ঈশ্বরের নিজের দেশ কেরালা -পর্ব ৭ (কোচি)

in আমার বাংলা ব্লগ7 days ago

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


Onulipi_01_23_08_17_40.jpg






আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



ভারকালা বীচে আমরা একদিনই ছিলাম। পরের দিন ভোর ভোর স্টেশনে চলে এলাম সকাল সাড়ে পাঁচটায় ছিল কোচি যাবার ট্রেন৷ কোচি যেতে হলে এর্নাকুলাম টাউন বা এর্নাকুলাম জংশনে নামতে হয়। আমাদের হোটেলটা ছিল এরনাকুলাম জংশনের একেবারে কাছে তবে ভারকালা বীচ থেকে আমাদের নামতে হয়েছিল এর না করলাম টাউনে। প্রায় ঘন্টা চারেক সময় লেগেছিল। স্টেশন থেকে হোটেলে যেতে অটোতে করে ১০ মিনিট লেগেছে।

একেবারে শহরের উপর হোটেল নিয়েছিলাম তবে এই হোটেলের খরচ অন্যান্য হোটেলের তুলনায় অনেক কম। হোটেলে পৌঁছেই রুম নিয়ে হাত পা ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আমরা চলে গেলাম খাবার উদ্দেশ্যে কারণ ততক্ষণে খাবার টাইম হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া নতুন জায়গায় কোথায় খাব সেইটাও খুঁজতে হবে।

IMG-20250401-WA0020.jpg

কোচিতে খুব ভালো মাছ বা মাংস সবরকম পাওয়া যায়। তবে মাছ মাংসের যেহেতু বাড়িতে প্রচুর পরিমাণে খাই তাই এখানে উদ্দেশ্য ছিল অথেন্টিক কেরালিয়ান খাবার খাওয়ার। হোটেলের একদম আশপাশেই অনেক রেস্টুরেন্ট। শুরুতেই আমরা একটি ভেজ রেস্টুরেন্টে চলে গিয়েছিলাম। সেখানে ১৭০ টাকা করে থালি অর্ডার করেছিলাম। সে যে কত রকমের রান্না আপনারা ছবিতে দেখলেই বুঝতে পারবেন। এত পদ একসাথে আমি শেষ কবে খেয়েছিলাম আমার মনে নেই।

বাইরে বেরিয়ে মোটার উপর আমি ভেজ খাওয়ারই খেতে পছন্দ করি তার একটা বিশেষ কারণ হলো, মাছ বা মাংস এরা কিভাবে রান্না করে বা আদৌ ভালো করে ধুয়ে রান্না করে কিনা সে বিষয়ে আমার বড়ই সন্দেহ। সেই কারণেই আমি খুব ভালো বা বড় কোন ব্র্যান্ডের দোকান ছাড়া কোন ধরনের আমিষ খাবার খেতে পারি না। তাছাড়া কেরালা তে এতই গরম ছিল আমি কোন রকম রিচ খাবার কথা ভাবতেই পারিনি।

তবে এই দোকানের খাবার নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সুস্বাদু ছিল। সব থেকে মজার ব্যাপার এখানে অনেকগুলি বাঙালি ছেলে কাজ করে প্রথম দিনই আলাপ হয়ে গিয়েছিল ফলে তারা আমাদের অনেকটাই আলাদাভাবে আতিথেয়তা করেছে। যখন যেটা এক্সট্রা প্রয়োজন হয়েছে সেটা দিয়েছে টাকা সেজন্য যে নিয়েছে এমন নয়। আসলে বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে যখন একে অপরকে ক্ষণিকের জন্য হলেও দেখতে পায় বা খুঁজে পায় মানে বলতে চাইছি বাঙালি হিসেবে পরিচিত হয় তখন সবাই যেন মনে ভাবে আমার দেশের মানুষ এসেছে অর্থাৎ এরা আমারই আত্মীয়। এই জিনিসটা বিদেশে গেলে তখন ভারতবর্ষের নানান রাজ্যের মানুষদের মধ্যেও দেখা হলে হয় সে ক্ষেত্রে কে পাঞ্জাবি কে বাঙালি বা কে মারাঠি সেটা খুব একটা বেশি জায়গা করে নেয় না বরং উল্লেখযোগ্য হয় আমরা ভারতীয়।

যাই হোক, প্রচন্ড পরিমান খিদে পেয়েছিল তাই গোগ্রাসে খাওয়ার মত করে খেয়েছি। হা হা হা।

IMG-20250401-WA0028.jpg

তারপর আসার পথে বড় বোতল কিনে নিয়ে হোটেলে চলে এলাম। যেহেতু ভোরবেলায় উঠে এসেছিলাম তাই সবাই বেশ ক্লান্ত ছিল। এক-দেড় ঘন্টা একটু রেস্ট নিয়েই আমরা চলে গেলাম কোচি ডকে। প্রথম দিনেই ইচ্ছে ছিল বোটে করে ওই পারে যাব। খুবই কম টাকার টিকিট সম্ভবত সাত টাকা বা আট টাকা করে। টিকিট কেটে উঠে পড়লাম স্পিড বোটে। যাত্রীবাহী ভোট হওয়ার জন্য অনেক যাত্রী ধরে। সব থেকে মজার বিষয় এইভাবেই এবার থেকে ওপারে বা ওপার থেকে এপারে মানুষজন রুজি রোজগারের জন্য যাতায়াত করে থাকেন।

IMG-20250401-WA0022.jpg

ভারতবর্ষের সবথেকে প্রাচীন ডক হল এই কোচি ডক। এখান থেকেই প্রথম ভারতবর্ষ আবিষ্কার হয়েছিল। মনে পড়ে ভাস্কো দা গামার কথা। এখানেই তিনি প্রথম পা রেখেছিলেন। শুধু তাই নয় সুদূর আরব দেশ থেকে সমুদ্রপথে যখন বাণিজ্য করতে আসতেন তখনো এখানেই তাঁদের থামতে হত। আর এই সূত্র ধরেই আরব দেশ থেকে ইসলাম ধর্ম ভারত বর্ষ সহ সারা উপমহাদেশের ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেক আগে এই নিয়ে আমি একটি ব্লগ লিখেছিলাম। আর এই কোচিতেই রয়েছে সমগ্র উপমহাদেশের প্রথম মসজিদ।

IMG-20250401-WA0027.jpg

বোটে করে যখন যাচ্ছিলাম খুবই ভালো লাগছিল দুই পাড়ের কোচি শহরটা। আমরা গিয়েছিলাম ফোর্ট কোচি। এই দিকটাতে প্রচুর চার্চ, মসজিদ দেখা যায়। তবে বেশিরভাগটাই খ্রিস্টানদের বাস দেখলাম। খুব বেশি ঘোরাঘুরি করার আগেই সন্ধ্যে নেমে গিয়েছিল আমরা বসি বসি চাইনিজ ফিশিং নেটে মাছ ধরা দেখছিলাম। এই অভিজ্ঞতা জীবনে প্রথমবার ঘটলো। এইভাবে মাছ ধরার সিস্টেম আমি আগে দেখিনি। আপনাদের সাথে এই মাছ ধরার ভিডিও আমি আগে একটি ব্লগে শেয়ার করেছিলাম। আজ শুধুমাত্র ফটোগ্রাফি।

IMG-20250401-WA0026.jpg

অনেক মানুষজন আসেন এখানেই সরাসরি মাছ ধরে কিনে নিয়ে যান। ভারতবর্ষের অন্য কোথাও এই চাইনিজ ফিশিং নেট আছে বলে আমার জানা নেই।

IMG-20250401-WA0025.jpg

IMG-20250401-WA0024.jpg

আর সেরকম কোন জায়গা না করেই আমরা ফিরে গেলাম। আর ওইপারে পৌঁছে দেখা হল অনেক বাঙালির সাথে তারাও বেড়াতে এসেছেন। ক্রিসমাসের ছুটি মানে অনেকটাই লম্বা ছুটি তাই এই সময়ে অনেকেই বেড়াতে পছন্দ করেন। আর বাঙালিরা তো জানেনই সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন। অনেকক্ষণ গল্পগুজব করে চা টা খেয়ে আমরা আবারো ডিনার করার জন্য সকালের দোকান থেকে চলে গিয়েছিলাম। সেখানে যে যার পছন্দমত কেরালিয়ান খাবার খেলাম।

IMG-20250401-WA0023.jpg

খুব একটা বেশি রাত করিনি কারণ পরের দিনই আমাদের আলেপ্পি চলে যাওয়ার কথা ছিল।

IMG-20250401-WA0021.jpg

কোচিকে যেমন বলা হয় ভারতের আরব তেমনি আলেপ্পি হল ভারতের ভেনিস। বহু প্রতীক্ষিত আমার সেই জায়গা। অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। আপনাদের সাথে পরবর্তী ব্লগে সেগুলোই শেয়ার করব। আজকের ভ্রমণ কাহিনী এ পর্যন্তই।

কেমন লাগছে আমার কেরালা ভ্রমণের গল্পগুলো? কমেন্ট করে জানালে ভালো লাগবে।

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণভ্রমণ ব্লগ
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমআইফোন ১৪
লোকেশন
অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিত গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNq11oNEiVHeYi1dFPZdD9DtfDnLSeGtLw3tXF7pNDf1KxPvxfffo2xboPm7wR8jPkKYie3LXrW.png

5q1knatRafuz9XwMuuEKUktArqLQpY9ERHvTUkr4H3M7EJa5zmYjd88Mgg7ucDLaoRyBbuk6ZDoBxSEqGcM8f9gtL5ff3dELA5FFXhfdJMy3CLVqCeBiUcuHt1GpdcrweUGxxxmGTC4nBtUhD1QWuxAAkWX8iy55cDyLQMmixxBjRCHLY6iMvDqgWQXyeinoLTe3.png

1000205505.png