড়া ম্যাসিভ কোন ক্ষতি হয় নি। সবই কান বড়াবড় ঘেঁষে বেড়িয়ে গেছে। ঈশ্বর মঙ্গলময়।
হ্যা দিদি।শেষ ভাল হয়েছে তাই বাদ বাকি সব ভুলে গেছি।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
মাঝে মাঝেই সবার জীবনে এমন দিন চলে আসে।যাকে মেনে নিতে হয় সহজে কারন এটাই প্রকৃতির নিয়ম।কিন্তু আমি দেখেছি এইসবগুলি ঘটে পরীক্ষার সময়ই যখন মাথায় বেশি প্রেসার থাকে।চেইন মাস্টার সাহেব খুবই ভালো মানুষ ছিলেন বিধায় আপনারা বইগুলো ফেরত পেয়েছেন।
হ্যা চেইন মাস্টার সাহেব অনেক হেল্প করেছেন।এমনকি আমাদের হয়ে উনি খুজবেন বলেছেন।ঈশ্বর উনার ভাল করুন।ধন্যবাদ দিদি সুন্দর মন্তব্যের জন্য।