অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা: এপেক্সের সাথে জুতো এক্সচেঞ্জ করার এক আনন্দময় সফর।।

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago

আমার বাংলা ব্লগ
বাংলা ভাষার কমিউনিটি

1000011948.jpg

1000011749.jpg

হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।

জীবনের পথচলায় ছোট ছোট ঘটনাগুলো কখনও কখনও আমাদের মনে গভীর ছাপ ফেলে যায়। এমনই এক ঘটনা সম্প্রতি আমার জীবনে ঘটেছে, যা আমাকে অবাক করেছে এবং একটি ব্র্যান্ডের প্রতি আমার বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে। এটি শুধু একটি জুতো বদলানোর গল্প নয়, এটি একটি অসাধারণ গ্রাহক সেবার গল্প, যেখানে একজন গ্রাহকের সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখে, যখন আমি ঢাকার নিউ মার্কেটের এপেক্স শো-রুম থেকে আমার স্ত্রীর জন্য এক জুড়ো গোল্ডেন কালারের চমৎকার জুতো কিনেছিলাম। জুতো জোড়া দেখতে যেমন সুন্দর ছিল, তেমনই আরামদায়ক মনে হয়েছিল। ১৯৯০ টাকা দিয়ে কেনা সেই জুতো নিয়ে আমরা বেশ খুশি ছিলাম। কে জানত, এই জুতোই ভবিষ্যতে আমার জন্য একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতার দ্বার খুলে দেবে?

সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত জুন মাসের ১৫ তারিখ, ঈদের ছুটির ঠিক মাঝামাঝি সময়ে, যখন আমরা গ্রামের বাড়িতে ছিলাম, জুতো জোড়া অপ্রত্যাশিতভাবে ছিঁড়ে যায়। ঈদের আনন্দ কিছুটা ম্লান হয়ে যায় এই ঘটনায়। গ্রামের বাড়িতে বসে আমি চিন্তা করতে লাগলাম, মাত্র তিন মাস আগে কেনা জুতো এভাবে ছিঁড়ে গেল! এখন কি হবে? ঢাকায় ফিরে এপেক্স কর্তৃপক্ষ জুতোটি পরিবর্তন করে দেবে তো? এই চিন্তা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। কারণ, আমাদের দেশে অনেক সময়ই এমন ক্ষেত্রে গ্রাহক সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

1000011949.jpg

ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরে এসেই আমার প্রথম কাজ ছিল এই বিষয়ে এপেক্সের সাথে যোগাযোগ করা। আমি তাদের কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিলাম। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা প্রতিনিধি অত্যন্ত ধৈর্য ধরে আমার কথা শুনলেন এবং আমাকে আশ্বস্ত করলেন। তারা আমাকে জুতো এবং ক্যাশ মেমোর স্পষ্ট ছবি সহ বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করে একটি ইমেল পাঠানোর পরামর্শ দিলেন। তাদের কথা মতো আমি সাথে সাথেই প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য দিয়ে এপেক্স কর্তৃপক্ষের কাছে একটি বিস্তারিত ইমেল পাঠালাম। মনে মনে তখনও একটু সংশয় ছিল – আদৌ কি এর কোনো সুরাহা হবে?

আমার সংশয় দূর হতে বেশি সময় লাগেনি। মাত্র দুই দিন পরেই কাস্টমার কেয়ার থেকে আমার কাছে একটি ফোন কল আসে। ফোনের ওপাশ থেকে জানানো হলো যে আমার পাঠানো ইমেলটি তারা সফলভাবে গ্রহণ করেছেন এবং আমার আবেদনটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সবচেয়ে আনন্দের খবরটি ছিল যে, আমি আমার নিকটস্থ যেকোনো এপেক্স শো-রুম থেকে জুতো জোড়া বিনিময় (exchange) করে নিতে পারবো। এই খবর শুনে আমি এতটাই খুশি হয়েছিলাম যে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এই অপ্রত্যাশিত ইতিবাচক সাড়া আমাকে অভিভূত করে তুলেছিল আমি তাৎক্ষণিকভাবে কাস্টমার কেয়ারের প্রতিনিধির কাছে আমার পছন্দের একটি এপেক্স শো-রুমের নাম উল্লেখ করলাম। তারা দ্রুত আমার অভিযোগের ইমেলটি সেই নির্দিষ্ট শো-রুমে ফরোয়ার্ড করে দিলেন। তাদের এই দ্রুত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ আমাকে মুগ্ধ করে। একজন গ্রাহক হিসেবে এমন নির্বিঘ্ন সেবা পাওয়া সত্যিই বিরল।

গতকাল, আমি আমার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে সেই নির্ধারিত এপেক্স শো-রুমে গেলাম। দোকানে ঢোকার সাথে সাথেই কর্মীরা আমাকে চিনতে পারলেন এবং আমার ইমেলের কথা উল্লেখ করলেন। তাদের মুখে হাসি এবং আন্তরিকতা দেখে আমার সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল। তারা আমাকে যেকোনো একজোড়া জুতো পছন্দ করার জন্য অনুরোধ করলেন। এটি ছিল একটি দারুণ অনুভূতি! আমি পুরনো ছেঁড়া জুতোর পরিবর্তে নতুন জুতো বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা পাচ্ছিলাম, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই পুরো প্রক্রিয়াটি ছিল অত্যন্ত সহজ এবং গ্রাহক-বান্ধব।

1000011952.jpg

আমার স্ত্রী তার পছন্দের জুতো জোড়া বেছে নিলেন, যেটি ছিল উপরের ছবিতে দেখা নেভি ব্লু রঙের স্লিপ-অন জুতো। এই জুতো জোড়ার দাম ছিল ২৬৯০ টাকা। যেহেতু আমার পুরনো জুতোর দাম ছিল ১৯৯০ টাকা, তাই আমাকে অতিরিক্ত ৭০০ টাকা পরিশোধ করতে হলো। এই সামান্য টাকা পরিশোধ করে আমরা নতুন জুতো নিয়ে হাসিমুখে দোকান থেকে বের হয়ে এলাম।

পুরো অভিজ্ঞতাটি আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে কেনা একটি জুতো, যা জুনের মাঝামাঝি সময়ে ছিঁড়ে গিয়েছিল, সেই জুতোটি প্রায় তিন মাস পর বিনা বাক্যব্যায় নতুন জুতো দিয়ে বদলে দেওয়া হয়েছে। এত দেরিতেও আমার মেইলটির প্রতি তারা রেসপন্স করেছে এবং নতুন জুতো এক্সচেঞ্জ করে দিয়েছে। এপেক্স কর্তৃপক্ষ যে তাদের গ্রাহকদের প্রতি কতটা যত্নশীল এবং তাদের গ্রাহক সেবার মান কতটা উন্নত, তা এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয়।

এই ধরনের গ্রাহক সেবা শুধুমাত্র একটি লেনদেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক তৈরি করে। আমি এপেক্সের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। তারা প্রমাণ করেছেন যে গ্রাহক সন্তুষ্টিই তাদের মূল লক্ষ্য। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে যে কিছু ব্র্যান্ড শুধু পণ্য বিক্রি করে না, তারা আস্থা এবং বিশ্বাসও তৈরি করে। ভবিষ্যতে জুতো কেনার ক্ষেত্রে এপেক্সই হবে আমার প্রথম পছন্দ। এই অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে আমার জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে এবং আমি নিশ্চিতভাবে অন্যদের কাছেও এপেক্সের এই অসাধারণ গ্রাহক সেবার গল্প তুলে ধরব। এমন সেবা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এমন ঘটনা বিদেশের মাটিতে শুনা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এমন ঘটনা সত্যিই অকল্পনীয়।

সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।

ডিভাইসমোবাইল
মডেলরিয়েলমি সি-৫৩
ফটোগ্রাফার@joniprins
স্থানশিবুমার্কেট, নারায়ণগঞ্জ,ঢাকা

2bU8Azf8zCDQrq3tkzHjjCFyraxJQeY79tPTN45w8XxU9wtvaFmWRaLhgHSy5GYKQ6bg.png

IMG_20190907_175336_618.JPG

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।

FNeY1coMNUL9WkErUPeUKmtGszS37qoEdLJEhh8bj8LkMZg4ZnLbSCPtsqdFwbPFaU6vxamfJRhKsAXwWBZmAwtf2KFjktn9asDsnKpUF6cbBcNYFzwcTbFb5dfFf7N5Lt5j8KUqpB64Bhu5yFCR9Qn5uG4sQo8t4PYbc7VJq37PW7258mLRbFTrsBTtbAnos9AJnU46Lv3HqXsN7s.gif

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9uuNWjCEgJj5LnknUa3pWA9yop6dT9GDfEUZtz2oDgA9ocMHrCEtkFpngXowo13q8Mn1YvzEMh5bSRg1SNaKSZwbsLwb3YA.png

KNoz79cGRt58XHcjM3shjWsSEtKgRtxoVdChppmw4FvW2CQtZxVJGen4yBCeRMj2Y2h9ttHevCs9rtWncvn3FXAHo5MrkNBCbLay5LtH7wgCA27mBRvWM5GDKNQKzJk62Dz8KRvqdiFsZ66guzvyhyBYqJu6KB21dLiPDmtFGR2yvqBCtUPp3Rscm37PwtDEWYMtuKM5v3qhNod24L.png

7258xSVeJbKkzXhyseBP4PYz11eBDT8sW2oR1a4vfVFS6JTrGU8e1FPUaNdHG5vjXyg2xthV78bDEmEVvKCQpyzX1kq8gAVzGsPp9GqJVRWxb6T9y35PZmQehnLjELdKKmnhdxQjDuny4.png

Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন

HNWT6DgoBc14riaEeLCzGYopkqYBKxpGKqfNWfgr368M9VRjuxKSTKuNvqEk1nfiYiKKnHbcTuABq9Fu2qE77V9BjGsoqkb23ngKUAk2mCBmjpG3wz3go7Vd2YW.png

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WP87ckB6VoL3UD42BtkosJzLXYjuCC4ws3sxuihZ3nhDfd815qMJiiETpWAiutfN7bjurhaBbivMFVTYEDiv.png

download-03.png

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য

download-044.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP

RGgukq5E6HBM2jscGd4Sszpv94XxHH2uqxMY9z21vaqHt1rDaeRdtDvsXGmDbuRg1s1soomTEddbTFxfMMYzob4oRFK8fTZQyYP8LbQ4tbMTAd2enV3Wq9Ze3N8TTU2.png

Click Here For Join Heroism Discord Server

cyxkEVqiiLy2ofdgrJNxeZC3WCHPBwR7MjUDzY4kBNr81R73dHAE6Ew3WjyveXn6UfQ8ahESLfvvdHjthdnPNKJby2matSBUDur7QMrVroCpwxQmohTSZHpBAXjQT9ZkpEa.png

image.png

image.png

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3Ce9mzjKNKmBKDNB5bPjytfpGcNzZvsf4kqDNjsgbD5sqJcQmA1hgTqT9wQbCkTa3KEsqrYDBjB.gif

456.gif

💖💖💖সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖

FNeY1coMNUL9WkErUPeUKmtGszS37qoEdLJEhh8bj8LkMZg4ZnLbSCPtsqdFwbPFaU6vxamfJRhKsAXwWBZmAwtf2KFjktn9asDsnKpUF6cbBcNYFzwcTbFb5dfFf7N5Lt5j8KUqpB64Bhu5yFCR9Qn5uG4sQo8t4PYbc7VJq37PW7258mLRbFTrsBTtbAnos9AJnU46Lv3HqXsN7s.gif

FrDSZio5ZCzUamf35asauSgs1tnNGCc8exBrDii52qi3Jpx7VBdpwVc4VapjSy3JtXCK3dEJDS8jYnZijAxW2t36oFhopCnVsFrGtMDi8FAe1h1c7ZBBXCHkMoE1Ntj54H77X8LydomuTDnXZgGT6yxu8a7AvgLuxo2mUFPx5zhMq98BpXpELpaBjKAziJVshFg2UaXbNtpqTXrxHy.png

Sort:  
 2 days ago 

বেশ সুন্দর এক্টি অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন ভাইয়া। ভোক্তা অধিকার আইন তাহলে কার্যকর হচ্ছে দেখে বেশ ভালো লাগলো। আপনার এই পোস্ট অনেককে বেশ সাহায্য করবে।

 2 days ago 

আপু ভোক্তা অধিদপ্তরে যাওয়া লাগে নি। তারা নিজেরাই চেইন্জ করে দিয়েছে। ব্লগটি পড়লে বুঝতেন। ধন্যবাদ।

 23 hours ago 

আমি সেটা বুঝাতে চাইনি। বলতে চেয়েছি ভোক্তা অধিকার আইন কে মানছে ব্যবসায়িরা। সেই জন্যইতো ভোক্তা অধিদপ্তরে যেতে হয়নি।