সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেকে নিয়ে সবকিছুতেই স্ট্যাটাস দেওয়া মানসিক রোগের লক্ষণ নয় কি? 🤔

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

নমষ্কার,,

বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়া খুব জনপ্রিয় একটা নাম। সোশ্যাল মিডিয়া বলতে সাধারণত আমরা ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিক টক এসবকেই বুঝি বেশি। একটা সময় ছিল যখন শুধুমাত্র কলেজ বা ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেমেয়েরাই সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশি আকৃষ্ট ছিল। কিন্তু সমাজটা এখন এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়ে গেছে ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে শিশু কিশোর এবং স্কুলের সব ছেলেমেয়েরাই সোশ্যাল মিডিয়া বলতে পাগল। আমাদের পরিবারের বয়জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরাও কোন দিক থেকে পিছিয়ে নেই।

phone-292994_1920.jpg

Source

সময় যেখানে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে সবাই যে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিজেকে ছুঁয়ে নেবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার কাছে সমস্যাটা ঠিক অন্য জায়গায় লাগে। ইদানিং সব ধরনের বয়সের মানুষের মাঝে একটা নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে। সেটা হল সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের স্ট্যাটাস নিয়ে পোস্ট করা। নিজের স্ট্যাটাস আপডেট করা নিয়ে এখনকার জেনারেশন এতটাই উৎসুক যে কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক নয় সেটাই বুঝে উঠতে পারে না।

social-3064515_1280.jpg

Source

আমার কাছে এই ধরনের মানুষগুলোকে এক ধরনের মানসিক রোগী বলে মনে হয়। স্ট্যাটাস দেবো সেটা ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে আমার কাজকর্ম, আমার চলাফেরা সবকিছুই কি পাবলিক কে দেখাতে হবে! আমাদের নিজেদের প্রাইভেসি বলে কি কিছুই নেই? হ্যাঁ সপ্তাহে একটা অথবা ৩-৪ দিন পর আমি স্ট্যাটাস দিতেই পারি। তাই বলে প্রতিদিন, প্রতি ঘন্টায় বা কয়েক ঘন্টা পর পর আমাকে স্ট্যাটাস দিতেই হবে এর কি মানে আছে? নিজের কথা সব মানুষকে জানিয়ে আমার সমস্যার সমাধান কি আদেও হচ্ছে? নাকি নিজের কৃতকর্মের প্রশংসা পাওয়ার জন্য যেচে অন্যের কাধে গিয়ে পরছি?

social-media-763731_1920.jpg

Source

আমি নিজে একটা জিনিস খেয়াল করে দেখেছি, বর্তমান সময়ের মানুষেরা বন্ধুবান্ধব বা পরিবার-পরিজন নিয়ে যখনই আড্ডা দিতে বসেন বা কোথাও ঘুরতে যান সবার একটাই উদ্দেশ্য থাকে কিভাবে ছবি আপলোড করে অন্যকে দেখানো যাবে যে আমরা কতটা মজা করছি বা আনন্দ করছি। সেখানে আনন্দটা হচ্ছে কি হচ্ছে না সেটা কোন মুখ্য বিষয় না। একটা স্ট্যাটাস পোস্ট করতে পারলেই যেন আমাদের আনন্দ। আমাদের মানসিকতা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে সেটা কি আমরা একটা বারের জন্য অনুভব করার চেষ্টা করি!

tree-200795_1920.jpg

Source

মেয়েদের মাঝে এই প্রবণতাটা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়। নিজের ছবি নিজের কাজ নিয়ে সব সময় স্ট্যাটাস দেয়া। আর একটু পর পর ঘুরে ঘুরে দেখা কত জন মানুষ সেটা সিন করল। আবার কারো জন্মদিন হলে চার পাঁচটা ছবি পোস্ট করে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে হয়। ওই মানুষটা দেখল কি দেখলো না তাতে আমাদের কিছুই যেন যায় আসে না। এতকিছু না করে ছোট্ট একটা ফোন করে যদি মানুষটাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হয় তাহলে কতই না খুশি হয় ফোনের ওপারে থাকা ব্যক্তিটি কখনো কি ভেবে দেখেছি আমরা!

কারো প্রতি রাগ অভিমান বা ভালবাসা প্রকাশ করতেও স্ট্যাটাসটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। মাঝে মাঝে আমার কাছে এই ব্যাপারটা অনেকটাই নীরব স্নায়ুযুদ্ধের মত মনে হয়। আমরা কখনো কি ভেবে দেখেছি এইসব কাজের ভেতরে ঢুকে আমাদের জীবন থেকে কতগুলো মূল্যবান সময় হারিয়ে যাচ্ছে রোজ? নিজের সর্বনাশকে আমরা নিজেরাই ডেকে আনছি না?

eye-1686932_1920.jpg

Source

আমার এই লেখাগুলো পড়ে অনেকেই ভাববেন পাগলের প্রলাপ বকছি আমি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার জায়গায় একদম অটল। যারা নিজের সব অনুভূতি শুধু স্ট্যাটাস দিয়ে প্রকাশ করতে চায় তারা মানসিক রোগী ছাড়া আর কিছুই না। এভাবে আমরা নিজেদের যেমন ধ্বংস করছি ঠিক তেমনভাবে পরবর্তী প্রজন্মকেউ ধ্বংসের পথে এগিয়ে দিচ্ছি। আজ থেকে ১৫ বছর আগেও জীবনটা কত সহজ সরল আর সুন্দর ছিল একবার ভেবে দেখুন। হ্যাঁ আধুনিকতার দরকার আছে আমাদের সবার জীবনেই। কিন্তু সব কিছুর একটা নির্দিষ্ট চাবিকাঠি আছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সবকিছুই আমাদের জন্য ক্ষতিকর। এই ব্যাপারটা আমরা যত তাড়াতাড়ি অনুধাবন করতে পারব ততই আমাদের মঙ্গল।

Sort:  
 3 years ago 

আপনার এই কথাগুলোর সাথে কিন্তু আমি ১০০% সহমত। আপনি একেবারে সময় উপযোগী একটা বিষয়ে লিখেছেন। সত্যি আমার কাছেও এমন মানুষ গুলো অদ্ভুত লাগে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় তাদের স্ট‍্যাটাস দেওয়া লাগে। তবে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে এইরকম কাউকে পেলে সরাসরি আনফ্লো বা আনফ্রেন্ড করে দেয়। সত্যি আগের সময় টাই ভালো ছিল। দারুণ লিখেছেন দাদা।।

 3 years ago 

কোন একজনকে তো পেলাম নিজের মনের মত, যে আমার মত করে একটু ভাবে। সত্যিই ভালো লাগলো ভাই আপনার কথা গুলো। অনেক ভালো থাকবেন। অনেক ধন্যবাদ।